চট্টগ্রাম কুমারী পূজায় বঞ্চনা অবসানের প্রার্থনা

চট্টগ্রামে দুর্গাপূজার অষ্টমীতে কুমারী রূপে দেবীর আরাধনার মধ্য দিয়ে নারীর প্রতি সহিংস আচরণ ও বঞ্চনার বিনাশ কামনা করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Oct 2021, 11:07 AM
Updated : 13 Oct 2021, 11:07 AM

বুধবার নগরীর রাজাপুকুর লেইন পঞ্চমাতা বিগ্রহ ও সেবাশ্রম এবং পাথরঘাটা হরচন্দ্র মুন্সেফ লেইনের শ্রী শ্রী রাধাগোবিন্দ ও শান্তনেশ্বরী মাতৃমন্দিরে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়।

হিন্দু শাস্ত্রমতে, কুমারী পূজার উদ্ভব হয় কোলাসুরকে বধের মধ্য দিয়ে। কোলাসুর এক সময় স্বর্গ-মর্ত্য অধিকার করায় বাকি বিপন্ন দেবগণ মহাকালীর শরণাপন্ন হয়। সে সব দেবগণের আহ্বানে সাড়া দিযে় দেবী কুমারী রূপে কোলাসুরকে বধ করেন। এরপর থেকে মর্ত্যে কুমারী পূজার প্রচলন শুরু হয়।

রাজা পুকুর লেইন পঞ্চমাতা বিগ্রহ ও সেবাশ্রম এ কুমারী রূপে পূজিত হন মালিনী চক্রবর্তী। 

আশ্রমটির অধ্যক্ষ শ্রীমৎ প্রেমানন্দ ব্রহ্মচারী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “গত দু’বছর ধরে পৃথিবীব্যাপী যে মহামারী তা থেকে মুক্তি পেতে মায়ের কাছে প্রার্থনা। মায়ের অনেক রূপের মধ্যে একটি রূপ কুমারী। এই রূপে আরাধনার মাধ্যমে মূলত মাতৃ শক্তিরই আরাধনা করা হচ্ছে।

“আর সারা বিশ্বে নারীর প্রতি যে অবমাননা এবং নারীর প্রতি অত্যাচার নির্যাতন সহিংসতা এর বিরুদ্ধে এই মাতৃ বন্দনা। প্রত্যেক নারীকেই যেন আমরা মাতৃ জ্ঞানে সম্মান করি সেই চেতনা যেন সবার মধ্যে জাগ্রত হয়।”

মালিনী চক্রবর্তীর বাবা সুমন ভট্টাচার্য্য ও মা শীলা চক্রবর্তী উপস্থিত ছিলেন পূজার সময়।

সুমন ভট্টাচার্য্য সাংবাদিকদের বলেন, “আমরা সম্মানিত বোধ করছি। মেয়েরা নানা সময় যে বঞ্চনার শিকার হয় মাতৃ বন্দনার মধ্য দিয়ে যেন সেই অসুর প্রবৃত্তির বিনাশ ঘটে।”

সনাতন ধর্ম মতে, যে ত্রিশক্তির বলে বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি-স্থিতি-লয়ের চক্রে আবর্তিত হচ্ছে। কুমারী প্রকৃতি বা নারী জাতির প্রতীক ও বীজাবস্থা। তাই কুমারী বা নারীতে দেবীভাব আরোপ করে তার আরাধনা করা হয়।

বুধবার পাথরঘাটা হরচন্দ্র মুন্সেফ লেইনের শ্রী শ্রী রাধাগোবিন্দ ও শান্তনেশ্বরী মাতৃমন্দিরে কুমারী উমা রূপে পূজিত হন প্রীত ধর (৬)। ২০০৪ সাল থেকেই এ মন্দিরে কুমারী পূজার আয়োজন করা হচ্ছে।

শান্তনেশ্বরী মন্দিরে পূজা পরিচালনা করেন অধ্যক্ষ শ্রীমৎ শ্যামল সাধু মোহন্ত। তার ছেলে বলরাম দাশ বিজয় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “সকালে মঙ্গলারতির মধ্য দিয়ে দিনের কার্যক্রম শুরু হয়। এর অষ্টমী পূজা হয়েছে। এখন চণ্ডিপাঠ চলছে। মহামারী থেকে যেন সকলে মুক্তি পেতে পারি সেই প্রার্থনাই করা হয়েছে।”

প্রাচীন পুরান ‍ও শাস্ত্রে থাকা কুমারী পূজার পুনর্জাগরণ ঘটে রামকৃষ্ণ পরমহংসদেবের দর্শন অনুসারে। তিনি নিজের স্ত্রী সারদা দেবীকে মাতৃজ্ঞানে পূজা করেছিলেন। পরবর্তীতে ১৯০১ সালে স্বামী বিবেকানন্দ বেলুড় মঠে সেই ধারণা অনুসারে কুমারী পূজার প্রচলন ঘটান।

তবে করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে এ বছর চট্টগ্রামের রামকৃষ্ণ মিশন সেবাশ্রমে কুমারী পূজার আয়োজন করা হয়নি।