স্বাস্থ্য বিধি না মানার নানা অজুহাত এলো জনমত জরিপে

করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে জরুরি স্বাস্থ্য সুরক্ষা বিধি মানার বিষয়ে দুরাবস্থার চিত্র উঠে এসেছে এক মতামত জরিপে।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 August 2020, 05:31 PM
Updated : 27 August 2020, 05:31 PM

ওই জরিপে দেখা যায়, ৬১ দশমিক ১০ শতাংশ নাগরিক বলছেন, শারীরিক দূরত্ব বজায়ের নিয়ম অন্যরা মানে না বলে ইচ্ছা থাকলেও তারা মানতে পারেন না।

মাস্ক পরলে গরম ও অস্বস্তি লাগার কথা বলছেন শতকরা ৬৭ দশমিক ৪০ ভাগ। আর নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হওয়ার কথা বলেছেন প্রায় ৩০ শতাংশ।

অংশগ্রহণকারীদের ৭২ দশমিক ৬০ শতাংশ নিয়মিত হাত ধোয়াকে উপকারী বললেও ৬ দশমিক ১০ ভাগ বলছেন, এই সতর্কতার কথা তাদের মনেই থাকে না।

বৃহস্পতিবার এক ভার্চুয়াল আয়োজনে ‘করোনায় স্বাস্থ্য সুরক্ষা’ বিষয়ক ওই জনমত জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। ব্র্যাক ও লাইফবয়ের যৌথ উদ্যোগে ওই জরিপ পরিচালনা করেছে দৈনিক প্রথম আলো।

৩১ জুলাই থেকে ১১ অগাস্ট পর্যন্ত সারা দেশে পরিচালিত ওই জরিপে ৩ লাখ ২০ হাজার ৭৮১ জনের মতামত নেওয়া হয়েছে বলে অনুষ্ঠানে জানানো হয়।

জরিপে করোনাভাইরাস মহামারীতে হাত ধোয়া, মাস্ক ব্যবহার, প্রয়োজনীয় নিয়ম মেনে চলা ও নিয়ম পালনে কী কী বাধা বা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হচ্ছে- এই সম্পর্কিত ১০টি প্রশ্ন করা হয়।

জরিপের ১০টি প্রশ্নের মধ্যে ৫টি ছিল মাস্ক সম্পর্কিত, ৪টি হাত ধোয়া এবং ১টি সামাজিক দূরত্ব সম্পর্কে।

জরিপের অন্যতম প্রশ্ন ছিল, মাস্ক ব্যবহারের ফলে কীভাবে ঝুঁকি কমে?

এর জবাবে ৮৫ দশমিক ২০ শতাংশ বলেছেন, সঠিকভাবে মাস্ক ব্যবহার করলে হাঁচি-কাশির জলীয় কণার মাধ্যমে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে না।

৮ দশমিক ৭০ শতাংশের মতে, এতে করে দূষিত বাতাস ফুসফুসে যায় না। অপরদিকে মাস্ক ব্যবহারে যে ঝুঁকি কমে তা বিশ্বাসই করেন না- এমন মত পাওয়া গেছে ৫ দশমিক ৪০ ভাগ মানুষের।

জরিপে অংশ নেওয়ার আগের দিন ৩ থেকে ৫ বার হাত ধুয়েছেন বলে ৩৫ দশমিক ৫০ জন জানিয়েছেন। ৬ থেকে ৯ বার ধোয়ার হার কমে দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ৭০ শতাংশে।

তবে ২৫ দশমিক ৬০ শতাংশের মতে, দিনে ১০ বারেরও বেশি হাত ধোয়ার অভ্যাসের কথা জানা গেছে। শতকরা ৯ ভাগ জানান, আগের দিন ১ থেকে ২ বার হাত ধুয়েছেন।

৩৮ দশমিক ৪০ শতাংশ হাত ধোয়ার ক্ষেত্রে মনে না থাকার কথা বলেছেন। আবার প্রয়োজনের সময় সাবান-পানি পাওয়া যায় না বলে মত এসেছে ৪৪ দশমিক ৯০ ভাগের। ৭ দশমিক ৬০ শতাংশের মতে, সাবানের দাম বেশি বলে অনেকের হাত ধোয়া হয় না।

হাত ধোয়ার জন্য সময়ই পাওয়া যায় না- এমন মত এসেছে ৯ দশমিক ২০ শতাংশের। বেশিরভাগ (৯০ দশমিক ১০) ব্যক্তিকে নিয়ম মেনে ২০ সেকেন্ড হাত ধোয়া উচিত জানানো হলেও ৪ দশমিক ৬০ শতাংশ ১০ সেকেন্ডেই হাত ধোয়ার কাজটি সেরে ফেলার পক্ষপাতী।

৩ ফুটের শারীরিক দূরত্ব বজায়ের ক্ষেত্রে প্রধান বাধা যথেষ্ট জায়গা না পাওয়া, এমনটা প্রকাশ পেয়েছে ৩০ দশমিক ১০ শতাংশ মানুষ।

৬১ দশমিক ১০ শতাংশ বলেছেন, অন্যরা এই নিয়ম মানে না বলে তাদেরও সব সময় মানা হয় না। ৬ দশমিক ১০ শতাংশ বলেছেন, এই সতর্কতার কথা মনেই  থাকে না তাদের।

জরিপ প্রকাশনা অনুষ্ঠানে আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মুশতাক হোসেন বলেন, “এই দেশে মার্চ মাসে করোনা শুরু হওয়ার পর আগস্ট মাসে এসেও আমরা ঘরে বসে থাকতে পারি না।

“যুক্তিপূর্ণ আচরণ আর কার্যকর ব্যবস্থা নিয়ে আমাদের দৈনন্দিন কাজগুলো চালিয়ে যেতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি প্রচার, সুবিধাজনক স্থানে সাবান-পানির ব্যবস্থা রাখা, রোগী শনাক্ত করা, কোয়ারেন্টিনের ব্যবস্থা করা ও সমাজে এ বিষয়ে নেতিবাচক মনোভাব দূর করতে প্রতিটি এলাকায় ভলান্টিয়ার নিয়োগ করতে হবে।”

অনুষ্ঠানে করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে মাঠ পর্যায়ের পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেন সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন জেলা ঘুরে আসা প্রথম আলোর বিশেষ প্রতিনিধি শিশির মোড়ল।

তিনি বলেন, “সাধারণ মানুষ এই বিপদকে খুব একটা আমলে নিচ্ছে না। এটা কঠোরভাবে নজরদারিতে না রাখলে ভোগান্তি অনেক বাড়তে পারে।”

প্রথম আলোর বিশেষ বার্তা সম্পাদক শওকত হোসেনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে ইউনিলিভার বাংলাদেশের বিপণন পরিচালক আফজাল হাসান খান, ব্র্যাকের স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা কর্মসূচির সহযোগী পরিচালক মোর্শেদা চৌধুরী বক্তব্য দেন।