‘হারিয়ে যাওয়া’ ডিপথেরিয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্পে

কয়েক দশক আগে বাংলাদেশ থেকে নির্মূল হওয়া ডিপথেরিয়া কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবিরে ছড়িয়ে পড়েছে।

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদকনূরুল ইসলাম হাসিববিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Dec 2017, 04:20 PM
Updated : 6 Dec 2017, 04:30 PM

ব্যাকটেরিয়াঘটিত এই সংক্রামক রোগের উপসর্গের ভিত্তিতে চিকিৎসা শুরু করার কথা জানিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। সরকারের রোগ পর্যব্ক্ষেণকারী সংস্থা আইইডিসিআর ইতোমধ্যে ওই এলাকায় প্রতিনিধি পাঠিয়েছে।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর দমন-পীড়নের মুখে গত ২৫ অগাস্ট থেকে সোয়া ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। মিয়ানমারে দশকের পর দশক নাগরিক অধিকার বঞ্চিত রোহিঙ্গারা মৌলিক স্বাস্থ্য সেবা থেকেও বঞ্চিত হয়েছে।

এখন পর্যন্ত ৭০ জনের মতো ডিপথেরিয়া রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন বলে বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রগুলোর প্রধান সমন্বয়ক সিরাজুল হক খান জানিয়েছেন।

তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এই রোগ ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে ইতোমধ্যে পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন তারা।

পরীক্ষায় ডিপথেরিয়া ধরা পড়া অন্তত পাঁচজনের মৃত্যুর কথা নিশ্চিত করেছেন কক্সবাজারের একজন কর্মকর্তা।  

সংক্রামক ব্যধি ডিপথেরিয়া আক্রান্তের হাঁচি, কাশির মাধ্যমে খুব দ্রুত অন্যের শরীরে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

আক্রান্তের গলার পিছন দিকে সরু পর্দা তৈরি হয়। এতে শ্বাসকষ্ট, হৃদযন্ত্রের সমস্যা, পক্ষাঘাত, এমনকি মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।

টিকা দানের মাধ্যমে এ রোগের চিকিৎসা ও প্রতিরোধ করা যায়।

আইইডিসিআর’র পরিচালক অধ্যাপক মীরজাদি সাবরিনা ফ্লোরা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ক্লিনিক্যাল পরীক্ষায় ধরা পড়া ডিপথেরিয়া রোগীর নমুনা নিয়ে আবার ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে দেখবেন তারা।

“তবে ক্লিনিক্যাল পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে ইতোমধ্যে আমরা চিকিৎসা ও প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নিয়েছি।”

এই দফায় সোয়া ছয় লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে, যাদের মধ্যে নারী ও শিশুই বেশি

আইইডিসিআর’র সমন্বয়কদের একজন ডা. মুশতাক হোসেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, এই সমস্যা মোকাবেলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইউনিসেফ, এমএসএফ, আইইডিসিআর ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একসঙ্গে কাজ করছে।

“আমরা গণ টিকাদানে যাব”

টিকাদানের মাধ্যমে এই রোগ নির্মূল করেছে বাংলাদেশ। এক বছরের মধ্যেই শিশুদের এই টিকা দেওয়া হয়।

তবে রোহিঙ্গাদের মধ্যে এই রোগের প্রাদুর্ভাবে নতুন করে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে রোগটি সংক্রমণের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

নতুন চিকিৎসকরাও ডিপথেরিয়ার সঙ্গে পরিচিত নন।

সাবেক সচিব সিরাজুল হক খানও এই চ্যালেঞ্জ স্বীকার করছেন।

তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক স্বাস্থ্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান মেডিসিনস স্যানস ফ্রনটিয়ার্স (এমএসএফ) ডিপথেরিয়ার ওই সব রোগী শনাক্ত করে সেখানে তাদের তৈরি করা অস্থায়ী হাসপাতালে চিকিৎসা দিচ্ছে।

তিনি বলেন, সমস্যা মোকাবেলায় সরকার তিন ধাপের পদক্ষেপ নিচ্ছে- আক্রান্তের সংখ্যা বের করা, আক্রান্তদের ব্যবস্থাপনা এবং টিকাদানের মাধ্যমে প্রতিরোধ, যাতে নতুন কেউ আক্রান্ত না হয়।

“এই রোগ বাংলাদেশ থেকে নির্মূল হয়েছিল।  তাই আমাদের অনেক চিকিৎসক এই রোগের উপসর্গের সঙ্গে পরিচিত নয় বলে আমি জানতে পেরেছি। সে কারণে এটা একটা নতুন চ্যালেঞ্জ।”

ডিপথেরিয়া রোগীর সংখ্যা বাড়তে থাকলে তাদের আলাদা করে রাখতে উখিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে একটি কেন্দ্র খোলার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের।

রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আসার পর ইতোমধ্যে তাদের মাঝে কলেরা, পোলিও ও হামের টিকা দেওয়া হয়েছে।