প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিনে ৭৫ লাখ মানুষকে টিকা দিতে ‘প্রস্তুত’ বাংলাদেশ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জন্মদিন উপলক্ষে মঙ্গলবার দেশজুড়ে ৭৫ লাখ মানুষকে করোনাভাইরাসের টিকা দিতে সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Sept 2021, 02:57 PM
Updated : 27 Sept 2021, 04:12 PM

মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে ৪ হাজার ৬০০ ইউনিয়ন, এক হাজার ৫৪টি পৌরসভা, সিটি করপোরেশনের ৪৪৩টি ওয়ার্ডে নির্ধারিত কেন্দ্রে একযোগে টিকাদান চলবে।

২৫ বছরের বেশি বয়সী যারা আগেই টিকার জন্য নিবন্ধন করেছিলেন, তাদের মধ্যে থেকেই ৭৫ লাখ মানুষকে এদিন টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হবে।

সেজন্য তাদের মোবাইলে ইতোমধ্যে এসএমএস পাঠিয়ে কেন্দ্র জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। নির্ধারিত কেন্দ্রগুলোতে টিকা ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জামও পৌঁছে গেছে বলে জানিয়েছেন এবিএম খুরশীদ আলম।

সোমবার ফেইসবুক লাইভে এসে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৪তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে এই বিশেষ টিকাদান কর্মসূচির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। 

“আগামীকাল যে গণটিকাদান কর্মসূচি সারা দেশে পরিচালিত হবে, সেখানে আমরা শুধু প্রথম ডোজের টিকা দেব। একইভাবে আগামী মাসের একই তারিখে দ্বিতীয় ডোজের টিকা দেব।”

“প্রয়োজনীয় সব মালামাল সারাদেশে সরবরাহ করেছি, সে কাজ চলছে। ক্যাম্পেইন শুরু হবে সকাল ৯টায় এবং আমাদের লক্ষ্যমাত্রায় না পৌঁছানো পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্নভাবে টিকাদান চলমান থাকবে।”

গত ৭ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের টিকাদান শুরু হলেও সরবরাহ সঙ্কটে মাঝে কিছুদিনেএ কর্মসূচি থমকে যায়। পর নতুন চালান এলে টিকাদানেও গতি আসে।

সে সময় ৭ অগাস্ট থেকে ছয় দিনের গণটিকাদান কর্মসূচির আওতায় ৫০ লাখের বেশি মানুষকে টিকার প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছিল। সেই কর্মসূটির প্রথম দিনই টিকা পেয়েছিলেন প্রায় ৩০ লাখ লোক। এক দিনে ৭৫ লাখ মানুষকে টিকা দেওয়ার চেষ্টা এর আগে আর দেশে হয়নি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জানান, শেষ টিকা দেওয়ার পরও তাদের কর্মীরা এক ঘণ্টা কেন্দ্রে অবস্থান করবেন। স্থানীয়ভাবে টিকাদানের সময় পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করা যাবে।

যারা এসএমএস পেয়েছেন, টিকা নিতে তাদের টিকা কার্ড এবং জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে কেন্দ্রে যেতে হবে। যাদের বয়স চল্লিশের বেশি, তাদের অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

খুরশীদ আলম বলেন, “প্রথম দুই ঘণ্টা চল্লিশোর্ধ জনগোষ্ঠী, নারী ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের আমরা বিশেষ বিবেচনায় রাখবে। তবে স্তন্যদানকারী মা ও অন্তঃসত্ত্বা নারীদের এই ক্যাম্পেইনের আওতায় আনছি না।”

অগ্রাধিকারের বিষয়টি ব্যাখ্যা করে পরে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “টিকা কার্ড এবং জাতীয় পরিচয়পত্র নিয়ে আসা বয়স্ক মানুষ ও প্রতিবন্ধীদের আমরা আগে টিকা দিয়ে দেব। যারা লাইনে থাকবে, তাদের মধ্যে বয়স্কদের আগে এনে টিকা দেওয়া হবে।”

আগে নিবন্ধন না করলে শুধু জাতীয় পরিচয়পত্র দেখিয়ে বয়স্করা টিকা নিতে পারবেন কিনা জানতে চাইলে খুরশীদ আলম বলেন, “আমরা দেখেছি ৫৬ লাখ বয়স্ক লোক আছে, যারা নিবন্ধন করেছেন। তাদের সবাইকে আমরা এসএমএস পাঠিয়েছি। বয়স্ক লোকের নিবন্ধনের ব্যাপারটা তো হয়েই গেল। একদিনের এই কর্মসূচিতে যদি আমরা স্পট রেজিস্ট্রেশেনের ব্যবস্থা করতে যাই তাহলে বিশৃঙ্খলা তৈরি হবে।

“তারপরও আমরা আনঅফিসিয়ালি বলে দিয়েছি, যদি কোনো লোক আসে বয়স্ক, কিন্তু নিবন্ধন করে নাই, তাদের নিবন্ধন করিয়ে টিকা দিয়ে দিতে।”

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক রোববার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে এ কর্মসূচির ঘোষণা দিয়ে বলেছিলেন, “আমরা এর আগেও ভ্যাকসিন ক্যাম্পেইন করেছিলাম। এবারও ২৮ তারিখে এই ক্যাম্পেইন চলবে। এদিন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর জন্মদিন। সেজন্য এদিন ক্যাম্পেইন শুরু করছি।

“বর্তমানে প্রতিদিন যে ৬ লাখ ডোজ টিকা দেওয়া হচ্ছে তাও চলবে। গ্রামে-গঞ্জে আমরা টিকা নিয়ে যাচ্ছি। যারা দূরে থাকেন, দরিদ্র জনগোষ্ঠী, বয়স্ক এবং যারা সব সময় টিকা নিতে আসতে পারেন না তাদেরকে টিকার আওতায় আনাই উদ্দেশ্য।”

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক সোমবার জানান, এ কর্মসূচিতে প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যায়ে তিনটি, পৌরসভায় একটি এবং সিটি করপোরেশন এলাকার প্রতিটি ওয়ার্ডে তিনটি করে বুথ থাকবে।

ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রতিটি কেন্দ্রে ১৫ শ, পৌরসভার কেন্দ্রে ৫ শ এবং সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ডগুলোতে এক হাজারের বেশি মানুষকে টিকা দেওয়ার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে।

এ কার্যক্রমে অংশ নেবেন ৩২ হাজার ১০৬ জন স্বাস্থ্যকর্মী। পাশাপাশি ৪৮ হাজারের বেশি স্বেচ্ছাসেবী টিকাদান কর্মসূচিতে সহায়তা করবেন।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, রোববার পর্যন্ত ৪ কোটি ৪৭ লাখের বেশি মানুষ সুরক্ষা প্ল্যাটফর্মে কোভিড টিকার জন্য নিবন্ধন করেছেন।

তাদের মধ্যে ২ কোটি ৪৮ লাখের  বেশি মানুষ টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন। দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ১ কোটি ৬৪ লাখের বেশি মানুষ।