প্রথমবারের মত নির্দিষ্ট একটি এলাকার উদ্যোক্তাদের দলবদ্ধভাবে ব্যাংক ঋণ পাওয়া সহজ করতে সিএমএসএমই (কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি) খাতের জন্য ‘ক্লাস্টার’ (গুচ্ছ বা দলভুক্ত) এর সংজ্ঞা নির্ধারণ করে এ বিষয়ে সার্বিক নীতিমালা করা হয়েছে।
সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, সর্বোচ্চ পাঁচ কিলোমিটার ব্যাসার্ধের সুর্নিদিষ্ট ভৌগলিক সীমানায় অবস্থিত একই জাতীয় পণ্য উৎপাদন বা সেবা প্রদানে নিয়োজিত ৫০ বা ততোধিক উদ্যোগের সমষ্টিকে ক্লাস্টার হিসেবে বিবেচনা করা হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংক রোববার এ নীতিমালা সব বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠিয়েছে।
সার্কুলারে জামানতবিহীন ঋণ পাওয়ার বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ক্লাস্টার এর আওতায় নারী উদ্যোক্তারা জামানতবিহীন ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ এবং শুধু ‘গ্যারান্টিকে’ জামানত হিসেবে দিয়ে সর্বোচ্চ ৭৫ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ নেওয়ার সুযোগ রাখা হয়েছে উদ্যোক্তাদের জন্য।
ব্যাংকাররা বলছেন, নীতিমালার ফলে ক্লাস্টারভিত্তিক অর্থায়নের বেলায় সুবিধাভোগী উদ্যোক্তা ও খাতগুলোকে সুর্নিদিষ্ট করতে পারবে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো।
চলতি বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মোট বিতরণ করা ঋণের ১০ শতাংশ ক্লাস্টার ভিত্তিক অর্থায়নে বরাদ্দের নির্দেশনাও দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
এর আগে ২০১৯ সালে সিএসএমএই খাতের মাস্টার সার্কুলারে ক্লাস্টারের কথা উল্লেখ থাকলেও এর ব্যাখ্যা বা সংজ্ঞা র্নিধারণ করা ছিল না। ফলে এ কোন ঋণটি ক্লাস্টারের আওতায় পড়বে বা এর মানদণ্ডই বা কি হবে-তা নিয়ে ব্যাংকারদের মধ্যে স্পষ্ট কোনো ধারণা ছিল না।
এসব সমস্যা সমাধানে প্রথমবারের মত ‘ক্লাস্টারভিত্তিক’ অর্থায়নে উৎসাহ দিতে এ বিষয়ে নীতিমালা জারি করল কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
জাতীয় শিল্প নীতিতে ক্লাস্টারের কোনো সংজ্ঞা র্নিধারণ করা নেই। সে বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ভবিষ্যতে ‘জাতীয় শিল্পনীতি’তে নির্ধারণ করে দেওয়া সংজ্ঞাই ‘ক্লাস্টার’ এর সংজ্ঞা হিসেবে ধরা হবে।
পণ্য ও সেবার ধরন অনুযায়ী ১৩টি খাতকে অগ্রাধিকার ও উচ্চ অগ্রাধিকার এই দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়।
উচ্চ অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ক্লাস্টারসমূহের মধ্যে রয়েছে- কৃষি/খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং কৃষি যন্ত্রপাতি প্রস্তুতকারী শিল্প, তৈরি পোশাক শিল্প, নিটওয়্যার, ডিজাইন ও সাজসজ্জা, আইসিটি, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য শিল্প, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, পাট ও পাটজাত শিল্প।
অগ্রাধিকারের তালিকায় রাখা হয়েছে- প্লাস্টিক ও অন্যান্য সিনথেটিক্স শিল্প, পর্যটন শিল্প, হোম টেক্সটাইল সামগ্রী, নবায়নযোগ্য শক্তি (সোলার পাওয়ার), অটোমোবাইল প্রস্তুত ও মেরামতকারী শিল্প, তাঁত, হস্ত ও কারুশিল্প, বিদ্যুত সাশ্রয়ী যন্ত্রপাতি (এলইডি, সিএফ্ল বাল্ব উৎপাদন), ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রপাতি নির্মাণ শিল্প/ ইলেকট্রনিক ম্যারেটিরিয়াল উন্নয়ন শিল্প, জুয়েলরি শিল্প, খেলনা শিল্প, প্রসাধনী ও টয়লেট্রিজ শিল্প, আগর শিল্প, আসবাবপত্র শিল্প, মোবাইল/কম্পিউটার/টেলিভিশন সার্ভিসিং খাত।
এর বাইরে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্টানও যেকোনো খাতকে ‘ক্লাস্টার’ হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে তা অন্যান্য খাত হিসেবে দেখাতে পারবে।
খাত নির্ধারণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, মোট বিতরণকৃত ঋণের ১০ শতাংশ ক্লাস্টারে অর্থায়ন করে প্রতিবছর ১ শতাংশ হারে বৃদ্ধি করতে হবে।
‘ক্লাস্টার’ ভিত্তিক অর্থায়নে নির্ধারণ করে দেওয়া খাতগুলোতে কমপক্ষে বরাদ্দের ৫০ শতাংশ হতে হবে। অবশিষ্ট বরাদ্দ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্টান কর্তৃক র্নিধারিত ‘অন্যান্য ক্লাস্টার’ খাতে বিতরণ করা যাবে।
সব বিনিযোগই সিএমএসএমই খাতের অন্তর্ভূক্ত হবে আর মূলধন ও মেয়াদী ঋণেও অর্থায়ন করা যাবে।
ঋণের পরিমাণ
সিএমএসএমই খাতের পণ্য ও সেবা উদ্যোগের বিপরীতে সর্বোচ্চ ঋণসীমা কত হবে তাও নির্ধারণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এসব ঋণের মেয়াদ হবে সর্বোচ্চ ৫ বছর।
>> কুটির উদ্যোগের আওতায় উৎপাদন শিল্পে সর্বোচ্চ ১৫ লাখ টাকা।
>> মাইক্রো উদ্যোগে উৎপাদন খাতে ১ কোটি ও সেবা শিল্পে ২৫ লাখ টাকা।
>> ক্ষুদ্র উদ্যোগে উৎপাদন শিল্পে ২০ কোটি ও সেবায় ৫ কোটি টাকা।
>> মাঝারি উদ্যোগে উৎপাদন খাতে ৭৫ কোটি ও সেবায় ৫০ কোটি টাকা।