আসামের নাগরিকপঞ্জির সাম্প্রতিক প্রেক্ষিত

গৌতম রায়
Published : 2 Sept 2019, 03:26 PM
Updated : 2 Sept 2019, 03:26 PM

আসামের নাগরিকপঞ্জিবা এনআরসি ঘিরে এখন গোটা ভারতব্যাপী বিতর্ক। ২০১৪ সালে বিজেপি ক্ষমতাসীন হওয়ার পর এ বিতর্কটি কার্যত রাজনীতির শীর্ষবিন্দুতেপরিণত হয়েছে। নাগরিকপঞ্জির বিষয়টি দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মতই আসামেও একটি বড় রকমেরবিতর্কের পরিবেশ তৈরি করেছিল। আসাম রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির জয়লাভের মধ্যদিয়ে সেখানকার রাজনৈতিক কার্যক্রমে এনআরসি একটি বড় বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।

আসামের প্রেক্ষিতেনাগরিকপঞ্জি নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে আমাদের প্রথমেই সংশ্লিষ্ট রাজ্যটির ব্রিটিশ আমলথেকে ভৌগলিক সীমারেখা ঘিরে ইতিহাসের দিকে একটু নজর দেওয়া দরকার। ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকশাসকরা ১৮৭৪ সালে প্রথম বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি থেকে আসামকে আলাদা করেছিল। ১৯০৫ সালে লর্ডকার্জন যখন বঙ্গভঙ্গ করেন, তখন ঔপনিবেশিক শাসকেরা আসাম প্রদেশটিকে জুড়ে দেয় সদ্যগঠিত পূর্ববঙ্গের সঙ্গে।

হিন্দু-মুসলমান নির্বিশেষেবাঙালি জনগোষ্ঠীর প্রবল প্রতিরোধের ফলে ১৯১১ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শক্তি বাধ্য হয়েছিলবঙ্গভঙ্গ রদ করতে। বঙ্গভঙ্গ রদের পর আসাম কিন্তু ১৮৭৪ সালের পরবর্তীতে যে প্রশাসনিকঅবস্থানে ছিল, সে অবস্থানে আবার ফিরে যায়, অর্থাৎ আসাম একটি পৃথক প্রশাসনিক প্রদেশহিসেবেই তখন পরিগণিত হতো।

১৯৩৫ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়একটি নির্দেশিকার মাধ্যমে সপ্তম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত প্রত্যেকটি ছাত্র-ছাত্রীরমাতৃভাষায় শিক্ষাদানের অধিকারকে স্বীকৃতি দেয়। এর ফলে আসামের বাঙালিরা তাদের মাতৃভাষাবাংলায় পড়াশোনা করার সুযোগ পান। আসামের বাঙালিদের মাতৃভাষায় পড়াশোনা করার সুযোগেরপ্রবল বিরোধিতা করে 'আসাম অ্যাসোসিয়েশন'  নামকএকটি সংগঠন। সম্ভবত জাতীয় আন্দোলন চলাকালীন সেই প্রথম বাঙালি ভাষা-সংস্কৃতির উপর অসমীয়াভাষা-সংস্কৃতির বিজয় প্রতিষ্ঠার চেষ্টা।

একমাত্র অসমীয়া ভাষায় শিক্ষাদানের দাবি জানানোর ভেতর দিয়ে 'আসাম অ্যাসোসিয়েশন' নামক সংগঠনটি প্রথম ঐতিহ্যশালী আসামে বাঙালি ও অসমীয়াদের ভিতরে একটা বিভাজনকে তীব্র করে তুলতে শুরু করে ।

ব্রিটিশ শাসনের একটাবড় সময় জুড়ে আসামের রাজনৈতিক, প্রশাসনিক, শিক্ষা, সামাজিক, সাংস্কৃতিক-  প্রায়প্রত্যেকটি পরিমণ্ডলে বাঙালিদের বিশেষ রকমের আধিপত্য ছিল। এই আধিপত্যের দরুণ আসামেরবাঙালিরা যে সেখানকার স্থানীয় জনগোষ্ঠীর উপরে নানা ধরনের অবিচার চালায়নি- একথা বললেসত্যের অপলাপ হবে।

১৯৩৫ সালের ভারত শাসনআইন অনুযায়ী যখন নির্বাচন হয়, তখন আসাম প্রদেশের প্রিমিয়ার হিসেবে নির্বাচিত হনমোহাম্মদ সাদউল্লাহ (১৮৮৫-১৯৫৫)। তাকে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই পদচ্যুত করে ভারতীয় জাতীয়কংগ্রেস নানা  রাজনৈতিক কলাকৌশলে ১৯৪৫-৪৬ সালেরনির্বাচনকে প্রভাবিত করে আসামে ক্ষমতাশীল হয়। মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নেন কংগ্রেসেরগোপীনাথ বরদলৈ (১৮৯০-১৯৫০)।   

আসামের প্রধানমন্ত্রীহিসেবে তিনি দায়িত্বভার নেওয়ার পরই স্বাধীনতার আগে সে রাজ্যে যে 'অসমীয়া অস্থিরতা'ছিল তা জোরদার হতে শুরু করে। নানা ঐতিহাসিক কারণেই বহুকাল ধরে আসামে বিভিন্ন ধরনেরজাতিসত্তার মানুষের বাস। তাদের ভিতর বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক কার্যকারিতারভেতর দিয়ে বাঙালিরা ছিল সেখানে বিশেষ রকমের উন্নত এবং এগিয়ে থাকা মানুষ।

বাঙালির সংখ্যাও আসামেছিল অন্যান্য যেকোনও জাতিসত্তার মানুষের থেকে অনেক বেশি। বস্তুত গোটা আসামের মোট জনসংখ্যারঅর্ধেকের থেকে বেশি মানুষ হলেন বাঙালি, যাদের ভেতরে কিন্তু হিন্দু-মুসলমান উভয় ধর্মীয়সম্প্রদায়ের মানুষই রয়েছেন।

গত শতাব্দীর চারেরদশক থেকে অসমীয়া জাতিসত্তার প্রশ্নটিকে উসকে দিয়ে,  অসমীয়া অসহিষ্ণুতাকে ক্রমশ বল্গাহীন করে দেওয়ারকাজটি প্রথম কংগ্রেসের নেতৃত্বে হতে শুরু করে, তখন কিন্তু আসামের মানুষদের ভেতরে তাদেরনিজেদের রাজ্যে, নিজেদের একটা একাধিপত্য প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন ঘিরে উচ্চাশা তৈরি হয়।সেই উচ্চাশাতে আসামের বাঙালিদের প্রধান শত্রু হিসেবে ধরে নেয় অসমীয়ারা।

স্বাধীনতার আগে থেকেইআসামে তৈরি হতে শুরু করা উগ্র জাতীয়তাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি ভেতর দিয়েই সেখানে তৈরি হয়েযায় বাঙালিদের শত্রু হিসেবে প্রতিপন্ন করার এক ধরনের অপচেষ্টা। বাঙালিদের শত্রু হিসেবেপ্রচারের ক্ষেত্রে অসমীয়াদের যে কর্মকাণ্ড, সেই কর্মকাণ্ডকে প্রতিহত করবার কোনো চেষ্টা কিন্তু স্বাধীনতার আগে বা পরে কংগ্রেসদল করেনি।

এ জায়গা থেকেই কিন্তুবাঙালিদের সনাক্তকরণের প্রশ্নটিও ধীরে ধীরে সেখানে প্রাধান্য পেতে শুরু করেছিল। সেইপথ ধরেই অসমীয়া অস্মিতা একটা সময় বাঙালিদের বিরুদ্ধে প্রবল রক্তক্ষয়ী হিংসায় পর্যবসিতহয়। দাঙ্গা-হাঙ্গামা, ঘর জ্বালানো ,খুন-জখম হয়ে ওঠে নিত্যনৈর্মিত্তিক ব্যাপার।

গোপীনাথ বরদলৈ কংগ্রেসেরপ্রিমিয়ার হিসেবে স্বাধীনতার আগেই আসামের দায়িত্বভার নেওয়ার পর সেখানকার বাঙালি মুসলমানদেরউপর তার সরকার ভয়াবহ অত্যাচার করতে শুরু করে দেয়। বাঙালি মুসলমানদের উপর বরদলৈ সরকারেরঅত্যাচারকে কেন্দ্র করে সেখানকার বাঙালি হিন্দুদের  মধ্যে তখন এই ধারণা গড়ে উঠতে শুরু করে যে, বরদলৈসরকার মুসলমানদের তাড়িয়ে বাঙালি হিন্দুদের জন্য নিরাপদ আসাম তৈরি করবেন।

সে কারণেই বরদলৈ সরকারেরবাঙালি মুসলমানদের উপর ভয়াবহ অত্যাচার নিয়ে আসামের বাঙালি হিন্দুরা কিন্তু কোনও প্রতিবাদেসোচ্চার তখন হননি। বামপন্থিরা কিন্তু তাদের সীমিত রাজনৈতিক শক্তি নিয়েই বরদলৈ সরকারেরজাতি ও ধর্মভিত্তিক বিভাজন প্রক্রিয়ার প্রতিবাদে এবং সাধ্য মতো প্রতিরোধে তখন থেকেইসোচ্চার থেকেছেন।

আসামের সমস্ত অবামপন্থি রাজনৈতিক দলই বিভিন্ন সময়কালে, বিভিন্ন পর্যায়ে, অসমীয়া- বাঙালি জাতিসত্তাকে বিঘ্নিত করতে হিন্দু-মুসলমানের তাস খেলেছে। তবে সেই তাস খেলে কোনও বুর্জোয়া রাজনৈতিক দলই ক্ষমতায় এসে সফল হতে পারেনি ।

আসামে হিন্দু-মুসলমাননির্বিশেষে বাঙালির ভেতরে ভাষাভিত্তিক জাতিসত্তার প্রশ্নে, সংস্কৃতিভিত্তিক সামাজিকঐক্যের  প্রশ্নে  যে ঐক্য এবং সংহতি আছে, তা আজ পর্যন্ত সে রাজ্যেরক্ষমতাসীন কোনো রাজনৈতিক দলই কিন্তু ভাঙতে পারেনি। স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে বরদলৈ সরকারেরতৈরি করা বিষবৃক্ষের প্রথম ফসল হিসেবে ১৯৪৮ সালে গৌহাটি শহরে এক বিধ্বংসী বাঙালি-বিরোধীদাঙ্গা হয়েছিল।

সে দাঙ্গায় বাঙালিদেরঘর-বাড়ি ব্যাপক ভাঙচুর, লুটতরাজ ও অগ্নিসংযোগ হয়। ৫০ জনেরও বেশি বাঙালি সে দাঙ্গাতেভয়াবহভাবে আহত হয়েছিলেন। একজন নিহত হয়েছিলেন।

এর ঠিক দুই বছর পরেঅর্থাৎ ১৯৫০ সালে গোটা আসামজুড়ে শুরু হয় 'বঙাল খেদা' আন্দোলন। ব্রহ্মপুত্র উপত্যকারগোয়ালপাড়া, মঙ্গলদৈ, নওগাঁ ধুবড়ি- এসব অঞ্চলগুলিতে ছিল বাঙালি আধিপত্য। তাই এসব অঞ্চলগুলিতেবাংলা ভাষার প্রাধান্যযুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংখ্যা ছিল যথেষ্ট বেশি। সেসব বাঙালিপ্রধান  স্কুলগুলিতে এই সময় আসাম সরকার (বলাবাহুল্য,সেই সরকারের  প্রধান ছিল কংগ্রেস) স্থানীয়প্রশাসনিক ব্যবস্থার সুযোগ নিয়ে সরকারি অনুদান বন্ধ করে দেয়।

স্বাধীনতার বছরই দেখতেপাওয়া যায়, আসামের বাঙালি প্রাধান্যযুক্ত এলাকাগুলিতে ২৫০টি প্রাইমারি স্কুলের মধ্যে২৪৭টি বাংলা মাধ্যমের স্কুল সরকারি অনুদান বন্ধ হওয়ার জন্য পাততাড়ি গোটাতে বাধ্যহয়। এ সময় থেকেই আসামে দীর্ঘকাল ধরে বসবাসকারী বাঙালিরা জীবন-জীবিকা রক্ষার তাগিদেআসাম ছাড়তে শুরু করেন।

অসমীয়া ভাষাকে রাজ্যেরএকমাত্র রাজ্য ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবিতে ১৯৬০ সালে আসাম বিধানসভায় প্রস্তাবপেশ করা হয় এবং সে প্রস্তাব অনুমোদিত হয়। বরাক উপত্যকার কাছাড়ের ১০ জন বাঙালি সদস্যএকযোগে বিধানসভায় ওই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছিলেন।

বাঙালিদের উপযুক্ত শিক্ষা দেয়ার প্রশ্নেও নানা ধরনের সামাজিক ও প্রশাসনিক আক্রমণ আসাম সরকার নিতে শুরু করে। ১৯৬০ সালে জাতিসত্তার প্রশ্ন আসামের বাঙালি অধ্যুষিত এলাকায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষ খুন হন এবং ৫০ হাজারেরও বেশি মানুষ আহত হন, এর প্রতিবাদে বরাক উপত্যকার বাঙালিরা ভাষা ও সংস্কৃতি রক্ষার তাগিদে ঐতিহাসিক আন্দোলন করেন।

সে আন্দোলনের ধারাবাহিকতায়১৯৬১ সালের ১৯ মে ১১জন বাঙালি শহীদ হন, তার মধ্যে একজন নারীও ছিলেন। কংগ্রেসি সরকারেরপুলিশের গুলিতে গুরুতরভাবে আহত হয়েছিলেন ৩০ জন আন্দোলনকারী ।

এ প্রেক্ষাপটের ভেতরেইপ্রধানমন্ত্রিত্বকালে আসামে ভয়ঙ্কর রকমের অরাজকতা সৃষ্টিকারী আসাম গণপরিষদের নেতাপ্রফুল্ল মহন্ত, ভৃগু ফুকনদের সঙ্গে এক চুক্তি সম্পাদিত হয় রাজীব গান্ধীর নেতৃত্বাধীনকেন্দ্রীয় সরকারের। অপরিণত রাজনীতিক রাজীব গান্ধীর এ কর্মকাণ্ডকে কঠিন কঠোর ভাষায়সমালোচনা করে দীর্ঘদিনের কংগ্রেস নেতা তথা পরবর্তীকালে কংগ্রেসত্যাগী প্রফুল্ল চন্দ্রসেন সেদিন বলেছিলেন- "স্বাধীনতার সময়কালের গান্ধী, নেহেরু প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে এচুক্তি রাজীব গান্ধী সম্পাদিত করেছেন।"

বস্তুত গোপীনাথ বরদলৈ-রআমল থেকে জাতিসত্তার প্রশ্নে অসমে অসমীয়া অসহিষ্ণুতাকে উসকে দিয়ে জাতিসত্তা এবং সাম্প্রদায়িকতাকেযেভাবে বল্গাহীন করে তোলা হয়েছিল, তারই একটা নগ্ন বহির্প্রকাশের সুযোগ করে দেওয়া হয়রাজীব গান্ধীর আমলে ১৯৮৫ সালের এ চুক্তির ভেতর দিয়ে।

এই চুক্তি দিয়েই অসমীয়াঅস্মিতার সঙ্গে যুক্ত হয় বাংলাদেশের নাগরিকদের অনুপ্রবেশের প্রশ্নটিকে। বাংলাদেশেরনাগরিকদের অনুপ্রবেশ বন্ধ করার দাবির ভেতর দিয়ে সাম্প্রদায়িক আরএসএস এবং তাদের রাজনৈতিকসংগঠন বিজেপি গোটা আসাম জুড়ে অসমীয়া-বাঙালি সংঘাতকে কার্যত হিন্দু-মুসলমান সংঘাতেপরিণত করে ।

বাংলাদেশের বেআইনিঅনুপ্রবেশকারী নাগরিকদের বহিষ্কারের দাবি ভেতর দিয়ে কার্যত আসামে বসবাসকারী বাঙালিমুসলমানদের উপর অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক অবরোধ তৈরি করা হয়। সাম্প্রদায়িকবিজেপির উদ্যোগে যে কংগ্রেস পর্দার আড়াল থেকে মদত জোগায়নি তা মনে করার আদৌ কোনও কারণনেই ।

রাজীব-মোহন্ত চুক্তিরভেতর দিয়ে আসামের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা হিসেবে নাগরিকত্ব আইন এর ৬-এ ধারা তৈরির যেপথ খুলে দেওয়া হয়েছিল, সেটিকেই পরবর্তীতে কেন্দ্রে এনডিএ নামক নীতিবিহীন, সুবিধাবাদীজোট সরকারের প্রধান শরিক হিসেবে বিজেপির নেতৃত্বাধীন অটলবিহারী সরকারের ২০০৩ সালেরনাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের ১৪ এ ধারা সংযোজনের সুযোগ করে দেয়।

বাজপেয়ির আমলে নাগরিকত্বআইনের এই ১৪ এ ধারাতে কেবল আসাম নয়, গোটা ভারতবর্ষজুড়ে বাধ্যতামূলক নাগরিকপঞ্জি তৈরিরআদেশ দেওয়া হয়েছিল।

দুঃখের কথা, বাজপেয়ীসরকার এ আইন তৈরির পর ১০ বছর ভারতবর্ষ শাসন করেছে কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার।সে সরকারও কিন্তু একটিবারের জন্য নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের ১৪ এ ধারার কোনো রকম অদল-বদলনিয়ে আদৌ ভাবনা-চিন্তা করেনি। প্রথম দফার ইউপিএ সরকারের অন্যতম প্রধান সমর্থক ছিলেনবামপন্থিরা।

যে সময়কাল পর্যন্তবামপন্থিরা কেন্দ্রে প্রথম দফার ইউপিএ সরকারের সমর্থক ছিলেন, সে সময়কালে বামপন্থিরাবারবার জোরের সঙ্গে দাবি জানিয়েছিলেন ২০০৩ সালে অটল বিহারী বাজপেয়ী সরকারের তৈরি নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের এর ১৪ এ ধারাটিকেনিয়ে ভাবনা-চিন্তার জন্য। কারণ, এ বাধ্যতামূলক এনআরসি বা নাগরিকপঞ্জি তৈরির ভেতর দিয়েশাসক যে খুব সহজেই তার অপছন্দের মানুষের গায়ে বিদেশি তকমা লাগিয়ে তাদেরকে জোর জুলুমকরে রাষ্ট্রহীন করে দিতে পারে- এ ভয়াবহ আশঙ্কাটি সেদিন একমাত্র বামপন্থিদেরই মনে এসেছিল।তাই তারা নাগরিকত্ব আইনের এই ভয়াবহদিকের একটি রক্ষাকবচ তৈরির জন্য নানাভাবে মনমোহনসিং সরকারের নেতৃত্বাধীন প্রথম দফার ইউপিএ সরকারের কাছে দাবি, আর্জি, অনুরোধ-আবেদনজানিয়েছিলেন। বলাবাহুল্য, কংগ্রেস দল বা প্রথম দফার ইউপিএ সরকার বামপন্থিদের সে দাবি-দাওয়ারপ্রতি আদৌ কোনওরকম কর্ণপাত করেননি।

দেশের সর্বোচ্চ আদালতসুপ্রিম কোর্টও কিন্তু এই দশ বছরে ২০০৩ সালে তৈরি হওয়া নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের সংযোজিত১৪-এ ধারাটি সম্পর্কে কোনোরকম উচ্চবাচ্য করেননি। পরবর্তীতে আসামের একটি সংগঠন, যাদেরআড়াল থেকে নিয়ন্ত্রণ করত করে আরএসএস ও তাদের রাজনৈতিক সংগঠন বিজেপি, তারাই সুপ্রিমকোর্টে এ সম্পর্কে একটি আবেদন করে।সেই আবেদনের ভিত্তিতে তারাআসামে নাগরিকপঞ্জি তৈরির কাজ শুরু কনির আদেশটি সুপ্রিম কোর্ট থেকে বের করতে সম্মত হয়।আর এখন সাম্প্রদায়িক শক্তির মধ্যে এই ধরনের উদ্যোগ ত্রিপুরা ঘিরেও শুরু হয়েছে।