বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন: হতে পারে সহনশীলতার চর্চা দিবস

বিভুরঞ্জন সরকারবিভুরঞ্জন সরকার
Published : 17 March 2022, 10:11 AM
Updated : 17 March 2022, 10:11 AM

১৯২০ সালের ১৭ই মার্চে ফরিদপুরের গোপালগঞ্জ মহকুমার (বর্তমানে জেলা) টুঙ্গিপাড়া গ্রামে শেখ লুৎফর রহমান ও সায়েরা খাতুন দম্পতির ঘরে এক পুত্র সন্তানের জন্ম হলে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। এত আনন্দের কারণ কী? ওই দম্পতির প্রথম দুই সন্তান কন্যা। তৃতীয় সন্তান পুত্র হওয়ায় তাদের আনন্দ হয়েছিল বেশি। পুত্র সন্তানের নাম রাখা হয় মুজিব। শেখ মুজিবুর রহমান। একটি নিভৃত পল্লীতে জন্ম নেওয়া ওই শিশুই একদিন বাঙালি জাতির জন্য স্বাধীন জাতিরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে জাতির পিতা হবেন, হবেন বঙ্গবন্ধু– তা কি কেউ ভেবেছিলেন?

হ্যাঁ, ভেবেছিলেন। শেখ মুজিবুর রহমানের বড় কন্যা শেখ হাসিনা লিখেছেন, "আমার দাদির দুই কন্যা সন্তানের পর প্রথম পুত্র সন্তান আমার আব্বা। আর তাই, আমার দাদির বাবা তার সমস্ত সম্পত্তি দাদিকে দান করেন এবং নাম রাখার সময় বলে যান, মা সায়েরা, তোর ছেলের নাম এমন রাখলাম যে নাম জগৎ জোড়া খ্যাত হবে।" নানার ভবিষ্যৎবাণী নাতি অক্ষরে অক্ষরে সত্য প্রমাণ করেছেন।

শেখ মুজিবের জন্মস্থান বাইগার নদীবিধৌত টুঙ্গিপাড়া গ্রামের প্রাকৃতিক পরিবেশের বিবরণ দিয়ে শেখ হাসিনা লিখেছেন, "বাইগার নদীর তীর ঘেঁষে ছবির মতো সুন্দর একটি গ্রাম সে গ্রামটির নাম টুঙ্গিপাড়া। বাইগার নদী এঁকে-বেঁকে গিয়ে মিশেছে মধুমতী নদীতে। এই মধুমতী নদীর অসংখ্য শাখানদীর একটি নদী বাইগার নদী। নদীর দু'পাশে তাল, তমাল, হিজলগাছের সবুজ সমারোহ। ভাটিয়ালী গানের সুর ভেসে আসে হালধরা মাঝির কণ্ঠ থেকে, পাখির গান আর নদীর কলকল ধ্বনি এক অপূর্ব মনোরম পরিবেশ গড়ে তোলে।"

গ্রামের উদার, নির্মল, মুক্ত পরিবেশে শেখ মুজিব বড় হতে থাকেন। বড় দুই বোন অত্যন্ত আদর করতেন তাকে। শুধু তাই নয়, হাসি-খুশি ও চঞ্চল স্বভাবের জন্যে গ্রামের লোকদের কাছেও খুব প্রিয় ছিলেন তিনি। তিনি বাবা-মার কড়া শাসনের মধ্যে ছিলেন। ইসলামধর্ম প্রচারকদের বংশে শেখ মুজিবের জন্ম। তাই ধর্মীয় আবহে কেটেছে তার ছেলেবেলা। ভোরে উঠে কোরআন শিক্ষা ছিল সেই পরিবারের রীতি। বড় হয়েও তিনি ধর্মীয় কাজে অবহেলা করতেন না। খাবারের প্রতি লোভ তার কোনোদিনও ছিল না। তিনি ছিলেন স্বল্পভোজী। দামি খাবার নয় নিরামিষ, শাকসবজি, ডাল-ভাত, ফলের মধ্যে কলা অত্যন্ত পছন্দ করতেন।

বালকবেলায়ই শেখ মুজিবের জীবনে কতগুলো বিশেষ ঘটনা ঘটে। অল্প বয়সেই বেরিবেরি রোগে আক্রান্ত হয়ে ভুগছেন। লেখাপড়ায় বিঘ্ন ঘটেছে। কিন্তু এগিয়ে চলা থেকে বিরত হননি। শুনতে অস্বাভাবিক মনে হলেও তিনি যখন আনুষ্ঠানিকভাবে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন তখন তার বয়স ১৮, আর কনের বয়স মাত্র ১১।

শেখ হাসিনাই লিখেছেন, "আব্বার যখন দশ বছর বয়স তখন তাঁর বিয়ে হয়। আমার মায়ের বয়স ছিল মাত্র তিন বছর। আমার মা পিতৃহারা হবার পর তার দাদা এই বিয়ে দিয়ে সমস্ত সম্পত্তি মা ও খালার নামে লিখে দেন। আমার খালা মায়ের থেকে তিন-চার বছরের বড়। আত্মীয়ের মধ্যেই দুই বোনকে বিয়ে দেন এবং আমার দাদাকে (গার্জিয়ান) মুরব্বী করে দেন। আমার মার যখন ছয় সাত বছর বয়স তখন তাঁর মা মারা যান এবং তখন আমার দাদী কোলে তুলে নেন আমার মাকে। আর সেই থেকে একই সঙ্গে সব ছেলে মেয়েদের সঙ্গে মানুষ হন। আমার আব্বার লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলার প্রতি দারুণ ঝোঁক ছিল। বিশেষ করে ফুটবল খেলতে খুব পছন্দ করতেন। মধুমতী নদী পার হয়ে চিতলমারী ও মোল্লারহাটে যেতেন খেলতে।"

ছোটবেলা থেকেই শেখ মুজিব যে অন্যদের থেকে আলাদা ছিলেন, ছিলেন সাহসী ও নেতৃত্বগুণের অধিকারী সেটা সত্যায়ন করছেন শেখ হাসিনা এভাবে– "তিনি ছোটবেলা থেকে অত্যন্ত হৃদয়বান ছিলেন। তখনকার দিনে ছেলেদের পড়াশোনার তেমন সুযোগ ছিল না। অনেকে বিভিন্ন বাড়িতে জায়গীর থেকে পড়াশোনা করত। চার-পাঁচ মাইল পথ হেঁটে স্কুলে আসতে হতো। সকালে ভাত খেয়ে স্কুলে আসত। আর সারাদিন অভুক্ত অবস্থায় অনেক দূর হেঁটে তাদের ফিরতে হতো। যেহেতু আমাদের বাড়িটা ছিল ব্যাংকপাড়ায়। আব্বা তাদের বাড়িতে নিয়ে আসতেন। স্কুল থেকে ফিরে দুধ-ভাত খাবার অভ্যাস ছিল এবং সকলকে নিয়েই তিনি খাবার খেতেন। দাদির কাছে শুনেছি আব্বার জন্যে মাসে কয়েকটা ছাতা কিনতে হতো, কারণ আর কিছুই নয়। কোনো ছেলে গরিব, ছাতা কিনতে পারে না, দূরের পথ রোদ বা বৃষ্টিতে কষ্ট হবে দেখে তাদের ছাতা দিয়ে দিতেন। এমনকি পড়ার বইও মাঝে মাঝে দিয়ে আসতেন। আমার দাদা-দাদি অত্যন্ত উদার প্রকৃতির ছিলেন। আমার আব্বা যখন কাউকে কিছু দান করতেন তখন কোনোদিনই বকাঝকা করতেন না বরং উৎসাহ দিতেন। আমার দাদা ও দাদির এই উদারতার আরও অনেক নজির রয়েছে।"

শেখ মুজিব সম্পর্কে এটাও জানা তথ্য যে, মানুষের দারিদ্র্য ও অনাহার তিনি সহ্য করতে পারতেন না। একবার দেশে বড় অভাব পড়েছে, কিন্তু তাদের গোলায় বেশকিছু ধান ছিল। তিনি সেখান থেকেই অভাবী মানুষকে ধান বিতরণ শুরু করলেন। বাবা শেখ লুৎফর রহমান বাড়িতে ফিরে জিজ্ঞাসা করলে, তিনি বলেন, "বাবা আমাদের মতো ওদেরও ক্ষুধা আছে, ওরা বাঁচতে চায়, তাই ধান দিয়ে ওদের বাঁচার ব্যবস্থা করেছি"। শেখ লুৎফর রহমান শিশুপুত্রের মহানুভবতা দেখে আর কিছুই বলেননি।

হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর সান্নিধ্যে এসে শেখ মুজিবের ধীরে ধীরে রাজনীতিমনস্ক হয়ে ওঠা, কলকাতার ইসলামিয়া কলেজে পড়তে গিয়ে ছাত্র রাজনীতিতে নেতা হওয়া, পাকিস্তান আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ, পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরপরই আবার বাঙালির অধিকার ও মর্যাদার বিষয়ে ভিন্ন চিন্তা শুরু, ছাত্রলীগ ও আওয়ামী লীগ গড়ে তুলতে উদ্যোগী ভূমিকা, উর্দুকে একমাত্র রাষ্ট্রভাষা করার বিরোধিতা ও বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্র ভাষা করার আন্দোলনে সামনে থেকে ভূমিকা পালন এবং তারপর জেল-জুলুম উপেক্ষা করে মানুষের পাশে থেকে মানুষের জন্য ধরাবাহিকভাবে সংগ্রাম করে পর্যায়ক্রমে গণমানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হওয়ার ইতিহাস এখন কমবেশি সবারই জানা। তিনি মানুষের জন্য লড়াই করেছেন। মানুষ তার প্রতি আস্থা রেখেছে। ক্ষমতার জন্য রাজনীতি না করেও তিনি ক্ষমতার শীর্ষে পৌঁছেছেন। তিনি স্বপ্ন দেখেই ক্ষান্ত হননি, স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার যুদ্ধজয় সম্ভব করে তুলেছেন। তিনি বলেছিলেন, কেউ আমাদের দাবিয়ে রাখতে পারবে না। কেউ বাঙালিকে দাবিয়ে রাখতে পারেনি। বাংলাদেশ আজ স্বাধীন রাষ্ট্র এবং বিশ্বসভায় বাংলাদেশ এক সম্ভ্রমের সঙ্গে উচ্চারিত এক নাম।

বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানমালা করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে বিঘ্নিত হয়েছে, পরিল্পনামতো সবকিছু করাও হয়তো সম্ভব হয়নি। তবে এটা স্বীকার করতেই হবে, তাকে সপরিবারে হত্যা করে, ইতিহাস থেকে তার নাম মুছে ফেলার যে বিকৃত উল্লাসনৃত্য কোনো কোনো মহল শুরু করেছিল তা রুখে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন সাড়ম্বরে পালন করা এখন আর বাধার মুখে পড়ে না। বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনকে জাতীয় শিশুদিবস হিসেবে পালন করা হয়। দিনটি সরকারি ছুটির দিন। এবার বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে তার একটি বিরল গুণের কথা উল্লেখ করে এ বিষয়ে দেশের নীতিনির্ধারকদের মনোযোগ আকর্ষণ করতে চাই। আমরা জানি, বঙ্গবন্ধু উদার ও সাহসী ছিলেন। একই সঙ্গে ছিলেন অত্যন্ত ধৈর্যশীল ও সহনশীল মানুষ। তিনি চরম বিপদের মুখেও মাথা ঠাণ্ডা রেখে সিদ্ধান্ত নিতে পারতেন। তিনি অনেকের পরামর্শ নিতেন কিন্তু সিদ্ধান্ত নিতেন নিজের বিবেকবুদ্ধি অনুযায়ী।

১৯৭১ সালের ৭ই মার্চের ভাষণ ছিল তার জীবনের একটি অন্যতম জটিল মুহূর্ত। কি এক অস্থির সময়। একদিকে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী গোলাবারুদ নিশানা করে আছে, অন্য দিকে দলের মধ্যে তরুণ নেতাদের সরাসরি স্বাধীনতা ঘোষণার চাপ। দেশের মানুষও স্লোগান তুলেছে 'বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো'। সেই চরম মুহূর্তেও শেখ মুজিব শান্তভাবেই দিলেন তার জীবনের সেরা ভাষণ, যেটা গোটা পৃথিবীর এক উল্লেখযোগ্য বক্তৃতা। সবাইকে যা কিছু আছে তা দিয়ে শত্রুর মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকার কথা বলে দিলেন সেই কালজয়ী ঘোষণা "এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম"। এরপর পাকিস্তানি কারাগারে বন্দি অবস্থায় নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও তিনি পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর চাপের মুখে আপসের পথে না হেঁটে মানসিক দৃঢ়তার এক অনন্য উদাহরণ রেখেছেন।

১৯৯৬ সালের ১৬ নভেম্বর ইউনেসকোর ২৮তম অধিবেশনে 'সহনশীলতার মৌলিক নীতি ঘোষণা' গৃহীত এবং প্রতি বছরের ১৬ নভেম্বরকে আন্তর্জাতিক সহনশীলতা দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। আমার প্রস্তাব হলো, বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনটিকে আন্তর্জাতিক সহনশীলতা দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাব করা হোক। যদি অন্য কোনো দেশ প্রথমে সাড়া না দেয় তাহলে বাংলাদেশে আমরা ১৭ই মার্চ সহনশীলতা দিবস হিসেবে পালন করতে পারি। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক নীতি-আদর্শ-দর্শনের সঙ্গে বিষয়টি সঙ্গতিপূর্ণ।

ইউনেসকো মনে করে, মানব সমাজ স্বাভাবিকভাবেই বৈচিত্র্যময় এবং এ বৈচিত্র্যময় পৃথিবীতে ভিন্ন মত ও সম্প্রদায়ের মধ্যে ভাবের আদান-প্রদান ও সম্প্রীতি নিশ্চিত করতে মানুষের মধ্যে সহনশীল মনোভাব প্রয়োজন। সমাজে বিভিন্ন ধর্ম, ভাষা, সংস্কৃতি ও জাতিসত্তার উপস্থিতি সংঘাতের পথকে প্রশস্ত করে না। বরং সহনশীল পরিবেশ এ সামাজিক বাস্তবতাকে সঠিক পথে পরিচালনার মাধ্যমে সমাজের অন্তর্নিহিত সক্ষমতা বাড়ায়।

ইউনেসকো ঘোষণা অনুযায়ী বছরের একদিন সহনশীলতা দিবস পালন করা এখন অনেকটা যেন রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশেও দিবসটি পালন করা হয়। তবে ব্যাপকভাবে নয়। গণমাধ্যমেও এই দিবস নিয়ে তেমন লেখা চোখে পড়ে না। সরকারের পক্ষ থেকেও কোনো কর্মসূচি নেওয়ার কথা শোনা যায় না। কারণ কি এই যে, আমরা যথেষ্ট সহনশীল? আমাদের আর নতুন করে সহনশীলতা চর্চার প্রয়োজন নেই? আসলে আমরাও তো দিন দিন অতিমাত্রায় অসহনশীল হয়ে পড়ছি। আমরা ভিন্নমতকে পাত্তা দেই না। বিরোধিতা পছন্দ করি না।

অবশ্য সহনশীলতা দিবস পালন করলেই সহনশীলতা চর্চা স্বয়ংক্রিয়ভাবে বেড়ে যাবে, তা কিন্তু জোর দিয়ে বলার মতো অবস্থা হয়নি। সহনশীলতা বলতে আমরা আসলে কী বুঝি? এক কথায় বলা যায়, ধৈর্য না হারিয়ে, নিজের রাগ-ক্রোধ সংবরণ করে উদারতার উদাহরণ তৈরি করাই সহনশীলতার লক্ষণ। সব মানুষ একরকম নয়। সব মানুষের ধর্ম বিশ্বাস এক নয়, সব মানুষের ভাষা এক নয়, সব মানুষের সংস্কৃতি এক নয়, সব মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থাও এক নয়। কিন্তু এই সব ভিন্নতা নিয়ে মানুষকে এক পৃথিবীতে, এক দেশে, আরও ছোট করে বললে এক পাড়ায় বসবাস করতে হয়। এই যে নানা ভিন্নতা নিয়ে পাশাপাশি বসবাস, তারজন্যই প্রয়োজন বিরোধের বদলে সমঝোতা। মানুষ নিজেদের এবং সমাজের কল্যাণের জন্য পরস্পরের ওপর নির্ভরশীল। এই পারস্পরিক নির্ভরতাই তো দ্বন্দ্ব-বিরোধের পরিবর্তে একতাবদ্ধভাবে থাকতে মানুষকে অনুপ্রাণিত করার কথা। কিন্তু তা না হয়ে মানুষ কেন বিরোধাত্মক মনোভাব সম্পন্ন হয়ে উঠল?

স্বার্থ চিন্তা এবং অসংযত লোভ এবং নানা ভেদজ্ঞানই হয়তো মানষকে ক্রমাগত সংকীর্ণ ও অসংযত হওয়ার পথে ঠেলতে ঠেলতে এখন একটা চরম হানাহানি ও উগ্রতার বাতাবরণ তৈরি করেছে। মানুষ যতই অজানাকে জানছে ততই তার মধ্যে অস্থিরতাও বাড়ছে। আরও জানার আগ্রহ মানুষের তৃপ্তি কেড়ে নিয়েছে। সারাক্ষণ তার মধ্যে চাওয়া-পাওয়ার তীব্রতা বাড়ছে। মনের মধ্যে চাপ বাড়ছে। আর এই ক্রমবর্ধমান চাপ মানুষের জীবনকে ধৈর্যহীন করে তুলছে। ধৈর্যের অভাব একদিকে মানুষের আত্মবিশ্বাস টলিয়ে দিচ্ছে, অন্যদিকে তার সাহসও কমিয়ে দিচ্ছে। ও বুঝি আমাকে ছাড়িয়ে গেল, আমি বুঝি তার সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়লাম, ওর হলো, আমার হলো না– এমনতর সব ঘটনার তাড়া মানুষকে সহনশীল থাকতে দিচ্ছে না। বিভিন্ন ধর্মবিশ্বাসীরা পরস্পরকে শত্রু ভাবছে, সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে অবিশ্বাস বাড়ছে, জাতিতে জাতিতে বিদ্বেষ বাড়ছে, সম্পদের বণ্টন সুষম হচ্ছে না– সবকিছুর মিলিত ফল– হিংসা। হিংসা থেকেই উগ্রতা, জঙ্গিবাদের জন্ম।

আমি শ্রেষ্ঠ, আমার বিশ্বাসই চরম সত্য– এমন চিন্তা দায়বদ্ধতার ঘাটতি তৈরি করছে। আমার সঙ্গে সবাইকে একমত হতে হবে, আমার কথা সবাইকে মেনে চলতে হবে– না হলেই গলা থেকে মাথা আলাদা করে দেওয়ার চিন্তা পৃথিবীকে শক্তিমত্তার মুখোমুখি এনে দাঁড় করিয়েছে। অন্যের সঙ্গে কিছু ভাগ করে নেওয়ার মনোভাবকে এখন এক ধরনের দুর্বলের চিত্তবিকার বলে উপহাস করা হয়।

বঙ্গবন্ধুর রাজনীতি ছিল শালীন, সৌজন্য-সৌহার্দ্যের মিশেলে সহনশীল এক সামাজিক মূল্যবোধের অমূল্য দৃষ্টান্ত। তার জন্মদিনে সহনশীলতার জয়গান গাওয়া যেতেই পারে।