তামাক সেবন কমেছে বাংলাদেশে: জরিপ

বাংলাদেশে গত আট বছরে তামাক সেবনকারীদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে, যা তামাক নির্মূলে নেওয়া পদক্ষেপগুলোর কার্যকারিতার প্রমাণ দিচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 August 2018, 02:23 PM
Updated : 19 August 2018, 10:18 AM

‘গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোবাকো সার্ভে ২০১৭’ জরিপে বাংলাদেশে তামাকসেবীর হার কমার চিত্র এসেছে, যা মঙ্গলবার উপস্থাপন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।

জরিপে দেখা যায়, বাংলাদেশে প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে ধূমপায়ী এবং ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহারকারীর হার হ্রাস পেয়েছে যথাক্রমে ৫ শতাংশ ও ৬ দশমিক ৬ শতাংশ।

বিশেষজ্ঞরা সন্তুষ্ট হলেও একইসঙ্গে সতর্ক করে বলছেন, তামাকের ব্যবহার সাময়িকভাবে কমে আসার পর আবার বেড়েছে, বিশ্বে এমন অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন-এর সহায়তায় বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো গ্লোবাল অ্যাডাল্ট টোবাকো সার্ভে ২০১৭ জরিপটি চালায়।

সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলনে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “স্বল্প পরিসরে বাংলাদেশ তামাকের ব্যবহার ৮ শতাংস হ্রাস পেয়েছে। তামাকের ব্যবহার কমার তুলনামূলক হার প্রায় ১৮ শতাংশ, যা তামাক নিয়ন্ত্রণে সরকারের সাফল্যের স্বাক্ষর বহন করে। 

“যদি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী সহজ তামাক কর নীতিমালা প্রণয়ন করা হয় এবং যথাযথভাবে তামাকজাত দ্রব্যের উপর করারোপ করা হয় তাহলে তামাকের ব্যবহার আরও কমিয়ে আনা সম্ভব হবে।”

জরিপে দেখা যায়, ২০১৭ সালে দেশে তামাক সেবনকারী ১৫ ও তার চেয়ে বেশি বয়সীদের সংখ্যা ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ অর্থ্যাৎ তিন কোটি ৭৮ লাখ।

২০০৯ সালে গ্যাটসের প্রথম জরিপে এই বয়সী তামাকসেবীর সংখ্যা ছিল ৪৩ দশমিক ৩ শতাংশ। অর্থ্যাৎ এই বয়সীদের মধ্যে তামাক ব্যবহারকারীর হার ৮ শতাংশ পয়েন্ট কমেছে।

তামাক বর্জনের এই চিত্রে এগিয়ে আছেন পুরুষরাই; ৫৮ শতাংশ থেকে কমে এসে ৪৬ শতাংশ পুরুষকে তামাকসেবী বলা হয়েছে জরিপে।

অন্যদিকে নারীদের মধ্যে তামাক বর্জনের হার কমেছে সামান্যই; ২৮ দশমিক ৭ শতাংশ থেকে কমে ২৫ দশমিক ২ শতাংশ। এর কারণ হিসাবে বলা হয়েছে, ধূমপান কমে এলেও মুখে তামাক খাওয়ার অভ্যাস এখনও কমে আসেনি নারীদের মধ্যে।

গ্যাটস ২০০৯ ২০১৭ এর তুলনামূলক চিত্র

বিবরণ

গ্যাটস ২০০৯

গ্যাটস ২০১৭

সার্বিকভাবে তামাক ব্যবহারের হার

৪৩. শতাংশ

৩৫. শতাংশ

বাড়িতে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার

৫৪. শতাংশ

৩৯ শতাংশ

কর্মক্ষেত্রে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার

৬৩. শতাংশ

৪২. শতাংশ

গণপরিবহনে পরোক্ষ ধূমপানের শিকার

২৬. শতাংশ

২৩. শতাংশ

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, “বিশেষত মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে তামাকের ব্যবহার নির্মূলের ঘোষণায় বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমে গতিশীলতা বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ২০১৭ সালে পরিচালিত গ্যাটসের ফলাফলে পরিলক্ষিত হয়েছে।”

টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য-এসডিজি অর্জন এবং ‘সুস্থ জাতি’ গড়তে আগামী ২৫ বছরের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে তামাক নির্মূলের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।

তবে বাংলাদেশের বাজারে জাপানি তামাক কোম্পানি জেটিআইর ব্যবসা করতে আসা নিয়ে উদ্বিগ্ন তামাকবিরোধীরা।

আকিজ গ্রুপের তামাকের ব্যবসা ১২ হাজার ৪৩০ কোটি টাকায় (১৪৮ কোটি ডলার) কিনেছে জাপান টোবাকো ইনকর্পোরেটেডের (জেটিআই)। গত ৬ অগাস্ট এই দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চুক্তি স্বাক্ষর হয়।

গ্যাটসের জরিপের ফলাফল নিয়ে তামাকবিরোধী সংগঠন প্রজ্ঞা এক বিবৃতিতে বলেছে, “এই ফলাফল প্রশংসনীয় এবং প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুত ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার পথে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হলেও বর্তমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের কিছু দুর্বলতার কারণে তামাক নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের অর্জন কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় পৌঁছায়নি।

“দেশে নতুন করে তামাক ব্যবসার সুযোগ দিলে তামাক নিয়ন্ত্রণে সরকারের এই অর্জন নস্যাৎ হয়ে যাবে এবং ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ অর্জনেও অন্তরায় হয়ে দাঁড়াবে।”