অ্যান্টিবডি নিয়ে গবেষণার ফল পুরো ঢাকাকে প্রতিনিধিত্ব করে না: আইইডিসিআর

রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইসিডিসিআর বলেছে, ঢাকা মহানগরে কোভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ে তাদের গবেষণার অন্তর্বর্তীকালীন যে ফলাফল একদিন আগে তারা জানিয়েছিলেন, তার অ্যান্টিবডির ফলাফল ঢাকায় এই রোগের বিস্তারের পুরো চিত্র বহন করে না।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Oct 2020, 06:08 PM
Updated : 14 Oct 2020, 06:38 AM

মঙ্গলবার রাতে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সরকারি সংস্থাটি ওই গবেষণা নিয়ে ‘বিভ্রান্তি’ না ছড়াতে গণমাধ্যমের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে।

আইইডিসিআরের পক্ষে আইসিডিডিআর,বি ওই গবেষণা চালিয়েছিল, যার ফল সোমবার এক অনুষ্ঠানে প্রকাশ করা হয়।

জুলাই মাসে ওই গবেষণায় রাজধানী ঢাকার ২৫টি ওয়ার্ডে ১২ হাজার ৬৯৯ জনের নমুনার আরটিপিসিআর পরীক্ষায় ৯ দশমিক ৮ শতাংশের করোনাভাইরাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়।

তবে ৮১৭ জনের নমুনার অ্যান্টিবডি পরীক্ষায় দেখা যায়, ৪৫ শতাংশের শরীরে নতুন করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে বস্তি এলাকার ১২৫ জনের নমুনা পরীক্ষা করে প্রায় ৭৪ শতাংশের শরীরে অ্যান্টিবডি পাওয়া যায়।

ওই ফলাফল পুরো রাজধানীর প্রতিনিধিত্ব করছে ধরে নিলে কোটি মানুষের শহর ঢাকার প্রায় অর্ধেকের মধ্যে নতুন করোনাভাইরাস সংক্রমিত হয়েছে বলে ধরে নেওয়া যায়, গণমাধ্যমও সেভাবেই প্রতিবেদন প্রকাশ ও প্রচার করে।

এ ধরনের গবেষণার উপর ভিত্তি করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংক্রান্তও বিশ্বে প্রতি ১০ জনের একজন কোভিড-১৯ আক্রান্ত বলে মনে করছে, যা সোমবারের অনুষ্ঠানে তুলে ধরেছিলেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা।

আইইসিডিআরের সাবেক এই পরিচালক বলেছিলেন, “এই তথ্য যথেষ্ট গুরুত্ব বহন করে। এতদিন যেসব তথ্য দেওয়া হচ্ছিল তা ছিল যারা পরীক্ষা করাতে আসে তাদের ওপর ভিত্তি করে। বাড়িতে যারা ছিলেন তাদের কোনো তথ্য নেওয়া হয়নি।

“আমাদের এখানে রোগটা কতখানি ছড়িয়েছে, এই জরিপের মাধ্যমে বোঝা যায়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে প্রতি দশ জনে একজন আক্রান্ত। আমাদের তথ্যটাও কিন্তু কাছাকাছি ৯ দশমিক ৮। সুতরাং সারা বিশ্বের যে চিত্র আমাদেরও একই চিত্র।”

তবে মঙ্গলবার আইইডিসিআরের পরিচালক ডা. তাহমিনা শিরীন স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গবেষণাটি ঢাকা মহানগরীর প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র তুলে ধরেছে বলে আইইডিসিআরেরে পক্ষে দাবি করা হয়নি।

“কিন্তু কোনো কোনো গণমাধ্যমে গবেষণাটিতে সমগ্র ঢাকা মহানগরীর চিত্র তুলে ধরেছে বলায় এর বৈজ্ঞানিক ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে।”

তিনি ব্যাখ্যায় বলেন, এত অল্প নমুনার উপর গবেষণা চালিয়ে একে ঢাকার সার্বিক চিত্র বলা যাচ্ছে না।

“ঢাকা মহানগরীর প্রকৃত চিত্র তুলে ধরতে হলে ভবিষ্যতে প্রতিনিধিত্বমূলক সংখ্যক নমুনা সংগ্রহ করে আরো বড় পরিসরে গবেষণা করতে হবে।”

বিষয়টি আরও ব্যাখ্যা করে আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বুধবার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ১২ হাজার ৬৯৯ জনের নমুনা সংগ্রহের পর আরটিপিসিআর পরীক্ষায় ৯ দশমিক ৮ শতাংশের কোভিড-১৯ সংক্রমণ ধরা পড়ার যে তথ্য দেওয়া হয়েছে, তা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই।

কিন্তু অ্যান্টিবডি পরীক্ষা হয়েছে মাত্র ৮১৭ জনের নমুনা নিয়ে। এর মধ্যে মহানগরের ৬৯২ জনের এবং বস্তি এলাকার ১২৫ জনের রক্ত নিয়ে অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করা হয়েছে।

তাতে ৬৯২ জনের মধ্যে ৪৫ শতাংশের এবং ১২৫ জনের মধ্যে ৭৪ শতাংশের শরীরে নতুন করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডির উপস্থিতি পাওয়া গেছে।

“মাত্র ৮১৭ জনের ওপর চালানো গবেষণায় শরীরে অ্যান্টিবডির উপস্থিতি নিয়ে যে তথ্য পাওয়া গেছে তা ঢাকায় এই রোগের বিস্তারের পুরো চিত্র বহন করে না। সংখ্যাতত্ত্বের নিয়ম অনুযায়ী এটি হয় না। এজন্য আরও বড় পরিসরে গবেষণার প্রয়োজন আছে।”

ডা. মুশতাক বলেন, “মঙ্গলবারের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি আরও স্পষ্ট করা দরকার ছিল। কিন্তু কোনো কারণে তা করা হয়নি।”

দেশে মঙ্গলবার পর্যন্ত ৩ লাখ ৮১ হাজার ২৭৫ জনের মধ্যে কোভিড-১৯ এর সংক্রমণ ধরা পড়েছে। তবে আক্রান্তদের অনেকেই পরীক্ষার বাইরে থেকে গেছে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।

করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঘটলেও অনেকের মধ্যে লক্ষণ-উপসর্গ সেভাবে দেখা যায় না। তবে নমুনা পরীক্ষায় শরীরে অ্যান্টিবডি পাওয়া গেলে বোঝা যায়, তিনিও সংক্রমিত হয়েছিলেন। ফলে বড় পরিসরে অ্যান্টিবডি পরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হলে ঢাকায় করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রকৃত চিত্র পাওয়া যাবে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন