রিজার্ভ ‘গিলে’ ফেলেছেন: সরকারকে ফখরুল

বিএনপির সমাবেশ ঘিরে ‘সরকারই পরিবহন ধর্মঘট করাচ্ছে’, অভিযোগ মির্জা ফখরুলের।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Oct 2022, 05:14 PM
Updated : 27 Oct 2022, 05:14 PM

দেশের বৈদেশিক মুদ্রার তহবিল (রিজার্ভ) থেকে বড় প্রকল্পগুলোতে বিনিয়োগের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বৃহস্পতিবার বিকালে নয়াপল্টনে যুবদলের সমাবেশে তিনি বলেন, “আজকে পায়রা বন্দর উদ্বোধন করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলছেন যে, আমাদের বিরোধীরা অর্থাৎ বিএনপি বলে যে, রিজার্ভের টাকা কোথায় গেল? অবশ্যই আমরা জিজ্ঞাসা করতে চাই যে, রিজার্ভের টাকা কোথায় গেল? তিনি উত্তর দিয়েছেন, রিজার্ভের টাকা কি চিবিয়ে খায়? চিবিয়ে তো খান নাই, গিলে ফেলেছেন। রিজার্ভের টাকা আপনারা গিলে ফেলেছেন।”

ফখরুল বলেন, “রিজার্ভের টাকা হচ্ছে আপনি যখন বাইর থেকে যেসমস্ত পণ্য আমদানি করবেন, সেই টাকা ডলারে পরিশোধ করবেন। রিজার্ভের টাকা হচ্ছে দেশে যখন অর্থনৈতিক ক্রাইসিস দেখা দেবে, তখন আপনি এখান থেকে তার ব্যবস্থা করবেন।

“অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পায়রা বন্দর কার্যকর হতে পারে না। কারণ যে নাব্যতা দরকার এখানে জাহাজ ভেতরে আসার জন্য, যে পানির দরকার, সেই গভীরতা সেখানে নাই। সেখানে কী করেছেন, সুপার ড্রেজার লাগিয়েছেন। আর সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা খরচ করে সেখানে আবার চুরির ব্যবস্থা করে আপনারা সেখানে সুপার ড্রেজার লাগিয়েছেন।”

জাতীয়তাবাদী যুবদলের ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এ কর্মসূচি পালিত হয়। ঢাকাসহ আশপাশের জেলাগুলো থেকে হাজার হাজার নেতাকর্মী এ সমাবেশ অংশ নেয়।

যুব সমাবেশে মঞ্চে বিএনপি মহাসচিবের পাশে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি রেখে দুটি চেয়ার খালি রাখা হয়।

এর আগে সকালে নেতাকর্মীদের নিয়ে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী শেরেবাংলা নগরে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা জানান।

জিয়াউর রহমান ১৯৭৮ সালে ১ সেপ্টেম্বর বিএনপি প্রতিষ্ঠার পরপরই জাতীয়তাবাদী যুবদল গঠন করেন।

‘কী কাপুরুষ ওরা’

ফখরুল বলেন, ‘‘আমরা তিনটা সমাবেশ করাতেই আপনাদের এতো কম্পন শুরু হয়েছে, এতো কাঁপাকাঁপি শুরু হয়েছে যে, আপনারা ওই সমাবেশগুলো বন্ধ করবার জন্যে আপনারা সমস্ত বাসসহ পরিবহন ধর্মঘট করাচ্ছেন। লজ্জা করে না আপনাদের। কী কাপুরুষ আপনারা যে, বিরোধী দলের শান্তিপূর্ণ সমাবেশকে বন্ধ করার জন্য আপনারা আপনাদের পেটুয়া সেই সমস্ত ইউনিয়নকে দিয়ে ধর্মঘট ডাকাচ্ছেন।

“চট্টগ্রামে ধর্মঘট দিয়েছে, ময়মনসিংহে ধর্মঘট দিয়েছে, খুলনায় ধর্মঘট দিয়েছে। কিন্তু সেই ধর্মঘট দিয়ে কি এই গণতন্ত্রকামী মানুষকে আটকিয়ে রাখতে পেরেছে? পারেনি। তারা পায়ে হেটে বিভিন্ন ভাবে তাদের যে দাবি সেই দাবি জানাতে তারা সেই সমাবেশগুলোতে উপস্থিত হয়েছে।”

তিনি বলেন, “দেখেন বরিশালে ধর্মঘট দিয়েছে। ৫ দিন আগে বরিশালে ধর্মঘট ডেকেছে। কারণ যেন সমাবেশকে পণ্ড করা যায়। রংপুরে ধর্মঘট দিয়েছে বাস শ্রমিকদের দিয়ে। কারণ যে রংপুরের সমাবেশকে বন্ধ করা যায়। আমি বাস মালিকদের বলতে চাই, আমার শ্রমিকদেরকে বলতে চাই, আপনারা সবসময় জনগণের সেবা করেন, আপনারা জনগণের সঙ্গে বরাবরই ছিলেন।

“আজকে চালের দাম ১০ টাকা থেকে ৯০ টাকা হয়েছে; ডালের দাম বেড়েছে, ডিমের দাম বেড়েছে, চিনির দাম বেড়েছে। আপনারা আপনাদের বাচ্চাদের একটা ডিম পর্যন্ত দিতে পারেন না। তাহলে কার ইঙ্গিতে কাদেরকে সহায়তা করতে আপনারা এই ভয়াবহ ফ্যাসিস্ট শক্তি, যারা আপনার সমস্ত কিছু কেড়ে নিয়ে যাচ্ছে; তাদেরকে সহায়তা করার জন্য আপনারা এই কাজটা করবেন না।”

চলমান আন্দোলনে যুবদলের মুন্সীগঞ্জের শহিদুল ইসলাম শাওন, নারায়ণগঞ্জের শাওন প্রধানের ‘আত্মত্যাগ’ আর নেতা-কর্মীদের ওপর ‘নির্যাতনের’ ঘটনা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এই আওয়ামী লীগ সরকার তারা আজকে আমাদেরকে গুলি করে দমন করতে চায়, তারা আজকে আমাদেরকে অত্যাচার করে নির্যাতন করে দমন করতে চায়। এদেশের মানুষরা তা করতে দেবে না, এদেশের যুবকরা তা করতে দেবে না।”

মির্জা ফখরুল বলেন, “নির্বাচনী ব্যবস্থাটাই আওয়ামী লীগ ধ্বংস করে দিয়েছে। একটা নির্বাচন কমিশন করেছে, যাকে ডিসি-এসপিরাই মানে না এবং তারা নির্বাচন করতে পারে না। সুতরাং নির্বাচনের প্রশ্নই উঠতে পারে না। আমরা খুব স্পষ্টভাবে বলেছি যে, সবার আগে হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে, তার সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, সংসদ বিলুপ্ত করে দিতে হবে এবং একটা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।

“নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা না দিলে এখানে কোনো নির্বাচন হবে না। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। সেই কমিশনের মাধ্যমে তখন আবার নতুন করে এদেশের মানুষ তারা তাদের ভোটের অধিকার প্রয়োগ করবে, তারা তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবে।”

মির্জা ফখরুল বলেন, “আমাদের সামনে এখন অনেক কঠিন সময়, আমাদের সামনে অনেক পরীক্ষা, আমাদের সামনে এখন অনেক যুদ্ধ। আজকে মঞ্চে যে চেয়ারটা খালি রাখা হয়েছে, সেটা আমাদের দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার জন্য, আরেকটা চেয়ার খালি রাখা হয়েছে আমাদের ভারপ্রাপ্ত তারেক রহমানের জন্য।

“আমাদের নেত্রী তার সারাটা জীবন লড়াই করেছেন, সংগ্রাম করেছেন গণতন্ত্রের জন্য। এখনও অসুস্থ শরীর নিয়ে তিনি গৃহেবন্দি হয়ে আছেন। আমাদের নেতাকে মিথ্যা মামলায় দিয়ে বিদেশে নির্বাসিত করে রাখা হয়েছে। ৩৫ লক্ষ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা, অসংখ্য নেতাকর্মীকে খুন করেছে, গুম করেছে।”

যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মোনায়েম মুন্না, যুগ্ম সম্পাদক শফিকুল ইসলাম মিল্টনের সঞ্চালনায় অন্যদের মধ্যে বক্তৃতা রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমান উল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, যুবদলের সাবেক নেতা আবদুস সালাম আজাদ, সাইফুল আলম নিরব, মীর আলী নেওয়াজ, মোরতাজুল করীম বাদরু, মহানগর বিএনপির রফিকুল আলম মজনু, আমিনুল হক, যুবদলের মামুন হাসান, কামরুজ্জামান দুলাল, নুরুল ইসলাম নয়ন, গোলাম মওলা শাহিন, ইছহাক সরকার।