সম্পত্তি লিখে না দেওয়ায় খুন, টুকরো করে লাগেজে ভরেন স্ত্রী-সন্তানেরা: পিবিআই

নিহতের ছোট ছেলে শফিকুর রহমান ও পূত্রবধু স্ত্রী আনারকলি বেগম পলাতক।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 18 Jan 2024, 06:42 AM
Updated : 18 Jan 2024, 06:42 AM

চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় লাগেজের ভেতর থেকে উদ্ধার করা মানবদেহের খণ্ডিত অংশগুলো মো. হাসান নামে এক ব্যক্তির বলে শনাক্ত করেছে পুলিশের তদন্ত সংস্থা পিবিআই। তারা জানিয়েছে, স্ত্রী ও সন্তান সম্পত্তির জন্য তাকে হত্যা করে টুকরো করে খালের ধারে ফেলে দেন।

হাসানের স্ত্রী ছেনোয়ারা বেগম ও বড় ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান এখন পুলিশের হেফাজতে। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর শনিবার ইপিজেড থানার আকমল আলী রোডের পকেট গেইট সংলগ্ন খাল থেকে মরদেহের গলা থেকে কোমর পর্যন্ত অংশ উদ্ধার করা হয়।

পরে আঙ্গুলের ছাপ মিলিয়ে পুলিশ ৬১ বছর বয়সী হাসানের পরিচয় জানতে পারে। তার বাড়ি চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার কাথারিয়া ইউনিয়নের বড়ইতলি গ্রামে। বর্তমান ঠিকানা উল্লেখ আছে সিলেটের সাধুর বাজার রেলওয়ে কলোনি জামাল মিয়ার গ্যারেজ।

হাসানের ছোট ছেলে শফিকুর রহমান ও পূত্রবধু স্ত্রী আনারকলি বেগম পলাতক।

বৃহস্পতিবার রাতে পতেঙ্গা ১২ নম্বর ঘাট সংলগ্ন বিমানবন্দর সড়কের একটি গলির ভেতর রাস্তার পাশে ঝোপে কফি রঙের লাগেজটি ফেলে রাখা হয়। পুলিশ সেটি খুলে দেখতে চায় হাত ও পা আট টুকরো করে কেটে টেপ দিয়ে মুড়িয়ে রাখা। ভেতরে শার্ট এবং লুঙ্গিও ছিল।

পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রোর সহকারী পুলিশ সুপার একেএম মহিউদ্দিন সেলিম বলেন, “নিজস্ব সোর্স ও আশেপাশের এলাকার অন্তত ৩৩টি সিসি ক্যামেরা ফুটেজের তথ্য বিশ্লেষণ করে আকমল আলী রোড পকেট গেইট সংলগ্ন জমির ভিলার সন্ধান পাই। হাসানের ছোট ছেলে শফিকুর তার স্ত্রীকে নিয়ে সেখানে ভাড়া থাকতেন।

“গত ১৯ সেপ্টেম্বর হাসানকে জমির ভিলায় তার ছোট ছেলের বাসায় খুন করে লাশটি কাটা হয়েছিল। ওইদিন হাসানের স্ত্রী ও ছেলেসহ সবাই ছিলেন। ওই ভবনের বাসিন্দারাও হাসানকে ঘরে যেতে দেখেছিলেন। কিন্তু তার স্ত্রী ও সন্তানরা বাসা থেকে বের হলেও হাসানকে কেউ বের হতে দেখেননি।”

শুক্রবার হাসানের স্ত্রী ও বড় ছেলেকে বাঁশখালী থেকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের কথা জানিয়ে মহিউদ্দিন সেলিম বলেন, “এক পর্যায়ে হাসানকে খুনের কথা স্বীকার করেন তারা। হাসানের বড় ছেলে মোস্তাফিজুরের দেওয়া তথ্যে বাসার কাছে খাল থেকে বস্তায় ভরা গলার নিচ থেকে কোমর পর্যন্ত কাটা অংশ উদ্ধার করা হয়।”

পিবিআই কর্মকর্তা জানান, প্রায় ২৮ বছর পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন হাসান। বাঁশখালীর কাথারিয়া ইউনিয়নের বড়ইতলী গ্রামে তার কিছু সম্পত্তি আছে।

মাস পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করলে সম্পত্তি লিখে দিতে তাকে চাপ দেন স্ত্রী ও দুই সন্তান। এতে রাজি না হওয়ায় বিরোধ হয়।

পিবিআইয়ের ভাষ্য জানান, ছেনোয়ারা ১০দিন আগে ছোট ছেলের বাসায় যান। ১৯ তারিখ বড় ছেলেও যান সেখানে। এরপর ডেকে আনা হয় হাসানকে।

মহিউদ্দিন সেলিম বলেন, খাল থেকে যে বস্তাটি উদ্ধার করা হয়, সেটি হাসানের ছোট ছেলের বাসা থেকে বের করে নিয়ে আসার ফুটেজ সিসি ক্যামেরায় দেখা গেছে।

হাসানের স্ত্রী ও সন্তানদের বাসা থেকে চলে যাওয়ার বিষয়টিও দেখা গেছে। তাদের নিতে এসেছিল হাসানের জামাতা। এই হত্যায় হাসানের তার সম্পৃক্ততা আছে কিনা, সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

(প্রতিবেদনটি প্রথম ফেইসবুকে প্রকাশিত হয়েছিল ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে: ফেইসবুক লিংক)