২০২১: চট্টগ্রাম বন্দরে রেকর্ড কন্টেইনার হ্যান্ডলিং

করোনাভাইরাস মহামারীর বাধা কাটিয়ে বছরজুড়ে চালু থাকার সুফল পেল চট্টগ্রাম বন্দর; রেকর্ড গড়ে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং গেল বছর ৩২ লাখ টিইইউএস ছাড়িয়েছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Jan 2022, 07:35 PM
Updated : 1 Jan 2022, 07:56 PM

গেল বছরে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং তিন লাখ ৭৪ হাজার ৫৭১ টিইইউএস (প্রতিটি ২০ ফুট দৈর্ঘ্যের সমান) বাড়লে বন্দরের ইতিহাসে ২০১৯ সালে কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের সর্বোচ্চ সংখ্যা ছাপিয়ে যায় এবার।

বছর শেষের পরিসংখ্যান বলছে, একই সঙ্গে কার্গো হ্যান্ডলিংও বেড়েছে সদ্য সমাপ্ত বছরে। জাহাজ আসার সংখ্যাও বেড়ে হয়েছে চার হাজার ২০৯টি; সব মিলিয়ে ১৩ শতাংশের মতো প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

কোভিডের আগের বছর ২০১৯ সালে দেশের প্রধান এ বন্দরে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং প্রথমবারের মতো ৩০ লাখ টিইইউএস ছাড়িয়েছিল। ওই বছর হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ ছিল ৩০ লাখ ৮৮ হাজার ১৮৭ টিইইউএস।

দেশের প্রধান এ সমুদ্র বন্দরের কার্যক্রমে গতি বাড়ার পেছনে জাহাজ জট না থাকাই প্রধান ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করছেন বন্দরের কর্মকর্তারা।

বন্দর সচিব ওমর ফারুক বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, ২০২১ সালের শেষ দিন শুক্রবার পর্যন্ত চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে মোট কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে ৩২ লাখ এক হাজার ৫৪৮ টিইইউএস। রপ্তানি, আমদানি ও খালি কন্টেইনার ব্যবস্থাপনার এ সংখ্যা ছিল ২০২০ সালে ছিল ২৮ লাখ ৩৯ হাজার ৯৭৭টিইইউ।

“সবমিলিয়ে ১৩ শতাংশের মতো প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে।“

চট্টগ্রাম বন্দরের মূল জেটি, পানগাঁও ইনল্যান্ড কন্টেইনার টার্মিনাল ও ঢাকার কমলাপুর আইসিডিতে কন্টেইনার ওঠানামার তথ্য নিয়ে এ পরিসংখ্যান দিয়েছে দেশের প্রধান এ সমুদ্র বন্দর কর্তৃপক্ষ।

দেশে ২০২০ সালের মার্চে করোনাভাইরাস সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর সর্বাত্মক সাধারণ ছুটি ঘোষণা হলে অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র চট্টগ্রাম বন্দরের কার্যক্রমে কিছুটা ভাটা পড়েছিল।

তবে এবার মার্চে সংক্রমণের দ্বিতীয় ঢেউ শুরুর পর দেশব্যাপী লকডাউনের মধ্যেও অব্যাহত ছিল বন্দরের কার্যক্রম। তবে সর্বাত্মক কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যে পণ্য ওঠানামা ও বন্দর থেকে খালাসের কাজ কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়েছিল।

রেকর্ড কন্টেইনার হ্যান্ডলিংকে দেশের প্রধান এ বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি হিসেবেই দেখছেন বিজিএমইএ এর প্রথম সহ সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম।

করোনাভাইরাস মহামারীকালে সঙ্কট কাটিয়ে প্রায় পুরোপুরি সচল হয়ে উঠেছে চট্টগ্রাম বন্দর। ছবি: সুমন বাবু

দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের বড় অংশই যেমন এ বন্দর দিয়ে রপ্তানি হয়, তেমনি এর কাঁচামালও দেশে আসে এখান দিয়ে।

পোশাক রপ্তানিকারকদের সংগঠনের নেতা নজরুল বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, বন্দরের প্রবৃদ্ধি সম্ভব হয়েছে বর্তমান ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ বিশেষ করে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অক্লান্ত কাজের কারণে। এজন্য তারা ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য।

“বিশ্বব্যাপী করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে স্থবির একটা সময়ের মধ্যেও এমন প্রবৃদ্ধি অর্জনের পেছনে বন্দরের সক্ষমতা বাড়ার বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ।“

বন্দরের বে টার্মিনাল জরুরিভিত্তিতে চালু হলে সক্ষমতা আরও বাড়বে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তখন এটি আন্তর্জাতিক মানের পর্যায়ের বন্দরে উন্নীত হবে।

এছাড়া মহামারীর মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার জীবন-জীবিকার সমন্বয় করে যে কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন, সেটির বাস্তবায়নের ফলে এ অর্জন সম্ভব হয়েছে বলে মন্তব্য করেন এ ব্যবসায়ী নেতা।

তবে বন্দরের বিভিন্ন মাশুল বাড়ার কারণে ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার বিষয়টি বিবেচনার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান তিনি।

বন্দরের তথ্য অনুযায়ী, গেল বছরে বন্দরের জেটিগুলোতে জাহাজ এসেছে চার হাজার ২০৯টি। কন্টেইনারের বাইরে কার্গো হ্যান্ডলিং হয়েছে ১১ কোটি ৬৬ লাখ ১৯ হাজার ১৫৮ মেট্রিক টন।

বন্দর সচিব ফারুক জানান, তিনি বলেন, কার্গো পণ্যের ক্ষেত্রে ১৩ শতাংশের বেশি এবং জাহাজের ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১২ শতাংশের মতো।

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যেও বন্দর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিরবচ্ছিন্ন প্রচেষ্টা এবং অংশীজনদের সহযোগিতার কারণে বন্দর এ প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে পেরেছে। ভবিষ্যতেও এ ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে চায় বন্দর কর্তৃপক্ষ, যোগ করেন তিনি।

দেশের মোট আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের প্রায় ৯২ শতাংশ হয়ে থাকে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে। আর কার্গো ও কন্টেইনার পরিবহনের ক্ষেত্রে এ হার প্রায় ৯৮ শতাংশ।