বন-জঙ্গলের আইনে দেশ চলছে: রিজভী

“কেউ সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলেই তাকে কারাগারে যেতে হচ্ছে,” বলেন তিনি।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 March 2024, 10:21 AM
Updated : 16 March 2024, 10:21 AM

সরকার দেশে ‘জঙ্গলের শাসন’ চালাচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

তিনি বলেন, “বর্তমানে প্রত্যেকটি কারাগার হচ্ছে শেখ হাসিনার বন্দিশালা, এখানে আইন-কানুন কোনো কিছুর দরকার নেই। তিনি যদি মনে করেন, কাউকে কারাগারে রাখতে চান সে কারাগারে থাকবে… তার শাসনের বিরুদ্ধে কথা বললেই, তার দুঃশাসনের বিরুদ্ধে কেউ উচ্চারণ করলে…. তাকে কারাগারে থাকতে হবে।

‘‘এদেশে জঙ্গলের শাসন চলছে… বন-জঙ্গলের আইনে দেশ চলছে। এভাবে দেশ চলতে পারে না। এই বন-জঙ্গলের আইন, এই দুঃশাসন শেকড়সহ উপড়ে ফেলতে হবে। এজন্য সকলকে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিতে হবে।”  

শনিবার দুপুরে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এক সমাবেশে দলের নেতাকর্মীদের ‘গ্রেপ্তার-নির্যাতনের’ চিত্র তুলে ধরে তিনি এ মন্তব্য করেন।

গত ২৮ অক্টোবর নয়া পল্টনে বিএনপির মহাসমাবেশ পণ্ড হওয়ার পর দলের মহাসচিবসহ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের প্রসঙ্গ টেনে রিজভী বলেন, ‘‘এক দেশে দুই আইন। একই মামলায় মহাসচিবসহ শাহজাহান ওমর গ্রেপ্তার হয়েছেন।

‘‘কী দেখা গেল? শাহজাহান ওমর তিনি তলে তলে হাসিনার সাথে যোগাযোগ করেছেন। তিনি কারাগার থেকে বেরিয়ে এসে আওয়ামী লীগের টিকেট নিয়ে এমপি হয়েছেন। আর একই মামলায় কারাগারেই থাকলেন মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ বিএনপির নেতারা। এই হচ্ছে আইন, এই হচ্ছে কানুন।”

নয়া পল্টনে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দলের উদ্যোগে দলের শ্রমিক বিষয়ক সহ সম্পাদক হুমায়ুন কবির খানের মুক্তির দাবিতে এই সমাবেশে হয়।

‘নিত্যপণ্যে দাম বাড়াচ্ছে কারা?’

রিজভী বলেন, “নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়াচ্ছে কারা? সিন্ডিকেট করছে কারা? আপনার সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রীই (টিপু মুনশি) তো বলেছিলেন, সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কিছু করা যাবে না। প্রধানমন্ত্রীকে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করেছিলেন, বাণিজ্যমন্ত্রী এটা বলেছেন… প্রধানমন্ত্রী এর কোনো সঠিক জবাব দিতে পারেননি।

‘‘সিন্ডিকেটে তো আপনাদেরই লোক … এই কারণে তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারেন না। আপনি পদ্মা সেতু দেখিয়ে, ফ্লাইওভার দেখিয়ে সাধারণ মানুষের পেটের আহার কেড়ে নিচ্ছেন, সেটা কি মানুষ বোঝে না? মানুষ ঠিক মতোই বোঝে। শ্রমজীবী মানুষের কথা বলতে গিয়ে আজকে হুমায়ুন ইসলাম খান কারাগারে। কেউ সরকারের বিরুদ্ধে কথা বলেই তাকে কারাগারে যেতে হচ্ছে।”

ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের প্রসঙ্গে’

রিজভী বলেন, “আজকে ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন যে, ৭ জানুয়ারির ডামি যে নির্বাচন আমরা বলি- সেই নির্বাচনে ভারত পাশে ছিল বলে অন্যান্য দেশ কারসাজি করতে পারেনি। আপনি সত্যি কথাই বলেছেন। কারণ আপনাদেরই সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী (আব্দুল মোমেন) বলেছেন, দুই দেশের সম্পর্ক স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক।

“স্ত্রীর আবদার, অন্যায় আবদার, বিনাভোটে ক্ষমতায় থাকার আবদার স্বামী কে সেটাকে প্রত্যাখান করবে? স্বামী তো পাশেই থাকবে। ওবায়দুল কাদের সাহেব আপনাদের ভাষাতেই আমি সেটি বললাম। এই আবদার তো ফেলতে পারে না। ভারত শুনি গণতান্ত্রিক দেশ… কিন্তু সে তো আওয়ামী সরকারের স্বামী… তো স্বামী স্ত্রীর কথাই শুনবে।”

বিএনপি নেতা রিজভী বলেন, ‘‘জনগণের ভোটাধিকার, জনগণের নাগরিক অধিকার, জনগণকে বন্দি করা, ভোটের আগেই ২৫ হাজার বিএনপির নেতাকর্মীকে কারাগারে পাঠানো …এরকম একটা নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে ভোটার শূন্য নির্বাচন করে ওবায়দুল কাদের আপনার এতো বড় বড় কথা, এতো চিৎকার… প্রলাপগুলো তো মিথ্যা হয়নি সমাজে।

“চোরের মায়ের বড় গলা, যারা ভোট চুরি করে তারা প্রকারান্তরে তারা যে চুরি করে সেটাই জানিয়ে দেয়… ওবায়দুল কাদের সাহেবের আজকের এই বক্তব্য এটা চুরিরই বক্তব্য। স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কের কারণেই একটা অবৈধ নির্বাচন, ভোটারশূন্য নির্বাচন, গণধিকৃত নির্বাচন জনগণের বর্জিত নির্বাচন সেই নির্বাচনকে ভারত সমর্থন দিয়েছে, সেই কথাটাই তিনি প্রকারান্তরে বললেন।”  

শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসাইনের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক মঞ্জুরুল ইসলাম মঞ্জুর সঞ্চালনায় প্রতিবাদ সমাবেশে বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, আবদুস সালাম আজাদ, ফিরোজ উজ-জামান মামুন, মহানগর বিএনপি দক্ষিণের সদস্য সচিব রফিকুল আলম মজনু, ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব, শ্রমিকদলের খন্দকার জুলফিকার মতিন, ফরিদ আহমেদ, হাজী বাহার উদ্দিন নোবেল, মিনার উদ্দিন, মোসলেম উদ্দিন বাবলু, মন্টু মেম্বার।