শনিবার সকালে নগরীর নিউমার্কেট মোড়ে এই অবস্থান কর্মসূচি পালন করে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ।
অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে বেলা সোয়া ১১টার দিকে নিউমার্কেট মোড় থেকে চর্তুমুখী যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। নগরী ও বিভিন্ন উপজেলা থেকে বিভিন্ন সংগঠনের কয়েক হাজার নেতাকর্মী কর্মসূচিতে অংশ নেন।
সমাবেশে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত বলেন, “যে অত্যাচার নির্যাতনের কথা বলেছি তার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার চাই, তদন্ত চাই। যারা দায়ী তাদের চিহ্নিত করার মাধ্যমে কঠোর শাস্তি দিক- এটি চাই। মিথ্যা অভিযোগে যারা গ্রেপ্তার তাদের কারাগার থেকে মুক্তি চাই। যারা হ্যাকার তাদের শাস্তির আওতায় আনা চাই।
“যদি সরকার দাবি না মানে কঠিন থেকে কঠিনতর কর্মসূচি ঘোষণা করব। প্রয়োজনে লং মার্চের মত কর্মমসূচি দিব। পায়ে হেঁটে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা যাব।”
প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার সরকারের কোনো কোনো মন্ত্রী-নেতাকে আমাদের আর বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। কারণ তারা যা বলেন তা করেন না, যা করেন তা বলেন না। সংখ্যালঘুদের স্বার্থ রক্ষায় আপনি অনেকবার অনেক ভূমিকা রেখেছেন। উপর থেকে পানি ফেলেছেন কিন্তু সেই পানি নিচের দিকে দেখা আমরা পাইনি। কারণ আপনার দলের ভেতর দল আছে, আপনার প্রশাসনে পাকিস্তান আছে।
হেফাজতের কেন্দ্রীয় নেতা নূর হোসাইন কাসেমীকে ধন্যবাদ জানিয়ে রাণা দাশগুপ্ত বলেন, “পরশু এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, মানবাধিকার বিরোধী তৎপরতার বিরুদ্ধে সরকারকে শক্ত অবস্থান নিতে হবে। লালমনিরগাট ও কুমিল্লার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়ে তিনি বলেছেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বিরুদ্ধে যে কোনো ষড়যন্ত্রের বিষয়ে সর্তক থাকতে হবে। সুনিপুন তদন্তের মাধ্যমে ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন।
“দুঃখের সাথে বলছি মাননীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, আপনি আমাদের ঘনিষ্টজন। আপনার কাছে বছরে চার থেকে ছয়বার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সংকট নিয়ে কথা বলি। আজকে যখন আপনি বলেন, বাড়িয়ে বলা হচ্ছে। তাহলে হেফাজতে ইসলামের নেতাও কী বাড়িয়ে বলছেন?”
তিনি বলেন, “রাজনৈতিক বাস্তবতায় বাধ্য হয়ে দেশের সকল সংখ্যালঘু সংগঠন বাধ্য হয়ে মাঠে নামতে হচ্ছে। আমরা কখনো চাইনি স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে এদেশের সংখ্যালঘুরা সমঅধিকারের জন্য লড়াই করতে হবে।
২০১০ সালের পর থেকে রামু নাসিরনগর হয়ে কুমিল্লার মুরাদনগরের ঘটনা ঘটেছে উল্লেখ করে রানা দাশগুপ্ত বলেন, “প্যাটার্ন এক, সাম্প্রদায়িক শক্তি এক নাগাড়ে আমাদের মেয়েদের উপর ধর্ষণ নির্যাতন করে চলেছে। দুঃখের সাথে বলতে চাই- কোনো রাজনৈতিক দলের এসব ঘটনায় প্রতিবাদ বা প্রতিরোধমূলক কোনা ভূমিকা লক্ষ্য করিনি।
“১৯৬৪ সালে আইয়ুব বিরোধী আন্দোলকে বিভ্রান্ত করতে আইয়ুব খান যখন সংখ্যালঘুদের উপর ঝাপিয়ে পড়েছিল রাজনৈতিক নেতা যারা পূর্ববঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী আতাউর রহমান খান এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব তাদের নেতৃত্বে সাম্প্রদায়িকতা প্রতিরোধ কমিটি গঠিত হয়েছিল। ‘বাঙালি রুখিয়া দাঁড়াও’ প্রচারপত্র বিলি হয়েছিল। আজ সেই রাজনৈতিক নেতৃত্ব কই?”
তিনি বলেন, “ইতিমধ্যে হুমকি দিয়েছে ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে হিন্দু শূন্য করতে চায়। আজকে গোটা বিশ্ব গ্লোবাল ভিলেজে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান সংখ্যালঘু হতে পারে। গোটা বিশ্বে তারা সংখ্যালঘু নয়। একদেশের সংখ্যালঘুদের দুর্বল করে সমৃ্দ্ধি যেমন সম্ভব নয় আবার বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের দুর্বল করে অন্য দেশের সংখ্যালঘুরাও দুর্বল হবে কিনা তা ভেবে দেখতে হবে।
কর্মসূচিতে সংহতি জানিয়ে কবি ও সাংবাদিক আবুল মোমেন বলেন, “আমাদের সংবিধানে যে পরিবর্তন এসেছে সেটিকে আমরা স্বাধীনতার চেতনায় ফেরাতে পারিনি। আজ রাজনীতি ও সমাজে সাম্প্রদায়িকতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। মানবিক গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের আকাঙ্ক্খা থেকে আজ আমরা অনেক দূরে।
“এরকম বাংলাদেশ আমরা প্রত্যাশা করিনি। করোনাকালে সংখ্যালঘু ও আধিবাসীদের উপর নিপীড়ন বেড়েছে। মুক্তিযুদ্ধে ধর্মের ভেদাভেদ ছিল না। তাই ঐক্যবদ্ধভাবে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়তে হবে।”
অধ্যাপক জিন বোধী ভিক্ষু বলেন, “আমরা ৭২ এর সংবিধানে ফিরতে চাই। আজ কেউ ভালো নেই। আপনারা কী আমাদের কথা শুনতে পাচ্ছেন না? সংখ্যালঘু শিক্ষার্থীদের উপর অবিচার হচ্ছে। নির্যাতন হামলার বিচার না হলে আমরা আপনাদের পাশ থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হব।”
কর্মসূচিতে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন পরিষদ নেতা চন্দন তালুকদার, শ্যামল কুমার পালিত, অশোক দাশ, ব্রহ্মচারী গদাধর দাশসহ পরিষদ নেতৃবৃন্দ।
সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিল নিউমার্কেট মোড় থেকে কোতোয়ালীর মোড় হয়ে প্রেসক্লাবে গিয়ে শেষ হয়।