নবজাতকের সুরক্ষায় পথ দেখিয়েছে বাংলাদেশ: সেইভ দ্য চিলড্রেন

সেইভ দ্য চিলড্রেনের ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেকটর ইশতিয়াক মান্নান বলেছেন, নবজাতকের সুরক্ষা সংক্রান্ত নীতি পরিবর্তনে বিশ্বকে পথ দেখিয়েছে বাংলাদেশ।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 April 2018, 04:46 PM
Updated : 25 April 2018, 08:59 PM

একে ‘বড় সাফল্য’ হিসেবে অভিহিত করেছেন তিনি, যদিও নবজাতকের মৃত্যুর দিক দিয়ে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় থাকা ১০টি দেশের মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ।

এ বিষয়ে ইশতিয়াক মান্নান বলছেন, বিপুল জনসংখ্যার কারণে বাংলাদেশ ওই তালিকার নিচে রয়েছে।

“কিন্তু আপনি যদি মৃত্যু কমানোর হার বিবেচনা করেন তাহলে তা অনেক দেশের চেয়ে বেশি।”

বাংলাদেশে কীভাবে প্রতিটি নবজাতককে বাঁচানো যায় সে বিষয়ে এক গোলটেবিল আলোচনায় সঞ্চালক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদীর প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন তিনি।

‘প্রতিটি নবজাতককে বাঁচাতে হবে’ শীর্ষক প্রচারাভিযান পরিচালনাকারী ইউনিসেফকে নিয়ে বুধবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে এই আলোচনার আয়োজন করে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।

 

গোলটেবিল বৈঠকে উপস্থিত স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম আগামী জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারে শিশু মৃত্যুর হার শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনার অঙ্গীকার যুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দেন।

আলোচনায় জাতিসংঘ ও সরকারি কর্মকর্তারা নবজাতকের মৃত্যু কমিয়ে আনতে বাংলাদেশ সরকারের সক্ষমতার প্রশংসা করলে সঞ্চালক খালিদী চিকিৎসক মান্নানকে প্রশ্ন করেন, “তাহলে কি আমাদের পরিতৃপ্ত হওয়া উচিত?”

জবাবে তিনি বলেন, “অবশ্যই আমরা এই সফলতা উদযাপন করব।”

এক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিশ্বে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

“ভারত আমাদের অনেক নিচে। তাদের কমানোর হার (নবজাতকের মৃত্যু) আমাদের চেয়ে অনেক কম। এই হার বাংলাদেশে বাড়ছে,” বলেন ইশতিয়াক মান্নান।

তার ভাষ্য মতে, বাংলাদেশে নবজাতকের মৃত্যু কমানোর হার বিশ্বের গড় হারের চেয়ে বেশি।

তিনি বলেন, গত দশকে বাংলাদেশে দুটি বিখ্যাত গবেষণা হয়েছে। দুটো গবেষণার ফলই বৈশ্বিক নীতিতে প্রভাব রেখেছে।

“বাংলাদেশে গবেষণার ফল বৈশ্বিক নীতি পরিবর্তন করেছে। এটা বড় সাফল্য।”

‘প্রতিটি নবজাতককে বাঁচাতে হবে’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় (বাঁ থেকে ঘড়ির কাঁটার দিকে) বাংলাদেশে ইউনিসেফের স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান মায়া ভ্যানডেনেন্ট, সেইভ দ্য চিলড্রেন এর ডেপুটি কান্ট্রি ডিরেকটর ইশতিয়াক মান্নান, ইউনিসেফ বাংলাদেশের ডেপুটি রিপ্রেজেন্টেটিভ সীমা সেনগুপ্ত, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কাজী মোস্তফা সারোয়ার, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক আবুল কালাম আজাদ, ইউএনএফপিএ-এর বাংলাদেশ প্রতিনিধি অশা তরকেলসন, বাংলাদেশ পেডিয়াট্রিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ ও ইউনিসেফ বাংলাদেশের স্বাস্থ্য বিভাগের ব্যবস্থাপক মো. জিয়াউল মতিন।

তবে এক্ষেত্রে বাংলাদেশ দৌড়ের শেষ ধাপে থাকায় সতর্ক করেছেন ইশতিয়াক মান্নান। ১৯৯০ সালে যেখানে বাংলাদেশে দুই লাখ ৪১ হাজার নবজাতকের মৃত্যু হত, সেখানে ২০১৬ সালে তা কমে ৬২ হাজারে এসেছে। তবে এখনও প্রতিদিন ১৭০টি নবজাতকের মৃত্যু হচ্ছে জীবনের প্রথম মাস পূরণ করার আগেই।

অপরিণত অবস্থায় জন্ম, জন্মের সময় শ্বাস নিতে না পারা এবং জীবাণু সংক্রমণে জন্মের প্রথম দিনেই অনেক শিশুর মৃত্যু হয়। সময়োচিত পদক্ষেপে এই শিশুদের ৮৮ শতাংশেরই মৃত্যু এড়ানো সম্ভব। ১০ টাকা থেকে  ৫০০ টাকা মূল্যের সরঞ্জাম ব্যবহারের সুযোগ নিশ্চিত করা গেলে এসব শিশুর জীবন বাঁচানো সম্ভব বলে বৈশ্বিক বিভিন্ন গবেষণায় বলা হয়েছে।

যাত্রাপথের শেষ ধাপে গতানুগতিক ধারার কাজে ফল আসবে না বলে সতর্ক করেছেন ডা. ইশতিয়াক মান্নান।

বাংলাদেশে স্বাস্থ্যখাতের নতুন কর্মসূচিতে (২০১৭-২০২২ মেয়াদি) প্রথমবারের মতো জাতীয়ভাবে নিউবর্ন হেলথ প্রোগ্রাম নেওয়া হয়েছে, যাতে নবজাতকের সেবার মানোন্নয়নের পাশাপাশি উন্নয়ন অংশীদারদের সহযোগিতায় চলমান কর্মসূচিগুলো থেকে পরবর্তী করণীয় সম্পর্কে ধারণা নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।