গুলি করে আগের মতো মামলাও দিচ্ছে সরকার: ফখরুল

“এসব করে ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখা যাবে না,” বলেন বিএনপি মহাসচিব।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 Sept 2022, 11:15 AM
Updated : 10 Sept 2022, 11:15 AM

দমনপীড়ন করে সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “সরকারকে বলছি, এই যে হাজার হাজার লোককে আহত করেছেন, গুলি করেছেন, মামলা করেছেন। আবার আগের মতো একই কায়দায় মামলা করছেন।

“এসব করে ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখা যাবে না। এসব করে বাংলাদেশের মানুষকে বোকা বানাতে বানাতে এমন একটা পর্যায় নিয়ে গেছেন যে, বাংলাদেশের মানুষ আজ রুখে দাঁড়িয়েছে।“

সংগ্রামের মধ্য দিয়েই দেশের মানুষ অধিকার আদায় করবে মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের মানুষ সংগ্রামী মানুষ। বাংলাদেশের মানুষ সবসময় তাদের অধিকার আদায় করে সংগ্রামের মধ্য দিয়ে, লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে।

“সেই সংগ্রাম শুরু হয়েছে, সেই সংগ্রাম অবশ্যই মানুষ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে, সংগ্রামের মধ্য দিয়েই তারা তা অর্জন করবে।”

‘ভারত সফরে কী এনেছেন?’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “খুব নাচতে নাচতে চলে গেলেন ভারতবর্ষে। একটা মাত্র আশায় যে, ভারতে গিয়ে আবার কিভাবে ক্ষমতায় থাকা যায়, তার জন্য একটা ব্যবস্থা তারা করে আসবেন। কী এনেছেন? কিছুই না। আমরা পরিষ্কার করে বলছি, কী এনেছেন? ১৫৩ কিউসেক পানির কথা বলেছেন। এছাড়া তো কিছুই দেখছি না।

“যেদিন সমঝোতা স্মারক সই হয়, সেই দিনই আমাদের সীমান্তে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে আমাদের বাংলাদেশি একজন ১৪ বছরের বালককে, আরও দুইজন নিখোঁজ আছে। এটা অহরহ ঘটছে। সেটা (সীমান্ত হত্যা) কিন্তু এখন পর্যন্ত বন্ধ হয়নি।”

বিএনপি মহাসচিব বলেন, “বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক হোক- এটা আমরা সবাই চাই। ভারত আমাদের বন্ধু প্রতিম দেশ। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময়ে তারা আমাদের সহযোগিতা করেছে আমরা তার জন্য কৃতজ্ঞ।

“আপনারা (আওয়ামী লীগ সরকার) তো বলতে থাকেন যে, এমন পর্যায়ে আপনাদের সম্পর্ক গেছে, সেই সম্পর্কটা স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক; আপনাদের মন্ত্রী বলেন। এই যে বিষয়গুলো বলে মানুষকে প্রতারণা করতে করতে এবং মানুষ পুরোপুরিভাবে তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে এভাবে একটা দেশ চলতে পারে না, একটা জাতি নির্মাণ হতে পারে না।”

প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমার দেশের মানুষ যেখানে গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য আন্দোলন করতে গিয়ে আপনি গুলি করে মারছেন, যখন জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদ করতে গিয়ে আপনি গুলি করে মারছেন, যখন চাল-ডাল-তেলের দাম বৃদ্ধির পাওয়ার বিরুদ্ধে কথা বলতে গিয়ে গুলি করে মারছেন, যখন এদেশে চরম একটা অর্থনৈতিক অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে সেই সময়ে জয়পুরে গিয়ে আপনি নৃত্য গীতের সঙ্গে একসঙ্গে যোগ দিচ্ছেন তা কখনোই এদেশের মানুষ মেনে নেবে না, মেনে নিতে পারে না।”

হাওরে উড়াল সেতু প্রকল্প নিয়ে প্রশ্ন

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “গতকাল দেখলাম হাওরের উপর দিয়ে উড়াল সেতু নির্মাণ করবে; সেখানে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা বাজেট দিয়েছে। দেখবেন সেটা পৌঁছাবে গিয়ে ২৬ হাজার কোটি টাকায় নিসন্দেহে এবং এটার প্রয়োজন আছে কি না, কতগুলো গাড়ি চলবে, ওখানে কী প্রয়োজন আছে তার সম্পর্কে কোনো কথা নেই।

“এই যে আপনার আজকে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এই সমস্ত মেগা প্রজেক্ট, অপ্রয়োজনীয় প্রজেক্ট নিয়ে মূল জায়গা থেকে সরে ভিন্ন জায়গা চলে এসেছে। এখনো তারা বলে যে, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া- এই অবস্থা হবে।”

দেশের ৪২ শতাংশ মানুষ এখরও দারিদ্রসীমার নিচে বাস করে দাবি করে তিনি বলেন, “দুই বেলা দুই মুঠো খেতে পারে না; যেদেশের মানুষ স্বাস্থ্য সেবা সঠিকভাবে পায় না, যাদের ছেলে-মেয়েরা এখনও বিএ-এমএ পাস করে কোনো কর্মসংস্থান নেই।

“তারা মোটর বাইক চালাচ্ছে, রিকশাভ্যান চালাচ্ছে, শ্রমিক ভ্যান চালাচ্ছে- সেখানে আপনি (সরকার) বলছেন, উন্নয়নের রোল মোডেল হয়ে গেছে বাংলাদেশ। এই কথাগুলো বলে মানুষকে প্রতারণা করে, মানুষের সঙ্গে পুরোপুরি একটা বেঈমানি করে গণতন্ত্র বিনাশী একটা শক্তি হয়ে উঠে- সমস্ত কিছু ধ্বংস করে দিচ্ছে।”

জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ‘রাজনীতি: পূর্ব পাকিস্তান ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন উপলক্ষে এ আলোচনাসভা হয়।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের সভাপতিত্বে এবং ওয়াহিদ বিন ইমতিয়াজ বকুলের সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিএনপি ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক এ বি এম ওবায়দুল ইসলাম, মোড়ক উন্মোচন হওয়া গ্রন্থের লেখক হারুন-অর-রশিদ ও প্রকাশক মো. জহির দীপ্তি বক্তব্য রাখেন।

‘ইতি প্রকাশন’র ৩২০ পৃষ্ঠার এই গ্রন্থটির মূল্য হচ্ছে ৬০০ টাকা।