জোড়া খুনের ছয় মাস পর কারণ জানল পুলিশ

চট্টগ্রামে এক কভার্ড ভ্যান চালক ও তার সহকারী খুনের ছয় মাস পর হত্যার কারণ জানতে পেরেছে পুলিশ। জোড়া খুনের এই মামলায় নতুন করে দুইজনকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ জানায়, কাভার্ড ভ্যানের ‘মালামাল চুরি করতেই’ তাদের হত্যা করা হয়েছে। 

চট্টগ্রাম ব্যুরোবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 May 2021, 01:32 PM
Updated : 8 May 2021, 01:44 PM

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের পশ্চিম জোনের পরিদর্শক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে শনিবার এ তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, “হত্যার শিকার এবং হত্যাকারীরা পরস্পরের পরিচিত। তারা সবাই কভার্ড ভ্যানের বদলি চালক। কভার্ড ভ্যানে থাকা মালামাল বিক্রির জন্য সহকর্মীদের হাতেই খুন হয় চালক ও সহকারী।”

গত ৪ অক্টোবর হালিশহর বেড়িবাঁধ এলাকা থেকে কভার্ড ভ্যান চালক রিয়াদ হোসেন (২৩) এবং মিরসরাইয়ের সোনাপাহাড় থেকে তার সহকারী মো. আলীর (২১) মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।

এ ঘটনায় হালিশহর থানায় রিয়াদের মা জুলেখা বেগম একটি হত্যা মামলা করেন। চট্টগ্রাম নগর গোয়েন্দা পুলিশের পশ্চিম বিভাগ পরে এ মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায়।

ছয় মাসের তদন্ত শেষে শুক্রবার রাতে মিরাজ হাওলাদার (৩০) ও আবু সুফিয়ান সুজন (২১) নামে দুইজনকে গ্রেপ্তারের পর ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন, পুলিশ পরিদর্শক মোহাম্মদ কামরুজ্জামান।

তিনি জানান, নতুন করে গ্রেপ্তার হওয়া দুজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেই হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত জানা গেছে।

গ্রেপ্তার মিরাজ নিহত কভার্ড ভ্যান চালক রিয়াদের মোবাইল ফোন ব্যবহার করছিল বলে জানান গোয়েন্দা কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, “মোবাইল ফোন ট্র্যাক করে এর আগে অক্টোবরে বাবু নামে একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। সে কভার্ড ভ্যানের সহকারী নিহত আলীর মোবাইল ফোন ব্যবহার করছিল।”

তদন্তে বাবুর সঙ্গে মিরাজের কথা বলার প্রমাণ পাওয়া গেছে। সেইসাথে খুন হওয়া চালক রিয়াদের সঙ্গেও গত ২ অক্টোবর মিরাজ কথা বলেছেন।

গত ২ অক্টোবর সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম বন্দর থেকে মালামাল নিয়ে ঢাকায় যাওয়ার পথে রিয়াদ ও তার সহকারী আলী নিখোঁজ হন। পরদিন ভোরে বন্দর থানার মনছুর মার্কেট এলাকা থেকে কাভার্ড ভ্যানটি পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়।

পুলিশ কর্মকর্তা কামরুজ্জামান জানান, রিয়াদকে গাড়ি চালানো শিখিয়েছে মিরাজ, যে কারণে তাদের মধ্যে সু-সম্পর্ক ছিল।

জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানায়, রিয়াদ চট্টগ্রাম বন্দর থেকে কাভার্ড ভ্যানে ভারি যন্ত্রপাতি নিয়ে ঢাকা যাবে জানতে পেরে মিরাজ তার সাথে যোগাযোগ করে। তার সহযোগী বাবু ও সুজন দুটি ছুরি কেনে। সেইসঙ্গে নেওয়া হয় ঘুমের ওষুধ।

তিনি বলেন, “ঢাকা যাওয়ার কথা বলে সিটি গেইট এলাকা থেকে মিরাজ, সুজন ও বাবু রিয়াদের গাড়িতে ওঠে। তারা রিয়াদকে কোমল পানীয়ের সাথে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে অজ্ঞান করে মালামাল চুরির পরিকল্পনা নিয়েছিল।

“কিন্তু সেটি করতে না পারায় চালক রিয়াদ ও তার সহকারী আলীকে গলায় ছুরিকাঘাত করে লাশ ফেলে দেয়।”

পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ছুরির আঘাতে আলীর মৃত্যু হয়েছে মনে করে তারা মিরসরাইয়ের জোরারগঞ্জ থানার সোনাপাহাড় এলাকায় তার মৃতদেহ মহাসড়কের পাশে একটি পুকুরে ফেলে দেয়।

তিনি বলেন, “কিন্তু আলী উঠে দাঁড়ালে বাবু তার মৃত্যু নিশ্চিত করতে আবার ছুরিকাঘাত করে গাড়িতে উঠে পড়ে।

“রিয়াদের লাশ চালকের আসনের পেছনে মুখ থেঁতলে কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। ফৌজদারহাট-বায়েজিদ লিঙ্ক রোডে ঢুকে মৃতদেহটি ফেলার চেষ্টা করলেও গাড়ি বেশি থাকায় পরে হালিশহর বেড়িবাঁধের বে টার্মিনাল এলাকায় ফেলা হয়।”

তবে মালামাল বিক্রি করতে না পেরে তেল বিক্রি করে কাভার্ড ভ্যানটি রাস্তার ওপর ফেলে হত্যাকারীরা পালিয়ে যায়।

এ মামলায় মিরাজ, সুজন, বাবু ছাড়াও গত অক্টোবরে আরও একজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তবে প্রাথমিক তদন্তে তার জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া যায়নি বলে জানান পুলিশ কর্মকর্তা।