মেঘনায় ট্রলারডুবি: কনস্টেবল সোহেলের ঘরে আর কেউ রইল না

সোহেল রানা, তার স্ত্রী ও তাদের দুই সন্তান ট্রলারডুবিতে প্রাণ হারিয়েছেন।

আবদুর রহমান, কুমিল্লা প্রতিনিধিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 25 March 2024, 05:36 PM
Updated : 25 March 2024, 05:36 PM

কিশোরগঞ্জের ভৈরবের মেঘনা নদীতে ট্রলার ডুবিতে পুলিশ কনস্টেবল সোহেল রানা, তার স্ত্রী ও ছেলেমেয়ের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এই পরিবারে এখন চলছে শোকের মাতম। ভাষাহীন হয়ে পড়েছেন সোহেলের সহকর্মীরাও। 

কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার ফতেহাবাদ গ্রামের আবদুল আলিমের ছেলে সোহেল রানা স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে কর্মরত ছিলেন ভৈরব হাইওয়ে থানায়। শুক্রবার মেঘনা নদীতে বেড়াতে বেড়িয়ে ট্রলার ডুবিতে চারজনেরই মৃত্যু হয়। 

শনিবার সোহলের স্ত্রী মৌসুমী আক্তার (২৫), রোববার মেয়ে মাহমুদা সুলতানা ইভা (৭) এবং সোমবার সোহেল রানা (৩২) ও ছেলে রাইসুল ইসলামের (৫) মরদেহ উদ্ধার করা হয়। 

মেঘনায় এই ট্রলারডুবিতে মোট নয়জনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। আর কোনো নিখোঁজ না থাকায় উদ্ধার অভিযান শেষ করেছে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স।   

সাবেক সেনা সদস্য আবদুল আলিমের তিন সন্তানের মধ্যে সোহেল দ্বিতীয়। তিনি ২০১১ সালে পুলিশের যোগ দেন। সোহেলের পরিবারের সবার মৃত্যুতে স্বজনরা দিশেহারা। পুরো ফতেহাবাদ গ্রামে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। 

সোহেলের গ্রামের বাড়িতে ভিড় করছেন এলাকার লোকজন। সোহেলের বৃদ্ধ বাবা-মায়ের কান্না কিছুতেই থামছে না। তারা বারবার সন্তান, নাতি-নাতনি এবং পুত্রবধূর জন্য বিলাপ করতে করতে মুর্ছা যাচ্ছেন। 

Also Read: মেঘনায় ট্রলার ডুবিতে নিহত বেড়ে ৯, অভিযান শেষ

সোহেলের বাবা আবদুল আলিম বলেন, “আমার মৃত্যুর আগে ছেলে আর তার পুরো পরিবারের এমন মৃত্যু দেখতে হবে স্বপ্নেও ভাবিনি। আমাকে কে আর দাদা দাদা বলে ডাকবে। এই শোক কীভাবে সইবো জানি না। আমার ছেলেটার পুরো পরিবার নদীতে ডুবে মরলো।” 

ভৈরব হাইওয়ে থানার ওসি সাজু মিয়া বলেন, “সোহেল রানা আমাদের সহকর্মী ছিলেন। এভাবে পুরো পরিবারটি দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার খবরে আমরা মর্মাহত। সোহেলের বাবা-মা আর স্বজনদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না।” 

পুলিশ জানায়, সোহেলের স্ত্রী মৌসুমী আক্তারের মরদেহ উদ্ধারের পর শনিবার রাতে দেবিদ্বারে গ্রামের বাড়িতে পাঠানো হয় এবং সেখানেই তাকে দাফন করা হয়েছে। 

সোমবার বাদ জোহর ভৈরব হাইওয়ে থানার সামনে সোহেল ও তার দুই সন্তানের জানাজা হয়। পরে তিনটি মরদেহ বাবা-মাসহ স্বজনরা গ্রামের বাড়িতে নিয়ে গেছেন। 

সোহেলের ভগ্নিপতি ফেনীর মহিপাল হাইওয়ে পুলিশের এএসআই সাইফুল ইসলাম বলেন, “বাদ আছর জানাজা শেষে মৌসুমী আক্তারের পাশেই বাকি তিনজনকে দাফন করা হয়েছে। তাদের এমন মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না।” 

সোহেলের প্রতিবেশী সাবেক ইউপি সদস্য মো. সাদেক হোসেন বলেন, “শুক্রবার ঘটনা শুনে আমিসহ  সোহেলের বাবা-মা ও আত্মীয়-স্বজন ভৈরব যাই। সেখানে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্য দেখা যায়। তাদের আহাজারিতে চোখের পানি আটকে রাখা দায়। এমন মৃত্যুর শোক কীভাবে সইবে পরিবারটি।” 

শুক্রবার বিকালে সোহেল রানা তার স্ত্রী, দুই সন্তান ও ভাগনি মারিয়াকে নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জের সোনারচর দ্বীপ গ্রাম দেখতে গিয়েছিলেন। ফেরার পথে নৌকাটি কিছুটা নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়ে। তখন বিপরীত দিক থেকে আসা বালুবাহী একটি বাল্কহেড ট্রলারটিকে ধাক্কা দেয়। এতে ট্রলারটি উল্টে যায়। 

এ সময় মারিয়া প্রাণে বেঁচে গেলেও অপর চারজন পানিতে তলিয়ে যায়। 

সোহেলের চাচাতো ভাই ইমরান বলেন, “এসএসসি পরীক্ষা শেষে গত সপ্তাহে সোহেলের বাসায় বেড়াতে যায় ভাগনি মারিয়া আক্তার। তার অনুরোধে শুক্রবার সোহেল তার স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে ট্রলারে আশুগঞ্জ সোনারচর দ্বীপ গ্রাম ঘুরতে যায়। সেখান থেকে ফেরার পথেই মাঝ নদীতে বাল্কহেডের ধাক্কায় ট্রলারটি ডুবে যায়। এ সময় ট্রলারে ১৬ জন যাত্রী ছিল। 

“মারিয়া আক্তারকে অন্য আরেকটি ট্রলার এসে জীবিত উদ্ধার করলেও বাকি চারজন নিখোঁজ হয়”, বলেন ইমরান।