পটিয়ায় আওয়ামী লীগ নেতাকে গাছে বেঁধে মারধর

চট্টগ্রামের পটিয়ায় ইফতার মাহফিলে হামলা চালিয়ে হাইদগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতিকে গাছে বেঁধে মারধর করা হয়েছে, যার ছবি ছড়িয়ে পড়েছে ফেইসবুকে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 April 2022, 04:52 PM
Updated : 29 April 2022, 05:13 PM

শুক্রবার বিকেল পৌনে ৩টার দিকে ওই হামলার ঘটনায় জিতেন কান্তি গুহ নামের ওই আওয়ামী লীগ নেতার মাথা কেটে গেছে, একটি হাতও ভেঙেছে। তাকে ভর্তি করা হয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

যার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি হাইদগাঁও উনিয়ন পরিষদের বর্তমান চেয়ারম্যান এবং ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক বি এম জসিম। ইউপি নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় তাকে দল থেকে বহিষ্কারের সুপারিশ করা হয়েছে সম্প্রতি।

হাইদগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের তরফ থেকে শুক্রবার ব্রাহ্মণঘাটা গাউসিয়া কমিউনিটি সেন্টারে ওই ইফতার মাহফিলের আয়োজন করা হয়েছিল। তাতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা ছিল স্থানীয় সাংসদ সামশুল হক চৌধুরীর। জিতেন কান্তি গুহ ছিলেন বিশেষ অতিথি । কিন্তু ব্যানারে ইউপি চেয়ারম্যান বি এম জসিমের নাম ছিল না।  

জিতেন গুহকে মারধরের পর ইফতার মাহফিল পণ্ড হয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেন।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক শহীদুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা অনুষ্ঠান স্থলে কয়েকজন বসেছিলাম। তখনও ইফতারের অনেকটা দেরি।

“এ সময় চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে (বি এম জসিম) লোকজন এসে আমাদের ইউনিয়নের আহ্বায়ক মাহফুজুল হকের নাম ধরে অশ্রাব্য গালি দিতে থাকে। এরপর হঠাৎ তারা জিতেন গুহকে মারধর শুরু করে। তাকে গাছের সাথে বেঁধে মারধর করে রক্তাক্ত করে।”

শহীদুল বলেন, “গত ইউপি নির্বাচনে জিতেন গুহ ছিলেন আওয়ামী লীগ দলীয় চেয়ারম্যান প্রার্থী আবুল হাসানের নৌকা মার্কায় প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট। সেই আক্রোশ থেকে তাকে মারধর করা হয়েছে।”

জিতেন গুহকে পিছমোড়া করে হাত বাঁধা ও রক্তাক্ত অবস্থার গাছের সাথে বেঁধে রাখার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পরেছে। সেখানে তাকে খালি গায়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। মাথা আর গায়ের বিভিন্ন জায়গা ছিল রক্তাক্ত।

গত ইউপি নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী বি এম জসিম জয়ী হন। দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচন করায় জসিমকে বহিষ্কারের সুপারিশ কেন্দ্রে পাঠায় চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ।

হামলার ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন করলে জসিম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “ঘটনা ইফতার মাহফিল নিয়ে নয়। আরও অনেক আগে থেকে। আহ্বায়ক থাকাকালে জিতেন গুহ বিভিন্ন লোকজনের কাছ থেকে টাকা নিয়েছিল মুজিববর্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর দেবে বলে। এসব বিষয়ে গোয়েন্দা প্রতিবেদনও আছে।

“এছাড়া কয়েক জনের জমি দখল করেছে বলেও অভিযোগ আছে। তারা অনেক দিন অপেক্ষায় ছিল। আজ হঠাৎ পেয়ে তার উপর হামলা করেছে। সেখানে অন্য লোকজনও ছিল। তাদের তো কিছু করেনি।”

হামলার নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে চেয়ারম্যান বলেন, তিনি বরং জিতেন কান্তি গুহকে ‘উদ্ধার করে’ ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে নিয়েছেন।

হাইদগাঁও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগে দুই পক্ষের বিরোধ দীর্ঘদিনের। আহ্বায়ক মাহফুজুল হক ও চেয়ারম্যান বিএম জসিম উভয় পক্ষই স্থানীয় সাংসদের অনুসারী হিসেবে পটিয়ায় পরিচিত।

পটিয়া থানার ওসি রেজাউল করিম মজুমদার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সেখানে দুটি গ্রুপ আছে। ইফতার মাহফিলকে কেন্দ্র করে জিতেন কান্তি গুহর উপর চেয়ারম্যানের লোকজন হামলা করেছে বলে শুনেছি। এখন তিনি চট্টগ্রাম মেডিকেলে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এ ঘটনায় মামলা প্রক্রিয়াধীন আছে।”

তবে রাত সোয়া ৯টা পর্যন্ত এ ঘটনায় কাউকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।

এদিকে জিতেন গুহকে মারধরের প্রতিবাদে শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি দিয়েছে চট্টগ্রাম পূজা উদযাপন পরিষদ।

পরিষদের মহানগরের সভাপতি আশীষ কুমার ভট্টাচার্য বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “জিতেন গুহ পরিষদের দক্ষিণ জেলার সাবেক সভাপতি এবং বর্তমান উপদেষ্টা। হামলাকারীদের গ্রোপ্তারের দাবিতে আমাদের এ কর্মসূচি।”