এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৃহস্পতিবার সিরডাপ ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স সেন্টারে হেপাটোলজি সোসাইটির উদ্যোগে আয়োজিত এক সেমিনারে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।
সেমিনারে জানানো হয়, এক গবেষণায় পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, গ্রামের স্থূলকায় নারীরা এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন। এছাড়া ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের ৭১ শতাংশ এবং উচ্চ রক্তচাপ ভোগা এমন মানুষের ৬৩ শতাংশের মধ্যে এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা গেছে।
স্থূলতায় আক্রান্ত হলে ১০ দশমিক ৭১ গুণ ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে। ডায়াবেটিসে আক্রান্তদের ঝুঁকি প্রায় ২.৭১ গুণ বেশি বলে গবেষণায় বলা হয়েছে। বিবাহিতদের মধ্যে এ রোগের প্রাদুর্ভাব বেশি দেখা গেছে।
মূলত খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রার ধরনের পরিবর্তনের কারণে দিন দিন ফ্যাটি লিভার রোগের প্রকোপ বাড়ছে বলে সেমিনারে জানানো হয়।
সারা দেশে ফ্যাটি লিভার রোগের প্রাদুর্ভাব নির্ণয় করতে ঢাকা সিটি করপোরেশন এলাকা এবং চার বিভাগের চারটি জেলা শহর ও চারটি উপজেলা শহরে এ গবেষণা পরিচালিত হয়। গবেষণায় ২০১৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৭ সালের জানুয়ারি মাস পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ করা হয়।
সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সারের অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে লিভারে চর্বি জমার কারণে প্রদাহ। চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে স্টিয়াটোহেপাটাইটিস। অতিরিক্ত চর্বি জমা হওয়ার কারণে লিভার বা যকৃতে যে প্রদাহ সৃষ্টি হয় তাকেই স্টিয়াটোহেপাটাইটিস বা লিভারে চর্বি জমাজনিত প্রদাহ বলে। এই রোগের আগের স্তরের নাম হচ্ছে ফ্যাটি লিভার বা লিভারে চর্বি রোগ। এ রোগ ডায়াবেটিস এবং শরীরে ইনসুলিন হরমোনের কার্যকারিতা কমে যাওয়ার সাথে সরাসরি সম্পর্কিত।
সেমিনারে বক্তারা জানান, এ রোগ থেকে মুক্তি পেতে হলে জনসচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি জীবনযাত্রার ধরন পরিবর্তন, প্রতিদিন ব্যায়াম করতে হবে।
এক প্রশ্নে হেপাটোলজি সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক শাহিনুল আলম বলেন, “অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি বাংলাদেশের মানুষের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এসেছে। তারা আগের মতো শারীরিক পরিশ্রম করেন না। এমনকি ব্যায়ামও করেন না। কিন্তু তারা আগের চেয়ে অনেক বেশি চর্বিযুক্ত খাবার খাচ্ছেন। অতিরিক্ত চর্বি লিভারে জমে যাচ্ছে। এটা মানব স্বাস্থ্যের জন্য খুবই হুমকির।
“তাছাড়া বাংলাদেশের মানুষ অনেক বেশি ভাত অথবা রুটির মতো কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার খায়। কার্বোহাইড্রেট পুরোটা শরীর কাজে লাগাতে না পারলে এর অতিরিক্ত চর্বি হিসেবে লিভারে জমে থাকছে।”
হেপাটোলজি সোসাইটির সভাপতি মবিন খানের সভাপতিত্বে সেমিনারে আরো উপস্থিত ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের লিভার বিভাগের চেয়ারম্যান নূরুদ্দিন আহমদ, ভয়েস অব আমেরিকার বাংলাদেশ প্রতিনিধি আমীর খসরু প্রমুখ।
অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন লিভার সার্জন মোহাম্মদ আলী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব) বাহার হোসেইন, লিভার বিশেষজ্ঞ মোতাহার হোসেন। গবেষকদের মধ্যে ছিলেন সহযোগী অধ্যাপক গোলাম আজম, সহযোগী অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা।