পরপর একই স্বপ্ন দেখায় এটার অর্থ জানতে চায় সান্তিয়াগো।
Published : 17 Jan 2025, 10:00 AM
ব্রাজিলীয় ঔপন্যাসিক পাওলো কোয়েলহোর লেখা ‘দ্য আলকেমিস্ট’ বইটি সর্বকালের সবচেয়ে বেশি ভাষায় অনূদিত আর সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া বইগুলোর একটি। আমিও সম্প্রতি বইটি পড়লাম। বইটির বাংলা অনুবাদ করেছেন জ্যোতির্ময় নন্দী।
আমার লক্ষ্যে ছুটে চলার জন্য প্রেরণা দেবে এই বইটি। তবে বইটি মোটেও ফুটপাতে বিক্রি করা মোটিভেশনাল বইয়ের মতো নয়। এটি সান্তিয়াগো নামের এক মেষপালক ছেলের গল্প, যে পৃথিবী ঘুরে দেখতে চাইতো।
সান্তিয়াগো একটি স্বপ্ন দেখে, মিশরের পিরামিডে গেলে সে গুপ্তধন খুঁজে পাবে। এটাকে সে নিছক একটা স্বপ্ন বলেই উড়িয়ে দিত। কিন্তু পরপর একই স্বপ্ন দেখায় সে এটার অর্থ জানতে চায়। এক বুড়ি তাকে মিশরের পিরামিডে গুপ্তধনের সন্ধানে যেতে বলে এবং স্বপ্নের অর্থ বলার জন্য তার কাছে গুপ্তধনের একটা অংশ দাবি করে। অবশ্য বুড়ির কাছ থেকে স্বপ্নের পরিষ্কার অর্থ জানতে না পেরে ছেলেটা কিছুটা বিরক্ত হয়েই বেরিয়ে আসে।
এরপর তার দেখা হয় এক অদ্ভুত লোকের সঙ্গে, সালেমের রাজা মেলচিজেদেক। এই অদ্ভুত লোকটিই সান্তিয়াগোকে অভীষ্ট সম্পর্কে সচেতন করে। তার সঙ্গে কথা বলেই ছেলেটি বুঝতে পারে তার পিরামিডে যাওয়া উচিত এবং সে ভেড়াগুলো বিক্রি করে সেই উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। এটাকে লেখক বলেছেন ‘ডাক আসা’।
এই ডাক শৈশব বা কৈশোরে বেশ স্পষ্ট শোনা যায়। এরপর আমাদের পরিবেশ-পরিস্থিতি, আশপাশের ব্যর্থ মানুষের গল্প আর প্রিয়জন হারানোর ভয় সেই ডাককে অস্পষ্ট করে দেয় এবং একসময় তা আমাদের মনের এতই গভীরে চলে যায় যে তা আর শোনাই যায় না।
সান্তিয়াগো আন্দালুসিয়া থেকে যায় স্পেনের তারিফা অঞ্চলে। সেখানে সে প্রথমবারের মতো ব্যর্থ হয়, তার ভেড়া বিক্রি করে পাওয়া সমস্ত অর্থ এক ঠকবাজ হাতিয়ে নেয়। তবুও দমে যায় না সান্তিয়াগো, সে এটাকে ভাবে শুভলক্ষণ। বইটাতে অনেকবার এই শুভ অশুভ লক্ষণের কথা বলা আছে।
সান্তিয়াগো বছরখানেক একটা দোকানে কাজ করে তার বাড়ি ফিরে যাওয়ার জন্য অর্থ জমায়। প্রায় এক বছরে সে বারবার নিজের মনের বিরুদ্ধে লড়েছে, বারবার ভেবেছে বাড়ি ফিরে যাবে নাকি যাবে গুপ্তধনের সন্ধানে। অবশেষে ছেলেটা গুপ্তধনের উদ্দেশ্যে যাওয়ারই সিদ্ধান্ত নেয়। জমানো অর্থ নিয়ে বেরিয়ে পড়ে সান্তিয়াগো। তার মনে পড়ে, বুড়ো রাজা বলেছিলেন, ‘যখন তুমি সত্যিই কিছু চাও, তখন সারা বিশ্বব্রহ্মাণ্ড ষড়যন্ত্র করে তোমাকে সেটা পাইয়ে দেয়ার জন্য।’
এরপর সে একটা কাফেলার সঙ্গে মিশরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে, কিন্তু মরুভূমিতে বিভিন্ন গোত্রের মধ্যকার যুদ্ধের জন্য তাদের থামতে হয় একটি বিশাল মরুদ্দানে। সেখানে বেশ অনেকদিন কেটে যায়, তার পরিচয় হয় তার প্রেম ফাতেমার সঙ্গে। দেখা হয়, আলকেমিস্টের সঙ্গে। আলকেমিস্টের সঙ্গে পরিচয় সান্তিয়াগোকে গুপ্তধনের সন্ধানে আরও কয়েকধাপ এগিয়ে নিয়ে যায়।
এরপর আরও অনেক বাধা পেরিয়ে ছেলেটা শেষ পর্যন্ত পৌঁছে যায় পিরামিডের কাছে, খুঁড়তে শুরু করে পিরামিডের পাশে। কিন্তু গুপ্তধন তো সেখানে ছিলো না? তবে কোথায় ছিলো গুপ্তধন? কীভাবেই বা সেই গুপ্তধন খুঁজে পেল সান্তিয়াগো? জানতে হলে পড়তে হবে ‘দ্য আলকেমিস্ট’।
এ বইয়ের ঘটনাগুলো কল্পকাহিনির মতোই মনে হয়। কিন্তু এটাকে শুধু একটা উপন্যাস হিসেবে না পড়ে, এটার গভীরতা অনুভব করতে পারলে শিক্ষা নেওয়ার আছে অনেককিছু। ‘দ্য আলকেমিস্ট’ বইয়ের ছেলেটা আমাদের অনুপ্রেরণা দেয়, স্বপ্নের পেছনে ছোটার। আলকেমিস্ট বলে, প্রত্যেক অনুসন্ধান শুরু হয় শুরু করিয়ের ভাগ্য দিয়ে এবং প্রত্যেক অনুসন্ধান শেষ হয় বিজয়ীর কঠোরতম পরীক্ষার মধ্য দিয়ে।
বইটা পড়ার পর আমি নিজের মনেই অনুভব করেছি, আমাকে ছুটতে হবে আমার লক্ষ্যে। আমার হৃদয় বলে, আমি যা চাই তা সম্ভব। তাই অল্পতে হাল ছাড়া যাবে না। আমি প্রতিটি কিশোর-কিশোরীকে বলব ‘দ্য আলকেমিস্ট’ বইটি একবার অবশ্যই পড়তে।