ছোট ছোট ফুল ঘিরে থাকা কলির সৌন্দর্য ফুলের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়।
Published : 03 Nov 2024, 09:52 AM
দূর থেকে দেখলে হঠাৎ গোলাপি নয়নতারা বলে ভ্রম হয়; কাছে গেলে বোঝা যায়- ফুলের রঙ রক্ত লাল। সবুজ ডালের অগ্রভাগে ছোট্ট মুকুটের মত ফুটে আছে জয়তী।
এক সকালে চট্টগ্রাম নগরীরর পাথরঘাটা আর সি চার্চ রোডের রুমী ভবনের দেয়াল ঘেষে দাঁড়িয়ে থাকা গাছটি চোখে পড়ে। ব্যতিক্রমী রঙের ফুলের কারণেই কাছে গিয়ে দেখার আগ্রহ জাগে।
রক্ত লাল রঙের পাঁচটি পাপড়ির মাঝে হলুদ পুংকেশর ফুলটিকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলেছে।
বাংলাদেশে এই ফুলের নাম জয়তী, সুগন্ধী জয়তী, দিনফোটা জয়তী; পশ্চিমবঙ্গে আবার পরিচিত দত্ত প্রিয়া নামে। কেউ কেউ ইংরেজি নাম জ্যাত্রোফা বা জ্যাট্রোফা বলেও ডাকে।
Euphorbiaceae পরিবারের গুল্ম জাতীয় এই উদ্ভিদের ইংরেজি নাম Jatropha integerrima Jacq. আদি নিবাস কিউবাতে। শোভাবর্ধনকারী এই গাছটি ইংরেজিতে Fiddle-leaved Jatropha এবং Peregrina নামেও পরিচিত।
বছরের ৩৬৫ দিনই ফোটে বলে একে দিনফোটা জয়তী বলা হয়। আর ইংরেজি নাম Jatropha এসেছে গ্রিক শব্দ Iatros ও Trophe থেকে। Jatropha অর্থ চিকিৎসক, আর Trophe অর্থ পুষ্টি; তার মানে চিকিৎসা কাজে ব্যবহার ও পুষ্টি গুণকেই নির্দেশ করে।
রুমী ভবনের বাসিন্দা ফ্লোরা পাপড়ি বড়ুয়ার সঙ্গে আলাপচারিতায় জানা গেল, বছর দশেক আগে গাছটি তার শাশুড়ি লাগিয়েছেন।
ফ্লোরা বললেন, “বেশি মাটির প্রয়োজন হয় না। একটা টবেই গাছটি এখনো আছে। পানিও খুব বেশি দিতে হয় না। অনেক ফুল ফোটে। দেখতে খুব সুন্দর লাগে।”
গড়পড়তা জয়তী গাছ যত উঁচু হয়, এই গাছটি তার চেয়েও যেন একটু বেশি উঁচু। প্রায় ১২-১৩ ফুট উচ্চতার গাছটির প্রতিটি ডালের শীর্ষে নিয়মিত ফুল ফোটে।
জয়তীর এলোমেলো ডালাপালা সোজা উপরের দিকে উঠে যায়। সবুজ পাতা লম্বাটে ধরনের হয়। ডালের অগ্রভাগে ছোট ছোট লাল রঙের ফুল ফোটে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ওমর ফারুক রাসেল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “বাংলাদেশে খুবই পরিচিত গাছ হলেও জয়তী বা জ্যাট্রোফার আদিনিবাস হলো কিউবা। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় ও উপ-গ্রীষ্মমণ্ডলীয় অঞ্চলে এর অবস্থান দেখা যায়।”
ওয়ার্ল্ড ফ্লোরা অনলাইনের তথ্য অনুসারে জয়তীর দেখা মেলে বাংলাদেশ, ভারত, থাইল্যান্ড, জাভা, ফিলিপিন্স, যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ-পূর্ব অংশ, ফ্লোরিডা, দক্ষিণ আমেরিকার ডমিনিকান রিপাবলিক, হাইতি, পুয়ের্তোরিকো, দক্ষিণ-পশ্চিম ক্যারাবিয়ান, ত্রিনিদাদ ও টোবাগো, কোস্টারিকা, গুয়েতেমালা, হন্ডুরাস, নিকারাগুয়া, পানামা, ভেনিজুয়েলা ও পেরুতে।
জয়তীর একই গাছে পুরুষ ও স্ত্রী ফুল একসঙ্গে ফোটে। ফুল দুই থেকে আড়াই সেন্টিমিটার চওড়া; মুক্ত পাঁপড়ি পাটি, পুংকেশর হলুদ রঙের।
সারা বছর ফুল ফোটায় ও এর পাতার অনন্য গঠনের কারণে বাগানিদের কাছে শোভাবর্ধনকারী হিসেবে জয়তীর চাহিদা বেশ। ফলও হয়। ফল কিছুটা গোলাকৃতি ও নিচের দিকে কৌণিকভাবে বর্ধিত। বীজ, শাখা ও গুটিকলমের মাধ্যমে বংশবিস্তার হয়।
জয়তীর গুণাগুন জানিয়ে ড. ওমর ফারুক রাসেল বলেন, “চর্ম রোগ, ভাইরাস ইনফেকশন, এলার্জি, শরীর পুড়ে গেলে, কেটে গেলে, বাত ও জন্ডিস হলে জয়তী গাছের কষ (লেইটেক্স) ও পাতার রস বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় সেবন করা হয়।
“অর্শরোগ ও কৃমি থেকে মুক্তি পেতে এ পাতার রস ব্যবহৃত হয়। দাঁত ব্যাথা নিরাময়ে এ গাছের ডাল ব্যবহার করা হয়। এ গাছের বীজ হতে এক প্রকার তেল ও প্রোটিন পাওয়া যায়- যা বিভিন্ন ধরনের কসমেটিকস ও ফুড প্রোডাক্টে ব্যবহৃত হয়।”
মৃদু গন্ধের আকর্ষণে জয়তীর ফুল আর কলি ঘিরে ভ্রমরের আনাগোনা। ছোট ছোট ফুল ঘিরে থাকা কলির সৌন্দর্য ফুলের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। সবুজ পাতা ঘেরা রক্ত লাল ফুলের চারপাশে থাকা কলি যেন অপরূপ নীরবতা!