বড় জনসমাগম এড়িয়ে চলুন: ওমিক্রন নিয়ে সতর্ক করলেন প্রধানমন্ত্রী

করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রন যে নতুন বিপদের ঝুঁকি নিয়ে এসেছে, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে সবাইকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি বড় জনসমাগম এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 9 Jan 2022, 09:00 AM
Updated : 9 Jan 2022, 10:18 AM

রোববার দেশের আট বিভাগীয় শহরে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০০ শয্যার ক্যান্সার চিকিৎসা কেন্দ্রের ভিত্তি স্থাপন অনুষ্ঠানে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হয়ে তিনি এ বিষয়ে কথা বলেন।

শেখ হাসিনা বলেন, “যেহেতু ওমিক্রন নতুনভাবে একটা আবার সারা বিশ্বে দেখা দিচ্ছে, এখানে আমাদের দেশের মানুষকে একটু স্বাস্থ্য সুরক্ষাটা মেনে চলতে হবে। আর শীতকালে প্রাদুর্ভাবটা বাড়ে। এমনি সাধারণত আমাদের দেশে শীতকালে একটু সর্দি, কাশিও হয়। সেদিকে লক্ষ্য রেখে সকলে মাস্কটা ব্যবহার করবেন।

“খুব বড় সমাগমে যাবেন না। সেখান থেকে একটু নিজেদেরকে সুরক্ষিত রাখবেন। আর কোনো বড় সমাবেশ যেন না হয়, সেটার দিকে লক্ষ্য রাখবেন। স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধিটা সবাই মেনে চলবেন, সেটাই আমি চাচ্ছি।”

বিশ্ব জুড়ে নতুন করে আতঙ্ক তৈরি করা করোনাভাইরাসের নতুন ভ্যারিয়েন্ট ওমিক্রনে আক্রান্তের সংখ্যা বাংলাদেশেও বাড়ছে। শনিবার পর্যন্ত দেশে ২১ জনের শরীরে এ ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ধরা পড়েছে।

দৈনিক নমুনা পরীক্ষার বিপরীতে শনাক্ত কোভিড রোগীর হার ইতোমধ্যে ৬ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। চার মাসের বেশি সময় পর দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যাও আবার ১১ শর উপরে থাকছে।

ওমিক্রনের বিস্তার ঠেকাতে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করার পাশাপাশি সব ধরনের সামাজিক, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় জমায়েত বন্ধের সুপারিশ করেছে কোভিড-১৯ সংক্রান্ত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।

এ বিষয়ে সরকারের নেওয়া কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনারও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে কমিটির তরফ থেকে।

গবেষকরা বলছেন, দুই ডোজ টিকা ওমিক্রনের বিরুদ্ধে সুরক্ষা দিতে না পারলেও গুরুতর অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এড়াতে সহায়তা করছে। আর তৃতীয় বা বুস্টার ডোজ নিলে তা ওমিক্রনের সংক্রমণ থেকে কিছুটা সুরক্ষা দিতে পারছে। 

প্রাপ্ত বয়স্কদের পাশাপাশি বর্তমানে দেশে ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদেরও টিকা দেওয়া হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সবুজ সংকেত পেলে এর চেয়ে কম বয়সীদেরও করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। 

মহামারীর মধ্যে দেশের অর্থনীতি সচল রাখতে প্রণোদনা দেওয়ার কথা তুলে ধরে তিনি অনুষ্ঠানে বলেন, “স্বাস্থ্য সেবা দেওয়ার জন্য আমরা বিশেষ বরাদ্দ বাজেটে রেখেছি। প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা আমাদের বাজেটে রাখা আছে। এর বাইরেও যদি প্রয়োজন হয় আমরা খরচ করতে পারব। সেভাবে আমাদের উদ্যোগ নেওয়া আছে। তাছাড়া আমরা আলাদা একটা ফান্ডও তৈরি করেছি। কাজেই সেভাবেই আমরা মানুষের চিকিৎসা সেবাটা দিয়ে যাচ্ছি।”

অনুষ্ঠানে দেশে টিকা মজুদের পরিসংখ্যান তুলে ধরার পাশপাশি টিকা নিয়ে নানা অপপ্রচারের প্রসঙ্গেও কথা বলেন সরকার প্রধান। 

তিনি বলেন, “৩১ কোটির বেশি ডোজের ব্যবস্থা আমরা করে রেখেছি। ইতোমধ্যে আমরা টিকা দিয়ে যাচ্ছি। একটি মানুষও যেন টিকা ছাড়া না থাকে। সেক্ষেত্রে আমি দেশবাসীর কাছে আহ্বান জানাব, অনেকেই ভয় পান, গায়ে সুঁই ফোটোবে সেই ভয়ও আছে। নানা ধরনের অপপ্রচারও ছিল।”

ওমিক্রনে শিশুরা বেশি আক্রান্ত জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “সেইজন্য আমরা বাংলাদেশে ১২ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা নিয়েছি। তাছাড়া আমি সবাইকে অনুরোধ করব, আপনারা ভয় না পেয়ে টিকাটা নিয়ে নেন। টিকাটা নিলে অন্তত আপনার জীবনটা রক্ষা পাবে।

“হয়ত কিছুদিন ভোগাবে, কিন্তু জীবনটা রক্ষা পাবে। সেজন্য সবার কাছে আমার অনুরোধ যে আপনারা ভয় না পেয়ে টিকাটা যাতে ঠিকমত নিতে পারেন, সেই ব্যবস্থা নেবেন।”

বাংলাদেশে এই টিকা যে সরকারি খরচে দেওয়া হচ্ছে, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “শুধু ভ্যাকসিন কেনাটাই না, ভ্যাকসিন দেবার জন্য যেই সমস্ত পণ্য প্রয়োজন হয়, যে লোকবল প্রয়োজন হয়, টেকনিশিয়ান প্রয়োজন হয়, সেগুলো পরীক্ষা করার জন্য- এই সব কিন্তু আমরা করে দিচ্ছি একেবারে বিনা পয়সায়। পৃথিবীর অনেক ধনী দেশও কিন্তু বিনা পয়সায় দেয় না।

“কিন্তু বাংলাদেশ দিচ্ছে, কারণ মানুষের সেবা করাটাই আমাদের বড় কাজ। এজন্য বাজেটে আলাদাভাবে আমরা টাকাও বরাদ্দ রেখে দিয়েছি এবং যত টাকাই লাগুক আমাদের এই কার্যক্রম আমরা অব্যাহত রাখব। সেটা আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

দেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নে সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথা তুলে ধরার পাশাপাশি চিকিৎসক ও নার্সের অভাব পূরণ করার জন্য আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া উদ্যোগের কথাও প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বলেন।

ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকসহ ঊর্ধতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।