প্রযুক্তি ভাবনাহীন রাজনীতির উদ্ভট উটের পিঠে

এম আর খায়রুল উমামএম আর খায়রুল উমাম
Published : 18 Dec 2021, 09:56 AM
Updated : 18 Dec 2021, 09:56 AM

পৃথিবীকে জানার জন্য সীমাহীন কৌতুহল, অজানাকে জানার একাগ্র পথচলায় বিজ্ঞানের নতুন নতুন আবিষ্কার। এ সবকিছুর প্রকৃত লক্ষ্য মানবকল্যাণ। বিজ্ঞানকে যদি মানবকল্যাণে ব্যবহার করতে হয় তাহলে প্রযুক্তিকে বাদ দিয়ে ভাবনার সুযোগ নেই। প্রযুক্তি হচ্ছে বিজ্ঞানের প্রায়োগিক শাখা। পৃথিবী এবং তার প্রকৃতি সম্পর্কে মানব মনের চিন্তা-ভাবনাগুলো পরীক্ষণ, পরিদর্শন ও অনুসন্ধানের মাধ্যমে আহরিত জ্ঞান ব্যবহারিক জীবনে প্রয়োগের দায়িত্ব প্রযুক্তির, এটাই প্রযুক্তির কাজ। বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির যৌথ প্রয়াস মানুষের জীবন-জীবিকাকে সহজ করেছে। উন্নত করেছে। সীমিত সম্পদের বহুমুখী ব্যবহার নিশ্চিত করে সম্পদের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে সভ্যতার বিবর্তন ঘটিয়েছে। উন্নত শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বাসস্থান, যোগাযোগ এবং বিনোদনের সুযোগ সৃষ্টি করে চলেছে। সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবর্তনের জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি অঙ্গাঙ্গি ভাবে জড়িত থেকে নতুন নতুন ভাবনার বিস্তার ঘটিয়ে জীবনযাত্রাকে সাবলীল রাখতে প্রতিনিয়ত নতুন মাত্রা যোগ করেছে। প্রযুক্তির দ্রুত পরিবর্তনের কারণে একবিংশ শতাব্দীতে এসে বিশ্বব্যাপী প্রযুক্তির উন্নত থেকে অতিউন্নত অবস্থান তৈরি হয়েছে। তবে নিজস্ব কৃষ্টি, ইতিহাস, সমাজ, বিশ্বায়ন, রাজনীতিতে প্রযুক্তির অবস্থানকে প্রাধান্য দিয়েই বিশ্বের এগিয়ে যাওয়াই কাম্য। মোদ্দা কথা, নিজস্ব বলয়ের মধ্যে থেকেই আমাদের উদ্যোগ নিতে হবে। তবেই দেশ এগিয়ে যাবে কৃষ্টি, সংস্কৃতি আর ইতিহাসের হাতে হাত রেখে। কিন্তু আমাদের দেশে অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেশীয় প্রযুক্তি ব্যবহারে আগ্রহ খুব কম দেখানো হয়ে থাকে। সর্বত্রই প্রবণতা ও উৎসাহ দেখা যায় দেশী প্রযুক্তি ব্যবহার না করে ধার করা বিদেশী প্রযুক্তি ব্যবহারের। তবে ব্যতিক্রম দেখা যায় সমাজের নিম্নস্তরে। আমাদের সমাজের নিম্নস্তরে কিছু দেশীয় প্রযুক্তির নানাবিধ ব্যবহার ও কৌশল প্রতিনিয়ত দেখতে পাওয়া যায় যা আধুনিক অনেক প্রযুক্তিবিদদের বোকা বানিয়ে দেয়। তারপরও সমাদরের পরিবর্তে দেশীয় প্রযুক্তির কপালে জোটে তিরস্কার আর অবহেলা। আমাদের রাজনীতির দায়িত্ব ছিল সমাজকে প্রযুক্তিমনষ্ক করে গড়ে তোলা। অগ্রসর প্রযুক্তির যথোপযুক্ত সুযোগ নিয়ে জীবন-জীবিকার জমে থাকা সমস্যার কার্যকর সমাধান করার উদ্যোগ রাজনীতিকেই নিতে হবে। আজ আমাদের রাজনীতির নীতি-কৌশলে অপরিহার্য পরিবর্তন আনার প্রয়োজনীয়তা কালের দাবি।

কিছু কিছু সাধারণ বিষয় আছে যা জানার জন্য কাউকে জিজ্ঞেস করতে এখনও লজ্জা পাই। তেমন বিষয়ের মধ্যে একটা রাজনীতি। ছোটবেলায় কার কাছ থেকে শুনেছিলাম এখন আর ঠিক মনে করতে পারি না, তিনি বলেছিলেন রাজনীতি হচ্ছে রাজার নীতি। এর অনেক পরে এসে নতুন করে জেনেছি রাজার নীতি নয়, নীতির রাজা হচ্ছে রাজনীতি। দ্বন্দ্বটা আজও কেটেছে তা বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি না। দেশের রাজনীতির দিকে তাকালে দ্বন্দ্বটা আরো গভীরে চলে যায়। বুঝতে পারি না দেশের রাজনীতিতে নীতির রাজা বিরাজ করে কিনা? অর্জিত স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সাথে রাজনীতিকে মেলাতে গিয়ে যখন দেখি কাজীর খাতায় যা আছে, গোয়ালে তা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না তখন সন্দেহ গভীর হয়, দ্বন্দ্বটা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। বহুজনের কল্যাণ, বহুজনের মঙ্গলের নীতি-কৌশল রাজনীতিতে আজ আর অবশিষ্ট নেই। অথচ বহুজনের কল্যাণ চিন্তা না থাকলে বিজ্ঞানমনস্ক হওয়া যাবে না, প্রযুক্তিমনস্ক হওয়ার তো প্রশ্নই আসে না। এর ফলে উন্নয়নের পরশ সবাইকে স্পর্শ করে না, বৈষম্যের সৃষ্টি করে। এ প্রজাতন্ত্রের মালিকরা আজ ভুলতে বসেছে তারাই দেশের প্রকৃত মালিক। দেশের রাজনীতি তাদের সাথে বিরূপ আচরণ করেই শুধু ক্ষান্ত থাকছে না, সেবকদের দ্বারা পীড়নের সবরকমের ব্যবস্থা করে রেখেছে। গণতান্ত্রিক রাজনীতি দায়িত্বশীল থেকে যেকোনো উপায়ে রাজনৈতিক সমস্যার কেন্দ্র থেকে বের হয়ে এসে প্রযুক্তির অঙ্গীকার ও জনগণের প্রত্যাশিত ইচ্ছার বাস্তবায়নে উদ্যোগী হলে সাধারণ জনগণের অর্থনৈতিক মুক্তি তরান্বিত হবে।

দেশের উন্নয়নের সিংহভাগ অর্থই ব্যয়িত হয়ে থাকে কারিগরি কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে। কিন্তু জনগণের কষ্টার্জিত করের অর্থ প্রযুক্তিভিত্তিক কোনো ঝুঁকিপূর্ণ উদ্যোগে বরাদ্দ করা যুক্তিযুক্ত কিনা তা বিবেচনার দাবি রাখে। যেকোনো প্রযুক্তিভিত্তিক প্রস্তাবনা দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণকর কিনা তা ব্যয়বহুল পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রথমে যাচাই বাছাই জরুরী। কিন্তু দেশের সর্বত্র অর্থব্যয়ের দিকে নজর দিলে সংকটের চাইতে মানসিকতার অভাব প্রবল বলেই প্রতীয়মান হয়। তবে আমাদের দেশে বিশেষজ্ঞদের কোনো অভাব নেই, সবাই বিশেষজ্ঞ। কোনো কাজই তারা নিজেরা পারে না, অথচ বিদেশী জনবল ব্যবহার করে করা হলে তা বুঝে নেয়ায় বিশেষজ্ঞের অভাব হয় না। আর এই বোঝার মধ্যেই রয়েছে সব গণ্ডগোল। কোনো উদ্যোগে যদি অর্থের পরিমাণ বিশাল হয় তাহলে দ্রুত লাভের আশা দেখিয়ে তা বাস্তবায়নের ব্যবস্থা হয়ে যায়। কৃষি, শিল্প, যোগাযোগ, যানবাহন, খাদ্য, প্রকৃতি ও পরিবেশ সর্বত্র দায়বদ্ধতা ও জবাবদিহিতাহীন বিদেশী ফর্মুলার উদ্যোগের ছড়াছড়ি। নিজেদের কৃষ্টি-কালচার, ইতিহাস-ঐতিহ্য বিবেচনা করে উদ্যোগসমূহ গ্রহণ করা হয়েছে এমনটা দেখা যায় না। প্রযুক্তিমনষ্ক ও বিজ্ঞানমনষ্ক রাজনীতির মধ্যে থাকার সুযোগ সৃষ্টি করা গেলে এ অবস্থা থেকে মুক্তির পথ পাওয়া সম্ভব ছিল। দেশের রাজনীতি নিজেদের যেকোনো উদ্যোগ বিচার-বিশ্লেষণের জন্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির প্রজ্ঞায় সমস্যা সমাধানের পথ খোঁজায় প্রচেষ্টারত হলেই জনগণকে প্রযুক্তিনির্মিত সমাজ উপহার দিতে সক্ষম হতো। বিশ্বের প্রযুক্তির অগ্রযাত্রার সাথে তাল মিলিয়ে সব উদ্যোগের ভিত রচনা করতে নিজস্ব কর্মশক্তির ওপর বিশ্বাস রেখে রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিনির্মাণ প্রয়োজন। স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আমাদের সব কার্যকলাপকে সফলতার মুখ দেখাতে চাইলে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সম্পৃক্ততা সংকট কাটাতে সহায়ক।

আমাদের দেশটা নদীমাতৃক। সারাদেশে জালের মতো বিছিয়ে আছে নদী। নদীকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে জনপদ। জীবন-জীবিকায় সহায়ক সুপেয় পানি প্রাপ্তির নিশ্চয়তার সাথে যাতায়াত ব্যবস্থার সহজলভ্যতা বিবেচনা করে নদীর ধারে গড়ে উঠেছে বিশ্বের বিখ্যাত সব নগর। আমাদের প্রথম স্বাধীনতায় নদীকে গুরুত্ব দেয়া হয়নি। ১৯৭১ সালের দ্বিতীয় স্বাধীনতাও নদীকে প্রাধান্য দিয়েছে এমন কোনো নমুনা দেখা যায় না। নদীর সুবিধাগুলোকে আমাদের রাজনীতি শুধু অবহেলা করেছে তা-ই নয়, সচেতনভাবে অবজ্ঞা করেছে। বিশ্বব্যাপী সবাই জানে নৌপথ অন্যান্য যোগাযোগ ব্যবস্থার মধ্যে সুলভ ও নিরাপদ। তারপরও দেশের রাজনীতি জালের মতো বিছিয়ে থাকা নদীর সুবিধা নিয়ে নৌপথ গড়ে না তুলে ব্যয়বহুল সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থাকে গুরুত্ব দিয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থায় দ্বিতীয় সুলভ ও নিরাপদ রেল পরিবহনকে অবহেলা করে তা বৃদ্ধি না করে সংকোচন করা হয়েছে। আধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি। নৌপথ, রেলপথ উন্নয়ন সাধনের উদ্যোগ আজও আন্দোলনের মধ্যে আটকে আছে। এতে করে জনগণ সুলভ ও নিরাপদ পরিবহন ব্যবস্থা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, সড়কের ওপর চাপ বাড়ছে যাতে করে নির্মিত সড়কগুলো জীবনকালে পাচ্ছে না।

দেশের প্রতি ইঞ্চি জমি আবাদ করার শ্লোগানে সবুজ বিপ্লব ঘটাতে গিয়ে প্রকৃতিকে ধ্বংস করা হয়েছে। জলাভূমি নষ্ট করা হয়েছে, জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করা হয়েছে, বনভূমি বিরাণ করে দেয়া হয়েছে। ধান একমাত্র খাদ্য বিবেচিত হওয়ায় আমরা মাছের কথা ভুলেই গেছি। তাই সমুদ্র থেকে মাছ ধরে প্রোটিনযুক্ত খাদ্যের একটা বিরাট উৎস সৃষ্টি করার ফলপ্রসূ কোনো উদ্যোগ এ পর্যন্ত দেখা যায় না। রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহার কী ভয়ংকরভাবে প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস করে চলেছে তা আজ সর্বজনবিদিত।

উন্নয়নের উদ্যোগগুলো নির্ধারিত সময়ে ও ব্যয়ে শেষ করার কোনো বাস্তব ব্যবস্থাপনা দেশে দেখা যায় না। স্বাধীন মানুষ নিজের কাজ বিবেচনায় অর্থব্যয়ে আন্তরিক থাকে। সবসময় প্রচেষ্টারত থাকে এক টাকার কোনো কাজ এক টাকার কমে করতে। কিন্তু আমাদের জাতীয় জীবনে এ ভাবনার কোনো প্রতিফলন দেখা যায় না। দেশে প্রায় সব বড় বড় উদ্যোগ এক টাকার কাজ দুটাকা এবং ক্ষেত্রেবিশেষে তা আরো অনেক বেশি টাকা ব্যয়ে শেষ করা হয়ে থাকে। শুধু তাই নয়, এসব উদ্যোগ জীবনকাল পায় না। লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পূরণে ব্যর্থ হয়, জাতির ঘাড়ে একের পর এক লোকসানের বোঝা চাপে। দেশের একাধিক সার কারখানার নির্মাণকাজ নির্ধারিত ব্যয় ও সময়ের কয়েকগুণ বেশি অর্থ ব্যয়ে শেষ করা হয়েছে। একাধিক সেচ উদ্যোগ, সড়ক নির্মাণ, সেতু নির্মাণ ইত্যাদি শত-সহস্র উদ্যোগের একই অবস্থা। আমাদের পাট শিল্প, চিনি শিল্প, ইস্পাত শিল্প রাসায়নিক শিল্পের মতো অনেক শিল্প লোকসানের অজুহাতে বন্ধ করা হয়েছে। তিন শিফটের পরিবর্তে এক শিফট চালানো হয়েছে, যথাসময়ে কাঁচামাল সরবরাহ করা হয়নি, আধুনিকীকরণ করা হয়নি। সার কারখানায় উৎপাদন হয় না, তাই আমদানি করতে হয়, ফলশ্রুতিতে বাজারে সারের মূল্য বৃদ্ধি পায়। আবার কোনো সেচ উদ্যোগই লক্ষ্যমাত্রার সেচ সুবিধা দিতে পারেনি। পুরো প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে জনগণ আজ বিশ্বাস করতে বাধ্য হয়েছে দেশের সব উদ্যোগের এটাই স্বাভাবিক পথ, এটাই তাদের ভবিতব্য। ব্যক্তিজীবনে যা কাম্য, রাষ্ট্রীয় জীবনে তার লেশমাত্র নেই। শেষ বিচারে ইতিহাসের তালিকা লম্বা করার প্রয়োজন নেই, কারণ স্বাধীনতার মানসিকতায় উদ্যোগ সফল করার মানসে বহুজনের কল্যাণের প্রশ্নের জবাব রাজনীতিজনিত।

দেশের উন্নয়ন ও অগগ্রতিকে যদি সার্বিক জনকল্যাণে নিবেদিত করতে হয় তাহলে প্রযুক্তিকে গুরুত্ব দিতে হবে। সঠিক প্রযুক্তি নির্বাচন করে আন্তরিকতার সাথে ব্যবহার করার পরিবেশ সৃষ্টি করা জরুরী। বিশ্বে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন হচ্ছে তা থেকে নিজেদের জন্য কল্যাণকরগুলো খুঁজে প্রয়োগ করতে হবে। এটা করা না হলে প্রযুক্তির অপব্যবহার হতে বাধ্য যা অভিশাপ হিসেবে মানুষের জীবনে নেমে আসে। আমাদের দেশে প্রযুক্তির অভিশাপের শত-সহস্র উদাহরণ চোখের সামনে ভেসে বেড়াচ্ছে। অতীতে যেমন ছিল এখনো তা সমানভাবে দেখা যাচ্ছে। পৃথিবীর অন্যতম ব্যয়বহুল ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক নির্মাণ চলমান থাকা অবস্থাতেই তার জীবনকাল নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের ঝিকরগাছায় নদীর ওপর ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে যার নিচ দিয়ে বর্ষা মৌসুমে নৌকা চলাচলের উচ্চতা রাখা হয়নি। যশোর-খুলনা মহাসড়ক দশকের পর দশক চলাচলের অনুপযোগী রয়ে গিয়েছে। ব্যবহারের ব্যবস্থা না করে যে বিদ্যুতের উৎপাদন করা হয়েছে এখন তার চারভাগের একভাগ ব্যবহৃত হচ্ছে। এদিকে স্বাধীন দেশে ৩০ জুন হরিলুটের জন্য কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া চলমান। ২০, ২৫ বা ২৭ তারিখে বরাদ্দ পেয়ে কীভাবে ৩০ জুন তারিখের মধ্যে কারিগরি কর্মকাণ্ড সম্পন্ন করা যায় তার উত্তর একমাত্র রাজনীতিই দিতে পারে? স্বাধীনতার ৫০ বছরেও মানসিকতার কোনো পরিবর্তন হয়নি। আর কতদিন অপেক্ষা করলে জনগণ পরিবর্তন আশা করতে পারে! দেশের রাজনীতি শ্রেণিস্বার্থে ৩০ জুনের হরিলুট বন্ধ করতে চায় না। তারা জনকল্যাণে সঠিক প্রযুক্তির ব্যবহার কীভাবে গ্রহণ করবে? তারা বরং দলে দলে মানুষকে খিচুড়ি রান্না শিখতে পাঠাক, পুকুর কাটা শিখতে পাঠাক, ৬২ লাখ টাকা দিয়ে একটা নারকেল গাছ আর ৬ লাখ টাকা দিয়ে কলা গাছ কিনতে থাকুক। সাধারণ জনগণ প্রাণভরে দেখুক বিশ্বে রোল মডেল হওয়ার প্রতিযোগিতা আর আস্ফালনের জিরো টলারেন্স।

আমাদের রাজনৈতিক জীবনে প্রযুক্তিমনস্কতার অভাব প্রকট। অথচ ব্যক্তি মানুষকে সর্বোচ্চ স্বাধীনতার সুযোগ দিয়ে সাফল্যের শিখরে নিতে প্রযুক্তির বিকল্প নেই। স্বাধীনতা-মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি করে প্রযুক্তির প্রয়োজনীয়তা ভালো ভাবে বোঝার অপূর্ণতা আজ সর্বক্ষেত্রে দৃশ্যমান। জাতীয় উন্নয়ন বিষয়ে যে উৎকণ্ঠা বিরাজমান তা জনগণের মধ্যে থাকলেও আমাদের রাজনীতিতে এ অবস্থা উত্তরণের জন্য কোনো বিতর্ক সৃষ্টি করে না। এখানে বরং রাজনৈতিক মতাদর্শে বিভক্ত পেশাজীবীরা আগুনে ঘি ঢালছে। প্রযুক্তির অগ্রযাত্রায় ওপর নির্মাণ ও উৎপাদনের ভিত রচনায় অন্যতম প্রধান বাঁধা বর্তমান সময়ের দলীয় পেশাজীবী বা প্রযুক্তিবিদরা। তারা অতীতের ধারাবাহিকতা রক্ষা করে স্বাধীন দেশে দীর্ঘ পরাধীনতার স্বরূপ প্রতিষ্ঠায় নিবেদিত থেকে গোষ্ঠীস্বার্থ রক্ষার কার্যক্রম পরিচালনায় সহায়ক ভূমিকা রেখে চলেছে। আমাদের প্রযুক্তিবিদদের হাতে পড়ে প্রযুক্তি অপশক্তি হয়ে দেখা দিয়েছে। নতুন নতুন প্রযুক্তি যারা উদ্ভাবন করে থাকেন, তারা বহুজনের কল্যাণের কথা মাথায় রেখে করে থাকেন। কিন্তু আমাদের মতো দেশে এসে তা প্রতারণা ও বাণিজ্যের দাসত্বে পড়ে শোষণের হাতিয়ার হয়ে যায়। অভিশাপে পরিণত হয়ে যায়।

প্রযুক্তি প্রকৃতই একটা সৃজনশীল ধারণা। ধারাবাহিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও প্রশিক্ষকের মাধ্যমেই সঠিক প্রযুক্তির প্রয়োগ সম্ভব। প্রতিভার বিকাশ ও সঠিক প্রয়োগ যেকোনো উদ্যোগকে লক্ষ্যে পৌছাতে সহযোগিতা করতে পারে। এখন রাজনীতিকেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা কেমন বাংলাদেশ চায়। প্রযুক্তিকে আদর্শগত অবস্থানে রেখে নৈস্বর্গিক সুন্দর দেশটার আশীর্বাদ পাবে, না দুর্নীতিগ্রস্থ অবস্থানে থেকে অভিশাপের বস্তুতে পরিণত করার দায়ে আসামী হিসেবে পরিচিতি পাবে।