হিন্দি চীনি ভাই ভাই, পিঠে ছুরি মারতে চাই

শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকশামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক
Published : 4 July 2020, 05:49 PM
Updated : 4 July 2020, 05:49 PM

কম বেশি দুই শ বছর আগে নেপলিয়ান বোনাপার্ট বলেছিলেন "চীন এক ঘুমন্ত দৈত্য। এক ঘুমাতে দাও। এ জাগ্রত হলে সারা বিশ্বকে তছনছ করবে"। নেপোলিয়ান নস্ট্রাডামুসের  মতো ভবিষ্যৎ দ্রষ্টা ছিলেন না। তবে ইতিহাসে ছিল তার প্রখর জ্ঞান। ইতিহাসের কথা বিবেচনায় নিয়েই নেপোলিয়ান একথা বলেছিলেন। 

নেপোলিয়ানের সময়ে চীন শাসন করতো কুইং রাজবংশ আর চীনের জনসংখ্যার এক বড় অংশ তখন আফিম খেয়ে ঘুমাতো। কিন্তু তার পূর্ববর্তী মিং রাজবংশসহ অন্যাদের শাসন কালে চিফ ছিল দুর্ধর্ষ আগ্রাসী একটি জাতি। ২৭০০ বছরের পুরানো চীনের দেয়াল এবং টেরাকোটা সৈন্যদের মুর্তি প্রাচীন চীনের আগ্রাসন নীতিরই উদাহরণ। এমনকি বিশ্বের শ্রেষ্ঠ দিগ্বিজয়ীর অন্যতম চেঙ্গিস খানের মঙ্গল রাজ্যও চীন বহু দফা আক্রমণ করে দখলে রেখেছিল। চেঙ্গিস উত্তরসূরী কুবলাই খানই চীন দখল করে। সেখানে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন ইয়ায়ুন সামাজ্য। 

১৯১২ সনে রাজতন্ত্রের অবসানের পর প্রথমে প্রজাতন্ত্র এবং পরে সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের মাধ্যমে কমিউনিস্ট সরকার প্রতিষ্ঠিত হলেও চীনের আগ্রাসী চরিত্র পাল্টায়নি। এমনকি চীন জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন যোগে দেয়নি। সোভিয়েত এবং চীনের নীতির মধ্যে একটি মৌলিক পার্থক্য ছিল এই যে, সেখানে সোভিয়েত ইউনিয়ন চেষ্টা করতো বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সমাজতান্ত্রিক এবং উপনিবেশ বিরুদ্ধে শক্তিকে উৎসাহ এবং সহায়তা দিতে, কমুনিস্ট শাসিত চীন তা করেনি।

এমনকি ক্যারিবিয়ান সংকটের সময় কিউবাকে সমর্থন করার বদলে বরং সোভিয়েতের ভূমিকার সমালোচনা করেছিল কাগুজ বাঘ বলে। যে ভিয়েতনাম বহু বছর মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে ভিয়েতনামে সমাজতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত করেছিল, ১৯৭৯ সনে চীন সেই সমাজতান্ত্রিক ভিয়েতনামেও আক্রমণ চালিয়েছিল। যে সৌভিষেত ইউনিয়ন চীনের  সমাজতান্ত্রিক আন্দলনে দূঢ় সমর্থন ও সহযোগিতা করেছিল, চীনের কমুনিস্ট সরকার সেই সোভিয়েতেরও বিরোধিতা করেছে। বেশ কিছু আন্তর্জাতিক বিষয়ে বর্তমানে চীন সরকার ন্যায়নীতির জলাঞ্জলি দিয়ে অন্যায়কে সমর্থন করেছে যার সবচেয়ে জলন্ত উদাহরণ হচ্ছে রোহিঙ্গা সমস্যা। এটা বলার অপেক্ষা রাখেনা যে চীনের সাহায্য সমর্থন ছাড়া মিয়ানমার রোহিঙ্গা সমস্যা জিইয়ে রাখতে পারতো না। বিশ্বের বিরাট সংখ্যক দেশ মিয়ানমার-বিরোধী অবস্থান নিয়েছে। 

১৯৭৬ সনে মাও দেজ দং এর বিদায়ের পর চীনকে আর আদর্শিক সমাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র বলা যায় না। তাদের বর্তমান খোলা বাজার নীতি বিশ্বের যেকোনও পুঁজিবাদী অর্থনীতির সমতুল্য, এর কারণে সে দেশে সম্প্রতি জন্ম নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের আমাজনসম আলিবাবা নামক কোম্পানি এবং বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ধনী- জ্যাক মা, পনি মা এবং মা হুয়াতেং। এরপর চীন সমাজতন্ত্রের কোনও খাতে পড়ে না। ১৯৬২ সনে চীনের আকস্মিক ভারত আক্রমণটি অবাক করেছিল। কেননা এই অগ্রাসনের মাত্র কয়েক বছর আগেই প্রধানমন্ত্রী চৌ এন লাই ভারতের ভূমিতে দাঁড়িয়েই বলেছিলেন- 'হিন্দি চীনি ভাই ভাই'।

প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত নেহেরু তখন সাম্রাজ্যবাদবিরোধী জোট নিরপেক্ষ আন্দোলন সৃষ্টির উদ্দেশ্যে পঞ্চশীল চুক্তিতে ব্যস্ত। তিনি ১৯৪৯ সনের চীনের বিপ্লবেরও বড় সমর্থক ছিলেন এবং তাই  ভারতে চৌ এন লাইকে উষ্ণতম সংবর্ধনা প্রদান করেন, যদিও ৪৭-এ ভারতীয় বিমানঘাঁটি  আমেরিকাকে ব্যবহার করতে দিয়েছিলেন।

চীনের বিপ্লবীদের বিরুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং অন্যান্য সমাজতান্ত্রিক দেশ সহ পৃথিবীর প্রায় সবাইকে বিস্মিত করে 'হিন্দি চীনি ভাই ভাই' বলার মাত্র কয়েকবছর পর চীন হঠাৎ ভারত আক্রমণ করে সে দেশের বিরাট এলাকা দখল করে। অনেকে এ ঘটনাকে  ব্রুটাস কর্তৃক জুলিয়াস সিজারের পিঠে ছুরি মারার সাথে তুলনা করেছে। নেহেরু নিজে চীনের এমন আকস্মিক বিশ্বাসঘাতকতাকে  মনের দিক থেকে মেনে নিতে না পারে স্নায়ুরোগে পতিত হয়েছিলেন। সোভিয়েত ইউনিয়নসহ সকল কমুনিস্ট রাষ্ট্র চীনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল।

চীনের উদ্দেশ্য ছিল লাদাখ অঞ্চলে ভারতের সেই ভূমি দখল করা যা ব্রিটিশ রাজ্যের সময় প্রথমত ১৮৬০, পরে ১৮৯৯  এবং চূড়ান্তভাবে ১৯১৩ সনে সিমলা চুক্তির মাধ্যমে ভারতের অংশ হিসেবে স্বীকৃত হয়। ১৯১৩ এর চুক্তিতে সে সময়ের স্বাধীন তিব্বত সেই করেছিলেন বিধায় আন্তজার্তিক আইনে চীন এ চুক্তি মানতে বাধ্য, যদিও চীন নিজেই এই চুক্তিতে সই করেনি, এই চুক্তি দ্বারা যে ম্যাকমোহন লাইন সৃষ্টি হয়েছিল তা অন্যদিকাল ধরে প্রথমত ভারত-তিব্বত এর সীমানা হিসেবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত। 

১৯৫০ সনে চীন আন্তর্জাতিক আইন ভঙ্গ করে তিব্বত দখল করে। বলা যায়, এটি ছিল কেলোগ ব্রায়ান চুক্তির খেলাপ। চীন এই চুক্তির অংশ না হলেও এর বিধানসমূহ যে আন্তজার্তিক আইনের অংশে পরিণত হয়েছে, সেকথা নুরেমবার্গ সনদ প্রণয়নের সময় উচ্চারিত হয়েছিল। দালাই নামা তিব্বতকে একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল বলে উল্লেখ করেন। ঐতিহাসিকভাবে তিব্বত চীনের অংশ ছিল বলে কোনও প্রমাণ নাই। তিব্বত দখলের পর ৬ হাজারের অধিক বৌদ্ধ মন্দির (গুম্থা) ধ্বংস করেছিল, এবং ১০ লাখ লোককে হত্যা করেছিল বলে অভিযোগ রয়েছে, যে কথা "সেভেন ইয়ারস ইন তিব্বত" পুস্তকে অস্ট্রেলিয়ান হেনাধিক হেরার লিখেছেন। ইদানিং ভুটানের অংশও চীন দাবি করছে। চীন আন্তজার্তিক সমুদ্র আইন লঙ্ঘন করে দক্ষিণ চীন সাগর নিজেদের একক নিয়ন্ত্রনে নেওয়ার চেষ্টা করে জাপান, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ভিয়েনাম প্রভৃতি দেশের সাথে যুদ্ধাবস্থার সৃষ্টি করেছে, দাবি করছে সেখানকার কয়েকটি দ্বীপ।

যুক্তরাজ্য চীনের গুয়েইহো হাইটেক কোম্পানির সাথে ৫জি নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠার জন্য চুক্তি করার পর ব্রিটিশ গোয়েন্দারা ভয় পাচ্ছেন এর ফলে চীনের কাছে যুক্তরাজ্যের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে। ইউরোপীয় ইউনিয়নও একই ভয়ে শংকিত হয়ে চীনের সাথে চুক্তিতে দ্বিধান্বিত। চীন তৃতীয় বিশ্বে আধিপত্য এবং আগ্রাসন বিস্তারের এবং অভিনব কার্যক্রম চালাচ্ছে। গরিব দেশগুলো ঋণ পাবার প্রস্তাব পেলেই লুফে নেয়, ঋণ শোধের চিন্তা না করে চতুর চীন এর সুযোগ নিয়ে প্রচুর ঋণ দিয়ে অবশেষে শ্রীলংকাকে বাধ্য করেছে তাদের হাম্মানটোটা বন্দর চীনকে ৯৯ বছরের জন্য লিজ দিতে। আফ্রিকার দেশ জীবুতিতে এই বলে সামরিক ঘাঁটি তৈরি করেছে যে জিবুতিতে চীনের বিনিয়োগ রক্ষার জন্য দরকার। মালদ্বীপেও তাই করছে। এরই মধ্যে চীন চুক্তি ভঙ্গ করে হংকং-এ নিজের পূর্ণ  নিয়ন্ত্রণ নিতে আইন পাস করেছে। তাইয়ান দখলের চেষ্টাতেও রত রয়েছে চীন।

পৃথিবীর অনেক দেশেই মানবাধিকার লংঘন চলছে। তবে চীন উইঘুর মুসলিমদের যে অমানুষিক নির্যাতন করে চলছে তা শুধু অমানবিক নয় ভয়াবহ। তারা মুসলিম মেয়েদের বাধ্য করছে বন্ধ্যাত্ব গ্রহণ করতে, যা কিনা সত্যিকার অর্থে সংখ্যালঘু নিকেশ করা, যা আন্তজার্তিক ফৌজদারী আদালতে বিচারযোগ্য। তবে চীন রোম চুক্তির পক্ষ নয় বলে তার বিরুদ্ধে মামলা করা  যাচ্ছে না। বহু উইঘুর মুসলমান হত্যা করা হয়েছে, কয়েক লাখকে নির্যাতন করে, আটক করে, ধর্ম পরিবর্তনে নির্যাতনের মাধ্যমে বাধ্য করা হচ্ছে, যা বিশ্ব সংবাদ মাধ্যমে প্রতিনিয়ত প্রকাশ পাচ্ছে। 

উইঘুরের নির্যাতন ক্যাম্পে আটক মুসলিম নারীদর মাথার চুল কেটে সেই চুল দিয়ে বিভিন্ন সামগ্রী চীন বিদেশে রপ্তানি করছে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র এই ধরনের একটি চালান আটক করেছে। উইঘুরে মুসলিম নিধন এবং মিয়ানমার মুসলিম নির্যাতনকে পরোক্ষ সমর্থন দিয়ে চীন নিরাপত্তা পরিষদে কয়েক দফা মিয়ানমার -বিরোধী পদক্ষেপ বন্ধ করেছে ভেটো প্রদান করে। বিস্ময়ের ব্যাপার হলো তারা মুসলিম নির্যাতনের বিরুদ্ধে কোনও কিছুই বলছেন না। চীন কর্তৃক রেহিঙ্গা বিরোধ অবস্থানের বিরুদ্ধেও তারা নিশ্চুপ, প্যালেস্টাইন বিষয়েও চীনের ভূমিকা নেই বললেই চলে। ইসরায়েলের সঙ্গে চীনের সম্পর্ক বেশ ভালো। চীনের আগ্রাসী ভূমিকার জন্য দেশটি প্রায় একঘরে। পাকিস্তান এবং উত্তর কোরিয়া ছাড়া সত্যিকার অর্থে এর কোনও মিত্র নেই। সম্প্রতি ১৮৫ দেশ, যাদের মধ্যে নিশ্চিতভাবে বহু মুসলিম দেশ ছিল, নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য পদের জন্য ভারতের পক্ষে ভোট দেয়, যে কথা বিশ্বে চীনবিরোধী মনোভাবের প্রমাণ।

১৯৬২ সনের যুদ্ধে চীন 'আসকাই চিন' নামে পরিচিত ভারতের বিশাল অংশ দখল করে নেয়। আর এই প্রথমবারের মতো গালওয়ান উপত্যকা দখলের চেষ্টায় রয়েছে। ১৯৬২-তে চীন নিজে যে প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা সৃষ্টি করেছিল, তাও সে অতিক্রম করছে। 

ভারত চীনের দ্বন্দ্ব যদি শেষ পর্যন্ত বিশ্বযুদ্ধে রূপ নেয়, যদি পারমাণবিক বোমা ব্যবহৃত হয়, তবে আমরাও পারমাণবিক তেজষ্ক্রিয়তা থেকে রক্ষা পাবো না। আর সেখানেই আমাদের শঙ্কা। যুদ্ধ যেন না বাধে, চীনের যেন শুভবুদ্ধির উদয় হয়- সেটাই আমাদের কাম্য। 

চীনের সামরিক শক্তি নিশ্চিতভাবেই এখনো ভারত থেকে অনেক বেশি। তবে যুদ্ধে জয়-পরাজয় নির্ধারণে সবসময় সামরিক শক্তির পরিসংখ্যান কাজে আসে না। আলেকজান্দার দশ হাজার সৈন্য নিয়ে  ডরাইযুসের বিশাল বাহিনীকে, চেঙ্গিস খান অনেক ছোট সামরিক বাহিনী নিয়ে বিশ্বের বড় বড় সেনাবাহিনীকে, বাবর বিশ হাজার সৈন্য নিয়ে ইব্রাহিম লোদির দুই লাখ সেনাকে তাহলে পরাজিত করতে পারতেন না। আবার ২০২০ এর ভারতও ১৯৬২ এর ভারত থেকে আলাদা। 

আমাদের মুক্তিযুদ্ধে চীন শুধু বিরোধিতা করেনি, বরং মিত্রশক্তি ভারতীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার পরিকল্পনাও নিয়েছিল। একথা ইয়াহিয়া বার বার উল্লেখ করেছে যে, চীন আমাদের স্বাধীনতা নস্যাৎ করে দেওয়ার জন্য ভারতীয় সৈন্যদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার সমস্ত  প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল। সোভিয়েত ইউনিয়ন, রাশিয়া-চীন সীমান্তে ৪০ হাজার সেনা পাঠানোর কারণে চীনের সেই প্রক্রিয়া ব্যর্থ হয়। বঙ্গবন্ধুর জীবদ্দশায় বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়নি চীন। সম্প্রতিও ভারত চীনের সাথে বন্ধুত্ব রক্ষার ব্যস্ত ছিল। যার কারণে জাপান-যুক্তরাষ্ট্র বারবার ভারতকে চীন সম্পর্কে হুঁশিয়ার পর্যন্ত করেছে। 

ভারত-চীনের এ দ্বন্দ্বের সময় বাংলাদেশ তার আপন অবস্থানে থাকবে ঠিকই, তবে মনে রাখা দরকার এ সময়ে চীন চাইবে বাংলাদেশকে অনেক বেশি সুবিধা দেবার প্রলোভন দেখাতে। বাংলাদেশকে সে প্রলোভন থেকে সর্তক থাকতে হবে। চীন এ সময়ে চাচ্ছে, বাংলাদেশের সঙ্গে 'টু সিটি এগ্রিমেন্ট' বা 'সিস্টার সিটি এগ্রিমেন্ট' করতে। (সিস্টার সিটি এগ্রিমেন্ট- দুই দেশের দুই শহরের মধ্যে বাণিজ্য, সংস্কৃতি ও পারষ্পরিক স্বার্থ বিনিময়ের দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি।) 

পৃথিবীর অনেক দেশ এখন চীনের সঙ্গে করা তাদের 'টু সিটি এগ্রিমেন্ট' থেকে সরে আসছে। কারণ এটা চীনের হাম্মানটোটা কৌশল। বাংলাদেশ পায়রা বন্দরের একটি টার্মিনাল দিয়েছে। ভালো। তবে সেটা যেন সঠিক সময়ে শেষ হয়। সেখানে যেন ঋণের ফাঁদ পাতার চেষ্টা না করে চীন।