বিএনপি নেতারা ভারতীয় শাড়ি ‘তেমন কেনেন না’, দাবি রিজভীর

রিজভীর ভাষ্য, তার স্ত্রীকে তার মামা একটি ভারতীয় শাড়ি উপহার দিয়েছিলেন; সেটি দিয়ে পরে কাঁথা বানানো হয়, সেই কাঁথাও ছিঁড়ে গেছে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 March 2024, 12:35 PM
Updated : 28 March 2024, 12:35 PM

বিএনপি নেতাদের স্ত্রীরা ভারতীয় শাড়ি তেমন ‘কেনেন না’ বলে দাবি করেছেন দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যিনি কয়েক দিন আগে ভারতীয় শাল পুড়িয়ে আলোচনার জন্ম দেন।

বৃহস্পতিবার দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে রিজভী বলেন, ‘গতকাল প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আচ্ছা ওরা এত কিছু করছে, শাল পোড়ায়, তো বউয়ের শাড়িটা পোড়াতে পারে না? ইনডিয়া থেকে আনা শাড়ি।’ আমি বলতে চাই, আমাদের বিএনপি নেতারা ইনডিয়া থেকে শাড়ি তেমন কেনেন না।”

গত কিছুদিন ধরে ভারতীয় পণ্য বর্জনের আহ্বানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি প্রচার চলছে, যাতে সমর্থন দিচ্ছেন বিএনপির কোনো কোনো নেতা।  

গত সপ্তাহে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাকে দলের সমর্থন জানিয়ে তার গায়ে থাকা কাশ্মিরি শাল আগুন ছুড়ে ফেলেন। 

বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা পরে দাবি করেন, এ বিষয়ে দলে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি, স্থায়ী কমিটিতে আলোচনাও হয়নি। রিজভী এই কাজ করবেন, সেটাও জানা ছিল না তাদের।

তবে সোমবার নয়া পল্টনে বিএনপির আয়োজনে মুক্তিযোদ্ধা সমাবেশেও ভারতীয় পণ্য বর্জনের আহ্বানে ব্যানার দেখা যায়।

সেই প্রসঙ্গ ধরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বুধবার এক অনুষ্ঠানে বলেন, “বিএনপির এক নেতা চাদর খুলে পোড়াল। যে নেতারা বলছেন, ভারতীয় পণ্য বর্জন করবেন, তাদের বউদের কয়খানা ভারতীয় শাড়ি আছে? আমি জানি, ঈদের আগে দেখি বিএনপির মন্ত্রীদের বউরা ভারত থেকে শাড়ি এনে বিক্রি করত।”

"আমি এখন বলব বিএনপি নেতারা যদি বাসায় গিয়ে বউদের ভারতীয় শাড়ি পোড়ান, সেদিন বিশ্বাস করব আপনারা সত্যি ভারতীয় শাড়ি বর্জন করলেন। ভারতীয় মসলা ছাড়া তারা খেতে পারবে কি না এ উত্তর তাদের দিতে হবে। আপনারা এ পণ্য সত্যি বর্জন করছেন কি না, এ কথাটাই আমরা জানতে চাই।"

ওই অভিযোগ অস্বীকার করে রিজভী বলেন, “আমার নানার বাড়ি হচ্ছে ইন্ডিয়ায়। বিয়ের পরে একবার গিয়েছিলাম। আমার ছোট মামা একটা শাড়ি দিয়েছিলেন। আমার স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করলাম যে, ওই শাড়িটা কই? সেটা কবেই… আমাদের দেশের মেয়েরা শাড়ি পুরনো হলে সেটা দিয়ে কাঁথা সেলাই করতে দেয়। আমার মিসেস বললেন, কাঁথা সেলাই করতে কবে দিয়েছি সেটাও ছিঁড়ে গেছে।”

প্রধানমন্ত্রী বিএনপি নেতাদের কটাক্ষ করে ওই বক্তব্য দিয়ে “দেশের স্বার্থ নিয়ে তামাশা করেছেন” বলেও মন্তব্য করেন রিজভী।

ভারতীয় পণ্য বর্জনের আন্দোলনের সঙ্গে ‘সকলের সম্পৃক্ত হওয়া উচিত’ মন্তব্য করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, “এ দেশকে স্বনির্ভর হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। আমরা সেই প্রত্যয় সেই আদর্শ নিয়ে কাজ করছি। আমাদের নিজের বোনা যে ফসল, সেটা আরো বেশি করে উৎপাদন করব, আমাদের মিল-কারখানায় যে শাড়ি তৈরি হয়, সেই শাড়ি আমাদের মেয়েরা পরবে, আমাদের কল-কারখানায় যে লুঙ্গি তৈরি হয়, সেই লুঙ্গি আমাদের দেশের ছেলেরা পরবে।

“আমরা অন্যের কাছে নতজানু হব না, অন্যের দ্বারস্থ হব না… এই জাতীয়তাবাদী চিন্তা থেকে আমাদেরকে কাজ করতে হবে।”

আওয়ামী লীগ সরকারের ভারত নীতির সমালোচনা করে রিজভী বলেন, “এত কিছু ঘটনা… সীমান্ত হত্যা হয়। আপনি একটা ডামি সরকার, একটা ডাকাত সরকার, একটা অবৈধ সরকারের পক্ষে যদি একটি দেশ থাকে, তাহলে তার বিরুদ্ধে লড়তে হবে না? জনগণ প্রতিবাদ জানাবে না?”

বাংলাদেশের নির্বাচন নিয়ে ভারতের অবস্থানের সমালোচনা করে এই বিএনপি নেতা বলেন, “আজকে যদি তারা এটুকু বলত যে ‘না আমরা একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। আমরা কোনো দলের পক্ষে না। যেরকম আমেরিকা বলছে, যেটা ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলেছে। সেটা পর্যন্ত তারা (ভারত) বলে নাই।

“উল্টো ইন্ডিয়ার হাই কমিশনের কর্মকর্তারা বলে দিলেন যে, আমরা এই সরকারের পক্ষে। অতএব আমি মনে করি, অবশ্যই যে সামাজিক আন্দোলন হচ্ছে পণ্য বর্জনের, তার প্রতি সংহতি জানানো ন্যায়সঙ্গত।”

গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ‘আমরা বিএনপি পরিবার সেল’ এর উদ্যোগে ‘গুম-খুন-পঙ্গুত্বের শিকার’ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঈদ উপহার বিতরণ উপলক্ষে এ অনুষ্ঠান হয়।

সেলের আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমনের সভাপতিত্বে ও সদস্য নাজমুল হাসানের সঞ্চালনায় এই আলোচনা সভায় দলের কেন্দ্রীয় নেতা শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, রশিদুজ্জামান মিল্লাত, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মীর হেলাল, যুব দলের আবদুল মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের ইয়াসিন আলী, ছাত্রদলের রাকিবুল ইসলাম রাকিব, নাছির উদ্দীন নাছির, চৌধুরী আলমের ভাই খুরশীদ আলম মিন্টু, সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন সানজীদা ইসলাম তুলি, নুরে আলমের স্ত্রী রিনা আলম, মাহবুবুর রহমান বাপ্পীর বোন ঝুমুর আক্তার, পারভেজ রেজার ছোট মেয়ে হৃদি বক্তব্য দেন।

পুরনো খবর

Also Read: বিএনপি নেতারা স্ত্রীদের ভারতীয় শাড়ি পোড়াবেন কি না, জানতে চান প্রধানমন্ত্রী