অবাক পৃথিবী অবাক করলে তুমি

শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকশামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক
Published : 7 Sept 2020, 05:37 PM
Updated : 7 Sept 2020, 05:37 PM

৬ তারিখ গভীর রাতেই সাংবাদিক স্বদেশ রায় খবর পাঠালেন, চীনা দূতাবাস খালেদা জিয়ার তথাকথিত জন্মদিবসের উপহার পাঠানোর জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। তারা নাকি বলেছে, তারা জানত না, এটা যে খালেদার ভূয়া জন্মদিন। একই খবরে জানা গেল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নাকি যথাসময়ে চীনা দূতাবাসের ধৃষ্টতার ব্যাপারে কোন প্রতিবাদ করেনি।

৭ তারিখ প্রত্যুষে চিকিৎসক অধ্যাপক মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীলের লেখা, চীনা ভ্যাক্সিন সম্পর্কে সতর্ক বাণীটিও পড়লাম।

অবশেষে চীন ক্ষমা চেয়েছে জেনে বাঙালি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী অন্য সবার মতো আমিও খুশি হয়েছি। তবে চীন খালেদার জন্মদিন যে ভূয়া একথার উল্লেখ করেছে। অথচ দিনটি যে জাতির পিতার শহীদ দিবস হিসেবে আমাদের কাছে অতীব তাৎপর্যপূর্ণ একথাটি বলেনি। এতে আমি অবাক হইনি মোটেও। কেননা বঙ্গবন্ধু হত্যায় চীন উল্লাস করে বলেছিল, 'এই হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে জাতীয় স্বাধীনতা রক্ষায় এক অভূতপূর্ব সাফল্য সাধিত হয়েছে।' বঙ্গবন্ধুর জীবদ্দশায় চীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়নি। বঙ্গবন্ধু হত্যার পনেরো দিন পরে স্বীকৃতি দিয়েছিল খুনি সরকারকে। বঙ্গবন্ধু জীবিত থাকাকালে নিরাপত্তা পরিষদে একাধিকবার ভেটো ক্ষমতা প্রয়োগ করে বাংলাদেশকে জাতিসংঘের সদস্য হতে দেয়নি।

অবাক হইনি এটা জেনে যে, চীনা দূতাবাস বাংলাদেশে কয়েক দশক ধরে অবস্থান করার পরও নাকি জানতো না যে ১৫ অগাস্ট খালেদা জিয়ার জন্মদিনের দাবি ভূয়া। আর এটা যে জাতীয় শোক দিবস সে কথা তো তারা বেমালুম চেপেই গেল! তাদের এই অর্বাচীনতায় অবাক হইনি। কারণ এই যে, খালেদা জিয়ার দলটির প্রতি চীনের রয়েছে বিশেষ দুর্বলতা। যেটি প্রকাশ পেয়েছিল সেই ১৯৭৭ সালে যখন এই দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান চীন গেলে তাদের নেতাগণ রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের জন্য জিয়াউর রহমানের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

খালেদা জিয়ার তথাকথিত জন্মদিনে উপহার পাঠিয়ে চীন আমাদের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করে, কুটনৈতিক সুবিধাদি সম্পর্কীয় ভিয়েনা কনভেনশন লঙ্ঘন করে, জাতীয় শোক দিবসের পবিত্রতা ভঙ্গ করে আবার বঙ্গবন্ধুকে চরম অবমাননা করার পরেও আমাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রী চীনা দূতাবাসে যথাসময়ে প্রতিবাদ না পাঠানোর ঘটনায় আমি অবাক হইনি। কেননা প্রবাদ আছে ভাসুরের দোষ দেখতে নেই। আর তাই তো যে চীন বারবার নিরাপত্তা পরিষদে ভেটো দিয়ে রোহিঙ্গা সমস্যা জিইয়ে রাখছে পররাষ্ট্রমন্ত্রী তার বিরুদ্ধে টু শব্দটিও করছেন না।

সম্প্রতি দেশের অন্যতম বুদ্ধিজীবী ও গবেষক অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন, যার গভীর দেশপ্রেমের স্বীকৃতি দিয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী তাকে শুধু একুশে পদকই দেননি, দিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বঙ্গবন্ধু চেয়ার, দিয়েছেন খুলনায় জমি যার উপর অধ্যাপক মামুনের নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বিশ্বের প্রথম গণহত্যা জাদুঘর, একটি অসাধারণ প্রবন্ধ লিখে চীনের বাংলাদেশ বিরোধী সকল অপকর্মের ফিরিস্তি দিয়েছেন। লিখেছেন- চীন কিভাবে রোহিঙ্গা সমস্যা জিইয়ে রাখতে মিয়ানমারকে সাহায্য করছে। বহুপুস্তকের লেখক মুনতাসীর মামুন গোটা জাতির সাধুবাদ পাওয়ার দাবিদার। অনেকেই বলছেন, তার এবং আমার লেখার কারণেই চীন ক্ষমা চাইলো।

অধ্যাপক মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল, যিনি শুধু বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব চিকিৎসা বিশ্ববিদ্যালয়ের যকৃৎ বিভাগের প্রধান নন, একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন চিকিৎসাবিজ্ঞানীও বটে। জাপানে অবস্থানরত অধ্যাপক ফজলে আকবরের সাথে যৌথ গবেষণার মাধ্যমে তিনি তৈরি করেন হেপাটাইটিস বি রোগের নতুন একটি ওষুধ। আর এজন্য চিকিৎসক স্বপ্নীল কিউবার সর্বোচ্চ সায়েন্টিফিক সম্মাননা পান।

তিনি ৬ সেপ্টেম্বর বিডিনিউজে লেখা এক প্রবন্ধে চীনের ভ্যাক্সিন দেশে মারাত্মক বিপদ ডেকে আনতে পারে বলে সতর্ক করেন। যা পারে লক্ষ লোকের মধ্যে সার্স মহামারি ছড়াতে। অথচ কিছু লোক মনে হচ্ছে চীন প্রীতিতে নেশাগ্রস্ত। কিন্তু কেন, সে প্রশ্নের জবাব হয়তো একদিন পাওয়া যাবে। তবে সেদিন অনেক দেরি হয়ে যাবে। সবশেষে উল্লেখ্য যে চীনা দূতাবাস খালেদা জিয়ার জন্মদিনের কথা উল্লেখ করলেও একবারের জন্যেও বঙ্গবন্ধুর শাহাদত দিবসের কথা উল্লেখ না করে আবার প্রমাণ করলো যে বঙ্গবন্ধুর প্রতি তাদের অবস্থান একাত্তর এবং পঁচাত্তরে যেমন ছিল এখনও তেমনি আছে। সুতরাং সাধু সাবধান। কবি গুরুর লাইনটি মনে পড়ল, 'ওদের কথায় ধাঁধা লাগে, তোমার কথা আমি বুঝি।'