দ্রুত সেবা পেতে ‘ওএসএস’ ব্যবহারের পরামর্শ বিডার

‘থার্ড পার্টিকে কেন দেবেন? তারাই আপনাদের ভোগায়,” ব্যবসায়ীদের বলেছেন বিডার নির্বাহী সদস্য।

ব্যবসায়িক কার্যক্রমে সরকারি বিভিন্ন সেবা সংস্থার অনুমোদন পেতে দীর্ঘসূত্রতার কথা বলছেন চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীরা, যা সমাধানে অনলাইন ওয়ান স্টপ সার্ভিস বা ওএসএস পোর্টাল ব্যবহারে পরামর্শ দিয়েছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-বিডা।

চট্টগ্রামের হোটেল আগ্রাবাদে মঙ্গলবার বিডার ওএসএস পোর্টালের সার্বিক কার্যক্রম অবহিতকরণ সম্পর্কিত কর্মশালায় ব্যবসায়ীদের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এই পরামর্শ দেন বিডার নির্বাহী সদস্য মহোসিনা ইয়াসমিন।

বিনিয়োগ উন্নয়ন সংস্থাটির আয়োজনে এই কর্মশালায় চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, “বিডা বিভিন্নভাবে চেষ্টা করছে কীভাবে অনলাইনে সেবা প্রদান ব্যবস্থা আপডেট করা যায়। কিন্তু বিডা অনুমোদন দেওয়ার পরও অন্য রেগুলেটরি বডি কেন দেওয়া না? এখানে বিডার একটা সমন্বয়ক অথরিটি থাকা প্রয়োজন।

“আমরা অনেক ব্যবসায়ীকে জানি, যাদের মেশিনারি হয়ত এসে গেছে। কিন্তু বিদ্যুৎ বিভাগের অনুমতি পায় তো গ্যাসের পাচ্ছে না। নয়ত পরিবেশের অনুমোদন পাচ্ছে না। আমরা যারা ব্যবসা করি, তারা ব্যাংকের লোন নিয়ে মেশিনারি আনি। একটা সার্টিফিকেটের জন্য ব্যবসা শুরু করতে পারছে না। এতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বড় ব্যবসায়ীদের হয়ত অনেক লোকবল আছে, সক্ষমতা আছে। তারা এসব অনুমোদনের জন্য লেগে থাকতে পারে। কিন্তু মাঝারি বা নতুন উদ্যোক্তারা থার্ড পার্টি নির্ভর হয়ে পড়ছে এসব অনুমোদনের জন্য।”

এসব বিষয়ে কর্মশালায় বিডার নির্বাহী সদস্য মহোসিনা ইয়াসমিন বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাদের সামনে স্মার্ট বাংলাদেশ ভিশন তুলে ধরেছেন। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের অন্যতম প্রধান উপদান হলো আধুনিক বিনিয়োগ ব্যাবস্থা। আর বিনিয়োগ সেবাকে ডিজিটাইজ করার জন্য কাজ করে যাচ্ছে বিডা।

“স্বল্প সময়ে ও স্বল্প ব্যয়ে, স্বচ্ছ-দ্রুত ও ঝামেলাহীন স্মার্ট বিনিয়োগ সেবা নিতে হলে বিডার ওএসএস (ওয়ান স্টপ সার্ভিস) ব্যবহার করতে হবে। বিনিয়োগকারীদের বিশ্বমানের ডিজিটাল সেবা দিতেই ওএসএস। শুরুতে এটা ব্যবহার করতে গিয়ে কেউ কেউ হয়ত পদ্ধতিগত সমস্যায় পড়ছেন। কোনো সমস্যা হলে অবশ্যই আমাদের কাছে আসবেন।”

অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সেবা অনুমোদনের জন্যও ওএসএস পদ্ধতিতে আসার আহ্বান জানিয়ে মহোসিনা ইয়াসমিন বলেন, “এটা করলে, কোনো সমস্যা হলে আমরা সহযোগিতা করতে পারব। ওএসএস এর মাধ্যমে আপনারা নিলে সেবা সংস্থাগুলোর উপর আমাদের একটা কন্ট্রোল আসে। আমাদের মাধ্যমে না গেলে সেটা হবে না।

“কোনো থার্ড পার্টিকে কেন দেবেন? তারা অনেক কিছু বুঝে না বা দক্ষ নয়। তারাই আপনাদের ভোগায়। থার্ড পার্টি বাদ দিয়ে সরাসরি বিডা ওএসএস এর মাধ্যমে সেবা গ্রহণ করুন।”

অনলাইনে আবেদনের পরও চারবার কাগজপত্র দেওয়ার যে সুযোগ এখন আছে আগামী তিনমাসের মধ্যে তা কমিয়ে দুই বারে আনা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, “নতুন বলে এখনই সেটা করছি না। অল্প সময়ের মধ্যেই করা হবে। আবেদনের পর আর একবার কাগজ জমা দিবেন।”

কর্মশালায় জানানো হয়, বিডা দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীদের অনলাইনে সেবা প্রদানের লক্ষ্যে ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি অনলাইন ভিত্তিক ওয়ান স্টপ সার্ভিস পোর্টাল চালু করে। ইতোমধ্যে বিডা বিনিয়োগকারীদের ২৪টি সংস্থার ৭১টি সেবা প্রদান করছে। এছাড়া ৪৩টি সংস্থার সাথে সমঝোতা স্বারক সই করেছে বিডা। অতিদ্রুত এসব সংস্থার সেবাসমূহ বিডা ওএসএসে যুক্ত হবে। ওএসএস পোর্টালের আওতায় বিভিন্ন সংস্থার ১৫০টির অধিক সেবা অনলাইনে দেয়ার পরিকল্পনা আছে বিডার।

কর্মশালার শুরুতে ওএসএস বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিডার নির্বাহী সদস্য (অতিরিক্ত সচিব) খন্দকার আজিজুল ইসলাম। বিডার সহকারী পরিচালক আবু জার গিফারী তমালের উপস্থাপনায় অনুষ্ঠানে ওএসএস সেবার হালনাগাদ চিত্র তুলে ধরেন বিডার মহাপরিচালক জীবন কৃষ্ণ সাহা রায়।

চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার মো. আমিনুর রহমান, চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সহ-সভাপতি সৈয়দ মো. তানভীর, চিটাগাং ওমেন চেম্বারের সিনিয়র সহ-সভাপতি আবিদা সুলতানা ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক রাকিব হাসান, বিডার চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন ও আইএলও বাংলাদেশের প্রোগ্রাম অফিসার মো. বোরহান উদ্দিন কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন।