চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য যৌথভাবে আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন অভিনেত্রী ডলি জহুর ও অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন।
Published : 09 Mar 2023, 07:28 PM
জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে ২০২১ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের জন্য মনোনীতদের হাতে পুরস্কার তুলে দিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ২৭টি ক্যাটাগরিতে বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। মহামারীর পর এবারই প্রথম সশরীরে উপস্থিত হয়ে পুরস্কার তুলে দিলেন প্রধানমন্ত্রী।
চলচ্চিত্রে অবদানের জন্য যৌথভাবে আজীবন সম্মাননা পেয়েছেন অভিনেত্রী ডলি জহুর ও অভিনেতা ইলিয়াস কাঞ্চন।
সম্মাননা পাওয়ার অনুভূতি জানিয়ে অভিনেত্রী ডলি জহুর অনুষ্ঠানে বলেন, "এই সুন্দর অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আজীবন সম্মাননা পেয়ে নিজেকে ধন্য মনে করছি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জুরি সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই।"
বিদেশে অবস্থান করার কারণে ইলিয়াস কাঞ্চন অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেননি। তার পক্ষে সম্মাননা স্মারক ভাগ্নি জান্নাতি নূর।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদের সভাপতিত্বে পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন তথ্য ও সম্প্রচার সচিব মো. হুমায়ুন কবির খন্দকার। বিশেষ অতিথি হিসেবে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি হাসানুল হক ইনু এবং পুরস্কার প্রাপ্তদের পক্ষে আজীবন সম্মাননা প্রাপ্ত অভিনেত্রী ডলি জহুর বক্তব্য দেন।
হাসানুল হক ইনু বলেন, "বাঙালিত্বকে ধারণ করে আমাদের নিজস্বতা বজায় রেখে আধুনিক চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে হবে। বঙ্গবন্ধু যেমন বলতেন- আমি মানুষ, আমি বাঙালি, আমি মুসলমান। এভাবেই মনুষ্যত্ব, জাতীয়তা এবং ধর্ম পরিচয়কে সাজাতে হবে।"
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, "আকাশ সংস্কৃতির কারণে সারা পৃথিবীতে চলচ্চিত্র শিল্প এখন হুমকির মুখে। তবুও আমাদের চলচ্চিত্র ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে বিশ্ব বাজারে আমাদের চলচ্চিত্র প্রশংসিত হচ্ছে। কলকাতায় আমরা বাংলাদেশের চলচ্চিত্র নিয়ে উৎসব করেছি। সেখানে আমাদের 'হাওয়া' সিনেমা দেখার জন্য এক কিলোমিটার দীর্ঘ লাইন হয়েছে।"
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিক নির্দেশনায় দেশের চলচ্চিত্র শিল্প এগিয়ে যাচ্ছে মন্তব্য করে হাছান মাহমুদ বলেন, "অনেক বন্ধ হল চালু হচ্ছে, নতুন সিনেপ্লেক্স হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী এক হাজার কোটি টাকা ঋণের ব্যবস্থা করেছেন চলচ্চিত্র শিল্পকে বিকশিত করার জন্য৷"
মহামারী পরিস্থিতি না হলে আরো কয়েকশ সিনেমা হল এতদিনে চালু হয়ে যেত বলে মন্তব্য করেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী।
হাছান মাহমুদ বলেন, "মহামারীর পর এবার প্রধানমন্ত্রী নিজে উপস্থিত হয়ে এই পুরস্কার তুলে দিলেন। ২০২০ সালেও আমরা এই পুরস্কার প্রদান করেছি। ওই বছর সবচেয়ে কম সংখ্যক চলচ্চিত্র মুক্তি পেয়েছিল। অনেকেই বলেছিলেন, পুরস্কার স্থগিত রাখতে। কিন্তু আমরা প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে পুরস্কার প্রদান করেছি। তবে এবার প্রধানমন্ত্রী সশরীরে উপস্থিত থাকায় ভিন্ন মাত্রা এসেছে।"
পুরস্কার পেলেন যারা
‘লাল মোরগের ঝুঁটি’ ও ‘নোনাজলের কাব্য’ এবার যৌথভাবে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের পুরস্কার পেয়েছে।
‘ধর’ শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র, কাওসার চৌধুরীর বধ্যভূমিতে একদিন শ্রেষ্ঠ প্রামাণ্য চলচ্চিত্রের পুরস্কার পেয়েছে।
জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের শৈশব ও কৈশোরের বিভিন্ন উল্লেখযোগ্য ঘটনা নিয়ে চিত্রায়িত ‘টুঙ্গিপাড়ার মিয়াভাই’ চলচ্চিত্রটি মুজিববর্ষ ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে বিশেষ সম্মাননা পেয়েছে।
নোনাজলের কাব্য সিনেমার জন্য রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত পেয়েছেন শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালকের পুরস্কার।
যৌথভাবে মো. সিয়াম আহমেদ (মৃধা বনাম মৃধা) ও মীর সাব্বির মাহমুদ (রাতজাগা ফুল) শ্রেষ্ঠ অভিনেতার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন।
শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর পুরস্কার পেয়েছেন যৌথভাবে আজমেরী হক বাঁধন (রেহানা মরিয়ম নূর) ও তাসনোভা তামান্না (নোনাজলের কাব্য)।
এম ফজলুর রহমান বাবু (নোনাজলের কাব্য) পার্শ্ব চরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেতা, শম্পা রেজা (পদ্মপুরাণ) পার্শ্ব চরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী; মো. আবদুল মান্নান জয়রাজ (লাল মোরগের ঝুঁটি) খল চরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছেন।
কৌতুক চরিত্রে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার পুরস্কার পেয়েছেন প্রভাষ কুমার ভট্টাচার্য মিলন (মৃধা বনাম মৃধা)। আফিয়া তাবাসসুম (রেহানা মরিয়ম নূর) শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পীর পুরস্কার পেয়েছে। শিশুশিল্পী শাখায় বিশেষ পুরস্কার পেয়েছে জান্নাতুল মাওয়া ঝিলিক (যা হারিয়ে যায়)।
সুজেয় শ্যাম (যৈবতী কন্যার মন) শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক, কে এম. আবদুল্লাহ-আল-মুর্তজা মুহিন (শোনাতে এসেছি আজ-পদ্মপুরাণ) শ্রেষ্ঠ গায়ক, চন্দনা মজুমদার (দেখলে ছবি পাগল হবি-পদ্মপুরাণ) শ্রেষ্ঠ গায়িকা, প্রয়াত গাজী মাজহারুল আনোয়ার (অন্তরে অন্তর জ্বালা-যৈবতী কন্যার মন) শ্রেষ্ঠ গীতিকার, সুজেয় শ্যাম (অন্তরে অন্তর জ্বালা-যৈবতী কন্যার মন) শ্রেষ্ঠ সুরকারের পুরস্কার পেয়েছেন।
রেজওয়ান শাহরিয়ার সুমিত (নোনাজলের কাব্য) শ্রেষ্ঠ কাহিনীকার, নূরুল আলম আতিক (লাল মোরগের ঝুঁটি) শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার, তৌকীর আহমেদ (স্ফুলিঙ্গ) শ্রেষ্ঠ সংলাপ রচয়িতার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন।
এছাড়া সামির আহমেদ (লাল মোরগের ঝুঁটি) শ্রেষ্ঠ সম্পাদক, শিহাব নূরুন নবী (নোনাজলের কাব্য) শ্রেষ্ঠ শিল্প নির্দেশক হিসেবে পুরস্কার পেয়েছেন।
সৈয়দ কাশেফ শাহবাজি, সুমন কুমার সরকার, মাজহারুল ইসলাম রাজু (লাল মোরগের ঝুঁটি) দলগতভাবে শ্রেষ্ঠ চিত্রগ্রাহকের পুরস্কার পেয়েছেন। শৈব তালুকদার (রেহানা মরিয়ম নূর) শ্রেষ্ঠ শব্দগ্রাহক, ইদিলা কাছরিন ফরিদ (নোনাজলের কাব্য) শ্রেষ্ঠ পোশাক ও সাজসজ্জা এবং দলগতভাবে মো. ফারুখ, মো. ফরহাদ রেজা মিলন (লাল মোরগের ঝুঁটি) পেয়েছেন শ্রেষ্ঠ মেক-আপম্যানের পুরস্কার।
পুরস্কার হিসেবে সবাইকে দেওয়া হয়েছে ১৮ ক্যারেট মানের ১৫ গ্রাম ওজনের স্বর্ণ দিয়ে তৈরি একটি পদক, পদকের একটি রেপ্লিকা ও এককালীন নির্ধারিত পরিমাণ সম্মানী ও সম্মাননাপত্র।
আজীবন সম্মাননার জন্য ৩ লাখ, শ্রেষ্ঠ পূর্ণদের্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রযোজক, শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র পরিচালকের জন্য ২ লাখ ও অন্যান্য ক্ষেত্রে দেয়া হয় ১ লাখ টাকা।
এবারের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার প্রদানের জন্য তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় ১৩ সদস্যের জুরি বোর্ড গঠন করে। ২০২১ সালের মুক্তিপ্রাপ্ত ২১টি পূর্ণদের্ঘ্য, ১৭টি স্বল্পদৈর্ঘ্য ও ৭টি প্রামাণ্য চলচ্চিত্রসহ মোট ৪৫টি চলচ্চিত্র থেকে বাছাই করা হয় এবারের বিজয়ীদের।
তারকা শিল্পীদের মনোমুগ্ধকর পরিবেশনা
পুরস্কার বিতরণের পর দেশের তারকা শিল্পীদের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠানে হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক পরিবেশনা। এতে অংশ নেন অপু বিশ্বাস, নিপুণ, তারিন, বাপ্পি চৌধুরী, জায়েদ খান, ইমন, নীরব, দীঘি, আঁচল, পূজা চেরি, ঐশী, তমা মির্জাসহ ২৬ জন শিল্পী।
'ধনধান্যে পুষ্পে ভরা’, ‘শুধু গান গেয়ে পরিচয়’, ‘হইহই রঙ্গিলা’, ‘পিচ ঢালা এই পথটারে ভালোবেসেছি’, ‘বেদের মেয়ে জোছনা’, ‘কি যাদু করিলা’সহ বাংলা সিনেমার কালজয়ী কিছু গানের সাথে চলচ্চিত্রের তারকা শিল্পীরা নাচের পরিবেশনায় অংশ নেন। গান গেয়ে শোনান শিল্পী পার্থ বড়ুয়া, আঁখি আলমগীর, ইমরান, কোনাল, লিজা সাব্বির, নন্দিতা ও নিশিতা বড়ুয়া।
এছাড়া নৃত্যশিল্পী ও কোরিওগ্রাফার ওয়ার্দা রিহাব এবং তার দলের পরিবেশনায় ছিল দলীয় নৃত্য। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে ছিল তাদের এ পরিবেশনা।
চলচ্চিত্রের দুই তারকা ফেরদৌস আহমেদ ও নুসরাত ফারিয়া সাংস্কৃতিক পরিবেশনার পর্বটি সঞ্চালনা করেন। তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সার্বিক তত্ত্বাবধানে পুরো অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করে বাংলাদেশ টেলিভিশন (বিটিভি)।