চলার সঙ্গী হুইলচেয়ারই দোকান

চলার সঙ্গী হুইলচেয়ারে বসে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে বেঁচে থাকার যুদ্ধ করে যাচ্ছে এক কিশোর।

আজাহারুল ইসলাম
Published : 3 Jan 2023, 10:16 AM
Updated : 3 Jan 2023, 10:16 AM

পুরনো ভাঙাচোরা একটি হুইলচেয়ার, পাদানি বা ফুট রেস্ট নেই বলে কাঠের টুকরো দেওয়া, পেছনের দুই হাতলেও গ্রিপের বদলে ছেঁড়া কাপড় প্যাচানো। তাতেই বাঁশ দিয়ে ঝুলানো চিপস, চানাচুর, আচার, বিস্কুট আর চকলেটের প্যাকেট।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে বেড়াতে গিয়ে এমন দোকান চোখে পড়লো শালবন বৌদ্ধ বিহারের গেইটের সামনে। চলার সঙ্গী হুইলচেয়ারে বসে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা নিয়ে বেঁচে থাকার যুদ্ধ করে যাচ্ছে এক কিশোর। নাম নয়ন, বয়স ১৪।

অভিনব এ দোকানের কাছেধারেই পাওয়া গেলো নয়নের মা রাশেদা বেগমকে। তিনি জানান, জন্মের পর থেকেই নয়নের দুই পা পুরোপুরি ও এক হাত প্রায় অচল। চলাফেরা প্রায় মরচে-পড়া এ হুইলচেয়ারে।

নয়নের বাড়ি শালবন বৌদ্ধ বিহার সংলগ্ন সামাপুর দিঘীরপাড়ে। বাবা মমিনুর হক ও মা রাশেদা বেগমসহ চার ভাইবোনের পরিবার। নয়ন বাবা-মায়ের দ্বিতীয় সন্তান।

মা গৃহিনী, মাঝে মাঝে অন্যের বাসাবাড়িতে কাজ করেন। একমাত্র উপর্জনক্ষম বাবা টিনের চাল মেরামতের কাজ করেন, তার সামান্য আয়ে কোনোরকম সংসার চলে। তবে বিপত্তি নয়নকে নিয়ে। সে যেন পরিবারের কাছে একরকম বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

নয়নের চিকিৎসা ও ওষুধের খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হয় তার পরিবারকে। তাই পরিবারকে সহায়তা ও নিজের ব্যয়ভার বহন করতে সে নিজেই দোকান নিয়ে বসে। একমাত্র চলার সঙ্গী হুইলচেয়ারই তার দোকান।

সেখানে বাঁশ দিয়ে বেঁধে থরে থরে সাজানো চিপস, আচার, বিস্কুট, চকোলেট, চানাচুরসহ বিভিন্ন সামগ্রী। তা বিক্রি করে দিনে আয় হয় তিনশ থেকে পাঁচশ টাকা। তা দিয়ে নিজের ওষুধের খরচ চলে।

কখনও কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটক, কখনও শালবন বিহার, আবার কখনও বৌদ্ধ মন্দিরের সামনে দেখা যায় নয়নকে। প্রতিদিন সকাল ৯টা থেকে ১০টায় নয়নের মা তাকে দিয়ে যান, আবার সন্ধ্যা নামার সঙ্গে সঙ্গে এসে বাড়িতে নিয়ে যান।

রাশেদা বেগম জানান, নয়নের চিকিৎসায় এখন পর্যন্ত পাঁচ লাখের বেশি টাকা খরচ হয়েছে। প্রতিবন্ধী ভাতা হিসেবে বছরে চার হাজার ২০০ টাকা পায় নয়ন। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতির বাজারে এ অর্থ সামান্য। পরিবারের পক্ষেও ব্যয়ভার বহন করা কষ্টসাধ্য। যে বয়সে বন্ধুদের সঙ্গে ছোটাছুটি, খেলাধুলা ও স্কুলে যাওয়ার কথা, সে বয়সে ধরেছে সংসারের হাল।

পড়াশোনার তীব্র ইচ্ছা নয়নের। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনাও করেছে স্থানীয় এক স্কুলে। মহামারীতে স্কুলবন্ধের আগ পর্যন্ত সেখানে প্রতিনিয়ত তার মা আনা-নেওয়া করতেন। কিন্তু কোভিড পরবর্তী সময়ে আর্থিক অনটন বেড়ে যাওয়ায় আর স্কুলে যাওয়া হয়নি নয়নের। ছাত্র সংকটে কিছুদিন পর সেই স্কুলটিও বন্ধ হয়ে যায়।

তবে সুযোগ পেলে এখনও স্কুলে ফিরে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে চায় নয়ন। চিকিৎসা ও পড়াশোনার খরচ কেউ বহন করলে ছেলের এ ইচ্ছা পূরণ করতে চান মা রাশেদা বেগমও।

লেখক: আজাহারুল ইসলাম, শিক্ষার্থী, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া

কিডজ ম্যাগাজিনে বড়দের সঙ্গে শিশু-কিশোররাও লিখতে পারো। নিজের লেখা ছড়া-কবিতা, ছোটগল্প, ভ্রমণকাহিনি, মজার অভিজ্ঞতা, আঁকা ছবি, সম্প্রতি পড়া কোনো বই, বিজ্ঞান, চলচ্চিত্র, খেলাধুলা ও নিজ স্কুল-কলেজের সাংস্কৃতিক খবর যতো ইচ্ছে পাঠাও। ঠিকানা kidz@bdnews24.com সঙ্গে নিজের নাম-ঠিকানা ও ছবি দিতে ভুলো না!