২০২০: স্বাস্থ্যের যে যে রোগ চিনিয়ে দিল মহামারী

স্বাস্থ্য সুরক্ষার যে কাঠামো পৃথিবীর মানুষ এতদিনে গড়ে তুলেছিল, ২০২০ সালে তাকে নাড়িয়ে দিয়েছে একটি ভাইরাস; বাংলাদেশও সেই সঙ্কটের বাইরে থাকেনি।

ওবায়দুর মাসুমবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 26 Dec 2020, 05:04 PM
Updated : 26 Dec 2020, 08:01 PM

কোথায় কোথায় প্রস্তুতির অভাব ছিল, তা যেমন এই মহামারীর মধ্যে স্পষ্ট হয়েছে, তেমনি বেরিয়ে এসেছে স্বাস্থ্যখাতের কিছু অনিয়ম আর দুর্নীতির তথ্য।  

নতুন এই করোনাভাইরাসের উৎস এখনও মানুষের অজানা; এর কোনো ওষুধ এখনও আবিস্কার করা যায়নি। কিছু টিকা তৈরি হয়েছে, বাংলাদেশের মানুষের হাতে তা পৌঁছাতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে।

গতবছর ডিসেম্বরের শেষে চীনের উহানে নতুন ধরনের এক নিউমোনিয়া ধরা পড়ে, যাদের কারণ হিসেবে নতুন এক করোনাভাইরাসকে চিহ্নিত করা হয়। ২০২০ সালের জানুয়ারির মাঝামাঝি থাইল্যান্ডে নতুন ভাইরাসে আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্ত হয়।

শতাধিক দেশে ছড়িয়ে পড়ে এ ভাইরাস ১ লাখের বেশি মানুষকে আক্রান্ত এবং চার হাজার মানুষের মৃত্যু ঘটানোর পর মার্চের ১১ তারিখ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ সঙ্কটকে বৈশ্বিক মহামারী ঘোষণা করে।

ততদিনে নতুন এ করোনাভাইরাস বাংলাদেশেও পৌঁছে গেছে; ৮ মার্চ প্রথম তিনজনের শরীরে এ ভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ার কথা জানিয়েছে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর।

ততদিনে বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক; লকডাউনের কঠোর বিধিনিষেধে গোটা দুনিয়া অচল করে দিয়েও থামানো যায়নি ভাইরাসের বিস্তার। ধনী বা গরিব- কোনো দেশই নতুন এ রোগের বিরুদ্ধে সুরক্ষা বলয় গড়তে সফল হয়নি।

৮ মার্চ থেকে ২৬ ডিসেম্বর- এই সাড়ে নয় মাসে সরকারি হিসেবে বাংলাদেশে ৫ লাখ ৮ হাজার মানুষের দেহে নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়েছে; তাদের মধ্যে ৭ হাজার ৪২৮ জনের পরিবারকে ২০২১ সাল শুরু করতে হবে স্বজন হারানোর বেদনা নিয়ে।

অতি ছোঁয়াচে এই ভাইরাস থেকে রক্ষার উপায় হিসেবে মাস্ক ব্যবহারে কথা বলা হচ্ছিল শুরু থেকে। সেই মাস্ক নিয়ে কেলেঙ্কারি ছিল মহামারীর এই বছরে বাংলাদেশের অন্যতম আলোচিত ঘটনা।

তারপর করোনাভাইরাসের পরীক্ষা ও চিকিৎসা নিয়ে রিজেন্ট হাসপাতাল ও জেকেজি হেলথকেয়ারের জালিয়াতি-প্রতারণা দেশের স্বাস্থ্য প্রশাসনকে নাড়িয়ে দিয়ে গেছে।

মহামারীর সঙ্কটের শুরুতে পরীক্ষার ব্যবস্থা, সুরক্ষা সামগ্রী, হাসপাতালের আইসিইউ শয্যা, অক্সিজেন সিলিন্ডার, ভেন্টিলেটরসহ জীবনরক্ষাকারী কিছু চিকিৎসা উপকরণের অপ্রতুলতা ছিল। ধীরে ধীরে তা কাটিয়ে ওঠা গেছে।

কোভিড-১৯ সংক্রমণ রোধে নেওয়া বিভিন্ন কার্যক্রমের মধ্যে শুরুতে সমন্বয়েরও অভাব ছিল। সেই সুযোগে সে সময় রোগটি বেশি ছড়িয়েছে বলে মনে করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. নজরুল ইসলাম।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, সংক্রমণের শুরুর প্রাথমিক ধাক্কা সামলে নিয়ে করনীয় ঠিক করা গেলেও সেগুলোর বাস্তবায়ন ‘সময়মত ও সঠিকভাবে’ শুরু করা যায়নি অনেক ক্ষেত্রে।

করোনাভাইরাসে মৃত একজনের দাফনের পর দোয়া করছেন স্বজনরা।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে গঠিত সরকারের জাতীয় কারিগরী পরামর্শক কমিটি এই সদস্য বলেন, “নমুনা পরীক্ষা বাড়ানোর কাজে দেরি হয়েছে, নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষাও হয়েছে প্রয়োজনের তুলনায় কম। দেশের সব এলাকা থেকে নিয়মিত নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষা করা সম্ভব হয়নি। প্রয়োজনীয় নমুনা পরীক্ষা হলে ফলাফল বিশ্লেষণ করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হত।”

পাশাপাশি এ ধরনের রোগের চিকিৎসায় হাসপাতালগুলোর প্রস্তুতিতেও ‘ঘাটতি ছিল’ মন্তব্য করে ডা. নজরুল বলেন, “এখন পর্যন্ত প্রয়োজনীয় আইসিইউ নিশ্চিত করতে পারিনি। মহামারীর মধ্যে ননকোভিড রোগীরা প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পাননি।”

আর কোভিড-১৯ প্রতিরোধে দেশের জনগণকে নিয়ম মানতে উদ্বুদ্ধ করতে না পারাটাকে একটি বড় দুর্বলতা হিসেবে দেখছেন এই চিকিৎসক।

“আমরা তাদের উদ্বুদ্ধ করতে পারিনি, অথবা তারা নিজেরাই নিয়ম মানতে চায়নি। নয় মাস মুক্তিযুদ্ধ করে আমরা দেশ স্বাধীন করতে পেরেছি। কিন্তু গত নয় মাসে আমরা সবার মাস্ক পরার অভ্যাস তৈরি করতে পারিনি। তার মানে আমাদের সাংগঠনিক অবস্থা দুর্বল ছিল।”

এরকম একটি মহামারী সামাল দেওয়ার জন্য পুরো বিশ্বই যেখানে অপ্রস্তুত ছিল, সেখানে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ‘মোটামুটি ভালো’ করেছে বলেই মনে করেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক এবং করোনাভাইরাস মোকাবেলা গঠিত ট্রিটমেন্ট প্রটোকল কমিটির সদস্য সচিব ডা. আহমেদুল কবীর।

তিনি বলেন, “এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশ ভালোই ম্যানেজ করতে পেরেছে। তবে সামনে সতর্কতার জায়গাটায় ঠিক থাকতে হবে।

“এই রোগের এখন পর্যন্ত কোনো চিকিৎসা নেই। ভ্যাকসিন এখনও হাতে পাইনি, সামনে পেলেও সবাইকে দিতে সময় লাগবে। এ কারণে সংক্রমণ রোধে নজর দিতে হবে। মানুষকে স্বাস্থ্য সচেতন করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।”

করোনাভাইরাসের মোকাবেলায় যারা প্রথম সারিতে কাজ করেছেন তাদের মধ্যে পুলিশ অন্যতম; মে মাসে বিএসএমএমইউতে নমুনা পরীক্ষা করানোর অপেক্ষায় সেই পুলিশ সদস্যরা

ভাইরাস ইতালি থেকে বাংলাদেশে

চীন থেকে করোনাভাইরাস অন্যান্য দেশে ছড়িয়ে পড়া শুরু করলে বিভিন্ন দেশ সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ার পাশাপাশি বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা শুরু করে।

বাংলাদেশ সরকারও ২১ জানুয়ারি চীন ফেরত সব যাত্রীর এবং ৭ ফেব্রুয়ারি বিশ্বের সব দেশ থেকে আসা যাত্রীদের স্ক্রিনিং বাধ্যতামূলক করে। সেজন্য দেশে সব বিমান, স্থল ও সমুদ্রবন্দরে বসানো হয় থার্মাল স্ক্যানার।

২১ জানুয়ারি ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হয়ে চীনের উহান থেকে আসা দুজন ব্যক্তির নমুনা পরীক্ষা করা হয় আইইডিসিআরে, তবে তারা আক্রান্ত ছিলেন না। সেটাই ছিল দেশে করোনাভাইরাসের প্রথম পরীক্ষা।

৩১ জানুয়ারি থেকে ৮ মার্চ পর্যন্ত ১১৬ জনের নমুনা পরীক্ষা করে আইইডিসিআর। প্রতিদিন দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে দেশবাসীকে হালনাগাদ খবর জানানোর পাশাপাশি সচেতনতামূলক তথ্য জানানো ব্যবস্থা হয়।

৮ মার্চের সংবাদ সম্মেলনে দেশে প্রথমবারের মত তিনজনের শরীরে নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ার কথা জানান আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।

প্রথম শনাক্ত তিনজনের মধ্যে দুজন ছিলেন পুরুষ, একজন নারী। পুরুষ দুজন ইতালির দুটি শহর থেকে দেশে ফিরেছিলেন। তাদের মধ্যে একজনের সংস্পর্শে এসে পরিবারের ওই নারী সদস্য আক্রান্ত হন।

এর ঠিক ১০দিন পর ১৮ মার্চ করোনাভাইরাসে দেশে প্রথম মৃত্যুর খবর জানানো হয় আইইডিডিআরের সংবাদ সম্মেলনে। বিদেশফেরত সেই বাংলাদেশি নাগরিকের বয়স ছিল সত্তরের বেশি।

যেহেতু কোনো ওষুধ জানা নেই, সংক্রামক এ রোগ থেকে বাঁচতে ঘন ঘন হাত ধোয়া ও মাস্ক পড়ার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছিল শুরু থেকেই। দেশে যখন প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ল, বিক্রির চাপে আর মজুদদারির কারণে বাজার থেকে উধাও হয়ে গেল মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, গ্লাভসসহ বিভিন্ন সুরক্ষা সামগ্রী, যেগুলো আগে স্বাস্থ্যকর্মীরাই ব্যবহার করতেন।   

অনেকে চাল-তেলের মত নিত্যপণ্য কিনেও ঘরে মজুদ করতে শুরু করছেন। কেবল বাংলাদেশে নয়, এই আতঙ্ক আর কেনাকাটার প্রবণতা দেখা গেল অনেক দেশেই। চীনের আদলে লকডাউন শুরুর পর ইউরোপের অনেক দেশে টয়লেট পেপার মজুদ করারও প্রবণতা দেখা গেল।

পুরান ঢাকার ওয়ারীর ‘লকডাউন’

লকডাউন

ভাইরাসের বিস্তার ঠেকানোর মরিয়া চেষ্টায় ২৪ জানুয়ারি চীনা নববর্ষের ছুটির আগের দিন অবরুদ্ধ করে ফেলা হয় উহান। বন্ধ করে দেওয়া হয় সব ধরনের যানবাহন। শহরের সব বাসিন্দাকে বাধ্য করা হয় যার যার বাড়িতে সঙ্গনিরোধ বা কোয়ারেন্টিনে যেতে।

একদিনের মধ্যেই সাড়ে পাঁচ কোটির বেশি মানুষকে অবরুদ্ধ করা হয় দেশটিতে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোতে এই ব্যবস্থা নাম পায় ‘লকডাউন’

জানুয়ারিতেই ভাইরাসটি দক্ষিণ কোরিয়া, ইরান, যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের কয়েকটি দেশে পৌঁছানোর খবর আসে। মার্চে শুরু হয় দেশে দেশে লকডাউন।

পুরো বিশ্বে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচল ততদিনে প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে বিশ্বের বেশিরভাগ অঞ্চলে জনজীবন কার্যত অচল।

মার্চের শেষে বাংলাদেশেও লকডাউনের সেই ব্যবস্থা শুরু হয়। অবশ্য সরকারিভাবে একে বলা হয় ‘সাধারণ ছুটি’।

দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ১৭ মার্চ থেকেই। ২৬ মার্চ থেকে সব অফিস আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রেখে সারা দেশে সব ধরনের যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়।

সেই সঙ্গে সবাইকে যার যার বাড়িতে থাকার নির্দেশ দেওয়ায় বিশ্বের আরও অনেক দেশের মত বাংলাদেশের ১৭ কোটি মানুষও ঘরবন্দি দশার মধ্যে পড়ে।

এর মধ্যে কষ্টে পড়ে খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষ। সরকারের পক্ষ থেকে সহযোগিতার উদ্যোগ নেওয়া হলেও কল কারখানা বন্ধ থাকায় এবং অনেকে কর্মহীন হয়ে পড়ায় বড় ধরনের অর্থনৈতিক জটিলতার দিকে যেতে থাকে পরিস্থিতি। এর মধ্যেই কাটেছে রোজা ও ঈদ।

জীবন ও জীবিকার এই অসম সমীকরণ মেলাতে গিয়ে অন্য অনেক দেশের মত বাংলাদেশেও মে মাসের শেষ দিকে বিধিনিষেধ শিথিল করা শুরু হয়।

টানা ৬৬ দিনের লকডাউন ওঠার পর ৩১ মে থেকে অফিস খোলার পাশাপাশি গণপরিবহন চলাচালের অনুমতি দেয় সরকার। ধীরে ধীরে শুরু হয় ফ্লাইট চলাচল। অগাস্টে বিনোদন কেন্দ্রও খুলে দেওয়া শুরু হয়।

ভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণে রেখেই অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সচল রাখার ভাবনা থেকে মাঝে পুরো দেশকে লাল, হলুদ ও সবুজ জোনে ভাগ করে পরিস্থিতি অনুযায়ী লকডাউনের বিধিনিষেধ আরোপের পরিকল্পনা হয়েছিল। পরীক্ষামূলকভাবে কয়েকটি এলাকায় সেই ব্যবস্থা চালানোও হয়েছিল। কিন্তু পরে আর তা এগোয়নি। 

বছরের শেষে এসে এখনও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। তবে বাকি সবই আগের মত চলছে। জনসমাগম এড়িয়ে চলতে বলা হলেও সেই বাস্তবতা কোথাও নেই। ঘরের বাইরে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক হলেও মানুষকে তা মানাতে না পেরে রাস্তায় ভ্রাম্যমাণ আদালত নামাতে হয়েছে সরকারকে।

পুরান ঢাকার বাবুবাজারের পাইকারি বাজারে মাস্কের মান দেখছেন ক্রেতা। ছবি: আসিফ মাহমুদ অভি

কেলেঙ্কারি মাস্ক নিয়ে

করোনাভাইরাস সংক্রমণ শুরুর পর চিকিৎসকদের সরবরাহ করা মাস্ক এবং পিপিইর মান নিয়ে অভিযোগ আসতে থাকে চিকিৎসকদের কাছ থেকে। মানসম্মত সুরক্ষা উপকরণের অনেক চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মী আক্রান্ত হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন চিকিৎসকরা।

মার্চের শেষ দিকে মুগদা জেনারেল হাসপাতালে সরবরাহ করা এন-৯৫ মাস্কের প্যাকেটে সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্ক থাকায় হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী ওই মাস্কের মান সম্পর্কে জানতে চেয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের পরিচালককে চিঠি দেন।

বিষয়টি খতিয়ে দেখার পর কেন্দ্রীয় ঔষধাগারের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শহিদ উল্লাহ ২ এপ্রিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ব্রিফিংয়ে স্বীকার করেন, ওই মাস্ক সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্ক ছিল। প্যাকেটের গায়ে এন-৯৫ লেখা হয়েছিল ‘ভুল করে’। ভুলটি ছিল সরবরাহকারী কোম্পানি জেএমআই হসপিটাল রিক্যুইজিট ম্যানুফ্যাকচারিং লিমিটেড।

বিষয়টি এমন পর্যায়ে গড়ায় যে খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তদন্ত করার নির্দেশ দেন। মাস্ক, পিপিই ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সরঞ্জাম সরবরাহে দুর্নীতির অভিযোগে গত ২৯ সেপ্টেম্বর জেএমআই গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও এমডি মো. আব্দুর রাজ্জাককে গ্রেপ্তার করে দুদক। বর্তমানে তিনি কারাগারে আছেন।

২১ জুলাই বিএসএমএমইউর চিকিৎসকরা অভিযোগ করেন, ওই হাসপাতালে নকল এন-৯৫ মাস্ক সরবরাহ করা হয়েছে। ওই মাস্ক সরবরাহ করেছিল অপরাজিতা ইন্টারন্যাশনাল।

সেই কোম্পানির মালিক শারমিন জাহান আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন-১ শাখায় সহকারী রেজিস্ট্রার। বিএসএমএমইউর দায়ের করা মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে তাকেও কারাগারে যেতে হয়।

রিজেন্টের সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের চুক্তির সই হয়েছিল গত ২১ মার্চ

 

রিজেন্ট-জেকেজি প্রতারণা

মহামারীর এই বছরে করোনাভাইরাস পরীক্ষা ও চিকিৎসার নামে রিজেন্ট হাসপাতাল এবং জেকেজি হেলথকেয়ারের প্রতারণা-জালিয়াতি ছিল বছরের আলোচিত ঘটনা।

করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে গত ২১ মার্চ বেসরকারি রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সেদিন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবসহ মন্ত্রণালয় এবং অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

কিন্তু নমুনা পরীক্ষা না করে ভুয়া রিপোর্ট দেওয়া, সরকারের কাছে বিল নেওয়ার পর রোগীর কাছ থেকেও অর্থ নেওয়াসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ পেয়ে ৭ ও ৮ জুলাই অভিযান চালিয়ে রিজেন্ট হাসপাতালের মিরপুর ও উত্তরা শাখা বন্ধ করে দেয় র‌্যাব। বাতিল করা হয় হাসপাতালের অনুমোদন।

তখনই জানা যায়, লাইসেন্সের মেয়াদ নেই জেনেও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর রিজেন্ট হাসপাতালকে করোনাভাইরাস চিকিৎসার জন্য ‘ডেডিকেটেড’ ঘোষণা করে সমঝোতা স্মারকে সই করেছিল।

খিলগাঁও গার্লস স্কুল এন্ড কলেজে বসানো বুথে করোনাভাইরাস শনাক্তের নমুনা সংগ্রহ করে তা পাঠিয়ে দেওয়া হয় সরকার নির্ধারিত ল্যাবরেটরিতে। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

ওই ঘটনায় রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদ করিমকে গত ১৫ জুলাই গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সাহেদসহ রিজেন্ট হাসপাতালের আরও কয়েকজন কর্মকর্তা এখন কারাগারে আছেন।

এদিকে এপ্রিলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আবেদন করে করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহের দায়িত্ব নিয়েছিল ওভাল গ্রুপের প্রতিষ্ঠান জোবেদা খাতুন হেলথ কেয়ার, সংক্ষেপে জেকেজি হেলথকেয়ার।

বিনামূল্যে নমুনা সংগ্রহের জন্য ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জের পৃথক ছয়টি স্থানে ৪৪টি বুথ স্থাপন করে তারা। এসব এলাকা থেকে প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৩৫০ জনের নমুনা সংগ্রহ করত জেকেজি। শর্ত ছিল, সরকার নির্ধারিত ল্যাবরেটরিতে নমুনা পাঠাতে হবে।

কিন্তু জেকেজির বিরুদ্ধে নমুনা পরীক্ষার জন্য সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অর্থ আদায় এবং করোনাভাইরাসে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা না করে ভুয়া প্রতিবেদন দেওয়ার অভিযোগ ওঠে।

অভিযোগের সত্যতা পেয়ে গত ২৩ জুন জেকেজির সিইও আরিফুল চৌধুরী এবং ১২ জুলাই তার স্ত্রী জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটের চিকিৎসক ডা. সাবরিনা শারমিন হুসাইনকে গ্রেপ্তার করে। তারা দুজনেই এখন জালিয়াতির মামলায় বিচারের মুখোমুখি।

এই ঘটনার পর ২৪ জুন জেকেজি হেলথ কেয়ারের নমুনা সংগ্রহের অনুমোদন বাতিল করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

নভেল করোনাভাইরাসে আক্রান্ত এক প্রবাসী থেকে আরো তিনজন সংক্রমিত হওয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ১৭ হয়েছে। রাজধানীর মহাখালীতে বৃহস্পতিবার স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ মহামারী নিয়ে নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান। ছবি: মাহমুদ জামান অভি

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ওলট-পালট

মহামারীর মধ্যে স্বাস্থ্যখাতে কেনাকাটাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠতে থাকলে তদন্তে নামে দুর্নীতি দমন কমিশন।

সমালোচনার মুখে ৪ জুন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সাবেক সচিব মো. আসাদুল ইসলামকে পরিকল্পনা বিভাগে বদলি করা হয়।

আসাদুলকে বদলির চার দিনের মাথায় ৮ জুন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (হাসপাতাল অনুবিভাগ) মো. সিরাজুল ইসলাম এবং অতিরিক্ত সচিব (ওষুধ প্রশাসন অনুবিভাগ) মো. ইসমাইল হোসেনকেও বদলি করা হয়।

আর ১৮ জুন বদলি করা হয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কোভিড-১৯ সংক্রান্ত মিডিয়া সেলের প্রধান অতিরিক্ত সচিব মো. হাবিবুর রহমান খানকে।

১১ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি নিয়ে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে অধিদপ্তরের টানাপড়েন তৈরি হয়। সেদিনের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছিল, অধিদপ্তর রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি করেছিল ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে’।

একদিন পর, ১২ জুলাই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমন বক্তব্যের ব্যাখ্যা চায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ।সেদিন স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের উপসচিব শারমিন আক্তার স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ‘ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ’ বলতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর কাকে বুঝিয়েছে, সে বিষয়ে মহাপরিচালক ডা. আবুল কালাম আজাদকে ব্যাখ্যা দিতে হবে।

দুদকের জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বুধবার বেরিয়ে এসে সাংবাদিকদের নিজের বক্তব্য জানিয়ে চলে যাচ্ছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পদত্যাগী মহাপরিচালক ডা. আবুল কালাম আজাদ । ছবি: মাহমুদ জামান অভি

১৫ জুলাই দেওয়া ব্যাখ্যায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. আজাদ দাবি করেন, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সাবেক সচিব আসাদুল ইসলামের ‘নির্দেশে’ রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে চুক্তি করা হয়েছিল।

এর ছয় দিনের মাথায় ২১ জুলাই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পদত্যাগপত্র জমা দেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তৎকালীন মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ। ২৩ জুলাই তার পদত্যাগপত্র গ্রহণের মাধ্যমে তার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করে সরকার।

সেদিনই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিকসমুহ) ডা. আমিনুল হাসানকেও সরিয়ে দেওয়া হয়।

পরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দায়িত্ব পান অধ্যাপক ডা. আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম।

এদিকে অবৈধ অস্ত্র ও জাল টাকার কারবারে জড়িত থাকার তথ্য পেয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের স্বাস্থ্য শিক্ষা বিভাগের মহাপরিচালকের গাড়িচালক আব্দুল মালেককে সেপ্টেম্বরের শেষ দিকে গ্রেপ্তার করে র‌্যাব।

র‌্যাব কর্মকর্তারা বলছেন, তুরাগের দক্ষিণ কামারপাড়ায় ২টি সাততলা ভবন, একই এলাকায় একটি বিশাল ডেইরি ফার্ম, ধানমন্ডির হাতিরপুলে সাড়ে ৪ কাঠা জমিতে একটি নির্মাণাধীন ১০তলা ভবন ছাড়াও কলাবাগানসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অন্তত ১৫টি ফ্ল্যাট রয়েছে মালেকের। এছাড়া বিভিন্ন ব্যাংকে বিপুল পরিমাণ অর্থও জমা আছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নানা দুর্নীতির চিত্র বেরিয়ে আসার মধ্যে অধিদপ্তরের অফিস সহকরী আবজাল হোসেনেরও বিপুল সম্পদের তথ্য পায় দুদক। তিনি এখন কারাগারে আছেন।

পরীক্ষা বৃত্তান্ত

গত মার্চে বাংলাদেশে নতুন করোনাভাইরাসের প্রকোপ শুরুর পর এ পর্যন্ত শুধু আরটি-পিসিআর পদ্ধতিতে নমুনা পরীক্ষা করা হচ্ছিল। শুরুতে সেই ব্যবস্থা ছিল কেবল আইইডিসিআরে। পরে পরীক্ষার জন্য ল্যাবের সংখ্যা বাড়ানো হয়। কিন্তু রোগী বাড়তে থাকায় পরীক্ষাকেন্দ্রগুলোতে দেখা যায় দীর্ঘ লাইন।

এ পদ্ধতি সময় সাপেক্ষ ও ব্যয়বহুল হওয়ায় নমুন পরীক্ষা নিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছিল স্বাস্থ্য বিভাগকে। পরিস্থিতি সামাল দিতে পরে পরে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল স্বাস্থ্যকেন্দ্রকে করোনাভাইরাস পরীক্ষার অনুমতি দেওয়া হয়। 

কিন্তু এক পর্যায়ে দেশে আরটিপিসিআর টেস্টের কিটের স্বল্পতা দেখা দিলে তৈরি হয় নতুন জটিলতা। তখনই দেশীয় প্রতিষ্ঠান গণস্বাস্থ্য ফার্মাসিউটিক্যালস কোভিড-১৯ শনাক্তে র‌্যাপিড অ্যান্টিবডি কিট তৈরির ঘোষণা দেয়।

কিন্তু র‌্যাপিড অ্যান্টিবডি টেস্টের কার্যকারিতা নিয়ে বিশ্বজুড়ে সন্দেহ থাকায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গণস্বাস্থ্যকে অনুমতি দিতে রাজি হচ্ছিল না। এ নিয়ে দীর্ঘ বিতর্কের পর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) মূল্যায়ন কমিটি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কিট পরীক্ষা করে দেখে।

পরে হানানো হয়, তাদের ওই ‘জিআর কোভিড-১৯ ডট ব্লট কিট’ অ্যান্টিবডি চিনতে পারলেও সংক্রমণের প্রথমভাগে করোনাভাইরাস শনাক্তে ‘কার্যকর নয়’।

ওই প্রতিবেদন পাওয়ার পর নতুন করোনাভাইরাস পরীক্ষায় গণস্বাস্থ্যের কিট ব্যবহারের অনুমোদন আর দেয়নি ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। তবে বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে গত ১৭ সেপ্টেম্বর করোনাভাইরাসের নমুনা পরীক্ষার জন্য অ্যান্টিজেন টেস্টের অনুমোদন দেয় সরকার। গত ৫ ডিসেম্বর দেশের ১০ জেলায় পরীক্ষামূলকভাবে অ্যান্টিজেন টেস্ট শুরু হয়।

দেশে এখন সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ১১২টি আরটিপিসিআর এবং ১৮টি জিন এক্সপার্ট ল্যাবে করোনাভাইরাসের পরীক্ষা হচ্ছে। এছাড়া ১০ জেলায় চলছে অ্যান্টিজেন পরীক্ষা। তারপরও দৈনিক নমুনা পরীক্ষার সংখ্যা ২০ হাজারের নিচেই থাকছে। 

সংবাদ সম্মেলন-বুলেটিন-সংবাদ বিজ্ঞপ্তি

চীনে নতুন করোনাভাইরাস সংক্রমণের পর এ বিষয়ে হালনাগাদ তথ্য জানাতে গত ৮ ফেব্রুয়ারি নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন শুরু করে আইইডিসিআর।

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআরের পরিচালক ডা. সেব্রিনা ফ্লোরা সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন তথ্য উপস্থাপনের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতেন। তখনই মাঝে-মধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকও সংবাদ সম্মেলনে আসতেন।

দেশে কোভিড-১৯ রোগী শনাক্তের পর গত মার্চে সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে যুক্ত হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

আইইডিসিআরের পরিবর্তে সংবাদ সম্মেলন করা হয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নতুন ভবন থেকে। তবে সেব্রিনা ফ্লোরার সংবাদ সম্মেলন পরিচালনা করতে থাকেন অধিদপ্তরের এমআইএস বিভাগের পরিচালক ডা. হাবিবুর রহমান। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকও তার বাসা থেকে সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিতেন।

ওই সময় বিভিন্ন গণমাধ্যমের কর্মীদের ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিয়ে প্রশ্ন করার সুযোগ ছিল। এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহে সাংবাদিকদের অংশগ্রহণ করার সুযোগ বাদ দেওয়া হয়। সংবাদ সম্মেলন হয়ে যায় সংবাদ বুলেটিন। প্রতিদিন দুপুরে সেই ভিডিও বুলেটিনে হালনাগাদ তথ্য দেওয়া শুরু হয়।

অগাস্টের দ্বিতীয় সপ্তাহে সেই বুলেটিনও বন্ধ করে দেয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তার বদলে এখন প্রতিদিন সংবাদ বিজ্ঞপ্তি আকারে সাংবাদিকদের হালনাগাদ তথ্য দিচ্ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

করোনাভাইরাস প্রতিরোধে গঠিত সরকারের জাতীয় কারিগরী পরামর্শক কমিটির একাধিক সদস্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এই পদক্ষেপের সমালোচনা করেন। সরকারের সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরও বলেন, নিয়মিত বুলেটিন প্রচার করলে তা সচেতনা তৈরিতে বেশি কার্যকর হত বলে তিনি মনে করেন। 

তবে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর যুক্তি ছিল, দেশে পরিস্থিতির ‘উন্নতি’ ঘটায় এখন আর এমন বুলেটিন প্রচার করার প্রয়োজন তারা দেখছেন না।

টিকার অপেক্ষা

নতুন করোনাভাইরাসের কোনো ওষুধ না থাকায় ২০২০ সালের প্রায় পুরোটা সময় পুরো বিশ্ব টিকা আবিষ্কারের অপেক্ষায় ছিল। সেই অপেক্ষার অবসান হয়েছে বছরের শেষ সময়ে এসেছে। কয়েকটি কোম্পানির টিকা ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে কার্যকর প্রমাণিত হওয়ায় বিভিন্ন দেশের অনুমতি দিতে শুরু করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও কয়েকটি টিকার বিষয়ে শিগগিরই সিদ্ধান্ত জানাবে বলে ঘোষণা দিয়েছে।  

বাংলাদেশ ইতোমধ্যে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি তিন কোটি ডোজ করোনাভাইরাসের টিকা কিনতে সেরাম ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া এবং বাংলাদেশের বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের সঙ্গে চুক্তি করে সরকার।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, এ চুক্তির অধীনে ছয় মাসে ৫০ লাখ করে মোট তিন কোটি ভ্যাকসিন পাবে বাংলাদেশ। তার আশা, টিকার প্রথম চালান জানুয়ারিতেই দেশে পৌঁছাবে।

প্রত্যেক ব্যক্তিকে অক্সফোর্ডের এই টিকা দুই ডোজ করে নিতে হবে। এই তিন কোটি ডোজ টিকা বাংলাদেশের দেড় কোটি মানুষকে দেওয়া যাবে। প্রতি ডোজ টিকার দাম পড়বে পাঁচ ডলার বা ৪২৫ টাকা।

টিকা কেনার জন্য ৭৩৫ কোটি ৭৭ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ করেছে সরকার। এসব টিকা মানুষকে দেওয়া হবে বিনামূল্যে। শুরুতে টিকা পাবেন করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে থাকা সম্মুখভাগের যোদ্ধারা।