খাদ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি, স্বাস্থ্যপুষ্টি এবং এসডিজির প্রতিবন্ধকতা

সুরেশ কুমার দাশসুরেশ কুমার দাশ
Published : 28 Dec 2021, 09:23 AM
Updated : 28 Dec 2021, 09:23 AM

দেশে কোভিড-১৯ এর লকডাউন তুলে দেওয়ার পর থেকেই ব্যবসায়ী, খাদ্যপণ্যের মূল্য নির্ধারণকারী এবং দোকানীরা ক্রেতা, ভোক্তা তথা জনসাধারণের ঘাড়ে সওয়ার হয়েছে। শুধু খাদ্যপণ্যের মূল্য বেড়েছে তা নয়। মানুষের অন্যান্য ব্যবহারিক পণ্যের দামও সর্বত্র বেড়েছে। ক্রেতা সাধারণের ওপর চেপে বসেছে জ্বালানি তেলের বাড়তি দামও। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কমে আসার পর ব্যবসায়ীরা যেমন মুহূর্তকাল দেরি করেনি, তেমনি জ্বালানি তেলের দাম বাড়াতেও দেরি করা হয়নি। ব্যবসায়ীরা না হয় ব্যবসায়ী, কিন্তু সরকার?

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর খাদ্যপণ্যের মূল্য বাড়ানোর অজুহাত দেওয়ার সুযোগ আরও বেড়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছে, পরিবহন খরচ বেড়েছে।

লকডাউনের পর প্রথমে হৈ চৈ পড়ে চালের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে। সেই চালের বাজার এখনো চড়া। সরকার নানা উদ্যোগ নেয়া সত্ত্বেও কমেনি তেমনটা। এর সাথে হু হু করে বেড়েছে ভোজ্যতেলের (সয়াবিন) দাম। সেটা আর নামানো সম্ভব হয়নি। চাল এবং সয়াবিন তেল ব্যবসায়ীদের সাথে দফায় দফায় বৈঠক করেও তা আর ভোক্তার আয়ত্তে আসেনি। ভোক্তার আয়ত্তে আসা না আসা মানে সংবাদ মাধ্যমগুলোর কিছুদিন লেখালেখি। সবাই জানে এসব লেখালেখিও এক সময় থমকে পড়বে। তা পড়েছে বটে। বাড়তি দামের কোনো সুরাহা হয়নি। মানুষের কান্নাকাটি ছিল যেন আর না বাড়ে!

পেঁয়াজের দামের কথা বলছি না। মানুষ যদি ভাত বেশি খেয়েই থাকে তাহলে খুচরা বাজারের ২৮ টাকার আটার দাম ৪০-৪২ টাকা পর্যন্ত গেছে। সংবাদমাধ্যমে দেখা গেছে গমের যোগান কমেছে বিশ্ব বাজারে। বেজায় বেড়ে গিয়েছিল ডিমের দাম। শুধু কমের মধ্যে ছিল ফার্মের সাদা মুরগি। সেটাও এখন আর হতদরিদ্র, দরিদ্রদের ধরা ছোঁয়ার বাইরে। বেড়েছে মাছের দাম। বাজারে মাছের যোগানও অনেক কম। কিছু অঢেল পয়সাওয়ালা ছাড়া প্রাণিজ প্রোটিন আর আমিষ জাতীয় খাবার এখন মধ্যবিত্তেরও নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে।

এই শীতে কাঁচাবাজার মানে শাকসবজি এত উঁচু দরে বিক্রি হচ্ছে, তাও কোনো কোনো ক্ষেত্রে ছুঁয়ে দেখারও অনেক ভোক্তার সামর্থ্য নেই। করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রথমদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবাইকে জমি অনাবাদি ফেলে না রাখার জন্য বলেছিলেন। তার তো কিছুই হয়নি। শাকসবজির টান পড়বে না তো কি? প্রধানমন্ত্রী বলেই শেষ কিন্তু কৃষি বিভাগের লোকজন এ ব্যাপারে জমিজিরেত যাদের আছে তাদের সাথে কোনো যোগাযোগ করেছে কিনা তাও কেউ জানে না। শুধু সরকারের দিকে চেয়ে থাকলে হয় না। প্রশাসনের সাথে জনগণ তথা যাদের পতিত, অনাবাদি জমি আছে তাদের যোগাযোগ হয়েছে কিনা? অনাবাদি জমিতে ফসলের আবাদ হচ্ছে কিনা– সে খবর কোথাও আসে না।

অথচ বাংলাদেশের কৃষি বিজ্ঞানীদের যে সফলতা সেটা যদি মাঠ পর্যায়ে কর্মকর্তারা কৃষকদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতে পারতেন অন্তত শাকসবজির দাম মানুষের নাগালে থাকত। এখন শীতের সবজির মৌসুম। মানে শাকসবজি খাওয়ার দিন। তাতেও টান পড়েছে।

খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ানোর বহু অজুহাত আছে ব্যবসায়ীদের। এসব অজুহাতগুলোর পিছনে সরকার ও প্রশাসনের নীতিনির্ধারণ, নজরদারি ব্যবস্থা ও আইনের প্রায়োগিক কিছু সুযোগ-সুবিধা মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা গ্রহণ করে। শুধু গ্রহণ করে তা নয়, তারা ভালোভাবে সুযোগগুলো নেয়। টাকা যেকোনোভাবে ব্যবসায়ীরা যখন হাতিয়ে নিতে পারে, তা শেষ পর্যন্ত কম রোজগারের মানুষের খাদ্য কেনার সক্ষমতারই সর্বনাশ করে।

দেশে মাঝে মাঝে ভ্যাটের কথা আসে। এই অজুহাতেও ব্যবসায়ী-দোকানীরা নানা কায়দায় ক্রেতাদের কাছ থেকে বাড়তি টাকা আদায় করে। এই ভ্যাট সরকার পায় নাকি ব্যবসায়ীদের ক্রেতার পকেট হাতানোর একটা কৌশল তা অনেকের কাছেই পরিষ্কার নয়। ধরা যাক, এক জোড়া জুতা। শোরুমে ওরা ভোক্তার থেকে যে ভ্যাট নিচ্ছে, সেটা আদৌ সরকারের হাতে যাচ্ছে কি না তা কিন্তু জনগণ জানে না।

মাঝে মাঝে ভ্যাটের তোড়জোর শুরু হয়। মাঝে মাঝে চুপসে যায়। যতবার এই ভেলকি আসে ততবার পুরনো দামের সাথে আগের ভ্যাটসহ নতুন ভ্যাট যুক্ত হয়। এতে বিক্রেতাদের লাভ বাড়ে। যাত্রীরা ভাড়া নিয়ে বাড়াবাড়ি করলে গাড়িওয়ালারা বলে, জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে তাদের লাভ বাড়ে। আগে যা লাভ হতো এখন তারচেয়ে ২০% থেকে ৩০% বেশি লাভ হচ্ছে তাদের। কোনো না কোনো কিছুর প্রচার চালিয়ে, দাম বাড়িয়ে শেষ পর্যন্ত কষ্টে পড়ে, খাদ্য ও পুষ্টিতে টান পড়ে জনমানুষের।

একইভাবে বাজারে অভিযান চালালেও সেটারও প্রভাব পড়ে ক্রেতাদের উপর। ধরা যাক, কোনো ভেজাল পণ্য বাজারে ধরা পড়ল। অথবা মানহীন পণ্য। তাহলে মানহীন পণ্যকে মানসম্পন্ন করা আর ভেজাল পণ্যকে বিশুদ্ধ পণ্যে রূপান্তরের পর নতুনভাবে আসা পণ্যটা আগের দামে বিক্রি করে কিনা সেই খবর কি রাখে– যারা অভিযান পরিচালনা করেন তারা। ধরা যাক, সেমাই ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে অভিযান হলো এবং সেই মানহীন সেমাই উৎপাদন বন্ধ করল। অন্যদিকে মানসম্পন্ন বলে অন্যরা তখন দাম বাড়ানোর সুযোগটা নিয়ে নেয়। এভাবে বিক্রেতা বা উৎপাদনকারীর যতবার ভেজাল ধরা পড়বে, ততবার মানসম্পন্ন করতে গিয়ে ক্রেতাদের পকেট হাতানোর সুযোগ তৈরি হয়ে যায়। এটা বেশি ঘটে ঈদের বাজারে। যদিও এসব কোনো মৌলিক খাদ্যপণ্য নয়। কিন্তু সুযোগটা তো ব্যবসায়ীরাই নিচ্ছে কোনো উৎসব-পার্বণকে ঘিরে। এভাবে তারা কৌশলটা অভ্যাসে পরিণত করে।

একবার পাটের বস্তা ব্যবহার বাধ্যতামূলক করায় চাল ব্যবসায়ীরা চালের দাম বাড়িয়েছিল। কিন্তু চালে তো এখন পাটের বস্তা নেই। পাটের বস্তা বাবত যে বাড়তি দাম রাখা হয়েছিল সেটা কমানো হয়েছে কিনা সেটা কি আমরা জানি? যদি আরেক দফা পাটের বস্তা ব্যবহারের কথা আসে, ঠিক সেই অজুহাতে আরও কিছু বাড়তি দামে চাল বিক্রি করবে তারা। বন্ধ করা আর নতুন নতুনভাবে চালু করার ঘোষণাগুলো, অভিযানগুলো ক্রেতাদের ওপর কি প্রভাব ফেলে সে সম্পর্কে খোঁজখবর রাখার কেউ নেই। না থাকার কারণ এসব ঘটনাগুলো যারা ঘটায় তাদের কাছ থেকে দফায় দফায় ৫০/১০০ টাকা হাতিয়ে নিলে তাদের গায়ে লাগে না। কিন্তু যার নির্ধারিত আয়-রোজগার করে- ৩০০, ৫০০ টাকা। তাদের কাছ থেকে নানা কৌশলে ৫০/১০০ টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়, তাহলে কি তিনবেলা বা দুবেলা খাবারে টান পড়বে না। তার পরিবারের ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের খাবারে টান পড়বে না?

এসব কথা কেটেছেটেও ব্যবসায়ীরা আর একটি দোহাই দেয়– সেটার নাম আন্তর্জাতিক বাজার। এই আন্তর্জাতিক বাজারের দোহাই সরকারও দেয়। সয়াবিনের দাম বাড়লে বিশ্ববাজারের দামের দোহাই বেশি শোনা যায়। চিনিসহ নানা ভোগ্যপণ্য আছে এই শ্রেণিতে। যদি বৈশ্বিক পরিসরে হিসাব করি, এদেশের জনগণ আসলে বিশ্ববাজারের চেয়ে বেশি দামে খাদ্য কিনে খায় নাকি কম দামে কিনে খায়, নাকি সমান মূল্যে খাদ্যপণ্য কিনে খায় তা আদৌ ভোক্তারা জানে না। বিশ্ববাজারের খাদ্যপণ্যের দাম জানানোর জন্য একটা নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা দরকার। কারণ এই অজুহাত দিন দিন বাড়ছে। একইসাথে বিশ্ববাজারের মানের সাথে আমাদের খাদ্যপণ্যের মান সমপর্যায়ের কিনা সেটাও যাচাই করে দেখার সুযোগ হবে ভোক্তাদের।

সরকার বছরখানের আগে ব্রাজিল থেকে গরুর মাংস এনে তিন-চারশ' টাকায় খাওয়ানোর কথা বলেছিল। আমাদের গরুর মাংসের দাম ৬০০ টাকার ওপরে। আর খাসির মাংস হাজারের কাছাকাছি। ব্রাজিল থেকে মাংস আনার কথা বলার পর মাংস ব্যবসায়ীরা বেসামাল হয়ে উঠে। তারা নয়-ছয় বলে শেষ পর্যন্ত বোঝাতে চাইল, তারাও একই দামে মাংস খাওয়াতে পারবে। বর্তমানে না পারার কারণ হিসাবে নানা অজুহাত তুলে ধরে। এই ধরনের ছলচাতুরি এক ধরনের গণদুশমনি, তা আমরা কেউ ভেবে দেখি না। ব্রাজিলের তিন-চারশ টাকার মাংসের বাজার আর আমাদের ছয়শ' টাকার মাংসের বাজারের যদি তুলনা করি তাহলে আন্তর্জাতিক বাজারের ধাপ্পাটা আমরা অনেক ক্ষেত্রেই বুঝতে পারি। এজন্য প্রতিদিন আন্তর্জাতিক বাজারের চিত্র তুলে ধরার ব্যবস্থা থাকা দরকার। এতে ক্রেতাদের ক্রয়ক্ষমতাও যাচাই হবে। তাহলে ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে ক্রেতারা যে ঠকছে তার হাত থেকে রক্ষা পাবে। আর এসব কারণে অনেক মানুষ যে শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদা মেটানো কিংবা খাদ্য ক্রয় করতে পারছে না তার সঠিক চিত্রটাও উঠে আসবে।

আর আমরা যদি বিশ্ববাজার থেকে বেশি দামে কিংবা সমান দামে খাদ্য কিনে খাই, তাহলে এদেশের উৎপাদন ও কৃষিতে ভর্তুকি দিয়ে লাভ কী? যেখান থেকে গরিব জনগণ দিনে দু'বেলা-তিনবেলা খাবারের কোনো সহায়তা পায় না।

লকডাউন পুরোপুরি তুলে দেওয়ার পর থেকে খাদ্যের দাম বাড়ার কারণ কী? লকডাউনে কি মানুষ কম খেয়েছে, নাকি ব্যবসায়ীরা দয়া করেছে? নাকি তখনকার দামটাই ন্যায্য ছিল, নাকি মানুষ ঘর থেকে বের হওয়ার পর আয়-রোজগার বেড়েছে বুঝতে পেরে ব্যবসায়ীরা মানুষের পকেট হাতানোর সুযোগ পেয়েছে? নাকি ব্যবসায়ীরা করোনার লস সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছে?

যদিও কিছু পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা বলছে, বিশ্বব্যাপী পর্যাপ্ত খাদ্যের সংকট চলছে। যদি আমরা সংকটকে স্বীকার না করি তাহলে খাদ্যপণ্যের মূল্য বাড়ার সঠিক কারণ জানা ও এর সমাধান জরুরি। অর্থনীতির অতি সাধারণ সূত্র হচ্ছে, খাদ্যের দাম বাড়লে মানুষের খাদ্য ক্রয়ের ক্ষমতা কমে যায়। এতে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা বাড়ে। উৎপাদন কমে গেলেও খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা বাড়ে। এমন পরিস্থিতিতে মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণের কোনো ব্যবস্থা না করলে সামনে সরকারের নানা পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বেগ পেতে হবে।

ধরে নিলাম এই অবস্থায়ও মানুষ কোনো রকমে খাচ্ছে। কিন্তু মানুষের পুষ্টির কি হবে। কারণ, খাদ্যের দাম বাড়লে মানুষের আয় রোজগার না বাড়লে অবশ্যই তাকে খাদ্যগ্রহণে কৃচ্ছতা সাধন করতে হবে। কৃচ্ছতা করলেই তো মানুষের ক্যালরিতে টান পড়বে, ক্যালরি না হোক আগে যা খেয়েছে, তাও খেতে পাবে না। অন্যদিকে আমরা যে উন্নত ও মেধাবী জাতি গঠনের কথা বলি, সেটা এবং পুষ্টির অভাবে গর্ভবতী মায়েরা, শিশু-কিশোর-তরুণ সকলের খাবারে টান পড়বে। যতদিন এই 'দুষ্ট বাজার' মোকাবেলার সার্মথ্য এসব মানুষগুলো অর্জন করতে না পারবে ততদিন পুষ্টির এই ঘাটতি থেকেই যাবে। এই যে দাম বেড়েছে সেই পরিপ্রেক্ষিতে এসব কম খাওয়া মানুষগুলোর হিসাবটা কীভাবে রাখছে? তাদের জন্য কী বিবেচনা হচ্ছে? যদিও সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী আছে, বিভিন্ন প্রণোদনা আছে, সহায়তার চেষ্টা আছে।

বাংলাদেশের দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ পরিকল্পনায় খাদ্য ও অপুষ্টি মোকাবেলার কথা বলা হয়েছে টেকসই বিনিয়োগ পরিকল্পনা হিসাবে। এতে খাদ্য ব্যবস্থাকে পুষ্টি সংবেদনশীল খাদ্য ও টেকসই করতে সকল সময়ে সবার জন্য খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টি উন্নয়ন নিশ্চিত করার কথা বলা হয়েছে। এর কৌশলগত উদ্দেশ্য হচ্ছে খাদ্যের সহজলভ্যতা, ক্রয়ক্ষমতা ও পুষ্টিগুণ নিশ্চিত করা এবং সর্বস্তরের মানুষ যাতে নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য পেতে পারে এবং একই সাথে নিরাপদ ও স্বাস্থ্যকর খাদ্যগ্রহণে প্রয়োজনীয় জ্ঞান লাভে সমর্থ হয় তা নিশ্চিত করা। এতে, 'খাদ্য আহরণ থেকে আহারের থালা' পর্যন্ত খাদ্য মূল্য-শৃঙ্খলের প্রতিটি ধাপের জন্য অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পুষ্টি-সংবেদনশীল বিনিয়োগ কর্মসূচি নির্ধারণ করা ছাড়াও খাদ্য ও পুষ্টিকে প্রভাবিত করে এমন সকল সম্ভাব্য খাদ্য ব্যবস্থার সমস্যাবলিও অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে (সূত্র: বাংলাদেশ- দ্বিতীয় রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ পরিকল্পনা, পুষ্টি সংবেদনশীল খাদ্য ব্যবস্থা ২০১৬-২০২০)।

যেখানে খাদ্যের থালাকেও মূল্য-শৃঙ্খলে আনার কথা সেখানে আজ বাজারের অবস্থা কোন পর্যায়ে? সরকারের এমন সুচিন্তিত পরিকল্পনাকে এগিয়ে নিতে হলে বাজারের দাম নিয়ন্ত্রণ এবং যে সব কারণে বাড়তি দাম নেয়ার অজুহাতগুলো রয়েছে সেগুলো দূর করা একান্ত জরুরি। সরকারের বিভিন্ন পরিকল্পনায় উল্লেখ করা হয়েছে, আগে থেকেই জনসংখ্যার ৫০ শতাংশ সুষম খাবারের ঘাটতিতে রয়েছে (জাতীয় খাদ্য ও নিরাপত্তার খসড়া নীতি, ২০২০)। তাই অসামঞ্জস্যগুলো দূর না করলে মানুষের খাদ্য পুষ্টির জন্য দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ পরিকল্পনায় সুফল আসার বিষয়টা অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। আর যখন কোনো নতুন সংকট দেখা দেবে তা সাথে সাথে সমাধান দিতে হবে। না হয় সমস্যার পাহাড় ঠেলে সামনে এগোনো অনেক কঠিন হবে। হুট করে কোনো সমাধান আশা করা অযৌক্তিক।

এ বছর ২৩ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ ফুড সিস্টেমস সামিটে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিশ্বের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জন্য অধিক খাদ্য উৎপাদনের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী একটি 'স্থিতিশীল খাদ্য ব্যবস্থা' গড়ে তোলার আহ্বান জানিয়ে ৫ দফা সুপারিশ দিয়েছেন। আর আমাদের ১৭টি টেকসই উন্নয়ন অভীষ্ট ও লক্ষমাত্রার ২ নম্বর অভীষ্ট হচ্ছে, ক্ষুধার অবসান, খাদ্য নিরাপত্তা ও উন্নত পুষ্টিমান অর্জন এবং টেকসই কৃষির প্রসার। সেক্ষেত্রে আমাদের স্থানীয় বাজার ব্যবস্থাকে নিবিড় নজরদারিতে না আনলে পিছিয়ে পড়তে হবে।