কোভিড: সচেতনতা কম, বাড়ছে সংক্রমণ

এক সপ্তাহের ব্যবধানে চট্টগ্রামে কোভিড রোগী শনাক্তের হার ২০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৩০ শতাংশ ছাড়িয়েছে; এ পরিস্থিতির জন্য স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রবণতাকে মূল কারণ বলছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Jan 2022, 11:48 AM
Updated : 20 Jan 2022, 11:48 AM

অবশ্য সংক্রমণ বাড়লেও হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা তেমন বাড়েনি। সংক্রমণের এবারের ঢেউয়ে আক্রান্তদের শারীরিক জটিলতা ও মৃত্যুর ঘটনাও তুলনামূলক কম। সেকারণেও অনেকের মধ্যে গা ছাড়া ভাব দেখা যাচ্ছে।

চিকিৎসকরা বলছেন, অনেকেই কোভিড টিকা নেওয়ার পর স্বাস্থ্যবিধি মানতে উদাসীনতা দেখাচ্ছেন। তাতে সংক্রমণ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। এভাবে চলতে থাকতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে।

বৃহস্পতিবার জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, আগের ২৪ ঘণ্টায় ৯৩০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে জেলায়, যা মোট নমুনা পরীক্ষার প্রায় ৩০.৪৬ শতাংশ। এই সময়ে একজন কেভিড রোগীর মৃত্যু হয়েছে।

উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়ী, চট্টগ্রাম জেলায় ১৪ জানুয়ারি ২৬০ জন নতুন রোগী শনাক্ত হয়, শনাক্তের হার ছিল ১০.২৬ শতাংশ। পরদিন ১৫ জানুয়ারি শনাক্ত হয় ২৯৬ জন, হার ছিল ১৪.৫২ শতাংশ।

১৬ জানুয়ারি শনাক্ত বেড়ে হয় প্রায় দ্বিগুণ, ৫৫০ জন হয়; শনাক্তের হার পৌঁছায় ২৭.৭৩ শতাংশে। ১৭ জানুয়ারি তিনজনের মৃত্যুর পাশাপাশি ৭৪২ জনের সংক্রমণ ধরা পড়ে, সেদিন শনাক্তের জার ছিল ২৫.৭৩ শতাংশ।

পরদিন ৭৩৮ জন রোগী শনাক্তের খবর আসে, যা নমুনার পরীক্ষার ২৩.৬৭ শতাংশ। ১৯ জানুয়ারি ৯৮৯ জনের কোভিড শনাক্ত হয়, শনাক্তের হার ৩০.৯৮ শতাংশে পৌঁছায়।

চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. ইলিয়াছ চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সংক্রমণ বাড়লেও হাসপাতালে এখনও রোগীর ভিড় নেই। ৪-৫ দিন পরে হয়ত পরিস্থিতি বোঝা যাবে। গত সপ্তাহ থেকেই আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে।

“আমরা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি। প্রস্তুত আছি। হাসপাতালে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাস আক্রান্ত ৩৬১ জন ভর্তি আছেন। অক্সিজেনও খুব বেশি রোগীর লাগছে না।”

ডা. ইলিয়াছ চৌধুরীর মতে, “স্বাস্থ্যবিধি মানছে না বলেই সংক্রমণের এ অবস্থা। সম্প্রতি অনেক নির্বাচন হয়েছে। বেশ কিছু মেলা হয়েছে। এছাড়া মাস্ক পরতেও মানুষের মধ্যে অনীহা আছে। ইতোমধ্যে আমরা প্রশাসনকে জানিয়েছি। মোবাইল কোর্ট ও প্রচারণা চলছে।”

চট্টগ্রাম জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের এই শীর্ষ কর্মকর্তার মতে, স্থানীয়ভাবে মসজিদ-মাদ্রাসাতেও সচেতনতামূলক প্রচার চালানো দরকার।

“আমাদের মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও প্রচারে নামবে দ্রুত। সবাই একসাথে কাজ করতে হবে। এখন ঘরে ঘরে জ্বরও হচ্ছে, তাই সবার সচেতন থাকা জরুরি।”

সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে সরকার ১১ দফা নির্দেশনা দিলেও নগরীতে গণপরিবহন, বাজার, বিপণিকেন্দ্র জনসমাগমস্থলে নির্দেশনা মানতে খুবই কম আগ্রহ দেখা গেছে গত কয়েক দিনে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের সহকারী কমিশনার (স্টাফ অফিসার টু ডিসি) পিযূষ কুমার চৌধুরী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “প্রতিদিনই তিন-চারটা করে মোবাইল কোর্ট চলছে। গতকাল থেকে আটটি দল নগরীতে মাইকিং করছে স্বাস্থ্যবিধি মানতে।

“তবে বাস্তবতা হল, এবার মানুষের মধ্যে ভয় কম। মাস্ক পরতেও অনীহা। সচেতন করার জন্য চেষ্টা চলছে।”

সচেতনায় জোর দেওয়ার বিকল্প নেই বলে মনে করেন চট্টগ্রামের সাবেক সিভিল সার্জন ডা. সরফরাজ খান চৌধুরী বাবুলও।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে তিনি বলেন, “এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি বিষয় হলো সচেতনতা। দলমত নির্বিশেষে জনপ্রতিনিধি ও সব রাজনৈতিক দলকে সম্পৃক্ত করতে হবে।

“উপজেলা চেয়ারম্যান, মেম্বার, বাজার কমিটি, শিক্ষক, ব্যাংকার, নারী জনপ্রতিনিধি, স্কাউট ও সব ধর্মের ধর্মগুরুদের সম্পৃক্ত করতে হবে সচেতনতার কাজে। একমাত্র সচেতনতাই পারে মুক্তি দিতে।

“কলেরা, পোলিও, ম্যালেরিয়ার মত রোগ থেকে আমরা মুক্তি পেয়েছি। মানুষ সচেতন না হলে দুর্ভোগ ডেকে আনবে। শুধু মাস্ক পরলেও সংক্রমণ এত বেশি হত না।”

বৃহস্পতিবার যে ৯৩০ জন নতুন রোগী শনাক্ত করা হয়েছে, তাদের ৭৫৭ জনই চট্টগ্রাম নগরীর বাসিন্দা। ‍উপজেলাগুলোর মধ্যে সীতাকুণ্ডে সবচেয়ে বেশি ৪২ জন আক্রান্ত হয়েছেন।

এখন পর্যন্ত জেলায় করোনাভাইরাসে ১৩৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে নগরীর বাসিন্দা ৭২৮ জন এবং উপজেলাগুলোর ৬১৪ জন।