উৎসবের কান্ট্রি ফোকাস ফিলিস্তিনের আটটি স্বল্পদৈর্ঘ্য কাহিনীচিত্র প্রদর্শিত হবে।
Published : 20 Dec 2024, 08:11 PM
বিভক্তি আর দ্বন্দ্বের মধ্যেই ঢাকায় শুরু হলো ‘১৭তম আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য ও মুক্ত চলচ্চিত্র উৎসব’।
শুক্রবার বিকালে শাহবাগের জাতীয় জাদুঘর মিলনায়তনে এই উৎসব উদ্বোধন করেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম।
এবারের স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র উৎসবে ১০১টি দেশের ২৭৬টি চলচ্চিত্র দেখানো হবে করছে বলে জানিয়েছেন আয়োজকরা। থাকছে জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্রও। উৎসব চলবে আগামী ২৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত।
উৎসবটি জুলাই-অগাস্ট গণঅভ্যুত্থানের ‘শহীদের’ প্রতি এবং শিল্পী এস এম সুলতানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে তার স্মৃতির প্রতি উৎসর্গ করা হয়েছে।
এই উৎসবের আয়োজক ‘বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরাম’ বলা হলেও সংগঠনটির আরেক অংশের দাবি, এর সঙ্গে শর্ট ফিল্ম ফোরামের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।
ফোরামের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমাদের সংগঠনের সাধারণ সভায় এবার উৎসবটি স্থগিতের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই উৎসবের সঙ্গে শর্ট ফিল্ম ফোরামের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই।”
এছাড়া ফোরামের উপদেষ্টা ও প্রতিষ্ঠাতা সদস্য তানভীর মোকাম্মেল, মোরশেদুল ইসলাম, মানজারে হাসীন মুরাদের পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতেও উৎসবটি স্থগিতের ঘোষণা আসে।
তবে ফোরামের সভাপতি জহিরুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেছেন, “এই উৎসবের আয়োজক শর্ট ফিল্ম ফোরাম। আমরা সংগঠনের গঠনতন্ত্র মেনেই উৎসব আয়োজন করছি।”
উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম। এছাড়া বক্তব্য রাখেন আলোকচিত্রী নাসির আলী মামুন, উৎসব পরিচালক ইমরান হোসেন কিরমানী, সিটি ব্যাংকের চিফ ইকোনমিস্ট ও কান্ট্রি বিজনেস ম্যানেজার আশানুর রহমান।
নাহিদ ইসলাম বলেন, “আমরা একটা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দায়িত্ব নিয়েছি। চলচ্চিত্র জগতে অনেক দিন ধরে স্থবিরতা আছে, আমরা চেষ্টা করছি সেই স্থবিরতা কাটাতে। আমাদের চলচ্চিত্রে দক্ষ, অভিজ্ঞ যারা আছেন তাদের মতামত নিয়ে চলচ্চিত্রকে এগিয়ে নিতে হবে।”
চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের ‘অবহেলা’ রয়েছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, “চলচ্চিত্রে আসলে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে অনেক কিছু করা সম্ভব। কিন্তু আমার অভিজ্ঞতায় দেখেছি- এখানে একটা অবহেলা আছে। চলচ্চিত্রকে গুরুত্ব দিয়ে আমাদের দেশে মন্ত্রণালয়ের যতটা দেখা দরকার ছিল, সেটি দেখা হয়নি। এই মনস্তত্ত্ব পরিবর্তন করতে হবে।
“সরকারের জায়গা থেকে পৃষ্ঠপোষকতা না করলেও আমাদের চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রি দাঁড়াবে না। সংস্কৃতি নিয়ে আমাদের স্বপ্ন রয়েছে, আমরা চাই পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় সংস্কৃতির কেন্দ্র হয়ে উঠবে বাংলাদেশ।”
১৯৭১ সালে যে জনআকাঙ্খা থেকে মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে, তা বাস্তবায়ন হয়নি বলেই ২৪’র জুলাই অভ্যুথান হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন নাহিদ ইসলাম।
তিনি বলেন, “মুক্তিযুদ্ধে যারা অংশ নিয়েছেন, তারাও কিন্তু একটা নতুন স্বপ্ন নিয়েই যুদ্ধ করেছিলেন। সেই স্বপ্ন ৫৩ বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি বলেই আরেকটি গণঅভ্যুত্থানের প্রয়োজন হয়েছে। মানুষ আবার রাস্তায় নেমেছে, জীবন দিয়েছে। এবারের অভ্যুত্থানের স্পিরিট বাস্তবায়িত হবে, এটাই সকলের প্রত্যাশা।”
জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে অনেক অপপ্রচার চলছে মন্তব্য করে তথ্য উপদেষ্টা বলেন, “যারা সিনেমার সঙ্গে জড়িত, তাদের অনেক ভূমিকা রয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থানে ছাত্র, জনতার যে অংশগ্রহণ, তা বিভিন্ন শর্টফিল্ম বা পূর্ণদৈর্ঘ্যের সিনেমার মাধ্যমে একটা ন্যারেটিভ তৈরি হয়ে থাকবে, এটা আমরা প্রত্যাশা করি।”
“আমরা দেখেছি ৭১ নিয়ে ইতিহাসের বিকৃতি হয়েছে, ইতিহাসকে দলীয়করণ করা হয়েছে, কুক্ষিগত করা হয়েছে। আমরা আশা করব, জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে সেই বিকৃতি হবে না। জুলাই অভ্যুত্থানের যে সার্বজনীনতা, সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ- তা ইতিহাসে উঠে আসুক।”
সমাজে ‘ফ্যাসিবাদী শাসন কাঠামো’ রয়ে গেছে মন্তব্য করে উপদেষ্টা বলেন, “একটা ফ্যাসিবাদী শক্তিকে আমরা দূর করতে পারলেও, সমাজে নানাভাবে এখনো ফ্যাসিবাদী প্রবণতা রয়ে গেছে। ব্যক্তি এবং সমাজকে এই ফ্যাসিবাদী কাঠামো থেকে বেরিয়ে আসতে হলে আমাদের আসলে শক্তিশালী সাংস্কৃতিক আন্দোলন প্রয়োজন, যেটি জুলাই অভ্যুত্থানের পরে আমরা এখনো গড়ে তুলতে পারিনি।
“সংস্কৃতিই মানুষের রুচির পরিবর্তন ঘটাতে পারে, মনোজগতের পরিবর্তন ঘটাতে পারে।”
উৎসব পরিচালক ইমরান হোসেন কিরমানী বলেন, “এই উৎসবে আমাদেরকে অনেক টাকা সেন্সর ফি দিতে হবে। আমরা চাইব এরপর থেকে উৎসবে আসা সিনেমার ক্ষেত্রে যেন সেন্সর ফ্রি করে দেওয়া হয়। উৎসবে চলচ্চিত্র আনার প্রক্রিয়াটা যেন সহজ করা হয়।”
আয়োজকেরা জানান, প্রতিদিন সকাল ১১টা, বিকাল ৩টা, ৫টা ও সন্ধ্যা ৭টায় মোট ৪টি প্রদর্শনী হবে। উৎসবের ‘কান্ট্রি ফোকাস’ হিসেবে নির্বাচন করা হয়েছে ‘ফিলিস্তিন’।
আগামী ২৫ ডিসেম্বর বেলা ৩টা থেকে বিকাল ৫টায় জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে ফিলিস্তিনের আটটি স্বল্পদৈর্ঘ্য কাহিনীচিত্র প্রদর্শিত হবে।
‘আঞ্চলিক ফোকাস’ হিসেবে আরব দেশগুলোকে নির্বাচিত করা হয়েছে। ২৬ ডিসেম্বর জাতীয় জাদুঘরের সিনেপ্লেক্স মিলনায়তনে বেলা ১১টা থেকে ১টা এবং বেলা ৩টা থেকে বিকাল ৫টায় আরব দেশগুলোর ৯টি ফিকশন ও একটি প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শিত হবে।
জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থান নিয়ে নির্মিত চলচ্চিত্র ‘দ্য ড্রিম’, ‘দ্য ফাইট’ ও ‘দ্য ভিক্টরি’ প্রদর্শিত হবে ২৩ ডিসেম্বর।
এর বাইরে একাধিক অধিবেশন ও সেমিনারের আয়োজন করা রয়েছে। এ বছর উৎসবে আলমগীর কবির ‘স্মৃতি বক্তৃতা’ দেবেন কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, চলচ্চিত্র নির্মাতা নাঈম মোহায়মেন। বিষয়: “মুক্তির গান’, ইতিহাসের মঞ্চায়ন এবং দর্শকের বিশ্বাস’।
এ ছাড়াও নীতি সংলাপে জাতীয় ফিল্ম কমিশনের আবির্ভাব শিরোনামে মূল প্রবন্ধ পাঠ করবেন চলচ্চিত্র নির্মাতা ও লেখক এন রাশেদ চৌধুরী।
২৭ ডিসেম্বর বিকাল ৫টায় জাতীয় জাদুঘরের প্রধান মিলনায়তনে সমাপনী ও পুরস্কার বিতরণী আয়োজন থাকবে। এতে প্রধান অতিথি থাকবেন সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। বিশেষ অতিথি থাকবেন চিত্রশিল্পী ওয়াকিলুর রহমান।
পুরনো খবর: