সিটি করপোরেশনে নিবন্ধন ছাড়া হাসপাতাল চলবে না: মেয়র

সিটি করপোরেশনে নিবন্ধন ছাড়া কোনো বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিককে চলতে দেওয়া হবে না বলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস জানিয়েছেন।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 Sept 2020, 11:02 AM
Updated : 24 Sept 2020, 11:02 AM

স্থানীয় সরকার আইন অনুযায়ী বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোকে চিকিৎসাবর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ অন্য যে বিষয়গুলো মানতে হবে, তা উল্লেখ করে এই নিবন্ধন নিতে হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

সারা দেশের চিকিৎসা বর্জ্যের নিরাপদ ব্যবস্থাপনা নিয়ে বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় একথা বলেন তাপস। এই সভায় ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র আতিকুল ইসলামও উপস্থিত ছিলেন।

‘স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন, ২০০৯’ এর ১১২ ধারায় বলা হয়েছে, “এই আইন কার্যকর হইবার তারিখে বা তৎপর করপোরেশন এলাকায় করপোরেশনের নিবন্ধন ব্যতীত কোনো প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনোস্টিক সেন্টার, প্যারামেডিকেল ইনস্টিটিউট, ইত্যাদি পরিচালনা করা যাইবে না।”

আইনের প্রসঙ্গ টেনে তাপস বলেন, “আমরা এরই মধ্যে একটা বিধিমালা-প্রবিধান করব। সুনির্দিষ্টভাবে চিকিৎসা বর্জ্য কীভাবে ব্যবস্থাপনা করতে হবে, কী কী অবকাঠামো তাতে থাকতে হবে। ১০, ১০০ কিংবা ৫০০ শয্যার হাসপাতাল হোক কী কী তাদের মানতে হবে, এই বিষয়গুলো তুলে ধরে আমরা তাদের নিবন্ধনের আওতায় আনতে চাই।

“চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ প্রত্যেকটি বিষয় উল্লেখ করে নিবন্ধনের আওতায় এনে তা বাস্তবায়নে বাধ্য করব। আমাদের নিবন্ধন ছাড়া কোনো বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক চলতে দেওয়া হবে না।”

তাপস বলেন, এই করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে মাস্ক, গ্লাভস এগুলো চিকিৎসা সামগ্রী হলেও এখন নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটা এখন সাধারণ বর্জ্যে পরিণত হয়েছে।

“চিকিৎসা বর্জ্য প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য একটি বিধিমালা হয়েছে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের অধীনে ২০০৮ সালে। কিন্তু আজ পর্যন্ত সেটার বাস্তব কোনো পরিপালন আমরা লক্ষ করিনি।

“আমাদের আইন, বিধিমালা, প্রবিধান কম নেই, সবই আছে। অন্যান্য উন্নত দেশে যা আছে আমাদেরও তাই আছে। কিন্তু সেখানে একটি বড় ফারাক আমরা লক্ষ করি তা হল সেটা পরিপালন।”

সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের অনুমোদন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অধীনে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দেয় জানিয়ে তাপস বলেন, মেডিকেল প্র্যাকটিস অ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিক, ল্যাবরেটরি অর্ডিন্যান্স ১৯৮২ এ আবেদনের সঙ্গে আবশ্যিক ডকুমেন্টের তালিকায় হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনোস্টিক সেন্টারের বিভিন্ন তথ্যের কথা বলা হয়েছে।

“আমি অত্যন্ত মর্মাহত হয়েছি, এখানে অবকাঠামো বিষয়ে কোনো নির্দেশনা নেই। জনবলের বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে বলা আছে, কিন্তু সেই হাসপাতাল-ক্লিনিকের বর্জ্যগুলো কীভাবে ব্যবস্থাপনা করবে, তাদের অবকাঠানো কী থাকবে, কী নিশ্চিত করতে হবে- এ বিষয়ে এখানে কিছু বলা হয়নি।”

স্থানীয় সরকারমন্ত্রী তাজুল ইসলাম বলেন, “আমরা বর্জ্য ইনসিনারেশন (ভস্মীকরণ) প্ল্যান্ট স্থাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। উত্তর সিটি করপোরেশনের জন্য আমিন বাজারে এই প্ল্যান্ট স্থাপনের জন্য প্রধানমন্ত্রী অনুমোদন দিয়েছেন। দক্ষিণের মেয়রও এ ব্যাপারে আমাদের কাছে ছয়টি আবেদন পাঠিয়েছেন, সেগুলো পর্যালোচনা করা হচ্ছে।”

এই প্ল্যান্ট স্থাপনে কোনো বিনিয়োগ করতে হবে না জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, “কারণ এই টেকনোলজি আমরা খুব ভালো করে হ্যান্ডল করতে পারি না। আমরা শুধু বর্জ্য ও জায়গা দেব। তারা সেখানে প্ল্যান্ট স্থাপন করে প্রতিযোগিতামূলক দামে আমাদের কাছে বিদ্যুৎ বিক্রি করে বিনিয়োগের অর্থ ফেরত পাবে। এ রকম একটি প্রক্রিয়া নিয়ে আমরা কাজ করছি।

“মেডিকেল বর্জ্যে ক্যান্সারের রোগীর জিনিসপত্রও থাকে। কোভিড-১৯ ছাড়াও আরও অনেক সংক্রামক রোগ আছে। এসব বর্জ্য যদি সাধারণ বর্জ্যের সঙ্গে বিবেচনা করে সেটা ক্ষতিকারক।”

তাজুল বলেন, “স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় অনেক কাজ করছে কিন্তু আমরা লক্ষ করছি, এসব মেডিকেল বর্জ্য সিটি করপোরেশনকে দিয়ে দিচ্ছে। সিটি করপোরেশন যখন ক্যারি করছে সেখানে আরেকটা সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে।

“বর্জ্য নিরাপদ করে যদি আমাদের দেন সিটি করপোরেশনের যে লোকটা বর্জ্য নেবে সে সংক্রমিত হবে কিন্তু সে তো জানবে না। বাড়িতে গিয়ে সে পরিবারের অন্যদের সংক্রমিত করবে, তাদের মাধ্যমে পুরো সমাজে ছড়িয়ে পড়বে।”

কী কী ‘ফ্যাসিলিটিজ’ থাকলে বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোকে লাইসেন্স দেওয়া হবে, তা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কেই নিশ্চিত করতে হবে বলে মত দেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এমন ব্যবস্থা নেবে আগামী তিন, ছয় মাস বা একটা পার্টিকুলার টাইম লাইনের ভেতর যেসব বর্থ্যতা ও লজিস্টিক সাপোর্ট নেই সেগুলো নিশ্চিত করবেন। আর তা না হলে ক্লিনিক বন্ধের জন্য আমাদের মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মেয়রদের উদ্বুদ্ধ করব।”