শিক্ষাই সঠিক জবাব

এথেনা রেবার্ন
Published : 4 Feb 2020, 01:55 PM
Updated : 4 Feb 2020, 01:55 PM

উন্নয়ন ও প্রবৃদ্ধির সঙ্গে নিজেদের জন্য সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ার উপযোগী জ্ঞান অর্জন ও শিক্ষা পাওয়া শিশুর অধিকার। কোনো জরুরি পরিস্থিতিতেই শিশুর শিক্ষার অধিকার শেষ হয়ে যায় না। কার্যত সংঘাত থেকে বেঁচে আসা অসহনীয় বর্বরতার সাক্ষী হয়ে ফেরা শিশুদের জন্য নিরাপদ স্বর্গ বিদ্যালয় ও শিক্ষার সুযোগ আরও জরুরি।

এমন একটি জায়গা তাদের দরকার যেখানে শিশুরা সমবয়সীদের সঙ্গে খেলাধুলার ও শেখার সুযোগ পাবে, একইসাথে মা-বাবাও জানবে যে তাদের সন্তানরা নিরাপদে আছে। শিশুদের শেখা, বেড়ে উঠা ও নিতান্তই শিশুর মতো থাকার ক্ষেত্রে স্থিতিশীলতা ও শৃঙ্খলাপূর্ণ এমন একটি অঙ্গনের প্রভাবকে ছোট করে দেখা যাবে না।

দুই বছর আগে রোহিঙ্গা শিশুদের জীবন বাধাগ্রস্ত হয়েছে, তাদের পায়ের নিচের মাটি কেড়ে নেওয়া হয়েছে এবং মাতৃভূমিতে ভয়াবহ সহিংসতার শিকার হয়ে তাদের পালিয়ে আসতে হয়েছে। শিক্ষা এই বিপর্যয় মোকাবেলা করতে সক্ষম, এটা অন্তত এমন একটা স্থিতিশীল ভিত তৈরি করতে পারে, যেখানে পা গেড়ে শিশুরা তাদের পায়ের নিচের মাটি পুনরুদ্ধার করে ভবিষ্যত পুনর্নির্মাণ শুরু করতে পারে।

একারণেই বাংলাদেশ সরকার থেকে আসা সাম্প্রতিক ঘোষণাটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই সপ্তাহে সরকার বলেছে, মিয়ানমারের পাঠ্যক্রমের ভিত্তিতে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিশুদের জন্য দক্ষতার প্রশিক্ষণসহ শিক্ষার সুযোগ প্রসারিত করবে। এটি বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হওয়া রোহিঙ্গা শিশুদের হারানো স্থিতিশীলতার কিছুটা ফিরিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে কেবল প্রথম পদক্ষেপই নয়, তারা পূর্ণ মর্যাদা নিয়ে, নিরাপদে ও স্বেচ্ছায় যখন ফিরে যাবে তখন মিয়ানমারের সমাজে নিজেদের অন্তর্ভুক্তির জন্য প্রস্তুত হবে।

শিক্ষা শিশুদের সুরক্ষাও দেয়। শরণার্থী শিবিরে বাল্য বিয়ে, শিশুশ্রম, পাচার, শোষণ, নিপীড়ন ও অবহেলাসহ নিয়মিত যেসব ঝুঁকির মুখোমুখি তাদের হতে হয়, তাও কিছুটা কমাতে পারে।

১৪ বছর বয়সী তমালের (প্রকৃত নাম নয়) মতো শিশুরা এই সুবিধা নিতে পারবে। সে বড় হয়ে সাংবাদিক হওয়ার স্বপ্ন দেখে, যাতে সে নিজের জনগোষ্ঠী ও তাদের লড়াই সম্পর্কে বিশ্বকে জানাতে পারে; যাতে সে তাদের কণ্ঠস্বর হতে পারে। শেখার ব্যাপারে তমাল এতটাই আগ্রহী যে হাতের কাছে পোস্টার, সংবাদপত্র, বই, ম্যাগাজিন যা কিছুই সে  পায় তাই পড়ে সে নিজেকে সাংবাদিকতা শেখাচ্ছে। দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে রোহিঙ্গা শরণার্থী শিশুদের ভবিষ্যতের জন্য কিছু আশা দেখাতে আমরা বিশ্ববাসীর কাছে আহ্বান জানিয়ে আসছি। তমালের মতো শিশুদের জন্য সরকারের নতুন এই নীতি স্বপ্নপূরণের পথে নতুন আশার সঞ্চার করবে।

সেভ দ্য চিলড্রেন বাংলাদেশ সরকারের এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানায়। এর মধ্য দিয়ে শুধু জন্মস্থান নির্বিশেষে সকল শিশুর জন্য মানসম্পন্ন ও অন্তর্ভুক্তিমূলক শিক্ষার সুযোগ নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতিই নয়, বরং রোহিঙ্গা শিশুদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকার যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ তাও প্রতিফলিত হয়। আমরা যখনই শরণার্থী শিবিরের শিশু ও পরিবারগুলোর সঙ্গে কথা বলি, তখনই মিয়ানমারে নিজ ঘরে ফেরার, কাজ করার, স্কুলে যাওয়ার জন্য তাদের বিহ্বল আকাঙ্ক্ষার কথা শুনি। তবে রাখাইনে ফেরার উপযোগী পরিবেশের জন্য অপেক্ষমাণ এসব রোহিঙ্গারা যাতে অধিকারবিহীনভাবে কক্সবাজারের শিবিরগুলিতে অবরুদ্ধ অবস্থায় না থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে।

সীমান্তের উভয় পাশেই রোহিঙ্গা শিশুদের সবধরণের অধিকার পেতে  হবে, ভবিষ্যতের সমৃদ্ধ ও শান্তিপূর্ণ রাখাইনকে সহায়তা করার জন্য যেসব হাতিয়ার তাদের দরকার সেগুলো তাদের এখনই পেতে হবে। এই নীতি পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে কেবল মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, স্বেচ্ছায় ও মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবর্তনই নয়, যে কোনো  প্রত্যাবাসানই টেকসই কিনা তা নিশ্চিত করায় বাংলাদেশ সরকারের প্রতিশ্রুতির প্রতিফলন ঘটেছে। পরীক্ষামূলক এ প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে শিশু ও যুবারা দুই বছরের মধ্যে প্রথম এমন এক সুযোগ পাচ্ছে যা তাদের নিজ দেশের সঙ্গে যুক্ত করবে এবং ফেরার পর উন্নত জীবন গড়ে তুলতে সক্ষম করে তুলবে।

তবে এটা একদমই প্রাথমিক একটি পদক্ষেপ। শিবিরগুলিতে চার লাখেররও বেশি শিশু রয়েছে। তাদের সবার জন্যই মানসম্পন্ন ও স্বীকৃত শিক্ষা নিশ্চিত করতে আমাদের সবাইকে কাজ করতে হবে। রোহিঙ্গা শিশু ও যুবকদের শিক্ষার প্রসারে এই উচ্চাভিলাষী নতুন লক্ষ্য যখন বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছি, তখন বাংলাদেশ সরকার ও মানবিক সহায়তা সম্প্রদায়ের দিকে সহায়তার জন্য মায়ানমাকে টেনে আনার দিকেও নজর দিতে হবে।

মিয়ানমার সরকারের উচিত হবে রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষার স্বীকৃতিকে সমর্থন করা এবং কারিগরি নির্দেশনা ও সম্পৃক্ত থাকার মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কাজ করা যাতে আমরা মিয়ানমার পাঠ্যক্রম চালু করতে শিবিরের শিক্ষকদেরপ্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করতে পারি।

কেবলমাত্র জানার সুযোগ প্রসারিত করাই পর্যাপ্ত নয়, এই উদ্যোগের সত্যিকারের প্রভাব ফেলতে শিশুদের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃত শিক্ষা নিশ্চিত করতে হবে। রোহিঙ্গা শিশুরা যাতে ভবিষ্যতে নিজেরাই তাদের পরিবার এবং সম্প্রদায়কে সহায়তা করতে সক্ষম হয়- তা নিশ্চিত করতে তাদের শিক্ষার স্বীকৃতি অপরিহার্য।