বঙ্গবন্ধুর খুনিদের যেভাবে মোশতাক, জিয়া ও বিএনপি রক্ষা করেছে

পঁচাত্তরের ২৬ সেপ্টেম্বর দিনটি ১৫ অগাস্টের কলঙ্কিত অধ্যায়ের একটি ধারাবাহিকতা। এই দিন মোশতাক সরকার বঙ্গবন্ধুর খুনিদের অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে ইনডেমনিটি দেয়।

অজয় দাশগুপ্তঅজয় দাশগুপ্ত
Published : 26 Sept 2022, 03:18 PM
Updated : 26 Sept 2022, 03:18 PM

বাংলাদেশের ইতিহাসে ১৫ অগাস্টের মতোই একটি কলঙ্কিত-কুখ্যাত দিন ২৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৫। এ অধ্যায়ের হোতা বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত খন্দকার মোশতাক আহমদ ও জিয়াউর রহমান। অ্যান্থনি মাসকারেনহাস তার ‘বাংলাদেশ: রক্তের ঋণ’ গ্রন্থে লিখেছেন: “২৬ সেপ্টেম্বর মোশতাক অর্ডিন্যান্স জারির মাধ্যমে শেখ মুজিবের হত্যাকারীদের কৃত অপরাধ থেকে অব্যাহতি প্রদান করেন। কিন্তু পত্র-পত্রিকায় এ খবর প্রকাশ করা হয়নি। কারণ এ খবর প্রকাশ হয়ে গেলে জনসাধারণের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হতে পারত।”

ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স জারির সময় বাংলাদেশে বলবৎ ছিল সামরিক শাসন, আর সেনাবাহিনী প্রধান পদে ছিলেন মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পূর্বাপর পরিকল্পনায় প্রত্যক্ষভাবে যুক্ত ছিলেন ১৫ আগস্ট (১৭৫) সেনাবাহিনীর উপপ্রধান পদে থাকা জিয়াউর রহমান। ওই অভিশপ্ত সকালে শাহবাগ এলাকায় বাংলাদেশ বেতারের ‘নতুন রাষ্ট্রপতির প্রতি আনুগত্য’ ঘোষণার সময় তিন বাহিনী প্রধানের সঙ্গে সেনাবাহিনীর উপপ্রধান জিয়াউর রহমানও উপস্থিত। বঙ্গভবনের ‘শপথের সময়েও’ তিনি অপরিহার্য ব্যক্তি। কারণ তাপকে খুবই ‘পাওয়ারফুল’ হিসেবে গণ্য করা হয়।  বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সপ্তাহ যেতে না যেতেই জিয়াউর রহমানকে সোনাবাহিনী প্রধান পদে নিয়োগ দেয় খন্দকার মোশতাক আহমদ। বিচারপতি আবুসাদাত মোহাম্মদ সায়েম লিখেছেন- “মিলিটারি মানে সেনাবাহিনী; আর মিলিটারি বা সেনাবাহিনীর শাসন মানে সেনাপ্রধানের নেতৃত্ব।” [বঙ্গভবনের শেষ দিনগুলি: পৃষ্ঠা ২৯]

১৫ অগাস্ট সকালেই বাংলাদেশ ভূখণ্ড সামরিক শাসনের আওতায় আসে। সামরিক শাসনে রাজনৈতিক তৎপরতা নিষিদ্ধ, জনসাধারণের কথা বলার স্বাধীনতা রুদ্ধ। সংবাদপত্র, বেতার, টেলিভিশন ব্যবহার করে যা কিছু বলার বলবে কেবল খুনিচক্র ও তাদের সহযোগীরা। তবে বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের সদস্যদের নিষ্ঠুরভাবে হত্যায় জড়িতদের যে ইনডেমনিটি বা দায়মুক্তি দেওয়া হয়েছে, সেটা তাৎক্ষণিক বলা হয়নি। অ্যান্থনি মাসকারেনহাস লিখেছেন, “খন্দকার মোশতাক শেখ মুজিবের বুকের তাজা রক্তের ওপর দিয়ে খালি পায়ে হেঁটে গদিতে বসেন। তিনি শেখ মুজিবের হত্যাকারীদের বিচার করবেন, এটা কেউ আশা করেনি। কিন্তু আনুষ্ঠানিকভাবে খুনিদের ক্ষমা করে দেওয়া? এর মাধ্যমে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বলে দেওয়া হলো- বিদ্রোহ, ধ্বংস, হত্যা সেনাবাহিনীর অফিসার আর জওয়ানদের জন্য অনুমোদনযোগ্য।”

সেনাবাহিনী প্রধান পদে জিয়াউর রহমানকেই চাইছিল ১৫ অগাস্টের ঘাতকরা। অ্যান্থনি মাসকারেনহাস লিখেছেন, “সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল সেনাবাহিনী প্রধানের পদটি নিয়ে। রশিদ ও ফারুক এ পদে মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানকে স্থলাভিষিক্ত করতে চাইছিল।” [‘বাংলাদেশ: রক্তের ঋণ’, পৃষ্ঠা ১০৪]

রতনে রতন চেনে বৈকি!

জিয়াউর রহমান কীভাবে সেনাবাহিনী প্রধানের পদে বসেছিলেন সে বিষয়ে তার ঘনিষ্ঠ লে. কর্নেল হামিদ লিখেছেন, “জিয়াউর রহমান ১৯৭৫ সালের ২৪ আগস্ট ফোন করে তার কাছে যেতে বলেন। আমি একটু পরে আসছি বলায় তিনি রেগে বলে ওঠেন- শাট আপ, এক্ষুণি আস। আমি তার অফিসে গেলে তিনি বলে ওঠেন-  যথাযথভাবে স্যালুট দাও। তুমি এখন সেনাবাহিনী প্রধানের কক্ষে প্রবেশ করছ। তিনি আমাকে এ পদে নিয়োগের জন্য প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের চিঠি দেখান। তাকে বলি, সেনাবাহিনী প্রধান মেজর জেনারেল শফিউল্লাহ কি এটা জানেন? তিনি হয়ত দায়িত্ব হস্তান্তরের জন্য কয়েকদিন সময় নিতে পারেন। উত্তরে জিয়া বলেন- শাট আপ, আমি আগামীকালই দায়িত্ব নেব। পরদিন জিয়া প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন- আজ থেকে আমি সেনাবাহিনী প্রধান। সকলকে শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে। অন্যথায় কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

উচ্চাভিলাষী ও চতুর জিয়াউর রহমান মোশতাকের সঙ্গে ক্ষমতা ভাগাভাগিতে তুষ্ট ছিলেন না। অ্যান্থনি মাসকারেনহাস ‘বাংলাদেশ: রক্তের ঋণ’ গ্রন্থে লিখেছেন- “১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান মাত্র ৪৩ বছর বয়সে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। বিচারপতি সায়েম তাঁর ঘোষণায় বলেন, শারীরিক অসুস্থতার কারণে আমি জিয়াউর রহমানের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর করছি। কিন্তু তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে ওই ঘোষণা প্রদান করেননি। জেনারেল জিয়া বিচারপতিকে ওই ঘোষণা দেওয়ার জন্য বলপ্রয়োগ করেছিলেন।” [বাংলাদেশ: রক্তের ঋণ, পৃষ্ঠা ১৫৫]

অ্যান্থনি মাসকারেনহাস আরও লিখেছেন, “আগের বছর (১৯৭৬) ২৮ নভেম্বর জিয়া সিদ্ধান্ত নেন- প্রেসিডেন্ট সায়েমকে একসঙ্গে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও প্রেসিডেন্ট পদে রাখা তার জন্য বিপজ্জনক হয়ে দাঁড়াবে। তিনি ফেব্রুয়ারি মাসের জাতীয় সংসদ নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করতে সায়েমকে বাধ্য করেন।... ২৮ নভেম্বর (১৯৭৬) রাতে  জিয়া ডেপুটি চিফ অব আর্মি স্টাফ জেনারেল এরশাদ, চিফ অব স্টাফ আবুল মঞ্জুর, নবম ডিভিশনের কমান্ডার জেনারেল মীর শওকত আলী, নৌ ও বিমান বাহিনীর দুই প্রধান এবং প্রেসিডেন্টের বিশেষ সহকারী বিচারপতি সাত্তারকে নিয়ে বঙ্গভবনে যান। তিনি প্রেসিডেন্টের প্রতি প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের পদ ছেড়ে দিতে বলেন, কিন্তু সায়েম জিয়ার অনুরোধ প্রত্যাখান করেন। বিচারপতি সাত্তার সায়েমকে বলেন, ভাই জিয়া যখন সিএমএলএ পদটা চাইছেন, পদটি আপনি তাকে দিয়ে দেন। রাত ১টার দিকে সায়েম একটু নরম হলেন এবং প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের পদ হস্তান্তরের কাগজে সই করেন।... আসলে জিয়ার দরকার ছিল কেবল ক্ষমতা আর প্রকৃত ক্ষমতা।” [বাংলাদেশ: রক্তের ঋণ, পৃষ্ঠা ১৫৬]    

জিয়াউর রহমান তার কাছ থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নিয়েছেন- এ নিয়ে অসন্তুষ্টি গোপন রাখেননি বিচারপতি সায়েম। তিনি লিখেছেন, “কীভাবে সেনাপ্রধান (মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান) একটি স্থায়ী সার্ভিসের অফিসার হিসেবে কর্মরত থাকা অবস্থায় প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন এবং সেই সঙ্গে স্থল, নৌ ও বিমান- তিন সশস্ত্র বাহিনীর প্রত্যেকটির ভারপ্রাপ্ত প্রধানের দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নিয়েছিলেন। এ সব পদে জেনারেল ইয়াহিয়া বহাল ছিলেন বাংলাদেশের চূড়ান্ত মুক্তি ও বিজয় না হওয়া পর্যন্ত।” [বঙ্গভবনের শেষ দিনগুলি, পৃষ্ঠা ২২]

বিচারপতি সায়েম সেনাশাসক জিয়াউর রহমানের তুলনা করেছেন ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা-ধর্ষণ-লুটপাটের প্রধান হোতা যুদ্ধাপরাধী জেনারেল ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে।

জিয়াউর রহমান জানতেন, খুনিদের দায়মুক্তি দিয়ে অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে, কিন্তু এ অধ্যাদেশ আইনে পরিণত করা না হলে দেশ যখন সাংবিধানিক ধারায় যাবে, তখন সমস্যা হতে পারে। এ কারণে তিনি চাইছিলেন একটি রাবার স্ট্যাম্প জাতীয় সংসদ গঠন করতে, যেমনটি করেছিলেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ফিল্ড মার্শাল আইয়ুব খান। জিয়াউর রহমান বিচারপতি সায়েমের কাছ থেকে বন্দুকের নলের মুখে প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও রাষ্ট্রপতির পদ জবরদখল করার পর ১৯৭৭ সালের মে মাসে জিয়াউর রহমান গণভোটের আয়োজন করেন তার নীতি ও কর্মসূচির প্রতি জনগণের আস্থা আছে কিনা সেটা জানার জন্য। কিন্তু “সেই গণভোটে হ্যাঁ বাক্সে এত বেশি ভোট পড়ে যে জনগণ সেই ফলকে হাস্যকরভাবে অবিশ্বাস্য মনে করে।” [বঙ্গভবনের শেষ দিনগুলি, পৃষ্ঠা ৩৭]

বিচারপতি সায়েম সেই জিয়াউর রহমানকে চিনে ফেলেছিলেন, নিষ্ঠুরতায় যার জুড়ি মিলবে না। তিনি লিখেছেন, “একমাত্র সেনাপ্রধানের স্বার্থে এবং ব্যতিক্রমহীনভাবে তারই নেতৃত্বে সশস্ত্র বাহিনীর ক্ষমতা গ্রহণের ফল দাঁড়ায় এই যে জনগণ তাদের শাসক নির্বাচনের অধিকার থেকে এবং রাজনীতিকরা ক্ষমতায় যাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়।” [পৃষ্ঠা ৩০]

জিয়াউর রহমান তার নীতি ও কর্মসূচির প্রতি গণভোটে সমর্থন চাইছিলেন। তার নীতি ও কর্মর্সূচি কী ছিল? ১৯৭৫ সালের ৩১ ডিসেম্বর তিনি বিচারপতি সায়েমের সঙ্গে যোগসাজশ করে কুখ্যাত ‘দালাল আইন ১৯৭২’ বাতিল করেছিলেন। এ আইনে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি অপরাধের জন্য  যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল, তাদের মুক্তি দেওয়া হয়। [অ্যান্থনি মাসকারেনহাস লিখেছেন- ‘শেখ মুজিবের মৃত্যুতে সবচেয়ে বেশি লাভবান হয় জিয়াউর রহমান। তার প্রতিষ্ঠিত দল বিএনপি থেকে ১৯৭৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি অনৃুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যারা মনোনয়ন চেয়েছিল তাদের মধ্যে ২৫০ জন ছিল ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের গণহত্যায় সহযোগী বা দালালদের তালিকায়। বাংলাদেশ: রক্তের ঋণ, পৃষ্ঠা ১৬৩]

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ড ও ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যার মতো কর্নেল তাহেরের হত্যাকাণ্ডও ছিল গুরুতর অপরাধ। অপরাদের তালিকায় সবচেয়ে গুরুতর ছিল সংবিধান সংশোধন। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে সংবিধানে রাষ্ট্রীয় চারটি মূলনীতি অন্তর্ভুক্ত হয়- ধর্মনিরপেক্ষতা সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদ। ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের প্রথম বার্ষিকী থেকে বলবৎ হওয়া এ সংবিধান সর্বসম্মতভাবে অনুমোদন হয়েছিল কয়েকদিন আগে- ৪ নভেম্বর। জিয়াউর রহমান প্রধান সামরিক আইন প্রশাসকের ক্ষমতা ব্যবহার করে একক সিদ্ধান্তে এভাবে ধর্মনিরক্ষেতা সংবিধান থেকে বাদ দিয়ে দেন। এটা স্পষ্টতই রাষ্ট্রদ্রোহিতা, যার বিচার এখনও হয়নি। 

জিয়াউর রহমান বিচারপতি সায়েমের কাছ থেকে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ক্ষমতা নিয়ে নির্বাচন স্থগিত করে দেন। এরপর রাষ্ট্রপতি পদে ও জাতীয় সংসদের নির্বাচন দেন সামরিক আইন বলবৎ রেখে। দুটি নির্বাচনই ছিল জবরদস্তিপূর্ণ, প্রহসনমূলক। বিরোধীদের কণ্ঠ ছিল স্তব্ধ। কারাগারগুলো ছিল বঙ্গবন্ধুর দল আওয়ামী লীগ এবং তাদের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মী দ্বারা পূর্ণ। এক ভীতিকর পরিবেশে অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনে জিয়াউর রহমানের দল দুই-তৃতীয়াংশের বেশি সংখ্যাগষ্ঠিরতা লাভ করে। এ সংসদেই ১৯৭৯ সালের ৬ এপ্রিল অনুমোদিত হয় কুখ্যাত সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী, যাতে ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সকল অপরাধকে দায়মুক্তি দেওয়া হয়। মোশতাক আহমদ খুনিদের দায়মুক্তি দিয়েছিল। কিন্তু জিয়াউর রহমান তার দল বিএনপির সংসদ সদস্যদের মাধ্যমে এ অধ্যাদেশকে আইনে পরিণত করেন। এ অপরাধ ছিল আরও গুরুতর। বিএনপি এ দায় কী করে এড়াবে? কেবল জিয়াউর রহমান কিংবা তার প্রধানমন্ত্রী সংসদ নেতা শাহ আজিজুর রহমান (১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গণহত্যায় সক্রিয় সহযোগী) নয়, বিএনপির  বর্তমান নেতৃত্বও এ অপরাধের দায় থেকে ইনডেমনিটি পেতে পারে না। কিন্তু এ দলটি তো চলছে ভুল পথেই। বিএনপি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সামরিক শাসন আমলে, রাষ্ট্রীয় সুবিধার অপব্যবহার করে। এ দলের গঠনতন্ত্রের একটি ধারা ছিল- দুনীতির দায়ে দণ্ডিত কেউ দলের কোনো পদ পাবে না, দল থেকে জাতীয় সংসদ কিংবা স্থানীয় সরকারের কোনো নির্বাচনে প্রার্থী হতে দলের মনোনয়ন পাবে না [৭-ধারা]। বিএনপির বর্তমান নেতৃত্ব গঠনতন্ত্রের এ গুরুত্বপূর্ণ ধারাটি অতি গোপনে বাদ দিয়েছে। কারণ দলের প্রধান দুই নেতা খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান দুর্নীতি দায়ে সাজাপ্রাপ্ত এবং সর্বোচ্চ আদালতেও যা অনুমোদিত। তারেক রহমান তো যুক্তরাষ্ট্রের আইনেও দোষী সাব্যস্ত। বিএনপি খুনি ও দুর্নীতিবাজদের দিয়েই দেশ পরিচালনা করতে ইচ্ছুক, সেটা আর গোপন নেই। 

বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক ঐতিহাসিক রায়ে পঞ্চম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করেন এবং সামরিক আইনকে সংবিধfনবিরোধী আখ্যা দিয়েছেন। কিন্তু যারা ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেছেন এবং এ অধ্যাদেশকে আইনে পরিণত করেছেন, যারা সংবিধান লংঘন করেছেন তাদের বিচার এখনও হয়নি। এ ভয়ঙ্কর অপরাধে যুক্তদের মরণোত্তর বিচার হতেও বাধা থাকার কথা নয় (যদি আইনী বাধা থাকে তা দূর করা আইনের মাধ্যমেই সম্ভব)। বর্তমান সরকার এ পথে বলিষ্ঠ পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, এটাই প্রত্যাশিত।