Published : 20 May 2013, 03:31 PM
প্রয়াত মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের চ্যান্সেলর মো. জিল্লুর রহমান এক সংকটময় মুহূর্তে আমাকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব অর্পণ করেন। তখন শুধুমাত্র জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় নয়, বেশ কয়েকটি উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গুরুতর সংকট চলছিল। এ সংকট ক্ষণিকের ছিল না। দীর্ঘ সময়ে পুঞ্জিভূত হয়ে তা প্রকাশিত হয়েছিল। মানবিক সম্পর্কগুলো প্রায় ভেঙ্গে পড়েছিল।
যখন আমি উপাচার্য হিসেবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব গ্রহণ করি, তখন অনেকে আমাকে প্রশ্ন করেছিলেন, 'কঠিন সংকট' উত্তরণে আমার পরিকল্পনা কী হবে। আমি বলেছিলাম আমার কোনো পরিকল্পনা নেই, আমি শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা, কর্মচারী সবার সঙ্গে কথা বলব, তাদের অভিমত জানব। এরপর সম্মিলিতভাবে আমরা সংকট উত্তরণে পরিকল্পনা করব।
আজ একটি বছর পেরিয়ে গেছে। মনে হয় যেন সেদিন এ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে যোগদান করেছিলাম। কত দ্রুত সময় পেরিয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিভাবক হিসেবে আমি কতটা সফল বা ব্যর্থ, তা আমার পক্ষে বলা দুরুহ। তবে যে সংকট-সমুদ্রে নেমেছিলাম সেখান থেকে উত্তরণে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়েছি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রয়োজন ছিল বিবদমান ছাত্র, শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের কাছাকাছি করা, পারস্পরিক সহমর্মিতা এবং শ্রদ্ধাবোধে আবদ্ধ করা। সে চেষ্টা অব্যাহতভাবে করেছি। ক্রমাগত বৈঠক করেছি, মতবিনিময় করেছি, ক্ষত নিরাময়ে অবিরাম চেষ্টা করেছি।
পুরোপুরি সফল হতে পারিনি; তবে প্রত্যাশা যে একেবারে পূরণ হয়নি তাও নয়। বিভিন্ন বিভাগে যে অচলাবস্থা ছিল, তা কাটতে শুরু করেছে। হলগুলোতে বিভিন্ন মতের ছাত্রছাত্রীরা সহাবস্থান করছে, যা বর্তমানে খুব বেশি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নেই। এ সময়ে বিরোধী ছাত্রসংগঠন কিংবা নিজ ছাত্রসংগঠনগুলোর মধ্যে আন্তঃকলহের কারণে রক্তপাত কিংবা প্রাণহানির তেমন কিছু ঘটেনি। সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের ভেতর স্বাধীন চেতনাবোধ জাগ্রত হয়েছে। তাদের ব্যক্তিস্বাধীনতায় আর হস্তক্ষেপ হবে না, এটা তারা বুঝতে পেরেছে। ক্ষমতাসীন বা প্রভাবশালী ছাত্রসংগঠনগুলোর বশ্যতা শিকার করতে হবে এমন অসহনীয় অবস্থা কেটে গেছে। স্বতঃস্ফুর্ত স্বাভাবিক পরিবেশে বিশ্ববিদ্যালয় অগ্রসর হচ্ছে।
তবে এর মধ্যে অকস্মাৎ সংকটও এসেছে। গত বছরের পহেলা ও ২রা আগষ্ট মীর মোশারফ হোসেন হলে গভীর রাতে পুলিশের প্রবেশ ও অভিযুক্ত হিসেবে একজন ছাত্রকে আটক করা এবং মারমুখী ছাত্রদের হাত থেকে রক্ষা পেতে রাবার বুলেট ছোঁড়ার ঘটনা কেন্দ্র করে ব্যাপক ছাত্রবিক্ষোভ দেখা দেয়। এ বিক্ষোভে কতিপয় দুর্বৃত্ত অনুপ্রবেশ করে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞে লিপ্ত হয়। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভাঙচুর চালায়।
এরপর এ বছর ফেব্রুয়ারি মাসের ১২-১৩ তারিখে সহপাঠী এক ছাত্রের চিকিৎসায় অবহেলায় মৃত্যুবরণের একটি অভিযোগ কেন্দ্র করে দু'দফায় ছাত্রনামধারী দুষ্কৃতকারীদের অপকর্মে বিশ্ববিদ্যালয়ের সম্পত্তির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। দুষ্কৃতকারীরা উপাচার্য ও শিক্ষকদের বাড়িতে হামলা চালায়। মেডিকেল সেন্টার, অ্যাম্বুলেন্স, মাইক্রোবাস ও বিভিন্ন অফিস, ফুলের বাগান, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় গণজাগরণ মঞ্চ, এসব কিছু গুঁড়িয়ে দিতে চেয়েছে অন্ধকারের শক্তি।
স্বাধীনতার ৪২ বছর পর কখনও ছাত্রবিক্ষোভ, কখনও শিক্ষক-আন্দোলন, হরতাল, ধর্মঘট এসব নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির কারণে শিক্ষাব্যবস্থা মুখ থুবড়ে পড়েছে। তাতে মূখ্যত ক্ষতি হচ্ছে ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকদের যারা বহু কষ্ট করে তাদের ছেলেমেয়েদের এ উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করার জন্য পাঠিয়েছেন। বিভিন্ন সময় সম্মানিত কোনো কোনো শিক্ষক আমার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছেন। আমি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হচ্ছি, শিক্ষক-লাঞ্ছনার যথাযথ বিচার করতে পারছি না, দেশের গণমাধ্যমগুলোতে আমি এমন তথ্য দিয়েছি যার ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আমার সময়কালে ঘটে যাওয়া সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিচার করতে পারিনি।
এসব অভিযোগে শিক্ষক সমিতি আমার পদত্যাগ দাবি করেছেন এবং আন্দোলন করছেন। আজ বর্ষপূর্তির দিনে এ সব কথা একে একে মনে পড়ছে। তারপর নিজেকে প্রশ্ন করেছি, সাফল্য কিংবা আশাবাদী হওয়ার মতো কিছুই কি ঘটেনি?
উত্তর পেতে দেরি হয় না। আমি নিশ্চিতভাবে বলতে পারি যে, আমরা সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছি। একমাত্র জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯৭৩ সালের আইন অনুযায়ী নির্বাচিত উপাচার্য নির্বাচনের প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়েছে আমার দায়িত্বগ্রহণের দু'মাসের মধ্যে। প্রবল বাধার মধ্যেও তা সম্পন্ন করেছি। পরবর্তীতে প্রয়াত মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের চ্যান্সেলর মো. জিল্লুর রহমান আমাকে দ্বিতীয়বারের জন্য উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ দেন।
বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনায় আমাদের নীতি হচ্ছে স্বায়ত্বশাসনের রক্ষাকবচ মুক্তিযুদ্ধের একটি অন্যতম অর্জন ১৯৭৩-এর আইন। উপাচার্য নিয়োগের ক্ষেত্রে উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনের ব্যবস্থা করে আমি আমার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। যা বাকি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কাছে একটি দৃষ্টান্ত।
গণতান্ত্রিক বিধি-ব্যবস্থা চালুর ক্ষেত্রে অপূর্ণতাও রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ক্ষেত্রে আমরা এখনও সফলতার মুখ দেখতে পারিনি। সে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য ছাত্রছাত্রীদের পক্ষ থেকে জোরালো আবেদন ও সে অনুযায়ী সহনশীল পরিবেশ এখনও গড়ে উঠেনি। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের নানামুখী সমস্যা যথার্থভাবে চিহ্নিত করা সম্ভব হলেও তা নিরসনে কার্যকর ভূমিকা তেমনভাবে নিতে পারিনি।
স্বাধীনতার সমান বয়সী এ বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো সীমানাপ্রাচীর নেই। তবে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তার নির্মাণকাজ শুরু হবে। একটি পূর্ণাঙ্গ মেডিকেল সেন্টারের নির্মাণ কাজও ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে। বৈদ্যুতিক সাব-স্টেশনের নির্মাণকাজ শেষে পরীক্ষামূলকভাবে তা চালু করা হয়েছে। কাবিখা প্রকল্পের আওতায় ৭ টি পুকুর/লেক সংস্কারের কাজ প্রায় শেষ হয়েছে।
মৎস অধিদপ্তরের অর্থায়নে হরিজন, ঝাড়ুদার ও বাগান মালিদের সমিতির তত্ত্বাধানে আরও ৩টি মজা পুকুরের সংস্কারকাজ চলছে। মাটিকাটার পাশাপাশি এসব প্রকল্পের সঙ্গে বৃক্ষরোপণ ও পরিবেশ সংরক্ষণের বিষয়টিও যুক্ত আছে। এসব প্রকল্পের মাধ্যমে আমরা পানির মান সংরক্ষণ, পাখি ও বৃক্ষরাজি জলজ উদ্ভিদসহ জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের লক্ষ্য স্থির করেছি।
গত বছর বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের সময় আমি জানতে পারি বিশ্ববিদ্যালয়ের লেকগুলোতে পাখি আসছে না। এতে সবার মনে কষ্ট ও ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। পরবর্তীতে আমরা অতিথি পাখি আসার পরিবেশ তৈরিতে মনোযোগী হই। জলাশয়গুলো থেকে রাক্ষুসে মাছগুলো তুলে ফেলা হয়। পাখিরা যেন অভয়াশ্রমগুলোতে নিশ্চিন্তে থাকতে পারে সে জন্য সচেতনতামূলক প্রচারণা চলে। ফলাফল পেয়েছি দ্রুত। শীতের সময় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক অতিথি পাখি ফিরে এসেছে।
আমাদের এ ধারা অব্যাহত থাকবে। জীববৈচিত্র্য রক্ষার নীতিমালা প্রণয়নের লক্ষ্যে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে কমিটি গঠন করেছি। মুক্তবুদ্ধি ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা রক্ষার্থে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে মন্দির, বৌদ্ধবিহার ও গির্জা স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের উপর যখন আঘাত এল, তখন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আমরা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির সমাবেশ করেছি। 'আমরা সবাই এ দেশের সন্তান' এ শিরোনামে সেমিনারের আয়োজন করেছি। সেমিনারে যোগ দিয়েছেন সকল সম্প্রদায়ের আলোকিত মানুষজন।
শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী সকলের সমন্বিত আর্থিক সহযোগিতা ও ভালোবাসা নিয়ে আমরা ছুটে গিয়েছি রামু, উখিয়া ও টেকনাফে। গত ডিসেম্বরে আমাদের কয়েক হাজার ছাত্রছাত্রী বর্ণাঢ্য সাজে ৪১ ফুট দীর্ঘ বাংলাদেশের পতাকা বহন করে ৫ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে সাভার কেন্দ্রীয় স্মৃতিসৌধে পৌঁছে সেখানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নতুন দীক্ষা গ্রহণ করেছে। প্রথম থেকেই শাহবাগের প্রজন্ম চত্বরে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের।
ডিসেম্বরের প্রচণ্ড শীতের সকালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজারো ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিষ্কার-পরিচ্ছনতা অভিযানে অংশ নিয়েছেন। সে অভিযানের অংশ হিসেবে প্রতিদিন সকালে ৫টি টিম হাতে গ্লাভস পরে সারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ময়লা কুড়িয়ে নেয়। আগের চেয়ে পরিচ্ছন্ন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সবাই এসে এখন নিশ্চয়ই খুশি হন।
৭০০ একর জায়গা নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। এর সম্ভাবনা অপার। আমরা স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি এ বিশ্ববিদ্যালয়ে হবে পূর্ণাঙ্গ চারুকলা ইনস্টিটিউট এবং ফিল্ম ইনস্টিটিউট। সাভারের রানা প্লাজার মর্মান্তিক ঘটনা আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় আমাদের কত কিছুই না করার আছে।
সে লক্ষেই এ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদ হবে, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগ থাকবে তাতে। সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদে থাকবে নতুন উইমেন ও জেন্ডার স্টাডিজ বিভাগ। আমাদের নয়নজুড়ানো লেক আছে, আছে দ্বীপ। সর্বাধুনিক কনভেনশন সেন্টার নির্মাণ করব আমরা, পাবলিক-প্রাইভেট এন্টারপ্রাইজের আওতায়। সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।
সিনেটের গুরুত্বপূর্ণ অংশ 'রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধির' নির্বাচন মহামান্য হাইকোর্টে আটকে আছে। সে আদেশ খারিজ করে নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্যোগ আমরা গ্রহণ করব। সামনের মাসে সিনেটে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাজেট পাশ হবে। এ প্রথমবারের মতো ২৫শে মে সিনেটের সকল সম্মানিত মেম্বারদের আহ্বান করেছি প্রাক-বাজেট আলোচনায় অংশ নিতে। বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে এ উদ্যোগ প্রথম। বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন প্রণয়ন করায় সিনেটকে আমরা সত্যিকার অর্থেই ক্রিয়াশীল দেখতে চাই যেমনটা দেখতে চাই বাংলাদেশের জাতীয় সংসদকে।
খুব প্রত্যাশা করছি দেশের আগামী সাধারণ নির্বাচনের পূর্বেই একটি শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও স্বচ্ছ জাকসু নির্বাচন অনুষ্ঠান করার। নিশ্চয়ই গোটা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবার এ উদ্যোগে শুধু সমর্থন নয়, সক্রিয় সহযোগিতাও করবে।
নাট্যাচার্য সেলিম আল দ্বীন এ বিশ্ববিদ্যালয়কে বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক রাজধানী বলে ঘোষণা করেছিলেন। তার যথার্থতা আমাদের সাংস্কৃতিক কর্মীরা প্রতিনিয়ত প্রদর্শন করছে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে র্যাগিং অনেকাংশে দূর হয়েছে। হলগুলো থেকে দা, ছুরি, কিরিচ, আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশি তল্লাশীতে গ্রেপ্তারও হয়েছে।
সাংস্কৃতিক কর্মীদের উপর হামলার মতো দুঃখজনক ঘটনায় অনেক দোষীর বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা করা গেলেও তা কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় হয়নি। ছাত্রীদের সঙ্গে অসদাচরণকারীদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা আমরা নিয়েছি। হরতাল, নৈরাজ্য ও শিক্ষকদের আন্দোলনের কারণে শিক্ষার পরিবেশ কিছুটা ব্যাহত হয়েছে তাতে সন্দেহ নেই। একাডেমিক কার্যক্রম আরও জোরদার করতে যথেষ্ট পদক্ষেপ উপাচার্যের পক্ষ থেকে আমি নিতে পারিনি।
তবে আমি উপলব্ধি করেছি ছাত্রছাত্রীরা আন্দোলনের নামে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন চায় না। তারা পাঠকক্ষে, গবেষণাগারে তাদের শিক্ষকদের দেখতে চায়। আমি আশা করি শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের পাঠ নেওয়ার অধিকার রক্ষা করবেন।
শিক্ষায় বিনিয়োগ সর্বোত্তম বিনিয়োগ। সে নীতিগত ধারণাটি বর্তমান সরকার গ্রহণ করেছে, কিন্তু শিক্ষা বাজেটে তার প্রতিফলন ঘটেনি। সমাজে বিত্তবান মানুষের প্রাধান্য বেড়েছে, কিন্তু চিত্তের তেমন উন্নতি ঘটেনি। শিক্ষাকার্যক্রম গতিশীল রাখতে রাজনীতিবিদরা একে রাজনৈতিক সকল মতপার্থক্য ও আন্দোলনের কর্মসূচির বাইরে রাখবেন এমন প্রত্যাশ্যা আমরা সবসময় করেছি।
রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে প্রাইমারি থেকে উচ্চশিক্ষা পর্যন্ত শিক্ষাকার্যক্রম ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। তবে আশার কথা হচ্ছে নতুন প্রজন্মের গণজাগরণ। মানুষের মনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে যে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছিল, তা দূর হয়েছে। হেফাজত বিতাড়িত হয়েছে। নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা কেটে যাচ্ছে।
নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে সংলাপ হতে পারে সংসদের ভেতরে কিংবা বাইরে। তবে এ ক্ষেত্রে সরকারকে বেশি দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। বিরোধী দলকে রাজনৈতিক বাস্তবতা বুঝতে হবে। সংসদ যে সমস্যা সমাধানের কেন্দ্রস্থল তা অনুধাবন করতে হবে। সরকার ও বিরোধী দলকে এমন একটি জায়গায় এসে দাঁড়াতে হবে যাতে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব হয়। সে প্রত্যাশা দেশের সকল মানুষের।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়কে স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার যে প্রত্যয় ও আশাবাদ ব্যক্ত করেছিলাম সে স্বপ্ন এখনও সজীব আছে। যেমন সজীব আছে ২০২১ সালের মধ্যে সোনার বাংলার সিংহদ্বারে পৌঁছে যাওয়ার।
অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন : উপাচার্য, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্বদ্যিালয়।