বিটলসের শেষ গানটি আসছে এআই’র সহায়তায়

কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তার সাহায্য নিয়ে নিজের স্বপ্নটি বাস্তবে রূপ দিতে পারলেও এআইয়ের অন্যান্য ব্যবহার নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন পল ম্যাকার্টনি।

গ্লিটজ ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 June 2023, 05:33 PM
Updated : 13 June 2023, 05:33 PM

কিংবদন্তি ব্রিটিশ ব্যান্ড ‘বিটলস’র ‘সর্বশেষ’ গানটি রেকর্ড হওয়ার কথা জানিয়েছেন দলের সদস্য পল ম্যাকার্টনি; আর এই কাজে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্য নিয়েছেন তিনি।

মঙ্গলবার বিবিসি অনলাইনের প্রতিবেদনে জানানো হয়, বিবিসি রেডিও ফোরের টুডে অনুষ্ঠানে এক সাক্ষাৎকারে পল ম্যাকার্টনি বলেছেন, এই গানটির জন্য তিনি প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে বিটলসের আরেক সদস্য প্রয়াত জন লেননের কণ্ঠ আলাদা করেছেন।

একটি পুরানো ‘ডেমো’ বা প্রস্তুতিমূলক রেকর্ড থেকে জন লেননের কণ্ঠস্বর আলাদা করা হয়েছে, যাতে এই গানটি শেষ করা যায়।

সাক্ষাৎকারে স্যার পল বলেন, “আমরা সদ্যই কাজটি শেষ করেছি এবং এ বছরই সেটা প্রকাশ করা হবে।”

বিবিসি বলছে, পল ম্যাকার্টনি গানের নাম প্রকাশ না করলেও ধারণা করা হচ্ছে এটা সম্ভবত ১৯৭৮ সালে তৈরি করা লেননের একটি ‘কম্পোজিশন’, যা ‘নাও অ্যান্ড দেন’ নামে পরিচিত।

১৯৯৫ সালেই এই কম্পোজিশনকে বিটলসের একটি সম্ভাব্য ‘পুনঃএকত্রীকরণ গান’ হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছিল, যেহেতু এই দলের সদস্যরা তাদের ক্যারিয়ারজুড়ে গাওয়া গানগুলো নিয়ে অ্যানথোলজি সিরিজ একত্রিত করছিলেন।

স্যার পল এর এক বছর আগে লেননের বিধবা স্ত্রী ইয়োকো ওনোর কাছ থেকে এই ডেমো রেকর্ডটি পেয়েছিলেন। ওই ক্যাসেটের লেবেলে লেখা ছিল ‘পলের জন্য’ এবং ডেমো গানগুলো রেকর্ড করা হয়েছিল ১৯৮০ সালে লেনন মারা যাওয়ার কিছু দিন আগে।

জন লেনন নিজের নিউ ইয়র্কের অ্যাপার্টমেন্টে একটি বুমবক্সে একটি পিয়ানো ব্যবহার করে গানগুলো ক্যাসেটে রেকর্ড করেছিলেন।

পল ম্যাকার্টনি বন্ধুপত্নী ইউকো ওনোর কাছ থেকে ক্যাসেটটি পাওয়ার পর প্রযোজক জেফ লিন সেখান থেকে দুটো গান আলাদা করে প্রকাশের জন্য প্রস্তুত করেন ১৯৯৫ ও ১৯৯৬ সালে - ‘ফ্রি অ্যাজ আ বার্ড’ ও ‘রিয়েল লাভ’। যা ২৫ বছর পর প্রথম বিটলসের নতুন গান হিসেবে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল।

ওই সময়ই ‘নাও অ্যান্ড দেন’ও রেকর্ড করার চেষ্টা করা হয়েছিল, কিন্তু সংগীত আয়োজনটি জমেনি এবং বাকি সদস্যরাও খুব একটা চেষ্টা করেননি। প্রযোজক লিন স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘হয়ত একটি দিন, আসলে একটি বিকাল, এটা নিয়ে বসা হয়েছিল। গানে একটি কোরাস (সমবেত কণ্ঠ) ছিল কিন্তু গানের কথা একদমই ছিল না। আমরা ‘ব্যাক ট্র্যাক’ করার চেষ্টা করেছি কিন্তু আসলে কাজটি শেষ করা হয়নি।”

পল ম্যাকার্টনি পরে কিউ ম্যাগাজিনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দাবি করেছিলেন, দলের আরেক সদস্য জর্জ হ্যারিসন আসলে এই গানটি নিয়ে কাজ করতে রাজি হচ্ছিলেন না। হ্যারিসন বলেছিলেন, ক্যাসেটে রেকর্ড করা লেননের কণ্ঠের শব্দের মান ‘খুবই বাজে’।

তাছাড়া মূল রেকর্ডটিতে কারিগরি ত্রুটিও ছিল, যার মধ্যে একটি ছিল ইলেকট্রিক সার্কিটের একটি ধারাবাহিক শব্দ, যা লেননের অ্যাপার্টমেন্ট থেকে আসছিল।

পেছনের অনাকাঙ্ক্ষিত শব্দগুলো বাদ দিয়ে ২০০৯ সালে ওই ডেমোর একটি নতুন সংস্করণ প্রকাশ করা হয় একটি সিডিতে। তবে ভক্তদের আশঙ্কা ছিল যে এই রেকর্ডটি ১৯৯৫ সালে পাওয়া যায়নি, যা থেকে এই ধারণা করা যায় যে লেননের মৃত্যুর পর তার অ্যাপার্টমেন্ট থেকে রেকর্ডটি চুরি করা হয়েছে।

পরের বছরগুলোতে স্যার পল কয়েকবারই এই গানটি শেষ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। ২০১২ সালে বিবিসি ফোরের একটি তথ্যচিত্রেও তাকে বলতে শোনা গেছে, “আমি জেফের (লিন) সঙ্গে বসব এবং এটা শেষ করব।”

এখন দেখা যাচ্ছে, প্রযুক্তির অগ্রগতি স্যার পলের ইচ্ছাকে বাস্তবে রূপ দিতে সাহায্য করেছে।

মাহেন্দ্রক্ষণটি আসে পিটার জ্যাকসনের ‘গেট ব্যাক’ তথ্যচিত্র নির্মাণের সময়, যেখানে সংলাপ সম্পাদক এমিল ডে লা রে কম্পিউটারকে বিটলসের কণ্ঠ শনাক্ত করার জন্য প্রশিক্ষিত করেন এবং ওই পুরানো রেকর্ড থেকে জন লেননের কণ্ঠ আলাদা করে তুলে আনতে সক্ষম হন।

একটি প্রক্রিয়া ব্যবহার করে স্যার পলের সঙ্গে জন লেননের দ্বৈত কণ্ঠের অংশটুকুও প্রস্তুত করা হয়েছে।

কৃত্রিম বৃদ্ধিমত্তার সাহায্য নিয়ে এভাবে নিজের স্বপ্নটি বাস্তবে রূপ দিতে পারলেও এআইয়ের অন্যান্য ব্যবহার নিয়ে উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন পল ম্যাকার্টনি।

তিনি বলেন, “আমি খুব একটা ইন্টারনেট ব্যবহার করি না [কিন্তু] অনেকেই আমাকে বলেন, ‘ওহ, জানেন, একটি ট্র্যাক পাওয়া গেছে যেখানে জন আমার একটি গান গাইছে’ এবং এটা শুধু এআইয়ের সৃষ্টি। এটা কিছুটা ভয়ের আবার উত্তেজনাকরও, কারণ এটাই ভবিষ্যৎ। আমাদের শুধু অপেক্ষা করতে হবে যে এটা কোন দিকে যায়।”

যুক্তরাজ্যের ন্যাশনাল পোরট্রেইট গ্যালারিতে একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনী ও নিজের লেখা নতুন একটি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে রেডিও ফোরকে এই সাক্ষাৎকারটি দেন পল ম্যাকার্টনি। ‘আইজ অব দ্য স্টর্ম’ শিরোনামের এই প্রকল্পে ১৯৬৩ সালের ডিসেম্বর থেকে ১৯৬৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে নিজের তোলা আলোকচিত্রের প্রদর্শনী করছেন তিনি। ওই সময়টাতেই বিটলস ব্যান্ড বিশ্বজুড়ে উন্মাদনা সৃষ্টি করেছিল।