যুব বিদ্রোহের বার্ষিকীতে চট্টগ্রামে শহীদ স্মরণ

যুব বিদ্রোহের ৯৩ম বার্ষিকীতে শহীদদের স্মরণ করেছে চট্টগ্রাম।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 April 2023, 10:55 AM
Updated : 18 April 2023, 10:55 AM

যুব বিদ্রোহের ৯৩তম বার্ষিকীতে নানা আয়োজনে বিপ্লবীদের স্মরণ করেছে চট্টগ্রামের কয়েকটি সংগঠন।

ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের শহীদদের স্মরণ করে যুব বিদ্রোহের দিনটিকে ‘জাতীয় দিবস’ হিসেবে পালনের দাবি জানানো হয়েছে এসব কর্মসূচিতে।

‘রাস্তা জুড়ে রোদ হোক’ স্লোগানে মঙ্গলবার জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে ‘চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ উৎসব ২০২৩’ আয়োজন করে বোধন আবৃত্তি পরিষদ চট্টগ্রাম। সেখানে বিপ্লবীদের শ্রদ্ধা জানিয়ে আন্দোলনের ইতিহাস তুলে ধরেন আলোচকরা।

১৯৩০ সালের ১৮ এপ্রিল মাস্টারদা সূর্য সেনের নেতৃত্বে চট্টগ্রাম যুব বিদ্রোহ হয়। নগরীর দামপাড়া এলাকায় তৎকালীন পুলিশ ব্যারাকের অস্ত্রাগার দখল করে নেন বিপ্লবীরা। সেখানেই অস্থায়ী বিপ্লবী সরকার গঠনের ঘোষণা দেওয়া হয়।

এরপর চারদিন স্বাধীন ছিল চট্টগ্রাম। পরে ২২ এপ্রিল জালালাবাদ পাহাড়ের যুদ্ধে ইংরেজ বাহিনীর সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। তিন ঘণ্টার সেই যুদ্ধে ৮২ জন ব্রিটিশ সৈন্য নিহত হয় এবং ১২ জন বিপ্লবী শহীদ হন।

অনুষ্ঠানে কবি-সাংবাদিক আবুল মোমেন বলেন, “বাংলাদেশের স্বাধীনতার বীজ বপন করেছিল মাস্টারদা সূর্য সেন এবং তার সহযাত্রীরা। তাদের কথা বঙ্গবন্ধু বারবার স্মরণ করেছেন। তার আত্মজীবনীতেও আছে। আমরা যেভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস উদযাপন করি একইভাবে যুব বিদ্রোহের দিনটিকেও আমাদের উদযাপন করতে হবে। তাহলে আমরা এর ইতিহাস জানব, এর নায়কদের জানব, এর তাৎপর্য বুঝব।“

আন্দোলনের ঘটনা প্রবাহ ‍তুলে ধরে সমাজবিজ্ঞানী অনুপম সেন বলেন, যুব আন্দোলন এক পর্যায়ে স্থিতাবস্থা নেমে আসে, তখন মনে হয় ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আর কিছুই হবে না। ঠিক সেই সময়ে এই উপমহাদেশকে জাগাতে ১৯৩০ সালে যুব বিদ্রোহ হয়।

“অসাধারণ সে যুব বিদ্রোহ সারা উপমহাদেশকে, সারা বিশ্বকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল। ৭২ জন যুবক জালালাবাদ যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। তার মধ্যে অনেকে শহীদ হন।”

চট্টগ্রামকে চারদিন স্বাধীন রাখার ইতিহাস তুলে ধরে অনুপম সেন বলেন, “ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের আর কোথাও চারদিন স্বাধীন রাখা যায়নি। এমনকি আইরিশ বিদ্রোহেও। সূর্য সেন, প্রীতলিতা, কল্পনা দত্ত, গণেষ ঘোষ, অম্বিকা চক্রবর্তী- যা করেছিল, তা ছিল অসাধ্য। তারা ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ভীত কাঁপিয়ে দিয়েছিল।

“প্রীতিলতা এশিয়ার প্রথম নারী, যিনি স্বাধীনতার জন্য আত্মোৎসর্গ করেছিলেন। এই যুব বিদ্রোহের মধ্য দিয়ে এশিয়ায় স্বাধীনতার জন্য জাগরণ হয়েছিল। যতদিন মানুষ থাকবে ততদিন তাদের ইতিহাস থাকবে।”

ইতিহাস বয়ানে এই সমাজবিজ্ঞানীর ভাষ্য, কেবলমাত্র ব্রিটিশরা নয়, ফ্রেঞ্চ, ডাচ, পতুর্গিজ, আর্মেনীয়রা এখানে এসেছে ব্যবসা করতে।

“ব্রিটিশরা এখানে স্থায়ী বসতি করেনি। পুরোপুরি উপনিবেশ হিসেবে ব্যবহার করেছে। এমনভাবে আমাদের শোষণ করল…। একশ বছরের শাসনে সেই দেশকে ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি একটি দরিদ্র দেশে পরিণত করেছিল।”

অনুপম সেন বলেন, “এদেশে সিপাহী বিদ্রোহে সে সময়ের উচ্চ-মধ্যবিত্ত শ্রেণি সমর্থন দেয়নি। এর বড় কারণ ছিল তারা ভেবেছিল যে, ব্রিটিশ শাসনের অধীনে আমরা এগিয়ে যাব। কিন্তু এগিয়ে যাইনি।

“ব্রিটিশ আমাদের কীভাবে শোষণ করেছে তা দাদাভাই নওরোজি তার Poverty and un-British rule in India বইতে লিখছেন। তিনি বলেছেন, এখানে দারিদ্র্য বাড়ছে। আমরা শোষণের বিরাট শিকার হয়েছিলাম।”

ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ইতিহাসে চারদিন চট্টগ্রামকে স্বাধীন রাখাকে ‘বড়’ ঘটনা হিসেবে বর্ণনা করে কবি-সাংবাদিক মোমেন বলেন, “এর যথাযথ মূল্য দেওয়া যায়নি।”

এর কারণ ব্যাখ্যায় মোমেন বলেন, “১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ পর্যন্ত পাকিস্তান রাষ্ট্রে এ সম্পর্কে একটা নেতিবাচক ভাব ছিল। আমরা দেখেছি যারা ব্রিটিশবিরোধী সংগ্রামী ছিলেন, তাদের বেশিরভাগকে সেসময় বারবার জেলে যেতে হয়েছে।

“বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমরা ভেবেছিলাম এই বিপ্লবীরা সম্মানিত হবেন। কিন্তু সেটিও হয়নি। এটি একটি অসমাপ্ত কাজ। স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসকে পূর্ণাঙ্গতা দিতে হবে। এই ইতিহাসের যারা গোড়াপত্তন করেছিলেন, তাদের কথা আমাদের মনে রাখতে হবে।”

‘বোধন আবৃত্তি পরিষদের’ সভাপতি সোহেল আনোয়ারের সভাপতিত্বে ও অনুপম শীলের সঞ্চালনায় আলোচনায় অংশ নেন নাট্যকার ও নির্দেশক প্রদীপ দেওয়ানজী, বোধনের সহ-সভাপতি সুবর্ণা চৌধুরী।

দলীয় সংগীত পরিবেশন করেন অভ্যুদয় ও ধ্রুপদ সংগীত নিকেতন। দলীয় নৃত্যে অংশ নেন নৃত্যরূপ একাডেমি ও নৃত্য নিকেতন।

এছাড়া প্রমা আবৃত্তি সংগঠন ও বোধন আবৃত্তি পরিষদ আবৃত্তি করে। স্বরচিত কবিতা পাঠ করেন হোসাইন কবির, মালেক মুস্তাকিম, সারাফ নাওয়ার।