সিপিডির তথ্য ‘নির্জলা মিথ্যাচার’: তথ্যমন্ত্রী

“সিপিডি এই রিপোর্ট তৈরি করে প্রকাশ করার ক্ষেত্রে অনেক লুকোচুরি করেছে এবং অনেক ভুল অসত্য তথ্য তারা পরিবেশন করেছে," বলেন মন্ত্রী।

বড় ঋণ কেলেঙ্কারির মাধ্যমে গত ১৫ বছরে ব্যাংক থেকে ৯২ হাজার কোটির বেশি টাকা আত্মসাৎ হয়েছে বলে যে তথ্য প্রকাশ করেছে সিপিডি, সেই তথ্যকে ‘নির্জলা মিথ্যাচার’ বলে বর্ণনা করেছেন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ।

তিনি বলেছেন, “সিপিডি কোনো গবেষণা করেনি। সিপিডি কিছু পত্রিকার কাটিং জোগাড় করে একটা রিপোর্ট তৈরি করেছে। সেই রিপোর্টের আলোকে একটি সংবাদ সম্মেলন করা হয়েছে। তাদের এ বক্তব্য নির্জলা মিথ্যাচার ছাড়া অন্যকিছু নয়।

“সিপিডির সংবাদ সম্মেলনে যদিওবা গবেষণার কথা বলা হয়েছে, বাস্তবে গবেষণা করতে অনেক সময় লাগে, অনেক তথ্য-উপাত্ত থাকে। কিন্তু সিপিডি এই রিপোর্ট তৈরি করে প্রকাশ করার ক্ষেত্রে অনেক লুকোচুরি করেছে এবং অনেক ভুল অসত্য তথ্য তারা পরিবেশন করেছে।"

বাংলাদেশ টেলিভিশনের ৫৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে সোমবার রাষ্ট্রায়ত্ত চ্যানেলটির চট্টগ্রাম কেন্দ্রে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন তথ্যমন্ত্রী। এরপর সাংবাদিকরা সিপিডির তথ্যের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি ওই মন্তব্য করেন।

ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনাগুলো নিয়ে ১৫ বছরে গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে শনিবার সংবাদ সম্মেলন করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ- সিপিডি।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি বলেছে, ২০০৮ সাল পর্যন্ত ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ২২ হাজার কোটি টাকা। এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকায়। এ সময়ে নানা অনিয়মের মাধ্যমে ২৪টি বড় ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় ৯২ হাজার ২৬১ কোটিরও বেশি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

হাছান মাহমুদ বলেন, “সিপিডি বলেছে, আমাদের উন্নয়ন বাজেটের ৭৫ শতাংশ হচ্ছে বিদেশ নির্ভর। আসলে আমাদের চলতি বাজেটের ৩৫ শতাংশ হচ্ছে সাহায্য নির্ভর কিংবা বিদেশ নির্ভর।

“এক সময় এটি ২০ শতাংশের নিচে নেমে গিয়েছিল। সাম্প্রতিক সময়ে কিছু বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য বৈদেশিক লোন নেওয়ার কারণে এটি ৩৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। অথচ সিপিডি বলেছে, এটি ৭৫ শতাংশ।"

আওয়ামী লীগের এ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেন, “সিপিডি বলেছে, বেসিক ব্যাংক থেকে চার হাজার কোটি টাকা লোন দেওয়া হয়েছে। কিন্তু চার হাজার কোটি টাকার মধ্যে দুই হাজার কোটি টাকা ইতোমধ্যে আদায় করা হয়েছে এবং বাকি দুই হাজার কোটি টাকার জন্য মামলা করা হয়েছে, মামলা চলমান। সেগুলো আদায়ের প্রক্রিয়ার মধ্যে আছে।

“সিপিডি তাদের বক্তব্যে আরেকটি কথা বলেছে, যেমন নাবিল গ্রুপ। তারা ২ হাজার ৭’শ কোটি টাকা লোন নিয়েছে। কিন্তু সেই লোন যে সবগুলো আদায় হয়েছে, সে তথ্য সিপিডির রিপোর্টে জানানো হয়নি। ইচ্ছাকৃতভাবে এগুলোকে লুকানো হয়েছে।”

হাছান মাহমুদ বলেন, “চট্টগ্রামভিত্তিক একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কথা বলা হয়েছে, আমি বাংলাদেশ ব্যাংকের সাথে চেক করেছি। সেই প্রতিষ্ঠানের কোনো লোনই ক্লাসিফায়েড নয়।

“একই সাথে সিপিডি বলেছে, ব্যাড লোন বেড়েছে। অর্থাৎ ক্লাসিফায়েড লোনের আকার বেড়েছে। কিন্তু তারা আকারের কথা বলেছে, পারসেন্টেজের কথা বলে নাই।"

বাংলাদেশের অর্থনীতির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, “আমাদের অর্থনীতি ৬ গুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৯ সালে আমাদের জিডিপির সাইজ ছিল ৮০ বিলিয়ন ডলার। এখন জিডিপির সাইজ হচ্ছে ক্লোজ টু হাফ এ ট্রিলিয়ন ডলার, অর্থাৎ ৫০০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি। এভাবে ৬ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।

“৬ গুণ বৃদ্ধি পেলে তো ব্যাংক লোনও বৃদ্ধি পাবে এবং ব্যাংক লোনের আকারও বৃদ্ধি পাবে- এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু পারসেন্টেজ কত, সেটাই হচ্ছে মূল বিষয়। ২০০৯ সালে ক্লাসিফায়েড লোনের পারসেন্টেজ ছিল ১০ দশমিক ৫ শতাংশ, আর এখন ক্লাসিফায়েড লোনের পারসেন্টেজ হচ্ছে ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ। অর্থাৎ তখনকার তুলনায় কমেছে।"

হাছান বলেন, “২০০৭-০৮ সালে সিপিডির কেউ কেউ তো দেশ পরিচালনার সাথে যুক্ত ছিলেন । তারা যখন দেশ পরিচালনার সাথে যুক্ত ছিলেন, তখন ব্যাড লোন ১০ শতাংশের উপরে ছিল। এইভাবে মিথ্যা অসত্য এ সমস্ত তথ্য দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করা আসলে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।"

ব্যাংকের টাকা লোপাট: কে কত নিয়েছে জানাল সিপিডি

বিএনপির তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণার বিষয়ে তিনি বলেন, “বিএনপির কর্মসূচি হচ্ছে গতানুগতিক কর্মসূচি। তিন দিন যে কর্মসূচি দিয়েছে জনগণও জানে না, কেউ খেয়ালও করে নাই। হয়তোবা সাংবাদিকরা খবরা-খবর রাখেন বলেই খেয়াল করেছেন।

“তারা কর্মসূচি কোন দিন দেয়, কোন দিন হরতাল দেয়, কোনদিন অবরোধ দেয়, কেউ কিন্তু নোটিস করে না। বাংলাদেশের মানুষও নোটিস করে নাই, কাকপক্ষীও নোটিস করেছে কি না আমি জানি না। সুতরাং এগুলো গতানুগতিক কর্মসূচি এবং হাস্যকর।"

বড়দিন উপলক্ষে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বিদের শুভেচ্ছা জানিয়ে হাছান মাহমুদ বলেন, “আমাদের এই দেশ হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান-সকলের মিলিত রক্তশ্রুতের বিনিময়ে স্বাধীন হয়েছে। সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে, হাতে হাত ধরে আমাদের এই দেশমাতৃকাকে স্বাধীন করেছে।

“একটি অসম্প্রদায়িক রাষ্ট্র ব্যবস্থার জন্যই সাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রব্যবস্থা পাকিস্তান থেকে বেরিয়ে এসে বাংলাদেশ রচনার ডাক দিয়েছেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তার নেতৃত্বেই হাজার বছরের ঘুমন্ত বাঙালিকে জাগ্রত করে বাংলাদেশ রাষ্ট্র রচিত হয়েছে।”

তথ্যমন্ত্রী বিটিভি চট্টগ্রাম কেন্দ্রের নির্মাণাধীন ভবন পরিদর্শন করেন। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে তিনি টিভি স্টেশনটির কলাকুশলী, শুভকাঙ্ক্ষী ও দর্শকদের অভিনন্দন জানান।