“আমি কেমোথেরাপি নিতে চাই না। তাতে যদি আমার মৃত্যু হয়, হবে,” বলেছিলেন সঞ্জয় দত্ত।
Published : 13 Jan 2023, 07:29 PM
ক্যান্সারে ভুগে মা আর স্ত্রীর মৃত্যু দেখতে হয়েছে তাকে; সঞ্জয় দত্তের নিজের যখন সেই একই রোগ ধরা পড়ল, কেমন লেগেছিল বলিউডের এই মুন্না ভাইয়ের?
২০২০ সালে যখন ফুসফুসের ক্যান্সার শনাক্ত হল, ভারতের জনপ্রিয় এই অভিনেতা তখন শামশেরা সিনেমার শুটিংয়ে ব্যস্ত। খবরটা তাকে তখন ঠিকভাবে জানানো হয়নি, কারণ পরিবারের আর কেউ তখন তার পাশে ছিলেন না।
ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সেই দফা ঠিকই জিতে যান সঞ্জয়। ব্যায়ামপুষ্ট পেশির বাহারের কারণে এখনও তিনি সংবাদের শিরোনাম হন।
হিন্দুস্থান টাইমস জানাচ্ছে, ক্যান্সারের চিকিৎসা চলার মধ্যেই কেজিএফ ২ সিনেমার শুটিং করেন সঞ্জয়। সেখানে তাকে বড় ধরনের কিছু অ্যাকশন দৃশ্যে অভিনয় করতে হয়েছে, নিজেকে ফিট দেখাতে শরীরচর্চা করে গেছেন নিয়মিত।
প্রথম যখন ক্যান্সার শনাক্ত হওয়ার কথা তাকে জানানো হল, সেই সময়ের অনুভূতির কথা সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন সঞ্জয় দত্ত। ক্যান্সারের তৃতীয় ধাপে থেকেও কেমোথেরাপি নিতে রাজি হচ্ছিলেন না তিনি।
টাইমস অফ ইন্ডিয়াকে দেওয়া ওই সাক্ষাৎকারে দুর্বিষহ সেই দিনগুলোর কথা স্মরণ করে সঞ্জয় বলেন, “পিঠে সারাক্ষণ ব্যথা থাকত। গরম পানির বোতল চেপে ধরে আর ব্যথানাশক গিলে গিলে দিন পার করছিলাম্। হঠাৎ একদিন দেখি শ্বাস নিতে পারছি না। তারপর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হল আমাকে।
“ক্যান্সার ধরা পড়লেও আমার কাছে তা গোপন রাখা হয়েছিল। আমার স্ত্রী, আমার বোন বা পরিবারের কেউ তখন আমার সাথে ছিলেন না। আমি ছিলাম পুরো একা, হঠাৎ একজন লোক এসে আমাকে জানাল, ‘তোমার ক্যান্সার হয়েছে’।”
এ অভিনেতা সেসময় কেমোথেরাপি নেওয়ার চেয়ে মৃত্যুকেই বেছে নিতে চেয়েছিলেন।
সঞ্জয় জানান, স্ত্রী মান্যতা দত্ত সেসময় যমজ সন্তান ইকরা ও শাহরানকে নিয়ে দুবাইয়ে। তাই বোন প্রিয়া দত্তই ছুটে এলেন।
“আপনি যখন এরকম কিছু শুনবেন, প্রথমেই ফ্ল্যাশব্যাকের মত আপনার অতীতের সব গল্প আপনার চোখের সামনে ভেসে যাবে। আমারা পরিবারে ক্যান্সারের ইতিহাস পুরনো। আমারা মা মারা গেছেন প্যানক্রিয়াটিক ক্যান্সারে। আমার স্ত্রী রিচা শর্মার মৃত্যু হয়েছে মস্তিষ্কের ক্যান্সারে।
“ফলে প্রথম যে কথাটা আমি বলেছিলাম, আমি কেমোথেরাপি নিতে চাই না। তাতে যদি আমার মৃত্যু হয়, হবে। কিন্তু কোনো চিকিৎসা চাই না আমি।”
এরপর দুবাই থেকে দেশে ফেরেন স্ত্রী মান্যতা দত্ত। প্রিয়া আর নম্রতা মিলে চিকিৎসা নিতে রাজি করান সঞ্জয়কে।
অভিনয় শিল্পী, রাজনীতিবিদ সুনিল দত্ত ও নার্গিসের সন্তান সঞ্জয় দত্ত।১৯৮১ সালের ৩ মে তার মা মারা যান ক্যান্সারে ভুগে। আর ব্রেন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে প্রথম স্ত্রী রিচা শর্মা মারা যান ১৯৯৬ সালে। তাদের সন্তান ত্রিশালা দত্ত রয়েছেন নিউ ইয়র্কে।
তারকা দম্পতির ঘরে জন্ম, তারপর মাদকে উন্মাতাল, নারীসঙ্গে বেসামাল, দাগি আসামি হয়ে কারাগারের অন্তরাল- সঞ্জয় দত্তের নিজের জীবনটাও যেন এক সিনেমা।
অসংখ্য নারীর সঙ্গে প্রেম, তিনবার বিয়ের পর এখন জীবনে অনেটাই থিতু সঞ্জয়। ক্যান্সার জয়ের পর স্ত্রী মান্যতা ও দুই ছেলে-মেয়েকে নিয়ে সংসারেই ব্যস্ত তিনি।
গত শতকের আশির দশক থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত পৌনে দুইশর বেশি সিনেমা তিনি করেছেন। তবে ক্যারিয়ারে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন আশি ও নব্বইয়ের দশকে।
জীবদ্দশায় ‘বায়োপিক’ নির্মাণ হওয়া একমাত্র বলিউড অভিনেতা সঞ্জয় দত্ত। ‘সঞ্জু’ ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে অন্যতম ব্যবসাসফল একটি সিনেমা।
দীর্ঘ ক্যারিয়ারে সঞ্জয়ের অর্জন দুটি ফিল্মফেয়ার, দুটি স্টার স্ক্রিন এবং দুটি আইফা অ্যাওয়ার্ড। পেয়েছেন একটি গ্লোবাল ইন্ডিয়া ফিল্ম অ্যাওয়ার্ড, তিনটি স্টারডাস্ট অ্যাওয়ার্ড, দুটি জি সিনে অ্যাওয়ার্ড এবং একটি বেঙ্গল ফিল্ম জার্নালিস্টস অ্যাসোসিয়েশন অ্যাওয়ার্ডসহ আরও পুরস্কার।