ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে গিয়ে বেধড়ক পিটুনির শিকার ছাত্রদল

ছাত্রদলের অভিযোগ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে; ছাত্রলীগের দাবি, ছাত্রদলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে মারামারি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Sept 2022, 01:21 PM
Updated : 27 Sept 2022, 01:21 PM

সংগঠনের নতুন কমিটি নিয়ে উপাচার্যের সঙ্গে দেখা করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ঢুকতে গিয়ে বেধড়ক মারধরের শিকার হয়েছেন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা।

মঙ্গলবার বিকালে সাড়ে ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার এ এফ রহমান হলের কাছে নীলক্ষেত মোড়ে তারা মারধরের শিকার হন।

হামলায় অন্তত ১৫ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছে জানিয়ে ছাত্রদলের নেতারা বলছেন, ছাত্রলীগ সংগঠিতভাবে এই হামলা চালিয়েছেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরাও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের সেখানে আগে থেকে মহড়া দিতে দেখার কথা জানিয়েছেন।

তবে ছাত্রলীগের নেতারা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, ছাত্রদলের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে তারা হামলার শিকার হয়েছেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক একেএম গোলাম রব্বানী বলছেন, আসলে কী ঘটেছে, তা তারা খতিয়ে দেখবেন।

হামলায় আহতরা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি খোরশেদ আলম সোহেল, সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলাম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুল জলিল আমিনুল, মো. মাসুম বিল্লাহ, ফারহান মো. আরিফুর রহমান, মো. নাছির উদ্দীন শাওন, মো. রাজু আহমেদ, সুপ্রিয় দাশ শান্ত, নাজমুস সাকিব, সহ-সাধারণ সম্পাদক মুন্সি সোহাগ, প্রচার সম্পাদক ইমাম আল নাসের মিশুক, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক জসিম খান, বিজয় একাত্তর হলের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি সাইফ খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আকিব জাভেদ রাফি, কবি জসিমউদ্দিন হল ছাত্রদলের কর্মী জোসেফ আল জুবায়ের।

ছাত্রদলের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার পাশাপাশি সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা কমিটিও ঘোষণা করা হয়। 

নতুন বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির নেতারা মঙ্গলবার বিকালে উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে যাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন।

এরপর একই সময়ে ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের নানা সমস্যা সমাধানে উপাচার্যকে স্মারকলিপি দেওয়ার কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে নীলক্ষেত পুলিশ ফাঁড়ির সামনে দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সভাপতি খোরশেদ আলম ও সাধারণ সম্পাদক আরিফুল ইসলামের নেতৃত্বে সংগঠনটির ৩০ থেকে ৩৫ নেতাকর্মী ক্যাম্পাসে ঢুকতে গিয়ে বাধা পান।

তারা মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তি ও গণতন্ত্রের তোরণের ভেতর দিয়ে প্রবেশ করলে স্যার এ এফ রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের এক কর্মী মিছিলের সামনে দাঁড়িয়ে তর্কতর্কি শুরু করেন। একপর্যায়ে উপাচার্যের জন্য ছাত্রদলের আনা ফুলের তোড়া ভেঙে ফেলেন ওই কর্মী।

পরে এফ রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রিয়াজুল ইসলামের নেতৃত্বে একদল নেতাকর্মী লাঠিসোঁটা ও স্টাম্প দিয়ে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের পেটাতে শুরু করেন। আরেকটি অংশ ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের ধাওয়া করে। এতে ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান।

ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা চলে যাওয়ার পর নীলক্ষেত মোড়ে আসেন কবি জসীম উদদীন হল শাখা ছাত্রলীগ এবং বিজয় একাত্তর হল শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। পরে এফ রহমান হলের নেতাকর্মীরাসহ মুক্তি ও গণতন্ত্র তোরণের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। সেখানে ছাত্রদলবিরোধী স্লোগান দেওয়ার পর তারা ক্যাম্পাসের দিকে চলে যান।

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিল। কিন্তু ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা আমাদের নেতাকর্মীদের ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে দেয়নি। আমাদের প্রতিহত করতে একই সময়ে পাল্টা কর্মসূচি দিয়েছে।

“তারা আমাদের নেতা-কর্মীদের উপর অতর্কিত হামলা চালিয়েছে। হামলায় ১৫ জনেরও বেশি আহত হয়েছে। তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।”

অন্যদিকে অভিযোগ অস্বীকার করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাদ্দাম হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আজকে আমরা শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট, ক্যান্টিনে খাবারের মান উন্নয়ন, মাস্টারপ্ল্যান বাস্তবায়ন, প্রত্যেকটি হলে ডিজিটাল ল্যাব তৈরি এবং কারিকুলাম আধুনিকায়ন করার দাবিতে  উপাচার্যকে স্মারকলিপি দিয়েছি। আমরা শিক্ষার্থীদের স্বার্থ বা অধিকার রক্ষায় কথা বলেছি। সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড এগুলোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।

“আজকে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের মধ্যে যদি কোনো ঘটনা ঘটে থাকে, সেটি নিছক তাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলের বহিঃপ্রকাশ।”

সাদ্দাম বলেন, “এর আগেও আমরা দেখেছি ১৭ সেপ্টেম্বর শিক্ষা দিবসে তারা শ্রদ্ধাঞ্জলি জানাতে আসতে পারেনি। উপদলীয় তৎপরতার কারণে তারা ঐক্যবদ্ধ থাকতে পারেনি। কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে যে নানা পক্ষ তৈরি হয়েছে, আজকেও তাদের অভ্যন্তরীণ সংঘাতে এ ঘটনাটি ঘটেছে বলে আমি মনে করি।”

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক একেএম গোলাম রব্বানী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা বিষয়টি গণমাধ্যম মারফত জেনেছি। কী ঘটেছিল, এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন তৈরি করা হচ্ছে। কেউ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশৃঙ্খলা করলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”