সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আবহাওয়ার ধরনে পরিবর্তনের কারণে এবার আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। রোগের প্রকোপ কমাতে জনগণকে আরও সচেতন হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন তারা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এবছর শীত মৌসুমে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ, ডায়রিয়া ও শীতজনিত অন্যান্য রোগে ৫ লাখ ৩৮ হাজার ১৩৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন। যাদের মধ্যে ৬১ জন মারা গেছেন। এদের মধ্যে শিশু ও বয়স্কদের সংখ্যাই বেশি।
# গত ১ নভেম্বর থেকে ১৯ ফেব্রুয়ারি সকাল পর্যন্ত সময়ে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণে আক্রান্ত হয়েছেন ৯১ হাজার ২৮৬ জন। তাদের মধ্যে ২২ জনের মৃত্যু হয়েছে।
# এই সময়ে ২ লাখ ১৩ হাজার ৭২ জন ডায়রিয়া নিয়ে হাসপাতালে গেছেন, ৯ জন মারা গেছেন।
# জন্ডিস, আমাশয়, চোখের প্রদাহ, চর্মরোগ ও জ্বরের মত অসুস্থতায় আক্রান্ত হয়েছেন ২ লাখ ৩৩ হাজার ১১৬ জন, তাদের ৩০ জন মারা গেছেন।
২০১৫-১৬ মৌসুমে শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ, ডায়রিয়া, জন্ডিস, আমাশয়, চোখের প্রদাহ, চর্মরোগ ও জ্বরের মত শীতজনিত বিভিন্ন রোগে এক লাখ সাত হাজার ৩৬৯ জন আক্রান্ত হয়েছিলেন, মারা যান ৩৮ জন।
২০১৬-১৭ মৌসুমে ৬১ হাজার ৫৬৪ জন আক্রান্তের মধ্যে মারা যান ১১ জন। ২০১৭-১৮ মৌসুমে এক লাখ চার হাজার ৬৭ জন আক্রান্ত হন এবং ২০ জন মারা যান। ২০১৮-১৯ মৌসুমে ৮৬ হাজার ৭৫৯ জন রোগী আক্রান্ত হন এবং ১১ জনের মৃত্যু হয়।
হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের সহকারী পরিচালক ডা. আয়শা আক্তার বলেন, এ বছর শৈত্যপ্রবাহ এসেছে আগেভাগে, আবহাওয়ার ধরনও কিছুটা বদলেছে। তাতে শীতজনিত রোগের প্রকোপও বেড়েছে।
“অন্যবারের তুলনায় এবার শীত বেশি ছিল। আর শীত কমার সাথে সাথে কখনও শীত কখনও গরম ভাব। এই মনে হচ্ছে গরম লাগছে, আবার কিছুক্ষণ পরই ঠাণ্ডা লাগছে। শীতের কাপড় পড়বে নাকি ফ্যান ছাড়বে- বুঝতে পারছে না। আর ধুলোবালি এতো বেড়েছে যে, শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ বাড়ছে। শীতের ডায়রিয়াও বেড়েছে। বিশেষ করে শিশুরা ও বয়স্করা খুব বেশি আক্রান্ত হচ্ছে।”
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট- আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, “রোগের সাথে পরিবেশের একটা সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের দূষণের মাত্রাটা বেড়েছে। শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণের জন্য মূলত দূষণই দায়ী।
“আর আমাদের জীবনাচরণটাও বড় বিষয়। আমরা এখনও যেখানে সেখানে থুথু ফেলি, ফলে বাতাস থেকে তো এ রোগগুলো ছড়াচ্ছে। এবার শীত পড়েছে অন্যান্য বছরের চেয়ে বেশি। এসব মিলিয়েই এবার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেশি।”
রোগগুলো এড়িয়ে চলতে যে কারও থেকে এক মিটার দূরত্বে থাকা, হ্যান্ডশেক না করা, কোলাকুলি না করা, হাঁচি-কাশির সময় মুখ ঢেকে রাখা, হাত ধুয়ে খাওয়া ও পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।