হল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, পুরনো ওই ভবন ভেঙে সেখানে নির্মাণ করা হবে বহুতল বাণিজ্যিক ভবন বিপণি বিতান, নাম হবে ‘রাজমনি টাওয়ার’।
১৯৮২ সালের দিকে রাজধানীর কাকরাইল এলাকায় ২৪ কাঠা জমির উপর প্রেক্ষাগৃহ দুটি নির্মাণ করেন মুক্তিযোদ্ধা আহসানউল্লাহ। গত কয়েকবছর ধরে প্রেক্ষাগৃহগুলোর দেখভালের দায়িত্বে আছেন তার ভাতিজা মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে হলগুলোর ভাঙার দায়িত্ব একটি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়েছে। আগামী বৃহস্পতিবার থেকে তারা কাজ শুরু করবে। ভাঙা শেষে মাসখানেক পর সেখানে ‘রাজমনি টাওয়ার’ নির্মাণের কাজ শুরু হবে।
দিনের পর দিন লোকসানের মুখে বাধ্য হয়ে প্রেক্ষাগৃহগুলো ভেঙে বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানান শহীদুল্লাহ।
“চার বছর ধরেই আমরা লোকসান গুনছি। সিনেমা চালানোর পর লগ্নি করা টাকাও তুলতে পারি না। দর্শকরা আগের মতো আর হলেও আসে না। প্রেক্ষাগৃহের ৫৫ জন কর্মীর বেতনভাতা দিতেও হিমশিম খেতে হচ্ছে। বাধ্য হয়ে হলগুলো ভেঙে ফেলতে হচ্ছে।”
রাজমনি আর রাজিয়ায় শেষ শো চলে শুক্রবার। পরদিন প্রেক্ষাগৃহ দুটি একসঙ্গে বন্ধ ঘোষণা করা হয়। রাজমনিতে শেষ চলছিল শাকিব খান অভিনীত ‘নোলক’। আর রাজিয়ায় দশ বছরের পুরানো একটি চলচ্চিত্র চালানো হচ্ছিল।
বন্ধ ঘোষণার পরপরই প্রেক্ষাগৃহের প্রজেক্টর, সার্ভারসহ অন্যান্য মালামাল সরিয়ে নেওয়া হয় বলে জানান শহীদুল্লাহ।
তিনি বলেন, শাকিব খানের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান এসকে বিগস্ক্রিনের প্রজেক্টর ও সার্ভার ভাড়া নিয়ে তারা হল চলাচ্ছিলেন; শনিবার তাদের প্রজেক্টরসহ অন্যান্য মালামাল বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
নতুন রাজমনি টাওয়ারের বেইজমেন্টে থাকবে গাড়ির রাখার ব্যবস্থা, চারতলা পর্যন্ত থাকবে বিপণি বিতান। আর ১৯ তলা পর্যন্ত অফিস ভাড়া দেওয়া হবে। প্রেক্ষাগৃহের কর্মীদের মার্কেটেই চাকরির ব্যবস্থা করার পরিকল্পনাও জানালেন শহীদুল্লাহ।
“হলগুলো আমরা বাধ্য হয়ে ভাঙছি। দীর্ঘদিন ধরে আমরা এর সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। আগলে রাখার অনেক চেষ্টা করেছি। তথ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কয়েক দফা কথাও বলেছি! আশ্বাস পেলেও কোনো সুরাহা হয়নি।”
হল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রদর্শক সমিতিও প্রেক্ষাগৃগুলোর ভাঙার বিষয়ে অবগত আছে বলে জানান সংগঠনটির উপদেষ্টা মিয়া আলাউদ্দিন।
দেশজুড়ে একের পর এক প্রেক্ষাগৃহ বন্ধের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “কেউ ব্যবসা করতে না পারলে বন্ধ করে দেবে। আমাদের তো করার কিছু নাই।”
সমিতির তথ্য অনুযায়ী, দেশজুড়ে মোট ১ হাজার ৪৩৫টি প্রেক্ষাগৃহের মধ্যে বন্ধ হতে হতে ১৭২টি টিকে ছিল। সেখান থেকে রাজমনি আর রাজিয়াও বাদ পড়ল।
শহীদুল্লাহ জানান, গাজীপুরের কোনাবাড়িতে তার ভাইয়ের আরেকটি প্রেক্ষাগৃহও লোকসানের মুখে বছরখানেক আগে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।