আফগান শান্তি কতদূর?

অনিন্দ্য আরিফ
Published : 17 March 2020, 09:58 AM
Updated : 17 March 2020, 09:58 AM

এ বছরের ২৯ ফেব্রুয়ারি, শনিবার কাতারের রাজধানী দোহায় যুক্তরাষ্ট্র এবং তালেবান গোষ্ঠীর মধ্যে যে শান্তিচুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে, তা আফগানিস্তানে দীর্ঘ চল্লিশ বছর ধরে চলা সহিংস ও ধ্বংসাত্মক গৃহযুদ্ধ এবং বৈদেশিক আগ্রাসনের পরিসমাপ্তি ঘটিয়ে শান্তি ও উন্নয়নের পথে যাত্রার প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে বিবেচনা করছেন আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা।  তালেবান, আফগান ন্যাশনাল আর্মি এবং যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক শক্তির প্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে স্বাক্ষরিত এই চুক্তি বাস্তবায়িত হলে এ পক্ষগুলো একে অপরের বিরুদ্ধে আক্রমণ থেকে নিবৃত্ত থাকবে এবং তালেবান তাদের বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করবে।

এ শান্তিচুক্তি অনুযায়ী, আগামী ১৪ মাসের মধ্যে আফগানিস্তান থেকে সকল সৈন্য প্রত্যাহার করবে যুক্তরাষ্ট্র ও তার ন্যাটো মিত্ররা।  এখনও পর্যন্ত দেশটিতে ১২ হাজারের মতো বিদেশি সৈন্য রয়েছে।  অপরদিকে, তালেবানরা আফগানিস্তানে কোনও হামলা তো চালাবেই না, উপরন্তু বহুজাতিক জঙ্গীগোষ্ঠী আল-কায়েদাকেও এই ভূখণ্ডে কোনো হামলা চালাতে দেবে না।  এই চুক্তির পথ ধরে কাবুলে যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত স্থানীয় সরকার, তাদের নিয়ন্ত্রক আন্তর্জাতিক মহল এবং তালেবানের মধ্যে শান্তি আলোচনা শুরু হতে পারে।

তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্যদের সম্পূর্ণ প্রত্যাহারের বিষয়টি নির্ভর করছে তালেবানেরা যাকে নিয়মিত 'পাপেট সরকার' হিসেবে আখ্যা দিয়ে আসছে, সেই প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানির সরকারের সঙ্গে আলোচনা কতটুকু ফলপ্রসূ হবে, তার ওপর।  তালেবানদেরও প্রধান কর্তব্য হয়ে দাঁড়াবে, তাদের সমর্থক জনগোষ্ঠী এবং সশস্ত্র যোদ্ধাদের চুক্তির ভালো দিকগুলো ঠিকমতো বোঝানো।  আফগানিস্তানের সরকারের সঙ্গে তালেবান নেতাদের ঠিক কোন ধরনের সম্পর্ক হবে, তার কোনো রূপরেখা চুক্তিতে নেই।  এক্ষেত্রে সরকারের সঙ্গে নিজেদের বিরোধ মিটিয়ে ফেলার উদ্যোগ নিতে হবে তালেবানদেরই এবং উভয় পক্ষই তাতে লাভবান হতে চাইবে। অবশ্য এ ব্যাপারে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে থাকবে যুক্তরাষ্ট্র। তবে তার আগে বর্তমান নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে তালেবানের যে আপত্তি, সরকারকে তা আমলে নিয়ে তাদের সঙ্গে আলোচনার টেবিলে বসতে হবে। এ নিয়ে দ্বিমত হলে অভ্যন্তরীণ সংকট চলতেই থাকবে।  আর যুক্তরাষ্ট্র-তালেবান শান্তিচুক্তিও হয়ে পড়বে অর্থহীন।

আফগানিস্তানের শান্তি নষ্ট করে দেশটিকে লাগাতার রক্ত ঝরার মৃত্যুকূপে পরিণত করার নেপথ্যে রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে চলা স্নায়ুযুদ্ধের সংঘাত।  আফগানিস্তানে তৎকালীন সোভিয়েত প্রভাব নস্যাৎ করতে এবং বামপন্থি নজিবুল্লাহ-শাসনের অবসান ঘটাতে পেন্টাগনের নেতৃত্বে যে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র এবং সেই সুবাদে যুক্তরাষ্ট্রের মদদে তালেবান যোদ্ধা তৈরি ও রক্ষণশীল ইসলামি গোষ্ঠীগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে চলমান শাসনের পতন ঘটানোর রাজনৈতিক সত্যটি পাঠকের স্মরণে রাখা দরকার।  আফগানিস্তানের ভূরাজনৈতিক বৈশিষ্ট্য খুবই আন্তর্জাতিক মোড়লদের কাছে লোভনীয়, একাধিক গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রের সঙ্গে তার সীমান্তরেখা। এমন একটি দেশে সোভিয়েত-আধিপত্য মেনে নিতে পারেনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।  কারণ সোভিয়েত সমাজতন্ত্রের সঙ্গে তখন তার বৈরী সম্পর্ক। অবশ্য সোভিয়েত সমর্থিত নজিবুল্লাহ সরকার শিক্ষা, স্বাস্থ্য এবং নারীর অগ্রগতিতে বেশ ভূমিকা রাখলেও তা করা হয়েছিল মূলত সোভিয়েতের জোর করে চাপিয়ে দেওয়া সমাজতান্ত্রিক মডেলের ভিত্তিতে।  তারা এটি করেছিল মূলত তৎকালীন সোভিয়েত তাত্ত্বিক উইলানাভস্কির তৃতীয় বিশ্বে শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাজতন্ত্র কায়েমের তত্ত্বকে অবলম্বন করে।  সেই সময়ের অনেকগুলো রাষ্ট্রে এ তত্ত্বের অসাড় প্রয়োগের সুযোগ নিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।  আফগানিস্তান তার ব্যতিক্রম হলো না। আর পাকিস্তানসহ ইসলামি যোদ্ধাগোষ্ঠী তো তাদের তাড়াতে না পারা পর্যন্ত স্বস্তি পাচ্ছে না।  এ জাতীয় অবস্থার অবসান ঘটাতে দরকার পড়ে উগ্র জঙ্গিবাদী যোদ্ধাগোষ্ঠীর, অনুরূপ মৌলবাদী দানবের।  এসব দানব সৃষ্টিতে যুক্তরাষ্ট্রের তুলনা মেলে না। তৈরি হয় পাকিস্তানভিত্তিক তালেবান যোদ্ধাগোষ্ঠী।  সোভিয়েত প্রভাবমুক্ত হয়ে আফগানিস্তান হয়ে ওঠে মার্কিনি-তাঁবেদার রাষ্ট্র। এর মধ্যে দীর্ঘ সময় আফগানিস্তানে কর্তৃত্ব ও প্রভুত্ব নিয়ে অনেক রাজনৈতিক খেলা, মূলত তালেবান বনাম ওয়াশিংটন। পরিণামে আফগানিস্তান তথা কাবুল জ্বলছে আকাশিবোমা, স্থলবোমা, মৃত্যু আর মৃত্যুতে আফগানিস্তান জেরবার। একদিকে ড্রোন হামলা মার্কিনিদের, অন্যদিকে আত্মঘাতী বোমা হামলা বা হঠাৎ হামলা তালেবানদের, মার্কিনি সেনারও মৃত্যু ঘটছে।  সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত সেখানকার সাধারণ মানুষ।  বিপর্যস্ত দেশের অর্থনীতি, নির্ভরশীল যুক্তরাষ্ট্রের অনুগ্রহের ওপর।

যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধের ইতিহাসে ভিয়েতনাম যুদ্ধের পর আফগান যুদ্ধ দ্বিতীয় দীর্ঘতম যুদ্ধ।  আল-কায়েদা ২০০১ সালের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে হামলা চালানোর কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই আফগানিস্তানে অভিযান চালায় যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বাহিনী।  তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ এই অভিযানকে 'সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ' হিসাবে আখ্যা দেন।  ১৮ বছরের এই যুদ্ধে কত সংখ্যক আফগান বেসামরিক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও তালেবান সদস্যের প্রাণ গেছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান বের করাটা কঠিন।  তবে ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এই যুদ্ধে ৩২ হাজারের বেশি বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।  আর যুক্তরাষ্ট্রের রোড আইল্যান্ডের ব্রাউন ইউনিভার্সিটির ওয়াটসন ইনস্টিটিউটের তথ্য মতে, আফগানিস্তানে যুদ্ধে নিরাপত্তা বাহিনীর ৫৮ হাজার সদস্য এবং বিরোধী পক্ষের ৪২ হাজার যোদ্ধা নিহত হয়েছেন। আর এই যুদ্ধ পরিচালনা করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ২ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয়েছে।

আফগানিস্তানে গত দু দশক ধরে চলমান সংঘাত হঠাৎ করে শুরু হয়নি। দেশটির সংঘাতের ইতিহাস অনেক পুরনো। আফগানিস্তানে গোত্র ও সম্প্রদায়ের আলাদা আলাদা নেতৃত্ব রয়েছে।  যারা এই গোত্র বা সম্প্রদায়গুলোর নেতৃত্ব দেন তারা উক্ত গোত্র বা সম্প্রদায়গুলোর মধ্যে প্রভাব ও সম্পদশালী ব্যক্তি। আফগানিস্তানে কেবলই বৈদেশিক শক্তির আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সংঘাত হয় বিষয়টা এমন নয়। গোত্র স্বার্থের দ্বন্দ্বের জন্যও আফগানিরা সংঘাতে জড়ায়। ফলে আফগানিস্তানের সংঘাত বন্ধের জন্য কেবলই তালেবানদের সাথে সমঝোতাই কাজে আসবে বলে মনে করা কঠিন। অন্যদিকে গোত্রভিত্তিক সংঘাত বন্ধ করে আন্তঃসাম্প্রদায়িক সম্প্রতি আফগানিস্তান আজও সম্ভবপর হয়ে উঠেনি।  ফলত গোত্রভিত্তিক সংঘাতের সুযোগ নিতে পারে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী সম্প্রদায়গুলো। অন্যদিকে তালেবানদের মধ্যেও নেতৃত্বের আনুগত্য নিয়ে অর্ন্তদ্বন্দ্ব রয়েছে। ফলে তাদের মধ্যেও ক্ষমতা ভাগাভাগি নিয়ে দ্বন্দ্ব হওয়া বড় কোনো বিষয় নয়। আর এসব অন্তর্দ্বন্দ্বের সুযোগ যে কোন বর্হিশক্তি নিতে চেষ্টা করবে তা স্বাভাবিক।  ফলে আমেরিকা বা ন্যাটো জোট আফগানিস্তান থেকে চলে গেলেও আফগানিস্তানে নতুন কোন আগ্রাসী শক্তি আসবে না এমনটা মনে করাও কঠিন।  অন্যদিকে ভূ-রাজনীতির আধিপত্য বিস্তারের খেলায় আমেরিকা বা পশ্চিমা বিশ্ব কখনই অন্য কারো কাছে এই অঞ্চলের ভার ছেড়ে দিবে না।  এসব বিবেচনায় আফগানিস্তানে শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মার্কিন প্রশাসনের তোড়জোর কতটা হালে পানি পাবে সেটাও বিবেচ্য।

চলতি বছরেই যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।  তাই এ শান্তিচুক্তিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার বৈদেশিক নীতির ঐতিহাসিক সাফল্য হিসেবে অভিহিত করতে চাইবেন, এটা খুবই স্পষ্ট। অবশ্য ২০১৭ সালেই ট্রাম্প আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহারের অভীপ্সা জাতির সামনে ব্যক্ত করেছিলেন। আফগানিস্তানে তালেবানদের সঙ্গে ১৮ বছরের যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে কোনো বৈদেশিক শক্তির সঙ্গে সবচেয়ে দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধ।  অবশ্য এ মুহুর্তে ট্রাম্প প্রশাসন মধ্যপ্রাচ্য থেকে নিজেদের প্রত্যক্ষ উপস্থিতি গুটিয়ে নিতে চাইছে।  সে লক্ষ্যেই তারা উত্তর সিরিয়া থেকেও সৈন্য প্রত্যাহার করেছে। ২০১৯ সালে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও'র ইসলামাবাদ সফরকালে তালেবানদের আলোচনার টেবিলে বসানোর দায়িত্ব গ্রহণ করে পাকিস্তান। তাই দেশটি এ শান্তিচুক্তির সফলতার বড় অংশীদারিত্ব দাবি করছে। তালেবান ও কাবুল সরকারের মধ্যে শান্তি আলোচনার ভবিষ্যত সফলতাতেও পাকিস্তানের ইতিবাচক ভূমিকা জরুরি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এ শান্তিচুক্তি তালেবানদের সামনে সশস্ত্র পন্থা বাদ দিয়ে নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতির পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছে।  এখন প্রশ্ন হলো তারা যদি ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন করে তাহলে কী দেশটি অঙ্গীকার ভঙ্গ করে আল-কায়েদা, ইসলামিক স্টেট বা অন্যান্য বহুজাতিক জঙ্গী গোষ্ঠীর স্বর্গরাজ্যে পরিণত হবে না, তার কতটুকু নিশ্চয়তা আছে? সবচেয়ে বড় বিষয় হলো আফগানিস্তানে নারীদের যে ক্ষমতায়ন ঘটছে তা কী ক্ষমতায় আসলে তারা রক্ষা করবে না কি ১৯৯৬ সালে ক্ষমতায় আসার পর যে উগ্রতার পথ বেছে নিয়েছিল, তা অব্যাহত রাখবে? অবশ্য তালেবানের ডেপুটি লিডার সিরাজউদ্দিন হাক্কানির সাম্প্রতিক বক্তব্য আশান্বিত করেছে।  তিনি বলেছেন যে, ইসলামে যেভাবে নারীদের অধিকার দেওয়া হয়েছে, শিক্ষা বা কাজের অধিকার রয়েছে, সে অনুযায়ী তালেবানরা তাদের রাজনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তুলবে।  তাদের এ প্রতিশ্রুতি আসলে শুধু মুখের কথা না কি নিজেদের অবস্থানের বাস্তবিক পরিবর্তন, তা ভবিষ্যতই বলে দিতে পারে।

তবে তালেবানদের জন্য এ চুক্তি একটি আশীর্বাদ হিসেবে কাজ করতে পারে। কেননা তারা ভবিষ্যতে দাবি করতে পারে যে দেশ থেকে বৈদেশিক সৈন্য অর্থাৎ হানাদার শক্তিকে চলে যেতে বাধ্য করতে তারাই মূখ্য ভূমিকা রেখেছে। এক্ষেত্রে তারা নিজেদেরকে আফগান সার্বভৌমত্ব রক্ষার জাতীয় বীর হিসেবেও প্রচারণা চালাতে পারে।  কেউ কেউ বিশ্বাস করতে শুরু করেছেন যে তালেবানরা যদি কাবুলের নিয়মতান্ত্রিক রাজনীতিতে অংশগ্রহণ করে এবং বিরোধী পক্ষ কিংবা আবারও ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তন করে, তাহলে তারা আধুনিক শিক্ষাকে অনুমোদন দেবে এবং নারীর মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখবে।  কিন্তু দেশটিতে এখনও এমন অনেক মানুষ রয়েছেন, বিশেষ করে তালেবান সহিংসতার লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়ে যারা ক্ষতময় জীবন কাটাচ্ছেন, তারা এ চুক্তিকে কোনোমতেই মানতে পারছেন না। আফগানিস্তানের দুইজন প্রেসিডেন্ট দাবিদার আশরাফ ঘানি এবং আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ এই চুক্তির ব্যাপারে মিশ্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। বিশেষ করে ঘানি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে গভীর শঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন যে তালেবানদের শর্ত মেনে নেওয়ার অর্থই হলো তার সরকারকে সমঝোতা থেকে ছেঁটে ফেলা।  গণমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, তালেবানরা কোনোভাবেই কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারবে না।  আফগান নেতারা বলছেন যে তালেবান বন্দীদের মুক্তি দেওয়ার বিষয়টি দীর্ঘায়িত করা হবে।  তালেবানরা যতক্ষণ পর্যন্ত না অন্য জঙ্গীদের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করবে, তাদের মাদক সাম্রাজ্য গুটিয়ে না নেয়, আফগানিস্তানের নাগরিক অধিকার সম্পূর্ণ মেনে না নেয় এবং আরও অনেক শর্তে যদি রাজী না হয়, ততক্ষণ পর্যন্ত তারা এ বন্দিমুক্তির বিষয়টি দীর্ঘায়িত করবে।  তাই দোহা চুক্তির পরেও কাবুল সরকার এবং তালেবানদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব যে দেশটিতে নতুন মাত্রার উত্তেজনার পারদ চড়াবে, তা বোঝাই যাচ্ছে।  তার লক্ষণও প্রকাশ পাওয়া শুরু করেছে। ইতিমধ্যেই প্রেসিডেন্ট ঘানি ১৫০০ বন্দিকে শর্তসাপেক্ষে মুক্তি দেওয়ার ডিক্রি জারি করলেও তালেবানরা শর্তটিকে প্রত্যাখান করেছে।

তারা একে চুক্তির বরখেলাপ বলে অভিহিত করেছে।  আবার যুক্তরাষ্ট্রের সেনা প্রত্যাহার শুরু হলেও দুইজন প্রেসিডেন্ট দাবিদারের মধ্যকার বিরোধ এ উত্তেজনায় বাড়তি রসদ জোগাচ্ছে।  আফগানিস্তানে প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ গ্রহণ করেছেন দুই রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী আশরাফ ঘানি ও আবদুল্লাহ আবদুল্লাহ।  আশরাফ ঘানি দ্বিতীয় মেয়াদে শপথ নিয়েছেন।  তবে তার প্রধান প্রতিপক্ষ আবদুল্লাহ এ শপথকে স্বীকৃতি না দিয়ে নিজস্বভাবে পাল্টা শপথ নিয়েছেন। এতে করে আফগানিস্তানে নতুন রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হয়েছে।  তাই অনেকেই আবার বলছেন, আফগানিস্তানে ফিরে আসতে পারে ৩১ বছর আগের অবস্থা। সে সময় সাবেক সোভিয়েত সেনারা চলে যাওয়ার পরে যে অবস্থার মধ্যে পড়েছিল দেশটিকে এবারও সেই অবস্থার মুখে পড়তে হতে পারে। শান্তির বদলে গৃহদাহের যাতনা পোহাতে হতে পারে দেশটিকে।  সেক্ষেত্রে আফগানিস্তানের শান্তি সুদূরপরাহত বিষয় বলে অনুমান করা যায়।