পতেঙ্গা সৈকতে ইজারার পরিকল্পনা বাতিলে সিডিএকে হুঁশিয়ারি

পতেঙ্গা সৈকতের একাংশের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ২৫ বছরের জন্য ইজারা দিতে চায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 August 2022, 11:08 AM
Updated : 13 August 2022, 11:08 AM

পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকতের একাংশের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ইজারার মাধ্যমে বেসরকারি অপারেটরকে দেওয়ার পরিকল্পনা থেকে সরে না এলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছে পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরাম।

শনিবার চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির নেতাকর্মীরা বলেন, চট্টগ্রাম নগরীতে যেটুকু উন্মুক্ত পরিসর ছিল, এভাবে সেগুলোতে জনসাধারণের প্রবেশাধিকার সীমিত বা বন্ধ করা হয়েছে।

লিখিত বক্তব্যে ফোরামের সহ-সভাপতি প্রকৌশলী সুভাষ বড়ুয়া বলেন, “বিভিন্ন সংবাদ সূত্রে জানতে পেরেছি, পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত সংলগ্ন ৭ কিলোমিটার পরিসরের দেড় কিলোমিটার পরিসরকে পর্যটন জোন-১ এবং পর্যটন জোন-২ হিসেবে ভাগ করে টেন্ডারের মাধ্যমে ২৫ বছরের জন্য বাণিজ্যিকভাবে ইজারা দিতে চায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)।

“অথচ সিডিএর নগর উন্নয়ন মহাপরিকল্পনা এবং বিস্তৃত অঞ্চল পরিকল্পনায় (ড্যাপ) পতেঙ্গা সৈকতকে পাবলিক ওপেন স্পেস বা সর্বজনের উন্মুক্ত পরিসর হিসেবে সংরক্ষণের কথা বলা হয়েছে।”

ঢাকায় তুরাগ নদীর দখল ও দূষণ নিয়ে করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সংবিধানের ১৮ (ক), ২১, ৩১ ও ৩২ অনুচ্ছেদের উল্লেখ করে ‘পরিবেশ, প্রাকৃতিক সম্পদ, জীববৈচিত্র্য, সকল উন্মুক্ত জলাভূমি, সমুদ্র, সমুদ্র সৈকত, নদ-নদী, খাল-বিল, হাওর-বাওর, ঝিল, নদীর পাড়, পাহাড়-পর্বত, টিলা, বন এবং বাতাস ইত্যাদি কোনো ব্যক্তি বা কোম্পানিকে বাণিজ্যিকভাবে ইজারা দেওয়া চলবে না, হাই কোর্টের এমন রায়ের কথাও বলেন সুভাষ।

তিনি বলেন, “যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সৈকত এলাকার ক্ষতি এড়াতে এবং রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় সংগ্রহে বাণিজ্যিকভাবে লিজ দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে।

“একটি সার্বজনীন উন্মুক্ত পরিসর ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য উন্মুক্ত রেখেও বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনা সম্ভব। পর্যটকদের জন্য জলযান ভ্রমণ, ক্যাফে, রেস্টুরেন্ট, নানা রকম দোকান, খেলার ব্যবস্থা ইত্যাদি নির্মাণ করে সিডিএর নিয়ন্ত্রণাধীন রেখে এসব পরিচালনা সুযোগ ব্যক্তিগতখাতে ইজারা দেওওয়ার ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।”

সুভাষ বড়ুয়া বলেন, “এ বিষয়ে আমরা সরাসরি সিডিএকে চিঠি দিয়েছি সপ্তাহখানেক আগে। মন্ত্রণালয়কেও জানিয়েছি। দেখি তারা কী করেন। এরপর আমরা পরবর্তী পদক্ষেপ নেব। প্রয়োজনে আদালতে যাব।”

পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের চেয়ারম্যান ও ইস্ট ডেল্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‍উপাচার্য ড. মু. সিকান্দার খান বলেন, “হনলুলুর হাওয়াই বিচসহ বিশ্বের কোনো সৈকতে চলাচলের কোনো রকম বিধিনিষেধ নেই। এখানে দেড় কিলোমিটার অংশে এটা হলে তা ঘিরে বিশেষ ব্যবস্থা থাকবে।

“সেখানে টিকেট কাটা ছাড়া সাধারণ মানুষ আর প্রবেশ করতে পারবে না। এতে অধিকার ক্ষুণ্ন হবে। আমাদের সার্কিট হাউজের সামনের মাঠ ও ফয়’স লেক চলে গেছে এভাবে। নিজেরা যদি সচেতন না হই তাহলে স্বার্থান্বেষী মহলের দোষ দিয়ে লাভ নেই।”

Also Read: পতেঙ্গায় হবে ‘পর্যটন জোন’, বেসরকারি অপারেটরে আপত্তি

সংবাদ সম্মেলনে পরিকল্পিত চট্টগ্রাম ফোরামের কো-চেয়ারম্যান এবিএম বাসেত, মো. নাজিম উদ্দিন, শাহরিয়ার খালেদসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।

গত বছরের শেষ দিকে পতেঙ্গা সৈকত ঘিরে পর্যটন অঞ্চল গড়ে তুলতে বড় প্রকল্প হাতে নেওয়ার কথা জানায় সিডিএ। তবে সৈকতের একাংশের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বেসরকারি অপারেটরের হাতে তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে শুরু থেকে আপত্তি আছে নানা মহলের।

সিডিএ যে পরিকল্পনা করেছে, তাতে সৈকতের পতেঙ্গা অংশ থেকে চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল (সিইপিজেড) পর্যন্ত প্রায় ছয় কিলোমিটার অংশ নিয়ে হবে ‘পর্যটন জোন-১’। এর মধ্যে ৭০০ মিটার অংশ থাকবে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায়। টেন্ডারের মাধ্যমে সেখানে অপারেটর নিয়োগ করা হবে।

বাকি সোয়া পাঁচ কিলোমিটার সৈকত সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। তবে এর রক্ষণাবেক্ষণ করবে একই বেসরকারি অপারেটর প্রতিষ্ঠান।

এ ছাড়া আকমল আলী রোড সংলগ্ন সৈকতের যে অংশটি সাগর থেকে ল্যান্ড রিক্লেইমের (জমি পুনরুদ্ধার) প্রক্রিয়ায় পাওয়া গেছে, সেখানকার ২৩ একর জমি নিয়ে হবে ‘পর্যটন জোন-২’। জোন-২ তে পর্যটকদের জন্য হোটেল-মোটেল-রাইডসহ বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো গড়ে তোলার সুযোগ রাখা হয়েছে পরিকল্পনায়।