বিক্ষোভে সমর্থন দেওয়ায় দুই ইরানি অভিনেত্রী গ্রেপ্তার

ইরানে চলমান বিক্ষোভে একাত্মতা প্রকাশ করে হিজাব ছাড়াই প্রকাশ্যে এসেছিলেন তারা।

গ্লিটজ প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 21 Nov 2022, 05:28 AM
Updated : 21 Nov 2022, 05:28 AM

ইরানে চলমান সরকারবিরোধী বিক্ষোভে সমর্থন জানানোয় দেশটির প্রথম সারির দুই অভিনেত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা ইরনার বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, সরকারবিরোধী তৎপরতায় যোগসাজশের অভিযোগে রোববার গ্রেপ্তার করা হয় অভিনেত্রী হেঙ্গামেহ গাজিয়ানা এবং কাতায়ুন রিয়াহিকে।

চলমান বিক্ষোভে আন্দোলনকারীদের প্রতি সংহতি জানিয়ে তারা দুজনেই হিজাব ছাড়া প্রকাশ্যে এসেছিলেন।

গাজিয়ানি ও রিয়াহি দুজনেই তাদের অভিনয়ের স্বীকৃতিতে বিভিন্ন সময়ে একাধিক পুরস্কার পেয়েছেন।

গ্রেপ্তার হওয়ার আগে গাজিয়ানি সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখিলেছেন, “যাই ঘটুক না কেন, জেনে রাখুন, বরাবরের মতই আমি ইরানি জনগণের পাশে থাকব।“

ইরানজুড়ে এই বিক্ষোভের সূত্রপাত হয় গত সেপ্টেম্বরে, দেশটির নীতি পুলিশের হেফাজতে এক তরুণীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে।

গত ১৩ সেপ্টেম্বর ইরানের কুর্দিস্তান থেকে রাজধানী তেহরানে আসা ২২ বছর বয়সী মাশা আমিনিকে হিজাব আইন লংঘনের অভিযোগে গ্রেপ্তার করে নীতি পুলিশ। এর তিনদিন পর পুলিশ হেফাজতে মাশার মৃত্যু হয়। মারা যাওয়ার আগে তিনি কোমায় ছিলেন।

অভিযোগ উঠেছে, মাশা আমিনিকে পুলিশ অফিসাররা লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটায় এবং একটি গাড়ির সঙ্গে তার মাথা ঠুকে দেয়। এসব অভিযোগ অস্বীকার করে ইরানি পুলিশ বলেছে, মাশা আমিনির মৃত্যু হয় ‘হার্ট আ্যাটাকে’।

আমিনির মৃত্যুর প্রতিবাদে প্রথমে ইরানের কুর্দি অধ্যুষিত উত্তরপশ্চিমাঞ্চলে বিক্ষোভ শুরু হয়, যা পরে ছড়িয়ে পড়ে দেশজুড়ে। প্রতিবাদে নারীরা রাস্তায় নেমেছেন, কেটে ফেলছেন চুল। সরকারবিরোধী নানা স্লোগান দিয়ে প্রকাশ্যে হিজাব পুড়িয়েছেন।

প্রথমদিকে সেই বিক্ষোভ ছিল কঠোর হিজাবআইনের বিরুদ্ধে, পরে তা সরকারবিরোধী আন্দোলনের রূপ নেয়।

বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার কর্মীদের ভাষ্য, দুই মাসের বেশি সময় ধরে চলা এই বিক্ষোভে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে ৪০০ বিক্ষোভকারীর প্রাণহানি হয়েছে এবং গ্রেপ্তার হয়েছেন ১৬ হাজার ৮০০ জন।

এদিকে কাতার বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া ইরানের জাতীয় ফুটবল দলের অধিনায়ক এহসান হাজসাফি বলেছেন, “আমাদের মেনে নিতে হবে যে আমাদের দেশের পরিস্থিতি এখন ভালো নয় একং আমাদের জনগণও সুখে নেই।” “

ইরানের বক্সিং ফেডারেশনের প্রধান হোসেইন সুরি ঘোষণা করেছেন, বিক্ষোভে যেভাবে দমন-পীড়ন চালানো হচ্ছে, তাতে তিনি স্পেনের টুর্নামেন্ট শেষে আর দেশে ফিরবেন না।

ইরানি নেতারা চলমান বিক্ষোভকে ‘দাঙ্গা’ আখ্যা দিয়ে এসব বিক্ষোভের পেছনে ‘বিদেশি শত্রুদের ইন্ধনকে’ দায়ী করেছেন।

বিবিসি লিখেছে, বিক্ষোভের মধ্যে ‘দাঙ্গায়’ জড়িত থাকার অভিযোগে অন্তত পাঁচজনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে তেহরানের আদালত।

সরকারি ভবনে আগুন দেওয়া, শৃঙ্খলা ভঙ্গ, অপরাধ সংঘটনের মাধ্যমে জাতীয় নিরাপত্তাকে ঝুঁকিতে ফেলার ষড়যন্ত্রের অভিযোগে এই শাস্তি দেওয়া হয়েছে তাদের।