এই পিপিইর কার্যকারিতা নিয়ে ‘সন্দিহান’ চিকিৎসক-নার্সরা: ব্র্যাকের জরিপ

কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় নিয়োজিত চিকিৎসকদের ২৫ শতাংশ এবং নার্সদের ৬০ শতাংশ এখনও পিপিই পাননি দাবি করে ব্র্যাকের এক জরিপে বলা হয়েছে, যেসব স্বাস্থ্যকর্মী এসব পেয়েছেন তারাও সেগুলোর কার্যকারিতা নিয়ে ‘সন্দিহান’।

নিজস্ব প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 April 2020, 10:54 AM
Updated : 18 April 2020, 10:54 AM

রোগী থেকে চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে ভাইরাস সংক্রমণ রোধে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) আবশ্যক। কাদের কোন ধরনের পিপিই প্রয়োজন সে বিষয়েও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা রয়েছে।

শনিবার এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ওই জরিপ গবেষণার ফলাফল প্রকাশ করে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের জেমস পি গ্রান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথ ও বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ।

পিপিই নিয়ে স্বাস্থ্যকর্মীদের মনোভাব ও চিকিৎসা নিয়ে তাদের পরিস্থিতি তুলে ধরে গবেষক বুশরা জেরিন ইসলাম বলেন, “সামনের সারিতে থাকা ৭৫ ভাগ চিকিৎসক এবং ৪০ শতাংশ নার্স পিপিই পেয়েছেন। কিন্তু রেইনকোটের মতো যে পিপিই দেওয়া হয়েছে, সেটা আদৌ কাজ করে কি না তা নিয়ে সন্দিহান তারা।

“আবার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ হচ্ছে, এগুলো একবার ব্যবহার করে ধ্বংস করতে হবে। কিন্তু আমাদের স্বাস্থ্যকর্মীদের পুনরায় ব্যবহার করার কথা বলা হচ্ছে। এসব বিষয় স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে বড় রকমের মানসিক চাপ তৈরি করছে।”

চিকিৎসকরা পিপিই পরিধান, ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনা নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইডলাইন নিজ উদ্যোগে জেনে নিলেও নার্সদের অধিকাংশ এই সংক্রান্ত প্রশিক্ষণ পাননি বলে উঠে আসে গবেষণায়।

গবেষকরা জানান, দেশের ১৪টি জেলার ৪৩টি হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রের ৬০ জন চিকিৎসক ও নার্স টেলিফোনে এই জরিপে অংশ নেন। জরিপ করা হয় ৯ থেকে ১৪ এপ্রিল।

করোনাভাইরাস নিয়ে মানুষের মধ্যে সচেতনতা কতটুকু তা নিয়ে আরেকটি জরিপ করেছে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব পাবলিক হেলথ।

এক হাজার ৩০৯ জনের উপর করা ওই জরিপ তুলে ধরে গবেষক অতনু রাব্বানী বলেন, করোনাভাইরাস সম্পর্কে শতভাগ লোক জানলেও সেটা নিয়ে সচেতনতার রয়েছে ‘মারাত্মক ঘাটতি’।

“মাত্র ৩৮ শতাংশ ব্যক্তি জানে তিন ফুট দূরত্ব বজায় রাখার কথা। মাত্র ১৬ শতাংশ বলেছেন, হাঁচি-কাশি দিলে কনুই দিয়ে মুখ ঢাকেন। বহু মানুষ এখনও জানেন না, রোগটি কীভাবে ছড়ায়।”

অতনু রাব্বানী জানান, “জরিপে ৩৭ ভাগ গৃহস্থালিতে কেবল ভাত, ডাল ও আলু খেয়ে জীবনধারণ করার তথ্য উঠে আসে। এসব গৃহস্থালির মানুষজন যারা মূলত বাধ্য হয়ে এই রকম পুষ্টিগত দিক বিচারে বৈচিত্র্যহীন খাবার খেয়ে বেঁচে আছে, তাদের মাঝে অধিক মানসিক চাপ লক্ষ্য করা গেছে।”

বস্তিবাসী ও হিজড়াদের উপর পরিচালিত দুই জরিপে দেখা যায়, ঢাকা শহরের দরিদ্র জনগোষ্ঠী ও হিজড়া জনগোষ্ঠীর মাঝে করোনাভাইরাস নিয়ে ব্যক্তিগত পর্যায়ে উচ্চ মাত্রার ভয় ও আতঙ্ক দেখা গেছে।

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই করোনাভাইরাসের লক্ষণগুলো অস্পষ্ট। এই জনগোষ্ঠীগুলোতে ভৎর্সনা, নজরদারি, বৈষম্য ও হয়রানি বৃদ্ধি পেয়েছে।

গবেষক বাছেরা আক্তার বলেন, বস্তিতে সাধারণ জ্বর-সর্দি হলেও তার চিকিৎসা তারা পাচ্ছেন না। কারণ তারা একঘরে হয়ে যাচ্ছেন। তারা মূলত ফার্মেসি থেকে চিকিৎসা নেন, সেখান থেকেও এখন চিকিৎসা পাচ্ছেন না।

“একইভাবে করোনাভাইরাসের উপসর্গ থাকলেও তারা আতঙ্কিত হচ্ছেন। কারণ কোভিড-১৯ পজিটিভ এলেই পুরো পরিবারকে বস্তিছাড়া করা হতে পারে।”

তিনি আরও বলেন, “হিজড়া জনগোষ্ঠীর মধ্যে ধারণা তৈরি হয়েছে, তারা করোনাভাইরাসে মারা যাবেন, কিন্তু চিকিৎসা পাবেন না। আবার তাদের উপার্জনের পথও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। দলবেঁধে চলাফেরা করায় তাদেরকে করোনাভাইরাস বহনকারী বলে ভুল ধারণা তৈরি হয়েছে। এ কারণে তারা আরও প্রান্তিক হয়ে যাচ্ছেন।”

এ সময় বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচের আহ্বায়ক মুস্তাক চৌধুরী বলেন, “আমরা ভাইরাস মোকাবেলায় প্রস্তুতির জন্য অনেক সময় পেলেও আমরা প্রস্তুতি নিতে পারিনি। আমরা সময় নষ্ট করেছি। সেটা মসজিদ বন্ধে কয়েক সপ্তাহ সময় নেওয়া এবং গার্মেন্ট শ্রমিকদের নিয়ে বাজে অবস্থা থেকে বোঝা যায়।”

তিনি বলেন, “আমাদের কার্যক্রম এখন পর্যন্ত সব কিছু প্রধানমন্ত্রীকেন্দ্রিক। একজনের পক্ষে আর কতোটা করা সম্ভব?

“অনেকের কাছ থেকে অনেক কথা আমরা আগে শুনতাম, এই বিপদের মুহূর্তে তাদের উপস্থিতি নাই। প্রধানমন্ত্রীকে বলব, সবাইকে সক্রিয় করার কাজ করুন, সরকার ও দেশবাসী সবার জন্য ভালো হবে।”

সংবাদ সম্মেলনে জেমস পি গ্রান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথের ডিন অধ্যাপক সাবিনা ফয়েজ রশীদ বক্তব্য দেন।