শনিবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে নিজের গল্প জীবনের শুনিয়ে অটিস্টিক শিশুদের অভিভাকদের উদ্বুদ্ধ করেন তিনি। গুরুত্ব আরোপ করেন অটিজম নিয়ে মানসিকতার পরিবর্তনে।
অটিজম বিষয়ক জাতীয় উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারপারসন সায়মা ওয়াজেদ হোসেন প্রতিষ্ঠিত সূচনা ফাউন্ডেশন অভিভাবকদের সঙ্গে স্টিফেন শোরের এই মতবিনিময়ের আয়োজন করে। এটি ছিল ঢাকায় শোরের দ্বিতীয় মতবিনিময় অনুষ্ঠান।
গত বছর একই ধরনের এক আয়োজনে অটিস্টিক সন্তানদের ভেতরের প্রাণশক্তি জাগিয়ে তুলতে অভিভাকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন তিনি।
“আমি খুব উপকৃত হয়েছিল,” ওই মতবিনিময়ের কথা স্মরণ করে বলেন একটি স্পেশাল স্কুলের শিক্ষক রাবেয়া বশরী।
তিনি বলেন, “আমি এখন আমাদের শিশুদের অনুপ্রাণিত করতে পারি। এখন তাদের সামনে একজন রোল মডেল আছেন। আগামীকাল আমি আবার তাদের বলব যে, তার (শোর) সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে।”
“এরপর পরীক্ষা-নিরীক্ষায় চলে যায় এক বছর,” বলেন ৫৫ বছর বয়সী এই অধ্যাপক।
তিনি বলেন, শৈশবে তার ইচ্ছেমতো সব কিছু করতে দিতেন বাবা-মা। অটিজম ধরা পড়ার পর চিকিৎসকরা তাকে বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানে নিতে চাইলেও বাবা-মা তাতে রাজি হননি।
তারা ঘরেই তার পরিচর্যা করেন, যাকে এখন তিনি বলছেন ‘ইনটেনসিভ হোম-বেইজড আর্লি ইন্টারভেনশন’। এর মধ্যে রয়েছে সঙ্গীত, চলাচল, কথা বলা ও অনুকরণ করা।
“প্রথম তারা (বাবা-মা) আমাকে তাদের অনুকরণ করতে বলল, কিন্তু তাতে কাজ হয়নি। এরপর তারা আমাকে অনুকরণ করা শুরু করে এবং তখন কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমিও তাদের অনুকরণ করতে লাগলাম।
“তাই কাজ করার আগে আপনাকে আস্থার সম্পর্ক তৈরি করতে হবে এবং এরপর আপনি সন্তানকে শেখাতে পারবেন।”
এভাবে চার বছর পার করার স্বাভাবিকভাবে কথা বলতে পারেন বলে জানান স্টিফেন শোর।
তিনি বলেন, “এভাবে আমরা অটিস্টিকদের সফল হওয়ার সুযোগ তৈরি করতে পারি। অটিজম সম্পন্নদের বোঝার মাধ্যমে আমরা তাদের জন্য সাফল্যের দুয়ার খুলে দিতে পারি।”
চিন্তার ধরনে পরিবর্তন আনার কথা বলেছেন স্টিফেন শোর, যেমন ‘শিক্ষণ প্রতিবন্ধকতার’ বদলে ‘শিক্ষণে সমস্যা’ ব্যবহারের কথা বলেছেন তিনি।
“প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহপাঠীদের সঙ্গে আমার কঠিন সময় পার করতে হয়েছে, কারণ আমরা একে অন্যকে বুঝতাম না। অনেকের কাছে মাধ্যমিক স্কুল কঠিন মনে হতে পারে, কিন্তু আমার জন্য সেটা তুলনামূলক ভালো ছিল। কারণ সে সময় আমরা অনেক কিছু করতে পারতাম, ক্লাবে যেতাম। সঙ্গীতে আগ্রহ ছিল বলে আমি একটা ব্যান্ড দলে যোগ দিয়েছিলাম। সেখানে আমি ঘণ্টার পর ঘণ্টা বাদ্যযন্ত্র বাজিয়ে কাটিয়ে দিতাম।”
স্টিফেন শোর যাকে বিয়ে করেন তার সঙ্গে দেখা হয়েছিল কলেজে, সেখানেই অনেক বন্ধু পেয়েছিলেন তিনি। এখন ২৭ বছর চলছে তাদের দাম্পত্য জীবনের। শোরকে নিয়ে ‘বিয়ন্ড দ্য ওয়াল’ শিরোনামে একটি বই লিখেছেন তার স্ত্রী। বইটি বাংলায় প্রকাশ করার পরিকল্পনা করছেন তিনি।
শোর নিজেও লেখালেখি করেন। কীভাবে জীবনে সফল হওয়া যায়, সে মন্ত্রণায়ই উঠে আসে তার লেখায়।